নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শব্দ শ্রমিক! কেবলই গেঁথে যাই শব্দের মালা।

অরণ্য মিজান

শব্দ শ্রমিক! কেবলই গেঁথে যাই শব্দের মালা।

অরণ্য মিজান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও আমরা বোকা বান্দা!

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২৯

আমেরিকার অর্থনীতি অহেতুক সমৃদ্ধ বর্তমান আর্থিক ব্যবস্থায় ডলার নির্ভরতার কারণে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেট বিজনেস হাউজ এবং ব্যক্তি আমেরিকার বিভিন্ন ব্যাংকে প্রচুর ডলার রিজার্ভ রাখে; ফলে আমেরিকার সব ব্যাংকেই বিশেষ করে বড় বড় ব্যাংক গুলিতে ঋণ দেবার মত অঢেল অর্থ থাকে। ব্যাংক গুলি বিভিন্ন নামে ও কৌশলে জনগণের মধ্য অতি সহজে বিপুল পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে, ফলে জনগণের হাতে খরচ/ভোগ করার জন্য প্রচুর অর্থ আসে। এর ফলে জনগণের গড় ভোগ বেড়ে যায় সকল ক্ষেত্রেই। আর হাতে অথের্র সমাগম থাকায় কর্মের ও সৃষ্টি হয় ব্যাপক। এভাবেই আমেরিকার জনগণ অন্যের অর্থে (বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও জনগণের) ভোগ বিলাস করে আসছিল; মূলত মুদ্রা ব্যবস্থার কারণেই নীরবে এই ঘটনা ঘটে আসছিল।

ব্যাংক গুলির হাতে প্রচুর অর্থ থাকায় তারা প্রাইম ও সাব প্রাইম মার্কেটের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের মচ্ছব চালায়। স্বাভাবিক ভাবেই জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় তাদের প্রচুর আমদানিও করতে হয়। আবার এই আমদানি যেসব দেশ থেকে করা হয় ঐসব দেশের অর্থই আমেরিকার ব্যাংকগুলির মাধ্যমে জনগণের হাত হয়ে আমদানিতে ব্যবহৃত হয়। মানে যাদের অর্থ তাদের কাছ থেকেই কেনা আবার তাদের অর্থেই, অর্থাৎ অথের্র মালিক বা উৎপাদক একজন আর ভোক্তা আরেকজন (!)। বিশাল এক মিথ্যের ওপর দাড়িয়ে থাকা আমেরিকার অর্থনীতি। খুব সহজে ঋণ পাওয়া যাওয়ায় প্রাথমিক ভাবে কারোরই ঋণ খেলাপি হওয়ার কথা নয় কারণ প্রত্যেকেরই ঋণ প্রাপ্তির যোগ্যতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়, পুরাতন ঋণ পরিশোধ করে অধিক পরিমাণে নতুন নতুন ঋণ গ্রহণ, কই এর তেলে কই ভাজা আর কি! (বাংলাদেশের মাইক্রো ক্রেডিট !!)। ব্যাংক গুলোও বছর শেষে বিপুল মুনাফা করে, ব্যাংক কর্মীরা উচ্চ হারে বেতন-বোনাস পেতে থাকে; চারি দিকে বাহ্‌ ! বাহ্‌ !!



উৎপাদনের অর্থনীতিতে ঋণ জিনিসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয়। এই প্রয়োজন থেকেই ব্যাংক নামক মধ্যসত্ত্বভোগী প্রতিষ্ঠানের জন্ম যাদের মূল ঘোষিত কাজ হচ্ছে বিনিয়োগকারী ও ঋণগ্রহীতাদের মাঝে সংযোগ ঘটিয়ে ঝুঁকি হ্রাসের বিনিময়ে উদ্ভূত মুনাফার একটা অংশ ভোগ করা। এই সরল সমীকরণে ব্যাংক এর জন্ম হলেও কালক্রমে ব্যাংক নিজেই তো বটেই মাঝখানে আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের জন্ম দেয় ঐ ঋণকে কেন্দ্র করে আরও ব্যবসা ক্ষেত্রের জন্ম হয় যা নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিচিত। এদের আবার কিছু কিছুর নৈতিক বা আইনগত কোন ভিত্তিই নেই, যেমন হেজ ফান্ড।

