![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
'ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসি মোদের বাড়ি এসো খাট নাই পালঙ্ক নাই খোকার চোখে বসো।'
এভাবে গান গেয়ে ছোট মেয়ে নিধিকে ঘুম পাড়াচ্ছিলেন মা। আর ওদিকে দুষ্টুমিতে মেতেছে বড় ছেলে উপল। উপলের দুষ্টুমিতে মায়ের অবস্থা একেবারে আইঢাই। এই বুঝি পড়ে গেলো। হয় সে নিজে পড়লো, না হয় পানির গল্গাসটা ফেললো কিংবা একসঙ্গেই পড়লো। কিছু বললেই উপলের চোখে-মুখে উত্তর, গ্লাসটা ধরতে গিয়ে বসে পড়েছি তো।
নিধির ঘুমটা খুব পাতলা, একটু শব্দ হলেই ব্যস, অমনি ট্যাঁ করে ওঠে। সেদিক থেকে উপলের বেলায় বেশ আরাম ছিলো। একটু কোলে নিয়ে গুনগুন করলেই ঘুমিয়ে যেতো। মেয়েটিকে নিয়ে হয়েছে বড্ড জ্বালা। মোটেই ঘুমায় না। সব সময় কোলে কোলে। নিধিকে কোলে নিয়েই মা এবার বাইরে এলেন। এসে দেখেন, উপল কার্টুন দেখছে। পড়ার কথা বলতেই বললো, আমি ভাবছি কী পড়বো। কার্টুন দেখলে ব্রেনটা শার্প হয়। উপলের কথা শুনে খানিক থেমে মা টিভির সুইচটা বন্ধ করে দিলেন এবং কান ধরে এনে পড়ার টেবিলে বসালেন। তারপর আবার নিধিকে নিয়ে পায়চারি শুরু করলেন। ওমা! ১০ মিনিট হবে কী না সন্দেহ, এসে দেখেন, উপল ঘুমাচ্ছে। মা তো রেগেমেগে অস্থির। মেজাজ খারাপ করে বললেন, টিভি দেখলে ঘুম আসে না, পড়তে বসলেই অমনি ঘুম, তাই না। যাও, চোখে-মুখে পানি দিয়ে এসো। চোখে-মুখে পানি দিয়ে পড়তে বসো। ওঠো। উপল বললো, মা, আমি ভাবছি তো। চুপ, আর একটা কথা না, ওঠো।
উপল বাধ্য হয়ে উঠে বেসিনে গিয়ে চোখে-মুখে পানি দিলো। আর অমনি ঘুমপাড়ানি মাসিটা পিসিকে বললো, দেখছেন আপা, এ জন্য আর ঘুম পাড়াতে যেতে ইচ্ছা করে না। ছেলেটার চোখে একটু বসেছি কি-না অমনি গায়ে পানি দিয়ে দিলো। উহ, এখন কী হবে। আমার আবার ঠাণ্ডা লেগেছে। আপনি এ কথা বলছেন আপা, আমার এই লম্বা চুল ভিজে গেলে ১০ মিনিটের মধ্যে মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যাবে।
মাসি আর পিসি এমনি কথোপকথনে মেতেছে সন্ধ্যাবেলায়। কী ব্যাপার, আপনি আবার কোথায় যাচ্ছেন। বসেন, আপনার চুলগুলো শুকিয়ে দিই। আমার হেয়ার ড্রায়ার আছে, বললো মাসি। পিসি বললো, না না আপা, একদম না। চুল রুক্ষ হয়ে যাবে। তার চেয়ে চলেন ওই যে আমাদের কে যেন ডাকছে। তাদের চোখে ঘুম দিয়ে আসি। কী বলেন আপনি, তা-ও আজ যাবেন, বললো মাসি। পিসি বললো, না গেলে হয়! সারা রাত ডেকে যাবে, তখন আর ঘুম হবে না। তার চেয়ে ওদের ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে এসে আমরা একটা ডিপ ঘুম দেব। চলুন যাই। বলেই উড়াল দিলো মাসি-পিসি। পিসি লম্বা চুল মেলে উড়াল দিলে মাসি ফোড়ন কাটলো, কেশ বাঁধেন, ভূতে ধরবে তো। পিসি বললো, না ভাই, চুল ভেজা, বাতাসে শুকিয়ে নিই।
