নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আরিফ আটলান্টা

আরিফ আটলান্টা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেরি হবসন এক জ্বলন্ত অনুপ্রেরণা

৩১ শে অক্টোবর, ২০২৫ ভোর ৫:০৮

হাসপাতালের একটি নীরব কক্ষে ৫৬ বছর বয়সী এক নারী শুয়ে আছেন। নাম মেরি হবসন। চোখে ক্লান্তি, মুখে পরাজয়ের ছাপ। একটার পর একটা অসুখ, দুঃখ আর মানসিক ভাঙনের পর তিনি যেন জীবনের প্রতি সব আগ্রহই হারিয়ে ফেলেছেন। একদিন নিঃসঙ্গ দুপুরে একটু মানসিক প্রশান্তি পাবেন এই আশায় তিনি হাত বাড়ালেন পাশে রাখা একটি ম্যাগাজিনের দিকে। পাতা উল্টাতে উল্টাতে হঠাৎই চোখ আটকে গেল এক লেখায়। সেই লেখাটিই যেন তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিলো চিরদিনের জন্য।

ম্যাগাজিনের পাতায় লেখাঃ

"ফ্র্যাঙ্কলিন রুজভেল্ট ৩৯ বছর বয়সে কোমর থেকে নিচ পর্যন্ত পঙ্গু হয়ে পড়েন। তবুও ৫১ বছর বয়সে তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। স্টিভ ওয়ান্ডার জন্মের পর থেকেই অন্ধ ছিলেন। তবুও ১৩ বছর বয়সেই তিনি হয়ে ওঠেন আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় শিশু শিল্পী। রিচার্ড ব্র্যানসন ডিসলেক্সিয়ায় ভুগে ১৫ বছর বয়সে স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু ২৪ বছর বয়সে তিনি কোটিপতি আর ৪১ বছর বয়সে হয়ে যেন একজন সম্পদশালী বিলিওনীয়ার।

ব্যর্থতার হাজারো অজুহাত খুঁজে পাওয়া সহজ। কিন্তু সাফল্য খুঁজে নিতে হয় নিজের ভেতরের আগুনে। অনেক সময় প্রবল চাপের ভেতরেই মানুষ তার প্রকৃত আশীর্বাদ খুঁজে পায়। অনেক সময় কঠিন পরিস্থিতি মানুষের মনোবলকে শক্ত করে তোলে"।

ম্যাগাজিনের পাতায় রাখা মেরির চোখ এখন বইয়ের দিকে নয় । বরং নিজের ভেতরের দিকে। যে ওষুধ তার মনে শক্তি আনতে পারেনি, সেই কয়েকটি বাক্য যেন তার প্রাণে নতুন আশা জাগিয়ে দিলো। সেই মুহূর্তে মেরি প্রতিজ্ঞা করলেন- তিনি হার মানবেন না। তিনি লড়বেন শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত।

ধীরে ধীরে তিনি সুস্থ হতে শুরু করলেন। হাসপাতালের সেই বিছানা থেকে একদিন ঘরে ফিরলেন। আর তখনই সিদ্ধান্ত নিলেন যা অসম্পূর্ণ ছিল, তা আবার শুরু করবেন।

যে স্কুল থেকে তিনি ড্রপ আউট হয়েছিলেন, সেখানে আবার ভর্তি হলেন। ৫৬ বছর বয়সে তিনি ক্লাসে বসলেন চৌদ্দ পনের বছরের কিশোরদের পাশে। দুই বছর পর সফলভাবে হাইস্কুল পাস করলেন নিজ ক্লাসের সবচেয়ে সেরা ছাত্রী হিসাবে মাথা উঁচু করে।

কিন্তু গল্প এখানেই শেষ নয়।

হাইস্কুলে পড়ার সময় তিনি পড়লেন এক বিখ্যাত বই। লিও টলস্টয়ের লেখা পৃথিবীর অন্যতম একটা সেরা উপন্যাস ওয়ার এণ্ড পীস।
ইংরেজি অনুবাদ পড়ে যেন কিছুতেই তাঁর মন ভরছিল না। তিনি বুঝলেন কোনো সাহিত্যকে সত্যিকারভাবে অনুভব করতে হলে তার ভাষাটিকেই আগে ভালোভাবে জানতে হয়।

