![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নেতাজিই স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, এই সত্য ঘোষণার সাহস দেখাবেন কে, কবে?
হারাধন চৌধুরী সৌজন্য-- বর্তমান পত্রিকা থে্কে অনুলিখিত
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন লর্ড ক্লিমেন্ট এটলি। কী কী শর্তে ভারতকে স্বাধীনতা দেওয়া হবে তা ভারতের নেতাদের সঙ্গে বসে স্থির করেছিল (সেটলিং টার্মস ও অফ ইন্ডিয়া’স ইনডিপেন্ডেন্স উইথ হার লিডারস) ক্যাবিনেট মিশন। ইংরেজদের ভারত ছেড়ে পালানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পর কোনও একসময় এই এটলি সাহেবকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, অবশেষে তাঁরা এমন সিদ্ধান্ত নিলেন কি গান্ধীজির ভারত ছাড়ো আন্দোলনের গুঁতোয়? মৃদু হেসে এটলি সাহেব পরিষ্কার করে বলেছিলেন, ‘‘না।’’ তিনি যে একাধিক কারণ দেখিয়েছিলেন, তার মধ্যে প্রথমটি ছিল নেতাজি-ভীতি। নেতাজির ভয়ে। (ইট ওয়াজ বিকজ অফ ওয়ারটাইম অ্যাক্টিভিটিজ অফ দি আইএনএ)। এটলি সাহেব ১৯৫৬ সালে কলকাতা এসে রাজভবনে দিন দুই ছিলেন। তৎকালীন রাজ্যপালের (ফণিভূষণ চক্রবর্তী, যিনি কলকাতা হাইকোর্টের প্রথম ভারতীয় স্থায়ী প্রধান বিচারপতিও হন) প্রশ্নের জবাবে তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, নেতাজির আজাদ হিন্দ বাহিনীর দুঃসাহসিক কার্যকলাপে ভারতে ব্রিটিশরাজের ভিত্তি প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। ভারতের সেনাবাহিনীকে ব্রিটিশদের জন্য মোটেই নিরাপদ ঠেকছিল না। সুতরাং অবিলম্বে ভারত ছেড়ে যাওয়া ভিন্ন ইংরেজদের সামনে বিকল্প কিছু ছিল না। ইংরেজের ভারত ছাড়ার পিছনে গান্ধীজির বিয়াল্লিশের আন্দোলনের ভূমিকা যদি কিছু থেকে থাকে তো সে ‘সামান্যই’। ইতিহাস সচেতন যে-কোনও মানুষই জানেন, নেতাজি শুধু ভারতের এক নেতা নন, আসলে এক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন। পৃথিবীর বহু দেশই তাঁকে সমীহ করত। তাঁর অসীম সাহস এবং অখণ্ড ভারতের স্বাধীনতার স্বপ্নময় এই নিষ্কলুষ প্রাণকে তারা বিস্ময়ের দৃষ্টিতে উপলব্ধি করত। অথচ, সেই মানুষটির অভূতপূর্ব কীর্তি-কাহিনীকে খাটো করেছেন তাঁর নিজেরই দেশের একদল পিগমি নেতা। এটি করা হয়েছে গান্ধীজির উপর দেবত্ব আরোপ করার তাগিদে। আর ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনে জওহরলাল নেহরুর ভূমিকা এবং পরবর্তী কালে ভারত গঠনে তাঁর পারিবারিক উত্তরসূরিদের অবদানকে ‘মহান’ হিসেবে তুলে ধরার নির্লজ্জতা। সম্ভবত সেই কারণেই আজকের দিল্লির কংগ্রেস নেতৃত্বকে বড় মুখ করে বলতে হচ্ছে, ‘‘আমি তো কলা খাইনি।’’ রবিবার লালকেল্লায় আজাদ হিন্দ সরকারের পঁচাত্তর বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একবারও জওহরলাল নেহরুর নাম নেননি। তিনি বলেছেন, ‘‘একটি পরিবারকে বড় করতে গিয়ে নেতাজির মতো ব্যক্তিত্বকে খাটো করা হয়েছে। সুভাষচন্দ্র বসুর অবদানকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।’’ আর যায় কোথায়! ছুটির দিনেই দলীয় অফিস খুলে বসে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কংগ্রেসের তাবড় নেতারা। অভিষেক মনু সিংভি বলেছেন, ‘‘আজকের মতো একটি শুভদিনেও রোজকার রাজনীতি করলেন প্রধানমন্ত্রী! ভারতের স্বাধীনতার যুদ্ধে নেতাজির অবদান চিরস্মরণীয়। কিন্তু, মোদিজি আজাদ হিন্দ সরকারের ৭৫ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে নেতাজিকে ন্যক্কারজনকভাবে রাজনীতির চক্রব্যূহে টেনে আনলেন।’’ প্রধানমন্ত্রী সরাসরি কারও নামে অভিযোগ আনেননি। তাহলে রাহুল গান্ধীর দলের গায়ে লাগল কেন? কংগ্রেসিদের সাফাইটি ‘‘আমি তো কলা খাইনি’’ গোছের হয়ে গেল না কি? তার মানে ‘ঠাকুর ঘরে’ অবশ্যই ছিল কেউ। ‘‘নেতাজির অবদান চিরস্মরণীয়’’, এই সত্যটি কংগ্রেসিদের মুখে স্বীকার করতে দেখে ভালোই লাগছে। এরজন্য মোদিজির কাছে অনেককেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে দেখছি। এতদিন কংগ্রেসের জাতীয় নেতাদের মুখ দিয়ে এটা কেউই বলাতে পারেননি, যেটা আজ মোদিজি পারলেন। নেতাজির অবদান যদি তাদের কাছেও চিরস্মরণীয় হবে, শাসনক্ষমতায় অবস্থানকালে কংগ্রেসের কোন সরকার নেতাজিকে কী কী ভাবে স্মরণ করেছে, তার একটি তালিকা পেলে বাধিত হই। নেহরুজি, ইন্দিরাজি, রাজীবজি প্রমুখের নামে কত সরকারি প্রকল্প আর প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছিল আর নেতাজির নামে কী কী চালু করেছিলেন নেহরুজি থেকে মনমোহন সিং, জানতে ইচ্ছে হচ্ছে। আসলে মিথ্যাচারের সীমা লঙ্ঘন করেই অভ্যস্ত আমাদের এই পোড়ার দেশের রাজনীতি। নরেন্দ্র মোদি নাকি নেতাজিকে নিয়ে রোজকার রাজনীতি করছেন আর তাঁকে রাজনীতির চক্রব্যূহেও টেনে এনেছেন ন্যক্কারজনকভাবে! তা সিংভি মশায়, মোদিজিকে এত বড় পরিসর সযত্নে তৈরি করে দিয়েছেন কে বা কারা, তার জবাবটি না-দিলে যে লোকে দুয়ো দিতে ছাড়বে না। সিংভি মশায়দের বক্তব্য অনুযায়ী, বিজেপি-আরএসএস প্রভৃতি বড়ই মন্দ। তা বেশ। কিন্তু, মন্দ লোকে যে-ভালো-কাজটি করে দেখাল সেটি আপনাদের জমানা থাকলে হওয়া সম্ভব ছিল কি? আজাদ হিন্দ সরকারের প্ল্যাটিনাম জুবিলি উদযাপনের জন্য আপনাদের মনে কী পরিকল্পনা ছিল, একটু খোলসা করে বলুন। সব হয়ে যাওয়ার পর আজ আপনাদের যা হাঁকডাক শুনছি, তাতে বোধকরি আপনারা আরও বড় আকারেই মহতী অনুষ্ঠান করতেন, হয়তো-বা বর্ষব্যাপী! তার প্রস্তুতি নিশ্চয় চার-পাঁচ বছর আগেই নিয়েছিলেন। তাই তো? তবে বলুন সংক্ষেপে। আর না-বলতে পারলে আমরা বলব, অনেক হয়েছে, এবার থামুন দয়া করে। যা হয়েছে, সেটাকে ভালো বলে মেনে নিন। প্রায়শ্চিত্ত দেরিতে করলেও পুণ্য হয় অল্পস্বল্প হলেও।
নেতাজিতে দেবত্ব আরোপ করার দাবি নয়। তাঁকে মহিমান্বিত করার আবেগও রাখি না। একজন মহানকে তাঁর স্বীকৃতি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রায়শ্চিত্ত করাই যায়। বিচার দেরিতে পাওয়া আর অবিচারের মধ্যে নাকি পার্থক্য বিশেষ থাকে না। মহামান্য বিচারাসনে বসবার যোগ্যতা কোথায় আমাদের। তাই আমরা কাউকে বিচার করতে যাব না। প্রায়শ্চিত্ত যে-কোনও মানুষই করতে পারি। সে বরং বোধোদয়ের লক্ষণ। নেতাজির সংগ্রামের ইতিহাস রাজনীতির যূপকাষ্ঠে চড়ানো হয়েছিল, সেটারই আংশিক স্বীকৃতি আদায় হল আজ।
কেউ একজন আন্তর্জাতিক হতে পারেন। আমরা আপত্তি করব না। একজন একটি বিশেষ পরিবারেরও ভক্ত হতে পারেন। তাতেও আপত্তি নেই। ভারতের বুকে সবচেয়ে মহান দেশপ্রেমিক যিনি, তাঁর ভক্ত হলে কারও আপত্তি থাকার তো কথা নয়। তাহলে হঠাৎ এত গুঞ্জন কীসের! প্রতিক্রিয়া বলেছে, কেউ কেউ বড্ড ব্যথা পেয়েছেন। মাস কয়েক বাদেই যে দেশের সবচেয়ে বড় ভোট! কেউ কেউ বলছেন, মোদিজি অকস্মাৎ ‘নেতাজি তাস’ খেললেন ভোটে জেতার তাগিদে। প্রশ্ন হল, ভোট তো অতীতেও কম বার হয়নি, কোনও বার নেতাজির জন্য একফোঁটা গর্ব করতে তো শুনিনি কংগ্রেসি সাহেবদের। কেন? কারণ খুব সোজা—নেতাজির সামান্য গুরুত্বও কংগ্রেস কখনও স্বীকার করেনি। তবে মনে হয়, অগ্নিপরীক্ষার বছর ২০১৯। আগামী বছর ২১ অক্টোবর কোন দল বা জোট সরকারে থাকবে আমরা জানি না। কারণ, তার মাস কয়েক আগেই লোকসভার ভোট অনুষ্ঠানসহ নতুন সরকার গঠন হয়ে যাওয়ার কথা। তাই সেদিনের জন্য একটি বিরাট প্রশ্নচিহ্ন আমাদের সামনে ঝুলে থাকছে। যদি আগামী ২১ অক্টোবর এবং তার পরবর্তী ২১ অক্টোবর দিনগুলিতেও আজাদ হিন্দ সরকার অনুরূপভাবে সম্মানিত হতে থাকে, তবে বুঝতে হবে ভারতের রাজনীতি সাবালক হয়েছে। কোনও বছর ১৫ আগস্টের পর এবারই প্রথম লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা তুললেন প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয়বার (২১ অক্টোবর)। ওইসঙ্গে ঘোষণা করলেন, লালকেল্লার ভিতরে গড়া হবে আইএনএ মিউজিয়াম এবং সেটির উদ্বোধন আগামী ২৩ জানুয়ারি, অর্থাৎ সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনে। নেতাজির নামে প্রতি বছর পুলিস সম্মান প্রদানের কথাও জানান তিনি। দাবি করেন, নেতাজির স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যেই কাজ করছে তাঁর সরকার। কিন্তু, দেশপ্রেমিকদের দাবি আরও অনেক বেশি। ভারতীয় টাকায় কেন নেতাজির ছবিও ব্যবহার করা হবে না? ইন্ডিয়ান মিলিটারি বা ডিফেন্স অ্যাকাডেমি নেতাজিরই নামে উৎসর্গ হওয়া উচিত। তাঁর নামে চাই গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও মেডিকেল গবেষণা কেন্দ্র—ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এবং এইমস-এর সমমানের। তাঁর জন্মদিনে আমরা ছুটি চাই না। বরং সমস্ত বরণীয় ব্যক্তির জন্মদিনে ছুটি বাতিল ঘোষিত হোক। পরিবর্তে সেইসব দিনে নেওয়া হোক আরও বেশি সৎকর্মের প্রতিজ্ঞা। আমরা চাই, নেতাজির জন্মদিনটি কেন্দ্রীয় সরকারি উদ্যোগে বিশেষভাবে পালনের সিদ্ধান্ত। ‘দেশপ্রেম দিবস’ হিসাবে পালনের যে দাবি ফরওয়ার্ড ব্লক দীর্ঘদিন যাবৎ জানিয়ে আসছে, সেটিকেও এবার সম্মান জানানো যেতে পারে। ১৯৪৩ সালের ২১ অক্টোবর সিঙ্গাপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় আজাদ হিন্দ সরকার। যে সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। ২৩ অক্টোবর জাপান ওই সরকারকে স্বীকৃতি দেয়। অতঃপর স্বীকৃতি মেলে জার্মানি, ইতালি, ক্রোয়েশিয়া, মাঞ্চুকো, নানকিং, ফিলিপিন্স, থাইল্যান্ড এবং বার্মার। আয়ারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট ইমন ডি ভ্যালেরা সুভাষচন্দ্রকে ব্যক্তিগত অভিনন্দন পাঠান। পরদিনই ব্রিটেন এবং আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে আজাদ হিন্দ সরকার। নেতাজি ‘দিল্লি চলো’ ডাক দেন। অতএব এই বিরাট মাপের ঘটনার কথা মনে রেখে এখনই স্বীকৃতি দেওয়া কর্তব্য যে, আর কেউ নন, স্বয়ং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুই হলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তবে, এই সাহস কবে কার হবে তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতেই হবে। কারণ, সিদ্ধান্তটি এতই বিতর্কিত যে তখন ১৫ আগস্ট কী নামে আখ্যায়িত হবে, উঠবে সেই প্রশ্নও। স্বাধীনতার বয়সটাও ঘোষণা করতে হবে নতুন করে। কারণ, একটি দেশে একইকালে দুটি স্বাধীনতা দিবস থাকবে কী করে? তখন কি বলা হবে—১৯৪৭ নিছকই ক্ষমতা হস্তান্তর বা ভারতভাগের এক মর্মান্তিক বছর? এই চরম সত্যটি মেনে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে কি ভারতের আজকের রাজনীতি?
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫০
রাজীব নুর বলেছেন: পুরাতন ব্যাপার স্যাপার নিয়ে ভাবতে চাই না। নতুন সমস্যার শেষ নাই।