নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আরিফ আটলান্টা

আরিফ আটলান্টা › বিস্তারিত পোস্টঃ

তাকে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে দাও।

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১০:২৫

গ্ল্যামার বলতে বুঝায় সেইসব জিনিস যা দেখে অন্যরা ঈর্ষান্বিত হয়। যার গ্ল্যামার যত বেশি, তাকে ঘিরে ঈর্ষার ছায়াও তত বেশি। আজকের আধুনিক যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ নানা রকম আনন্দ, সুখ, সাফল্য, ভ্রমণ ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করে থাকেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে অন্য কেউ যদি তা দেখে ঈর্ষান্বিত হয়, তা হলে কি মানুষ আর সেগুলো শেয়ার করবে না? অবশ্যই করবে। কারণ সুখ এবং সাফল্যের অনুভূতি ভাগাভাগি করার মধ্যেই অনেকের মনে প্রশান্তি আসে।

কিন্তু বিষয়টি গভীর। Ipsos নামক সোসাল রিসার্চ কোম্পানির এক জরিপে দেখা গেছে, মানুষের প্রদর্শিত সুখ-আনন্দের মাত্র ১৫ শতাংশই হয়তো বাস্তব। বাকিটা মিথ্যা বা সাজানো। আর যদি এই ১৫ শতাংশও সত্য হতো তাহলে হয়তো ৮৫ শতাংশ সংসার এত সহজে ভাঙ্গতো না।

জীবনের সত্যিকার কঠোর বাস্তবতা অনেক সময় আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় না। অনেক বিখ্যাত লেখক নিজেদের আত্মজীবনীগুলোতেও সত্যের থেকে অনেক দূরে থাকেন। এমনকি একজন চোরকেও যদি বলা হয়, সে নিজের জীবনীতে নিজেকে বিশ্বের সবচেয়ে সৎ ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপন করবে। এটি কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। সেজন্য যা প্রকাশিত হয় তা পড়েই অতি আবেগে ভেসে যেতে হয় না।

কিছুদিন আগে আনোয়ার সৈয়দ হকের এক টিভি সাক্ষাৎকারে শুনলাম, ঢাকায় প্রতি ২২ মিনিটে একটা করে সংসার ভাঙ্গে । অর্থাৎ নতুন কোনো স্বপ্ন নিয়ে শুরু হওয়া সংসারগুলো বাস্তব জীবনের নানা চ্যালেঞ্জে ধুঁকছে। যে স্বপ্ন নিয়ে মানুষ সংসার শুরু করে, সেটা নানা রূপে প্রকাশ পায় সংসার শুরুর পরে । কেউ যদি ভাবেন স্বামী সবসময় গোলাপের তোড়া নিয়ে আসবে বা স্ত্রী সবসময় অপ্সরার মতো থাকবে, সেটি বাস্তবের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন। প্রেমের প্রথম পর্বে যেমন শুধু মধুর সুবাস থাকে, সংসারে সেটি অব্যাহত থাকে না। সেখানে থাকে বাড়িভাড়া, বাজার, বিল পরিশোধ, সন্তানের যত্ন, ডায়াপার, যানজট, অসুস্থতা ইত্যাদি। এই বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারলে সংসার দুর্বল হয়ে পড়ে।

রোমান্স চিরকাল স্থায়ী নয়। সবচেয়ে রোমান্টিক কবিও সবসময় সেই কবিতা লিখতে পারে না যেটা প্রথমবার লিখেছিল। কোনো মেয়ে হয়তো একজন লেখকের রোমান্টিক লেখায় প্রেমে পড়ে। কিন্তু সে বুঝতে পারেনা। এটা শুধু লেখার রোমান্টিকতা বাস্তবের নয়।
আমি একবার পড়েছিলাম জাপানের সংস্কৃতিতে ভালোবাসাকে কেবল আকর্ষণ বা বড় রোমান্সের মাধ্যমে বোঝানো হয় না। তাদের কাছে ভালোবাসার সবচেয় বড় অর্থ হলো কারো ব্যক্তিগত স্থান এবং সম্মান। ভালোবাসা মানে হলো কাউকে সর্বক্ষণ প্রশ্নের ঘেরাটোপে না রেখে বরং তাকে শ্বাস নিতে দেওয়া।

জাপানে এমন একটি ধারণা আছে যাকে বলে ‘ওয়াকাকে বুফুয়েৰু’ অর্থাৎ কারো পাশে শব্দহীন থাকা, একসাথে নিরবতা ভোগ করা। সেই নীরবতা উপলব্ধি করা যে নীরবতায় তারা অনুধাবন করে - এই পাশে থাকা মানুষটির কোনো না কোনো ভালো দিক রয়েছে। আর এই নীরবতাই হলো সবচেয়ে বড় শান্তির প্রকাশ। অনেক সংস্কৃতিতে নিরবতা সমস্যা মনে হলেও, জাপানে এটি সম্পর্কের গভীরতার নিদর্শন হিসাবে মনে করা হয় এবং তারা মনে করে সংসারের সুখের জন্য অনেক সময় জীবনে বৃক্ষ হয়ে যেতে হয়।

তাদের কাছে ভালোবাসার অর্থ সবসময় দামি ফুড, ফুলের তোড়া, দামি ভেকেশান, সোসাল মিডিয়ায় নিজেকে প্রদর্শন, সারাক্ষণ একে অন্যের প্রশংসা জ্ঞাপন নয়। আবার স্বাধীনতা মানে শুধু অবাধ মুক্তি কিংবা দূরত্ব মানে সম্পর্কের শেষও নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো একে অপরের মৌলিক স্বাধীনতায় বাধা না দেওয়া।

সুখ কোনো দাবি নয়। বরং সম্পর্কের মধ্যে যে শান্তি আসে সেটিই প্রকৃত সুখ। এ কারণেই জাপানে তালাকের হার কম। কারণ তাদের সম্পর্ক নির্মিত হয় সম্মানের ওপর, নীরব যত্নের ওপর এবং একে অপরকে নীরবে গভীরভাবে অনুভব করার উপর।
অন্যদিকে কেউ হয়তো মনে করেন অভাবেই সংসার ভেঙে যায়। কিন্তু এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। যদি সত্যিই তাই হতো তাহলে গরিবের সংসার বলে কিছুই থাকতো না। আর ধনীরাও কখনো সংসার ভাঙতো না।

সংসারে সত্যিকারের ভালোবাসা হলো তাকে সম্মান দাও। তাকে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে দাও।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.