ব্যাংক উদ্বৃত্ত তহবিল সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ঋণ হিসাবে বিতরণ করে, বিনিময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ পায়, অপরদিকে তহবিলের মালিককে ঐসূদ হতে কিছু কম সুদ দেয়। এই সূদের হারের ব্যবধান হতেই ব্যাংক তার পরিচালন ব্যয় মিটিয়ে মুনাফা করে। কিন্তু ব্যাংক ঋণ প্রদানের পর ক্রমে তাকে নির্ভর করে কাল্পনিক হিসাব সর্বস্ব আর্থিক লেন-দেন ব্যবস্থা গড়ে উঠে যা রীতিমত জুয়া খেলা। যদিও পুঁজিবাদীরা এই জুয়া খেলাটিকে ফাইনান্স, বিনিয়োগ, ষ্টক ব্যবসা ইত্যাদি সুন্দর সুন্দর নামে অভিহিত করেন। একটা পরিসংখ্যান দিলে ব্যাপারটা আরও পরিষ্কার হবে; ২০০৬ সালে সমগ্র পৃথিবীর মোট অর্থনৈতিক উৎপাদন ছিল ৪৭ ট্রিলিয়ন মা:ডলার। অথচ বিশ্বের শেয়ার বাজারের মুলধনীকরণ হয়েছে ৫১ ট্রিলিয়ন মা:ডলার, আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বন্ডের মূল্য ছিল ৬৮ ট্রিলিয়ন মা:ডলার, অন্যান্য আর্থিক দলিলের মূল্য ছিল ৪৭৩ ট্রিলিয়ন মা:ডলার। ৪৭ ট্রিলিয়ন মা:ডলার এর বাস্তব এই উৎপাদনকে কেন্দ্র করে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যের নামে যে জুয়া খেলা হয়েছে তা প্রধানত আমেরিকায় বা আমেরিকান নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে। এই সমস্ত প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের খুব একটা নিয়ন্ত্রণ ছিলনা বা এখনো নেই।

এই অন্যান্য আর্থিক দলিলগুলোর জন্ম হয় ব্যাংকগুলি ঘড়-বাড়ি বা মূল্যবান স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে ঋণ দেবার পর সেই ঋণকে সিকিউরিটিতে পরিণত করে যার নাম Mortgage Based Securities (MBS). বিনিয়োগকারীদের নিকট এই সিকিউরিটি বিক্রয় করে ব্যাংকগুলি আবারও ঋণ বিতরণের তহবিল সংগ্রহ করে। অর্থনীতির নৈতিকতায় কোন উৎপাদন বা মূল্য সংযোজনা ছাড়া মুনাফা সৃষ্টির কথা নয়, কিন্তু এই ক্ষেত্রে মুনাফা এবং অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায়। কিন্তু ঋণগ্রহীতার ক্রেডিট হিষ্ট্রি না জেনে বিনিয়োগকারী সেই MBS এর উপর যাতে আস্থা রাখতে পারে এই সমস্যা সমাধানে আবির্ভাব হলও আরেক মধ্যসত্ত্বভোগী-ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকারের-Special Investment Vehicle বা SIV| SIV কোন এক বা একাধিক ব্যাংকের SIV গুলোকে কিনে নিয়ে সেগুলোকে একত্রিত করে আবার ঋণের ঝুঁকি অনুসারে ৩ টি ভাগে ভাগ করে:

১) ইকুইটি Equity Bond)-উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ

২) মেজানাইন বন্ড (Mezanine Bond)-মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ

৩) ইনভেস্টমেন্ট গ্রেড বন্ড (Investment Grade Bond)-কম ঝুঁকিপূর্ণ

এভাবে মর্টগেজগুলোকে বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত করে ঋণের ঝুঁকি কোন একটি ব্যাংকের কাছ থেকে একাধিক বিনিয়োগকারীর মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে যে বন্ডগুলো তৈরি করা হলো এগুলোকে সাধারণভাবে বলা হয় CDO বা কোল্যাটারাল ডেট অবলিগেশান। ভালো ক্রেডিট হিস্ট্রি সম্পন্ন ঋণগ্রহীতার মর্টগেজ ভিত্তিক বন্ড থেকে হয় ইনভেস্টমেন্ট গ্রেড বন্ড। দুর্বল ক্রেডিট হিস্ট্রি সম্পন্ন ঋণগ্রহীতার মর্টগেজ ভিত্তিক ( যে মর্টগেজকে বলা হয় সাব প্রাইম মর্টগেজ) বন্ডকে বলা হয় ইকুইটি বন্ড। মেজানাইন বন্ডের অবস্থান মাঝামাঝি। ইনভেস্টমেন্ট গ্রেড বন্ডের ঝুঁকি কম বলে সহজেই তার ক্রেতাও মেলে কিন্তু ঝুঁকিবহুল ইকুইটি বা মেজানাইন বন্ড নিয়ে হয় আসল খেলা!