নিধি এখনও ঘুমায়নি। মাসি-পিসি প্রথমেই ওকে ঘুম দিলো। মা এবার নিশ্চিন্ত মনে উপলকে পড়াতে বসলো। উপল হাই তুলতেই মা বললেন, মুখে হাত দাও, ঘুম ঢুকে যাবে তো। আর এটা ব্যাড ম্যানার না। মাসি-পিসি এদিকে আসতে গিয়েই উপলের হাতের ধাক্কায় আবার উড়াল দিলো। তারপর সব বাচ্চার ঘুম পাড়িয়ে আবার দু'জন নিজের বাসায় ফিরতে শুরু করলো। আসার সময় দেখলো, একটা ছোট্ট বাচ্চা ফুটপাতে শুয়ে তারা দেখছে। পাশে তার মা-বাবা ঘুমাচ্ছেন। বাচ্চার পেটে খাবার নেই, ক্ষুধায় ঘুম আসছে না। মাসি-পিসি ওকে আদর করে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে রাতের খাবার খেয়ে নিজেদের বাসায় গেলো।
বাসায় গিয়ে ঘুমাতে যাবে এমন সময় আবার তারা কার যেন ডাক শুনতে পেলো। কী আর করা, মাসি-পিসি তো! না গেলে কি আর হয়? তাই আবার তারা উড়াল দিলো। এসে দেখে, একটা ছোট্ট বাচ্চাকে টিকা দেওয়া হয়েছে। তাই ব্যথায় কিছুতেই ঘুম আসতে পারছে না। মা কোলে নিয়ে ঢুলছেন, আবার কোলে নিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছেন। কিছুতেই কিচ্ছু হচ্ছে না। পাশে বাবাটা মোষের মতো নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন। মাসি পিসিকে বললো, বাবার ঘুমটা ভাঙিয়ে দেন। পিসি বুদ্ধি করে বললো, না বোন, এ কাজ কোরো না। তাতে মা-মেয়ে দু'জনকেই বকা শুনতে হবে। তার চেয়ে এসো মেয়েটাকে ঘুম পাড়িয়ে দিই। আর বাচ্চাটার সঙ্গে খেলা করি। তাতে ও হাত-পা নেড়ে খেলা করলে ব্যথা ভালো হয়ে যাবে। বাব্বা, এতো ছোট বাচ্চাকে কেউ দুটো টিকা একসঙ্গে দেয়। তা বলছো কেন? ওর ভালোর জন্যই তো দিয়েছে।
মাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে বাচ্চাটার সঙ্গে মাসি-পিসি খেলা শুরু করলো। বাচ্চাটা হাত-পা নেড়ে খেলা করছে, আর হাসছে। অনেকক্ষণ পর মা আবার জেগে উঠলেন এবং বাচ্চাটার গায়ে হাত বোলাতে লাগলেন। বাচ্চাটা আরাম পেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। এমন সময় ফজরের আজান দিলো। মাসি-পিসি তাদের বাসায় ফিরলো এবং সারা দিন ঘুমালো। রাতের বেলা আমাদের ঘুম দিতে হবে তো, তাই সারা দিন ওরা ঘুম জমা করে রাখে। আর রাতের বেলা আমাদের একটু একটু করে দিয়ে যায়। তবে মাসি-পিসির উড়তে খুব সমস্যা হয় কেন জানো?
চারদিকে এতো কারেন্ট আর ডিশের তার যে তারা ইচ্ছে করলেই আসতে পারে না। তাই তো আমাদের চোখে আগের মতো আর ঘুম আসে না। ঘুম আসে না বলেই তো এতো অসুখ হয়। তাই আমাদেরই ওই তারগুলো সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসি আবার আগের মতো অবাধে উড়ে বেড়াতে পারবে!
১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২৫
আরিফুন নেছা সুখী বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৪০
হানিফ রাশেদীন বলেছেন: বারহ! সুন্দর হয়েছে ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসি।