নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আরিফ আটলান্টা

আরিফ আটলান্টা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বস্তি থেকে রাষ্ট্রপতি

৩০ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৪৩

হিজাব পরা যদি কাউকে তার শিক্ষা এবং যোগ্যতা থেকে পিছিয়ে রাখতো তবে সিংগাপুরের মতো একটা আধুনিক দেশে এই মুসলিম মহিলা প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন না। পোষাক কাউকে সামনে কিংবা পেছনে নিয়ে যায় না। পোষাক কারো যোগ্যতাও নিরুপণ করেনা। এটা করে মানুষের মেধা।

হালিমা ইয়াকুব ছিলেন একজন দারোয়ানের মেয়ে। মাত্র আট বছর বয়সে পিতার আকস্মিক মৃত্যু হলে চার সন্তানকে নিয়ে মা অসহায় পড়েন। প্রচণ্ড পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে বেড়ে ওঠেন হালিমা। এমনকি ফুটপাতে খাবার বিক্রি করেও তাকে সংসারের খরচ যোগাতে হয়।

সেদিন একটা ভিডিও ক্লিপে দেখেছিলাম- এক ভাই বলছেন- শিক্ষা হলো এই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যাজিক। একমাত্র শিক্ষা একজন জেলের ছেলেকেও নাসার বিজ্ঞানী বানাতে পারে।

কথাটি আসলেই সত্য। এই শিক্ষাই একজন দারোয়ানের মেয়েকে সিংগাপুরের প্রেসিডেন্ট বানিয়েছে। এই শিক্ষাই একজন মাঝির ছেলে আব্দুল কালামকে ভারতের প্রেসিডেন্ট বানিয়েছে।

প্রচন্ড দরিদ্রতার ভিতর দিয়ে বড় হলেও হালিমা পড়ালেখায় বিন্দুমাত্র অবহেলা করেন নি। জীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং ১৯৭৮ সালে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন এবং পরবর্তীতে কেমব্রীজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডঃ ডিগ্রী লাভ করেন।

২০০১ সালে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে ঐ বছরই জিআরসি পার্টি থেকে নমিনেশান পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন এবং ২০১৭ সালে সিঙ্গাপুরের প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি এবং প্রথম মুসলিম মহিলা রাষ্ট্রপতি হিসাবে নিবার্চিত হয়ে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন সিংগাপুরের অষ্টম প্রেসিডেন্ট।

প্রেসিডেন্ট হিসাবেই যে তিনি সিংগাপুরকে আধুনিক করেছেন তা নয়। বরং তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগ থেকেই সিংগাপুর বিশ্বের উন্নত দেশের মর্যাদা লাভ করেছিলো। তবে প্রেসিডেন্ট হিসাবে তাঁর কৃতিত্বসমূহও কম নয়।

বস্তি থেকে রাষ্ট্রপতিঃ

তাঁর প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে সিঙ্গাপুরের জাতীয় আয় ২ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। নাগরিকের মাথাপিছু বার্ষিক আয় দাঁড়ায় ৮৫ হাজার ডলার। ( বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় মাত্র দুই হাজার ছয়শত ডলার) । সিঙ্গাপুরের পাসপোর্ট বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পাসপোর্টে পরিণত হয়। বেকারত্বের হার নেমে আসে শতকার একভাগের নীচে । প্রায় ১০ হাজার বড় প্রকল্প তিনি সফলভাবে বাস্তবায়ন করেন যাতে এক ডলার দূর্নীতিরও কোনো প্রমাণ মেলেনি।

২০২৩ সালে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষ হলে তিনি সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্টের দপ্তর ও বাসভবন ইসতানা ছেড়ে দিয়ে নিজ গৃহে ফিরে যান।
মাঝখানে সম্মানসূচক পদবী হিসাবে সিংগাপুর ইউনিভার্সিটি অব সোশাল সায়েন্সের চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করেন। সাধারণ মানুষের মতো এখন তার জীবনকাটে। দৈনন্দিন কেনাকাটাও নিজে করতেই পছন্দ করেন। অবসর ভাতা নিয়ে তাঁর জীবন চলে এবং নাতি নাতনিদের সাথে সময় কাটে। ব্যক্তিগত সম্পদ বলতে দু বেডরুমের একখানা ঘর ছাড়া তাঁর আর কিছুই নেই।

হালিমার জীবন বুঝিয়ে দেয় শালীন জীবন যাপন করেও সর্বোচ্চ সম্মান অর্জন করা যায়। আবার দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েও নির্লোভ থাকা যায়। হিজাব কখনোই পশ্চাৎপদতা কিংবা জড়তা নয়।

১৯৫৪ সালের ২৩ শে আগস্ট সিংগাপুরের এক বস্তিতে জন্ম নেয়া হালিমা ২৫ অক্টোবর ২০২৩ সালে সিঙ্গাপুরের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান Order of Temasek (With High Distinction)-এ ভূষিত হন।

এই মহীয়সী মহিলার জন্য গভীর শ্রদ্ধা। আপনার জীবন যেন আদর্শ ও অনুপ্রেরণার হয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.