নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শব্দ শ্রমিক! কেবলই গেঁথে যাই শব্দের মালা।

অরণ্য মিজান

শব্দ শ্রমিক! কেবলই গেঁথে যাই শব্দের মালা।

অরণ্য মিজান › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাষ্ট্র-সমাজ-অর্থনীতি মানবতার আসল ভীতি!

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:২৯

আমাদের বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা যে সব তত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত তার অধিকাংশই ইতোমধ্যে তাত্ত্বিক ভাবে অসার বা ক্ষতিকর বা অনুপযুক্ত প্রমাণিত হলেও তা ব্যবহারিক জীবনে বহাল তবিয়তে কেবলমাত্র আমাদের মনো-দৈহিক অভ্যস্ততার কারণে। আমাদের সমাজ/রাষ্ট্র/অর্থনীতির তাত্ত্বিক কাঠামো বর্তমান সময়ের সাথে একেবারেই খাপছাড়া যা আমাদের ভৌত বিজ্ঞানের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে। পরিহাসের বিষয় এই তিন বিষয়ই নির্ধারণ করে আমাদের যাপিত জীবন!

জ্ঞান বিজ্ঞানের বিকাশের সাথে সাথে তা মানব জীবনকে সহজ ও উন্নত করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিরন্তর বিকাশের প্রত্যক্ষ সুফল ভোগ করি নিত্য দিন, পদার্থ বিজ্ঞানের বিকাশ আমাদের আমাদের অধিকাংশ কায়িক শ্রমের দায়িত্ব নিয়েছে, ইলেকট্রনিকস এর বিকাশ আমাদের জীবন ধারার মৌলিক কাঠামো বদলে দিয়েছে, পরমাণু বিজ্ঞানের বিকাশ মানুষকে প্রায় অসীম শক্তি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দিয়েছে। সেই সাথে তদূর্ধ্ব গতিতে বিকশিত হয়েছে আমাদের স্বজাতি ধ্বংসের অদম্য ইচ্ছা আর আত্ম-বিনাশী কৌশল।

পদার্থ বিজ্ঞান বা রসায়নের মত ভৌত বিজ্ঞান চর্চার সবচেয়ে বড় সুবিধা এর যে কোন তত্ত্বই বাস্তবে প্রয়োগের আগে গবেষণাগারে শতবার এর ফলাফল সম্পর্কে সুনিশ্চিত হওয়া যায়। অন্তত সুযোগ থাকে সজ্ঞানে কোন ক্ষতিকর বিজ্ঞান চর্চা না করার তারপরেও হরহামেশা তা হচ্ছে। কিন্তু সমাজ,রাষ্ট্র এবং অর্থনীতির মত বিজ্ঞান চর্চা বাস্তবে বার্থ হলে তবেই তা পরীক্ষাগারে পরীক্ষণ যোগ্য! যদিও এই তিন বিজ্ঞান নিয়ন্ত্রণ করে সমস্ত ভৌত বিজ্ঞান।

বিজ্ঞানের মূল স্বীকার্য হল যে কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব পর্যবেক্ষক নিরপেক্ষ ভাবে প্রকৃতির একটা নির্দিষ্ট ঘটনার সুনিশ্চিত ভবিষ্যতবাণী করবে। কিন্তু কোন বিমূর্ত পরিবর্তনশীল ধারণার ভবিষ্যৎ বানীর সঠিকত্ব বৈজ্ঞানিক ভাবে যাচাইয়ের কোন মূর্ত পদ্ধতি নাই। ফলে সমাজ/রাষ্ট্র/অর্থনীতির মত বিজ্ঞান চর্চার ফলাফল ভোগ করে তবেই জানতে হয় এর লাভ ক্ষতি! বিজ্ঞান এর অন্যান্য শাখার মত যে কোন পর্যবেক্ষক এর সঠিকত্ব যাচাই করতে পারে না, এর জন্য দরকার হয় 'বিশেষজ্ঞ' পর্যবেক্ষকের। আর কেবল মাত্র এর লাভ ক্ষতি জানার জন্য এর দায় শোধ করতে হয় প্রজন্মের পর প্রজন্মকে! আসল সত্য এই তিন বিজ্ঞান কখনো জনকল্যাণে চর্চিত হয়নি, চর্চিত হয়েছে শাসকদের প্রয়োজনে ও অনুকম্পায় এবং তাদের পোষ্য জ্ঞানগর্ধভদের দ্বারা ।

