নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শব্দ শ্রমিক! কেবলই গেঁথে যাই শব্দের মালা।

অরণ্য মিজান

শব্দ শ্রমিক! কেবলই গেঁথে যাই শব্দের মালা।

অরণ্য মিজান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরিবার বান্ধব ধরনী চাই!

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ ভোর ৬:৪১

কমপক্ষে দুই লাখ বছর আগে আমাদের আদি পুরুষের সোজা হয়ে দুই পায়ে হাঁটার মাধ্যমেই শুরু হয়েছিল মানব জাতির সভ্যতার পথে নিরন্তর এ যাত্রা। মহাকালের পরিক্রমায় মানুষের অভীজ্ঞতায় অর্জিত বুদ্ধি বৃত্তিক ও মানবিক উৎকর্ষতা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়ে তা বর্তমান কালে ও বর্তমান রূপে আমাদের সামনে উপস্থাপিত হয়েছে আগামী প্রজন্মের নিকট সঞ্চালনের জন্য। প্রকৃত পক্ষে কোন মানুষই বিচ্ছিন্ন কোন মানুষ নয়। জেনেটিক্যালি মানুষের পূর্ব পুরুষের মানসিক উৎকর্ষতা উত্তর পুরুষে স্থানান্তরিত/সঞ্চালিত হয়। সভ্যতার ক্রমবিকাশের অবিরাম এই যাত্রায় রিলে দৌড়ের মত এক প্রজন্ম যেখানে শেষ করে পরের প্রজন্ম সেখান থেকে শুরু করে, আর এভাবে আমাদের বর্তমান অতীতের সকলের অবদানে সৃষ্ট ও পুষ্ট। ঈশ্বরের হাতে সৃষ্ট হোক আর বিবর্তনের ধারায় বানর বা অন্য যে কোন প্রাণী থেকেই হোক, দুই বা খুবই সীমিত সংখ্যক মানুষ থেকে কালে কালে বংশ বৃদ্ধির মাধ্যমে এই প্রজাতির জীবিত বংশধরের সংখ্যা সাতশ’ কোটি ছাড়িয়ে গেছে অনেক আগেই। মানব জাতী জন্ম সূত্রে পরিবার আর পরিবার সূত্রে পায় জীবিকা, ফলে তাদের জীবন মূলত তাদের জীবিকাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হতে থাকে। প্রাথমিক ভাবে মানব জাতী একত্রে বসবাস করলেও সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে দলে দলে বিভক্ত হয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পরতে থাকে মূলত জীবিকার কারণে। কোন এলাকায় প্রয়োজনীয় সম্পদের ঘাটতি দেখা দিলে দলে বলে সবাই মিলে অন্য এলাকায় চলে গেছে কিম্বা বিভক্ত হয়ে দলের সদস্য সংখ্যা সীমিত করেছে, ফলে সব সময়ই তাদের পরিবার ও জীবিকা এক সাথেই বা পাশাপাশি ছিল। বেশিরভাগ মানুষই পরিবারের সাথে একত্রে বাস ও কর্ম করত যৌথ জীবনের দায়-সম্পদের অংশীদার হয়ে। মোটা দাগে এই ধারাই বহমান ছিল আমাদের আধুনিক যন্ত্র সভ্যতার আগ পর্যন্ত।