এই পর্যায় প্রথম ধাপের ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকগুলোই বিভিন্ন ভাবে এই হেজ ফান্ড গঠন করে উচ্চ ঝুঁকির CDO গুলো নিয়ে বাণিজ্য করার জন্য। যেহেতু ঝুঁকি বেশী তাই CDO গুলিতে বিনিয়োগে লাভও বেশী ফলে হেজ ফান্ডে বিনিয়োগকারীরও অভাব হয়না, বিভিন্ন উৎস থেকেই সে ফান্ড পায়। যে বাড়িটির মর্টগেজের উপর ভিত্তি করে ইকুইটি বন্ডের যাত্রা শুরু সেই বাড়ির মূল্য আরও বাড়বে এই আশায় উচ্চ ঝুঁকির ইকুইটি বন্ডগুলোর দাম বাড়তে থাকে।

ব্যাংক যেমন তার ঝুঁকি SIV-গুলোর উপর দিয়ে দেয়, এসআইভি-গুলো যেমন তার ঝুঁকি হেজ ফান্ডের উপর দিয়ে দেয়, হেজ ফান্ডগুলোও তেমনি সেই ঝুঁকিপূর্ণ বন্ডগুলো কোন ব্যাংকের কাছে জমা রেখে ব্যাংক থেকে ধার করে এবং সেই অর্থ আবার বিনিয়োগ করে। ইকুইটি সিডিও-গুলোর মূল্য যত বেশী হবে হেজফান্ড তার বিনিময় ব্যাংক থেকে তত বেশী অর্থ পাবে। সিডিও-গুলোর আসল ভিত্তি যে বাড়িটি, এতগুলো ধাপ পেরিয়ে এসে সেই বাড়ির মূল্যের সাথে আর বাঁধা থাকেনা সিডিও-এর মূল্য। ব্যাংকগুলো ও হাউজিং মার্কেট চড়া থাকার কারণে এবং ভবিষ্যতে আরও চড়া হলে এগুলো বিক্রি করে প্রভূত মুনাফা লাভের প্রত্যাশায় নির্দ্বিধায় অতিমূল্যায়িত সাব-প্রাইম মর্টগেজ এর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা সিডিও-গুলোর বিনিময়ে ঋণ দিতে থাকে। সেই টাকায় হেজ-ফান্ডগুলো এসআইভি-এর কাছ থেকে বেশী বেশী সিডিও নিতে থাকে, ১ম ধাপের ব্যাংকগুলোও মর্টগেজের কালি শুকানোর আগেই তার সমস্ত ঝুঁকি সহ মর্টগেজগুলোকে এসআইভি এর হাতে স্থানান্তরের সুযোগে আরও বেশী বেশী করে সাব-প্রাইম ঋণ দিতে থাকে। এ এক ভানুমতীর খেল।

এভাবেই কাল্পনিক হিসাবের উপর ভড় করে অধিক লাভের প্রত্যাশার বেলুন একেবারে আকাশে উঠতে থাকে। কিন্তু সাব-প্রাইম ঋণ উচ্চ সুদের হওয়ার কারণে এবং অধিকাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ এর গ্রহীতা হওয়ায়, একসময় দেখা যায় তারা আর ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছে না (ঠিক বাংলাদেশের মাইক্রো ক্রেডিট গ্রহীতাদের মতই!)। স্বাভাবিক ভাবেই সাব-প্রাইম মর্টগেজের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা সিকিউরিটিগুলোর বর্তমান মালিক (ব্যাংক বা কোন ব্যক্তি বিনিয়োগকারী) যখন বাড়িটি বিক্রি করতে চাইলো তখন সবাই মিলে বাড়ি বিক্রিকরার হিড়িকের কারণে সে উপযুক্ত মূল্য পেলনা এমনকি তার হাতে থাকা সিকিউরিটিগুলো বিক্রি করতে গিয়েও সে ক্রেতা পেল না। কেননা কেউই তখন জানেনা এই সিকিউরিটিজ এর ভিত্তি মূল্য আসলে কত। যখন সবকিছু ভালোয় ভালোয় চলছিল, তখন কেউ ভিত্তিমূল্যের যথার্থতা নিয় প্রশ্ন তোলেনি। কিন্তু সাব প্রাইম ঋণগ্রহীতার ডিফল্টার হওয়া এবং হাউজিং বাজার পরে যাওয়ার কারণে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মূল্যের সিকিউরিটিগুলো আক্ষরিক অর্থেই টয়লেট পেপারে পরিণত হলো। কেননা এর আর কোন মূল্য নেই, ভবিষ্যতে উচ্চমূল্য পাওয়ার আশা না থাকায় কেউ আর এগুলো কিনতে চাইছে না।

আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শিথিল নিয়ন্ত্রণের ফলে এই ঘটনা ঘটেছে, আসলে এই শিথিল নিয়ন্ত্রণ আমেরিকার অজ্ঞাতে নয় বরং জ্ঞাতসারে এবং পরিকল্পিত ভাবে। অবশ্য এই পরিকল্পনার বাস্তবায়নের জন্য খুব বেশী প্রচেষ্টার দরকার হয়নি, বৈশ্বিক মুদ্রা ব্যবস্থার ফলে বরং তাদের ঘড়ের দুয়ারে এসে সুযোগ ধরা দিয়েছে। সেই সুযোগে তারা হয়ে গেছে আমানতের খেয়ানত কারী। আমেরিকা তার ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে অন্যান্য দেশের অথের্র নিরাপত্তার বদলে নিজ দেশের জনগণের ভোগ বিলাসের ব্যবস্থা করেছে, তাই রাষ্ট্র হিসাবে আমেরিকা তার জনগণের কাছে বাহবার দাবীদার তো বটেই!

বর্তমান এই নিয়মবদ্ধ আর্থিক অনাচারের ফলে পৃথিবীর উৎপাদন ভোগ করে যারা ন্যায্যত তারা তার প্রাপক নয়, কেবল মাত্র বৈশ্বিক লেন দেন ব্যবস্থায় ডলার ব্যবহৃত হওয়ায় অনেকটা প্রাকৃতিক ভাবেই আমেরিকায় অর্থনৈতিক ফানুস গড়ে উঠেছে। এই সমস্যার ন্যায় সঙ্গত সমাধান আমেরিকার ব্যাংকে জমা কৃত বিভিন্ন দেশের ডলার রিজার্ভ ফিরিয়ে আনা, যদিও তা এই মহুর্তে সম্ভব নয়। তাই ইউরোর মত আরও বিভিন্ন আঞ্চলিক মুদ্রার প্রচলন করা দরকার তাতে অন্তত কিছুটা ন্যায্যতা নিশ্চিত হবে। যদিও তাতে আমেরিকার অর্থনীতিতে এক কেয়ামত হয়ে যাবে আর তা হওয়াও উচিত। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যদি আমেরিকার ব্যাংকগুলিতে অন্যান্য দেশের ন্যায় একই নিয়মে শ্রেণীকরণ করা হয় তাহলে সম্ভবত সর্বোচ্চ শ্রেনীকৃত ঋণের দেশে হবে আমেরিকা।

যে সংকট আজ বিশ্ব পুঁজিবাদকে ছারখার করে দিচ্ছে তার সূচনা ইউএসএ তে ২০০৭ এর গ্রীষ্মকালে আবাসন শিল্পের ফানুস ফাটতে শুরু করার মধ্যে দিয়ে হয়নি। বরং ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একটার পর একটা মন্দা এসেছে যথা ১৯৬৭. ১৯৭৪, ১৯৮১, ২০০১ এর মন্দা। দশকের পর দশক ধরে একটা স্থায়ী এবং মহামারীর মত সংক্রমণে পরিণত হয়েছে, শোষিত মানুষের জীবনযাত্রার মানের ওপর নেমে এসেছে পাহাড় প্রমাণ আক্রমণ।

পুজিঁবাদে যা কিছই ঘটুক না কেন তার ফলে শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ হয় খেটে খাওয়া মানুষ। এবারের মন্দাক্রান্ত অর্থনীতিতেও তাই ঘটছে। ইতিমধ্যেই আমেরিকায় চাকরি হারিয়েছে ৬ লক্ষেরও বেশী শ্রমিক, গৃহহীন হয়েছে হাজার হাজার নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং সবশেষে এই যে প্রাইভেট লোকসানের জাতীয়করণ তার খেসারতও বহন করতে হবে সাধারণ জনগণকে অতিরিক্ত ট্যাক্স প্রদানের মাধ্যমে এভাবে বেসরকারী লোকসানের সরকারী দায় গ্রহন সম্পর্কে Financial Times এর কলামিস্ট Willem Buit বলেন, "বর্তমান বাস্তবতা কি এমন যে, লগ্নীপুঁজি নিয়ন্ত্রীত অর্থনীতিতে যখন সবকিছু ভাল চলে, তখন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গুলো বেসরকারী মুনাফা কামায় আর যখনই কোন সমস্যা হাজির হয় তখন সাময়িক ভাবে সেই সমস্যাগ্রস্থ বেসরকারী প্রতিষ্ঠানটিকে সাময়িক সরকারীকরণ করা হয়, যার ফলে সমস্ত লোকসানের দায়ভার বহন করে জনগণ? তাই যদি হয়, তবে এগুলোকে চিরস্থায়ীভাবেই জাতীয়করণ করা হচ্ছে না কেন? "