বিজ্ঞানের সীমাহীন উন্নতি আমাদের দিয়েছে অপরিমেয় ধ্বংস ও সৃষ্টির ক্ষমতা। আমাদের ধ্বংসের ক্ষমতা কার্যক্ষেত্রে যে পরিমাণে বিকশিত ও প্রকাশিত হয়েছে সেই তুলনায় সৃষ্টির ক্ষমতা অব্যবহৃতই থেকেছে যদিও ভোগ বিলাসে এর কিছু প্রয়োগ হয়েছে বাণিজ্যিক কারণে। তত্ত্বগত ভাবে মানব জ্ঞান মানব জাতির যৌথ সম্পদ হলেও তার মালিকানা এখন কর্পোরেট বেনিয়াদের। তাই জ্ঞান কখনও মানব কল্যাণে ব্যবহার হয়নি, নানা বাদ-মতবাদ ও টাকা-ক্ষমতার তাঁবেদার করে রাখা হয়েছে নানা কৌশলে, ব্যবহৃত হয়েছে ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান-ক্ষমতার স্বার্থে। মানব জ্ঞান মানব কল্যাণে সঠিক ভাবে ব্যবহার করা গেলে মাত্র সাতশ কোটি মানুষের জন্য পৃথিবী নামক এই গ্রহটি আসলেই স্বর্গ-সম হত! পৃথিবীতে অভাব বা সমস্যা বলে কিচ্ছুই থাকতনা। মানুষ ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত ভাবে অভাব মেটানোর কৌশল বহু আগেই রপ্ত করলেও বর্তমান পৃথিবীর শোষণ-শাসন কাঠামোর অদৃশ্য জিঞ্জিরে শৃঙ্খলিত অধিকাংশ মানুষকে গরীব করে রেখে তাদের রক্ত ঘামে পুঁজিপতির গতর বাড়ে আর বাড়ে কিছু মানুষের বিত্ত বৈভব অপরদিকে দারিদ্র নামক অদৃশ্য ক্যানসার দিনে দিনে বাড়তে থাকে যার নীল বিষে জর্জরিত এই বিশ্বের অধিকাংশ বাসিন্দা আর বর্তমান বিশ্বের কৃত্রিম এই দারিদ্র পুঁজির সচেতন ও দীর্ঘ মেয়াদী কৌশলের ফসল। যদিও কিছু ভাড়াটে জ্ঞানীদের দিয়ে নানা বিভ্রান্তিকর তত্ত্ব, তথ্য ও উপাত্তের মাধ্যমে এবং ভুঁইফোঁড় মিডিয়ার কল্যাণে 'দিনে দিনে দারিদ্র কমছে' এমন ধারণা সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে যা এক ধরনের ধাপ্পাবাজি ছাড়া আর কিছুই না। প্রচলিত ধারণায় মাথা পিছু আগের চেয়ে ভোগ বৃদ্ধিকে দারিদ্র হ্রাসের প্রধান লক্ষণ বলে বিবেচিত হলেও মাথা পিছু উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়টা কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়। যদি একজন মানুষের ন্যায্য প্রাপ্যতার তুলনায় সে কতটা পাচ্ছে তার ভিত্তিতে দারিদ্র পরিমাপ করা যেত তাহলে দেখা যাবে আমরা প্রতিদিন দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হচ্ছি, আর আমাদের ধন চুরি হয়ে চর্বি জমাচ্ছে অন্যের পেটে!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.