নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আরিফ আটলান্টা

আরিফ আটলান্টা › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেই শৈশব আর এই শৈশব

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৫

শৈশবে আমরা ঘর পোড়ার ধোঁয়া দেখিছি। কিন্তু লাশ পোড়ার বিভীষিকা দেখিনি। চোর ধরা পড়তে দেখিছি। কিন্তু গণপিটুনিতে একেবারে মেরে ফেলার মতো নির্মমতা দেখিনি। দুর্নীতির গল্প শুনেছি কিন্তু গোটা ব্যাংক খালি করে ফেলতে দেখিনি। শিক্ষকের কাছে ছাত্রের শাসন দেখিছি কিন্তু শিক্ষককে ধমকানোর স্পর্ধা দেখিনি। এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের মধ্যে কত তফাৎ।

আমাদের প্রজন্ম ছিলো "শাস্তি হিসেবে ১০ বার লিখো” প্রজন্ম। শিক্ষকের বেতের বাড়ি খেয়ে বেড়ে ওঠা প্রজন্ম। শিক্ষকের শাসন আমাদের মন ভাঙেনি বরং মনুষ্যত্বের ভিত শক্ত করেছে।

আমাদের প্রজন্ম ছিলো স্কুলে হেঁটে যাওয়া-আসার প্রজন্ম। গ্রীষ্মের তপ্ত রোদ, শীতের কাঁপানো কুয়াশা কিংবা বর্ষার অবিরল বর্ষণ
কোনো কিছুই আমাদের ঠেকাতে পারেনি। আমরা হাঁটতাম একসাথে পেশা, ধর্ম, গাত্রবর্ণ ভুলে। গোঁড়ামি শব্দটা আমাদের শৈশবের অভিধানে ছিল না।

আমাদের প্রজন্ম ছিলো ডিভাইস বিহীন প্রজন্ম। আমাদের ব্যাগে মোবাইল ফোন থাকতো না। পাঠ্যক্রমের ভার, ব্যাগের ওজন বা হোমওয়ার্ক নিয়ে কোনো অভিযোগও হতো না।

রাস্তায় হাঁটতাম নিরাপদে, নির্ভয়ে। পিতামাতার চোখে থাকতো নিঃশঙ্ক নিশ্চয়তা। তারা জানতো সন্তান সময়মতো ঘরে ফিরবেই।

আমরা বিদ্যুৎ চলে গেলে উঠানে বের হতাম। গল্প হতো, হাসি হতো, চাঁদের আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যেত। ডিভাইসের স্ক্রিনে বন্দি জীবন তখনো আমাদের গ্রাস করেনি। বিকেলে খেলতাম, সন্ধ্যার পর ঘরে ফিরতাম। সন্ধ্যার অন্ধকারই ছিলো আমাদের প্রজন্মের ঘরে ফিরার সংকেত।

এক বাড়িতে মেহমান এলে গোটা পাড়া যেন উৎসবে মেতে উঠত। অতিথি মানেই ছিলো পাড়া প্রতিবেশীর আনন্দ। হাই-রাইজ অ্যাপার্টমেন্ট তখনো আমাদের হাইলি এ্যাপার্ট করে দেয়নি।

অতিথির আনন্দে যেমন আনন্দিত হতাম । ঠিক তেমনি কারো মৃত্যু মানেই ছিল পুরো গ্রামজুড়ে নীরব শোক। লাশের সামনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ বক্তৃতা দেয়ারও প্রচলন যেমন ছিলোনা। ঠিক তেমনি কোনো ক্যামেরা, মাইক বা ফেসবুক লাইভও ছিল না। কিন্তু সবার হৃদয় কেঁপে উঠতো চির বিদায়ের দহনজ্বালায়।

আমরা শুধু খাবার নয় জামা, জুতো, খুশি আর কষ্টও ভাগাভাগি করতাম। গোপন কথাগুলো বন্ধুদের কাছে পরম বিশ্বাসে শেয়ার করতাম। প্রয়োজনে কারো বাড়ি থেকে কিছু চেয়ে নেওয়া লজ্জার ছিলো না, বরং ছিলো সম্পর্কের প্রগাঢ়তা।

আমরা অনর্থক নাচতাম না বরং বড়দের সম্মানে দাঁড়িয়ে থাকতাম। খাবার মাটিতে পড়ে গেলো তুলে খেতাম। নানা রকমের জীবানু , অসুখের ভয়ের চেয়ে মায়ের হাতে দেওয়া খাবারের প্রতি ছিলো অগাধ বিশ্বাস।

আমাদের প্রজন্ম ছিলো মমতা আর ভালোবাসা মাখানো দরিদ্র প্রজন্ম। পকেট ফাঁকা ছিল, কিন্তু মন ভরা থাকত ভালোবাসায়। আজ রেস্তোরাঁ বেড়েছে, ওয়ালেট ফুলেছে। তবে তার সাথে বেড়েছে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ আর একাকিত্ব।


আমরা বড় হয়েছি পারস্পরিক ভালোবাসা, ক্ষমা আর সহনশীলতায়। অভিভাবক, শিক্ষক, পুলিশ, সৈনিক, প্রতিবেশী সবার প্রতি ছিলো এক রকম নিঃশর্ত সম্মান। বন্ধুত্ব মানে ছিলো আত্মার বন্ধন। সোসাল মিডিয়া ছিলোনা, তবে সত্যিকারের সামাজিকতা ছিলো। ভার্চুয়াল হাজারো বন্ধু ছিলোনা কিন্তু বন্ধুত্ব দারুণ অর্থবহ ছিল। পারষ্পরিক সম্পর্ক শুধুমাত্র সেলফি আর রিঅ্যাকশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না।

যে কোনো প্রজন্মের জন্য তার ফেলা আসা শৈশব নির্মল, সুন্দর। কিন্তু ভাবনা জাগে এতো হিংসা, এতো ঘৃণা, এতো জাজমেন্ট আর এরকম অসহিষ্নুতার ভিতর যে প্রজন্ম আজ বেড়ে ওঠছে তাদের শৈশবটাও কি তাদের কাছে একদিন এতো সুন্দর আর এতো স্নিগ্ধ মনে হবে

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.