শিল্প বিপ্লবের পর এই ধারা দ্রুত পাল্টাতে থাকে, শহর কেন্দ্রিক কর্ম বিকাশের সাথে সাথেই শুরু হয় মানুষের শহরমুখী জীবন দৌড়ের। প্রথমে কেবল কর্মরতরাই অস্থায়ী ভাবে শহরবাসী হলেও সময়ের সাথে সাথে সময়ের প্রয়োজনেই সপরিবারে শহরবাসী হবার প্রবণতা বাড়তে থাকে। শিল্প বিপ্লবের বিস্ফোরণের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় অগ্রসর সমাজপতিদের একটা অংশের ডিএনএ বদল হয়ে পুঁজিপতি নামক অস্বাভাবিক ক্রমবর্ধমান ক্ষমতার গডজিলার জন্ম হয় যারা পুঁজি নামক জিহ্বা দ্বারা জগতের সবকিছু চেটে খেতে থাকে। এই গডজিলাদের বাড়ন্ত ক্ষমতা আমাদের প্রথাগত সমাজের ডিএনএ পর্যন্ত বদলে দিয়ে সবকিছু নিজের সুবিধা মত বদলে নিতে থাকে, আস্তে আস্তে শুরু হয় পুঁজির দখলদারিত্বে অন্যায্য বণ্টনের কারণে উৎপাদন নিরপেক্ষ ও সুপরিকল্পিত কৃত্রিম অভাব। এর মধ্যে জন্ম নিতে থাকে পুঁজির নিত্য নতুন জারজ সন্তান ভয়ংকর সব মারণাস্ত্র, সাথে যোগ হয় বিকৃত ভোগ-বিলাসী আফিম। মারণাস্ত্রের জোরে আর ভোগ আফিমের যাদুতে পুঁজির দাপটে ঈশ্বর এখন গদি ছাড়া, এখন গোপনে খুচরায় স্বর্গ বেচলেও আহার বাসস্থানের সত্ত্ব একবারে পাইকারি বেচে দিয়েছেন পূঁজির কাছে তাই একমাত্র স্বর্গ ছাড়া সব কিছুর নিয়ন্ত্রক পূঁজি। অভাবের ভয়ে পূঁজির প্যাঁচে দিনে দিনে জীবিকা পরিণত হয়েছে জীবনের সবচেয়ে বড় যুদ্ধে। এই জীবিকা যুদ্ধের ডামাডোলে জীবন হয়ে যায় ফেরারি, পরিবার দুরে সরতে থাকে, এখন জীবিকাই জীবনের একমাত্র উপজীব্য। প্রতি দিন সকাল হয় তবু সাত শ’ কোটির বেশী মানুষের জীবনে আসেনা কোন ভোর, আসে অসম ময়দানে জীবিকার তোরজোড়, প্রাচুর্য পূর্ণ ধরণীতে কৃত্রিম ও কাল্পনিক অভাব ভীতি আমাদের রূপান্তরিত করেছে সর্ব ভুক লোভাতুর তেলাপোকায়।

ক্রম বৃদ্ধমান যান্ত্রিক পশ্চিমা সমাজের সাম্প্রতিক মানবিক উপলব্ধি,”শিশু ও বৃদ্ধ" পালনে পরিবারের বিকল্প নাই। বিশেষ করে নিম্ন জন্মহার, সিঙ্গেল ও সিঙ্গেল প্যারেন্ট পরিবার তাদের প্রধান ক্রমবর্ধমান সামাজিক সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হওয়ায় এবং সুস্থ মানবিক বিকাশের জন্য সুস্থ পারিবারিক পরিবেশের অপরিহার্যতা নানা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তারা তাদের পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানের হেলায় হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য তারা মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প নিচ্ছে, বিশেষ করে ইউরোপের কিছু কিছু দেশ তাদের জিডিপির তিন থেকে সাত শতাংশ পর্যন্ত এই খাতে ব্যয় করছে। ব্রিটেন “নাথিং ম্যাটার মোর দ্যান ফ্যামিলি” নামে দীর্ঘ মেয়াদী ক্যাম্পেইন শুরু করেছে, ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বেশীর ভাগ দেশ গ্রিন পেপার কোন কোন দেশ দীর্ঘ মেয়াদী পলিসি পেপার তৈরি করেছে। জাতিসংঘ দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে গত ১৫ মে, ২০১৪ বিশতম বিশ্ব পরিবার দিবসে ঘোষণা করেছে,”ইন্টেগ্রেট ফ্যামিলি ইন পোষ্ট ফিফটিন ডেভেলপমেন্ট এজেন্ডা”। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে বাংলাদেশসহ কিছু দেশ বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় যেখানে পরিবার নামক মহামূল্যবান সামাজিক সম্পদ এখনও পোড়া বাড়ির মত টিকে আছে সেখানে এ বিষয়ে তেমন কোনই জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নাই, এমনকি মূল ধারার উন্নয়ন আলোচনাতেও পরিবার নাই! আমাদের অস্তিত্ব ও সুন্দর আগামীর জন্য দরকার একটা পরিবার বান্ধব পৃথিবী আর পরিবার বান্ধব পৃথিবী আবশ্যিক ভাবেই পরিবেশ বান্ধবও বটে কিন্তু পরিবেশ বান্ধব হলেই তা পরিবার বান্ধব নয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.