নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আরিফ আটলান্টা

আরিফ আটলান্টা › বিস্তারিত পোস্টঃ

হেলেনের চাট্টাহোচি নদীতে টিউবিং আর আমার এক ভিন্ন রকমের উপলব্ধিঃ

২৬ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ১১:৩২

জর্জিয়ার উত্তরে পাহাড়ি শহর হেলেন এক অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা পর্যটন নগরী। এই শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত চাট্টাহোচি নদী হেলেনের সৌন্দর্যকে আরও বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্লু রিজ পাহাড়ের গহীনে এর জলধারা শুরু হয়ে প্রায় ৪৩৫ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে এই নদী জর্জিয়া আলাবামার সীমান্ত ঘেষে ফ্লোরিডা হয়ে মেক্সিকো উপসাগরে পতিত হয়েছে।

হেলেন শহরে অনত্যম আকর্ষণ হলো এর বুক চিরে বয়ে যাওয়া চাটাহুচি নদীতে টিউবিং। যাকে প্রকৃতির কোলে এক অনন্য আনন্দযাত্রা বললেও অতুক্তি হবেনা।

নদীর ধার ঘেঁষে রয়েছে ছোট ছোট কাঠের কটেজ, পায়ে হাঁটা পথ আর পর্যটকদের ভিড়। সকালের নরম আলো বা সন্ধ্যার হালকা অন্ধকারে নদীটির রূপ যেন আরও মোহনীয় হয়ে ওঠে।

গত রবিবার এক বন্ধু-পরিবারের বিশেষ আমন্ত্রণে আমরা এই নদীভ্রমণের স্বাদ নিতে গিয়েছিলাম। এই প্রথম চাট্টাহোচি নদীতে টিউবিং। ঠান্ডা জলে দুঘণ্টা ধরে টিউবের উপর ভেসে চলা পথ। কখনও কোমর সমান জল, কখনও বুক ছোঁয়া, আবার কোথাও হাঁটুর নিচে। নদীর বুকজুড়ে ছড়িয়ে থাকা পাথরগুলো স্রোতের মাঝে বাঁধার সৃষ্টি করে । তবে এখানেই শুরু হয় আজকে এই ভ্রমণ কাহিনী লেখার আসল সৌন্দর্য। যে সৌন্দর্য নদী নয়, পাথরও নয় বরং মানুষ।

সত্তর বছরের বয়ষ্ক মানুষ থেকে শুরু করে দু তিন বছরের শিশুরা নানা বর্ণের, নানা সংস্কৃতির , নানা জাতের মানুষ একসাথে নদীর স্রোতে নানা রঙের টিউবে টিউবিং করছে। কোনো শিশু বাবা মায়ের বুকে নিরাপদ আশ্রয়ে, কারো চেহারায় বয়সের ছাপ কিন্তু সবার মনে এক শিশুসুলভ উচ্ছ্বাস।

যে জিনিসটি হৃদয়ে এতো বেশি দাগ কেটেছে। সেটা হলো- নদীতে বিশেষ কোনো ভলান্টিয়ার নেই। কিন্তু সবাই যেন সবার ভলান্টিয়ার।
সবাই যেন একটি অদৃশ্য ভালোবাসার চুক্তিতে পরস্পরের পাশে দাঁড়িয়ে গেছে।

যখনই কারো টিউব কোনো পাথরে আটকে যায় সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে আসে আরেকজন। তারা একে অন্যেক কোনোদিন দেখেনি। জানেনা, কে কোন জাতি কিংবা কোন ধর্মের। আর হয়তোবা কোনোদিন দেখাও হবেনা। তারপর মহা আনন্দে মহাখুশিতে একে অন্যকে সাহায্য করছে। কেউ সাহায্য পেয়ে কৃতজ্ঞ আবার কেউ সাহায্য করে আনন্দিত। পুরু দু ঘন্টা যাত্রা পথে মনে হলো এই নদীর স্রোতে কেউ কারো প্রতিযোগী নয় বরং একে অন্যের পারষ্পরিক সহযোগী। কিভাবে যে দু ঘন্টা সময় এই অনাবিল পানির উপর টিউবিং করতে করতে কেটে গেলো টেরই পেলাম না।

এই ভ্রমণ অভিজ্ঞতা বুকের ভেতর এক আশ্চর্য আলো জ্বালিয়ে দিয়ে গেলো। এই ভ্রমণ পথে কেউ হারেনি, কেউ জিতেও নি। কিন্ত সব বয়সের , সব বর্ণের , সব জাতের সবাই তার গন্তব্যে পৌঁছেছে।

ভাবলাম আহা দেশটাও যদি এমন এক যাত্রা পথ হতো! যেখানে আমরা সবাই জাত, পরিচয়, ধর্ম, বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে, সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একে অপরের দিকে শুধু সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিতে পারতাম। তবে হয়তো বিভেদের এই ভাঙনমুখর সমাজ একদিন মিলনের নদীতে রূপ নিতো। আর পুরো দেশটাও তার আপন গন্তব্যে পৌঁছাতে পারতো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.