৬২ বছর বয়সে একজন রুশ অভিবাসী শিক্ষিকার কাছে তিনি রুশ ভাষা শেখা শুরু করলেন । প্রতিটি অক্ষর, উচ্চারণ, শব্দ সবকিছু একেবারে নতুন করে শেখা। তাঁর মধ্যে জেগে উঠেছিল এক শিশুর মতো কৌতূহল আর একনিষ্ঠ সাধকের মতো ধৈর্য। ভাষা শেখা সম্পর্কে সবচেয়ে সাধারণ ভুল ধারণাগুলোর একটি হলো একটি ভাষায় উচ্চ পর্যায়ের দক্ষতা বা সাবলীলতা অর্জনের জন্য খুব অল্প বয়সী হওয়া জরুরি। ৬২ বছর বয়সে এসে মেরি সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করলেন। তিনি রুশ ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠলেন।

পরের ধাপে তিনি ভর্তি হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্লাভিক ভাষাতত্ত্ব বিভাগে তরুণ শিক্ষার্থীদের সাথে। বয়স যেন তার জন্য কোনো বাধাই ছিল না। ৬৫ বছর বয়সে তিনি মস্কো যান ভাষা প্রশিক্ষণের জন্য। রুশ গ্রন্থাগারে ঘন্টার পর ঘন্টা ডুবে থাকতেন এবং সেখানেই শুরু করলেন ওয়ার এণ্ড পিস এর একেবারে নিজস্ব সাবলীল অনুবাদ।

এরপর ৭৪ বছর বয়সে তিনি রুশ ভাষায় পিএইচডি অর্জন করলেন। আর হয়ে উঠলেন একজন পেশাদার সাহিত্য অনুবাদক। ইংরেজি , রুশ ভাষা ছাড়াও আরো আটটি ভাষায় আয়ত্ত করলেন যখন তার বয়স ৮৩ বছর। কী অবিশ্বাস্য ব্যাপার। এই বয়সে তিনি অনুবাদ করলেন পুশকিনের সমস্ত রচনা। নিজের কণ্ঠে রেকর্ড করলেন তাঁর লেখা কবিতার অডিওবুক । সাহিত্যে নোবেল দেয়ার জন্য জোর দাবী ওঠেছিলো। কিন্তু অনুবাদ সাহিত্যের হওয়ায় তিনি নোবেল পান নি। কিন্তু পেয়েছেন রুশ সাহিত্যের সবচেয়ে সম্মানজনক Pushkin Gold Medal ও Devotee Award।


মেরি হবসন প্রমাণ করেছেন- শেখার আগ্রহ কোনো বয়সেের সীমানায় আটকাতে পারেনা। আর দেরিতে শুরু করাও কখনো ব্যর্থতা নয়।
বরং দেরিতে শুরু করা কখনো শুরু না করার চেয়ে অনেক ভালো।

যে নারী একদিন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে জীবন শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি ৯৪ বছর বয়সে পূর্ণ দীপ্তি নিয়ে কোটি মানুষের অনুপ্রেরণার উদাহরণ হয়ে জীবনের সমাপ্তি টানলেন ২০২০ সালে।


চাইলে আমরা সারাদিন নানা নেগেটিভ বিষয় নিয়ে পড়ে থাকতে পারি। আবার অনুপ্রেরণার গল্পগুলোও ছড়িয়ে দিতে পারি। কোনো ঘটনা, কোনো লেখা, কোনো গল্প আমরা জানিনা কার জীবনকে কিভাবে বদলতে দিতে পারে। যেমন বদলে দিয়েছিলো হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা মেরির জীবনকে ম্যাগাজিনের ছোট একটা পাতা।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে নভেম্বর, ২০২৫ ভোর ৬:২২

হুমায়রা হারুন বলেছেন: চমৎকার

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.