![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"আমানতপুর গ্রামের মসজিদের ইমাম অন্যের স্ত্রী নিয়ে পালিয়েছেন।"
এই রকম একটি খবর মানুষের চোখে পড়লেই মুহূর্তের মধ্যে সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। কে লিখেছে, কেন লিখেছে, আদৌ এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা তা কেউ জানার চেষ্টাও করে না। কেউ প্রশ্নই তোলে না ‘আমানতপুর’ নামে আদৌ কোনো গ্রাম আছে কিনা। শুধু মুখরোচক বলেই খবরটি আমাদের কৌতূহলের আগুনে ঘি ঢালে। আর মানুষ সত্য মিথ্যা না জেনেই তা ভাইরাল করে।
কিছুদিন আগে একটা খবর পড়েছিলাম একজন বয়ষ্ক লোক বাসে এক মহিলার শ্লীলতাহানি করেছেন। বাসে যে মহিলার শ্লীলতাহানি হয়না এরকম নয়। কিন্তু সেই বয়ষ্ক লোকটি কি আসলেই শ্লীলতাহানি করেছেন? কিংবা আপনারা যারা এরকম ঘটনা শেয়ার করছেন- তারা কি সেই বাসে উপস্থিত ছিলেন। কিংবা স্বচক্ষে দেখেছেন? ঘটনা সত্যিও হতে পারে আবার মিথ্যাও হতে পারে। আবার কাউকে ফাঁসিয়ে দেয়ার জন্যও এরকম ঘটতে পারে। কিন্তু যেহেতু আপনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না কিংবা সবকিছু জানেন না তাই আপনার উচিত একেবারে নিশ্চিত না হয়ে ঘটনা শেয়ার না করা। আপনি যিনি এসব শেয়ার করছেন। আপনার কি দায়িত্ব নেই একবার অন্তত যাচাই করার? আপনার একটা শেয়ার, একটা মন্তব্য কাউকে সমাজের চোখে অপরাধী করে দিতে পারে। কারো মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারে।
"টূয়েলভ এংগ্রি ম্যান'"নামে একটা চমৎকার ম্যুভি আছে। প্রত্যেক মানুষের অন্তত একবার হলেও ছবিটা দেখা উচিত।
একজন ড্রাগ অ্যাডিক্ট কিশোরের বিরুদ্ধে তার বাবাকে হত্যার অভিযোগ ওঠে। ১২ জন জুরির মধ্যে ১১ জন প্রায় নিশ্চিত যে ছেলেটিই খুনী। তবে একজন জুরি দাঁড়ান সত্যের পক্ষে। তিনি বলেন প্রমাণের যদি এক অনুও কম হয়, তবে কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া ঠিক হবে না। আইন ভুল হতে পারে, বিচারক ভুল করতে পারেন। কিন্তু একবার যদি কাউকে ভুলভাবে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যদণ্ড দিয়ে দেয়া হয় । তবে তার জীবন আর ফেরানো যায় না।
বারো জন জুরি সদস্যের বাক বিতণ্ডা, চিন্তা, বিশ্লেষণ, মনস্তাত্ত্বিক প্রক্ষেপণ ভিতর দিয়ে ছবিটি এগিয়ে চলে। চোখ ফেরানো যায়না।
শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ আলোচনা, যুক্তি ও বিশ্লেষণের পর কিশোরের নির্দোষতা প্রমাণ পায় যাকে ম্যুভির শুরুতেই সবাই অপরাধী মনে করে একেবারে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলো। তাই কোনো কিছু কেবল সারফেস লেভেলে দেখলে হয়না, বোধের চোখ দিয়ে দেখতে হয়।
চিন্তার গভীরতাই বলে দেয় কোনটা সত্য আর কোনটা সাজানো।
আরেকটা ব্যাপার হলো মানুষের প্রতি মানুষের অশ্রদ্ধা। এই অশ্রদ্ধা করা আমাদের সমাজে এক ভয়ানক রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাউকে টেনে নামাতে পারলেই যেন আমরা খুশি।
বাক স্বাধীনতা সবার আছে। সবার লেখার সুবিধা আছে। সবার কাছে ডিভাইস আছে। যে যা পারে তাই লিখছে। যে যা পারে তার ইজ্জত নিয়ে নিচ্ছে। ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একেবারে হরিঘোষের গোয়ালে পরিণত হয়েছে।
যে কোনোদিন ফুটবলে লাত্থি দেয়নি সে পারলে মেসিকে ফুটবলে খেলার ট্রেনিং দেয়ায়। সে স্বরবর্ণ ভালো করে বলতে পারেনা সে পারলে রবী নজরুলের পিন্ডি চটকায়, দুয়েকটা শ্লোগান আর কয়েকটা মিছিল মিটিং করতে পারলেই একেকজন আব্রাহাম লিংকনকে রাজনীতি শেখায়।
সত্য-মিথ্যার মাঝে ডুবে থাকা সমাজে তাই কোনো কিছু শেয়ার করার আগে অন্তত একবার ভাবুন কোনটা শেয়ার করতে হয় আর কোনটি করতে হয়না। কাউকে অশ্রদ্ধা করার আগে এই ধ্রুব সত্যটি মনে রাখুন- অন্যের সম্মানহানী করে কখনো নিজে সম্মানীত হওয়া যায়না।
©somewhere in net ltd.