স্বভাব গুণে বা দোষে যাই হোক, পুঁজির স্বভাব হলো ছড়িয়ে পড়া, মুনাফা হয়ে আত্মস্ফীতি ঘটানো। পুজির আন্তর্জাতিক স্বভাব এর প্রাতিষ্ঠানিক প্রকাশ হল আইএমএফ ও বিশ্বব্যাঙ্ক এবং একটু দূর অর্থে জাতিসংঘ। পুঁজির সাধারণ স্বার্থ হলো - বাজার অন্তহীনভাবে বেড়ে চলতে হবে, তার জন্য অন্তহীনভাবে প্রয়োজনীয় শর্ত তৈরি করে চলতে হবে। বাজার নিরন্তর বাড়া মানে মুনাফায় আত্মস্ফীত পুঁজিকে পুনঃ পু্‌নঃ বিনিয়োগে বসার জায়গা করে দেওয়া। একাজে দেশ, রাষ্ট্র, কনষ্টিটিউশন, বাউন্ডারী ইত্যাদি সব বাঁধা হটিয়ে একাকার করে সামনে এগিয়ে বাজারকে, ভোক্তা সৃষ্টিতে নিরন্তর কাজ করে যেতে হবে। বাজার বাড়লে যে কোন ম্যানুফ্যাকচারিং ট্রেড, উৎপাদনে বাড়তে পারবে।

বর্তমান সাম্রজ্যবাদী অর্থনীতি উৎপাদন ও বিনিময়ের এক বিশ্বব্যবস্থা যার মাধ্যমে সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণীকে শোষণের মাধ্যমে উদ্বৃত্ত মূল্যের বৈশ্বিক উৎপাদন হয়। আর এই উদ্বৃত্ত মূল্য উৎপাদনের নিরিখে ফাইনন্সিয়ালাইজেশান একদিকে বিশ্বপুঁজিবাদের টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় এবং অন্যদিকে পরজীবি একটি প্রক্রিয়া। পরজীবি- কেননা এটি কোন উদ্বৃত্ত তৈরী করেনা বরং উৎপাদন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন উদ্বৃত্তে ভাগ বসায়। উদ্বৃত্ত মুনাফার পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে কেন্দ্রীভবন এবং তার মাধ্যমে মুনাফা তৈরীর নতুন রাস্তা তৈরী করা ও দ্রুত পুঁজি লগ্নি করে মুনাফা তুলে নেয়া আর ঝুঁকি দেখলে আরও দ্রুত সেই লগ্নি পুঁজি প্রত্যাহার করে নেয়া। এর সাথে আরেকটি বিষয় যুক্ত লগ্নী পুঁজির স্বল্পমেয়াদী আগমন ও বহির্গমণের মাধ্যমে কোন একটি দেশের স্থানীয় পুঁজিকে বশবর্তী রাখা ও পুঁজির পূণর্বিন্যাস ও নিয়ন্ত্রণ করা। আর এই ধরণের আর্থিক শৃঙ্খলা তৃতীয় বিশ্বের সবগুলো দেশের উপরেই আরোপ করা হয় এবং হচ্ছে। আমেরিকা নিয়ন্ত্রিত বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ যাতে মূল চালকের ভূমিকা পালন করে কার্যত আমেরিকান তথা পুজিবাদের স্বার্থ সংরক্ষন করে চলেছে।

বিশ্বব্যাঙ্ক ও আইএমএফ কে অনেকেই বলেন "আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠান", এটা একেবারেই ভুল একটা ধারণা এবং বড় ধরণের ভ্রান্তি। যার প্রমাণ হলো বিশ্বব্যাঙ্ক এর সুদের হার ১% এর নীচে বা বিনাসূদে, বেশীর ভাগ চুক্তিতে দেখা যায় তা ০.৭৫%। চুক্তিতে আবার, আসল পরিশোধের সময়ও থাকে বেশ লম্বা, কমপক্ষে ২০ থেকে ৩৫ বছর। "অর্থলগ্নী" বা অর্থ লাগানো বা টাকা খাটানো বলতে আমরা যা বুঝি টাকা খাটিয়ে মুনাফা কামানো বা সুদি ব্যবসা। কিন্তু মুনাফা কামানো বা সুদের ব্যবসা বিশ্বব্যাঙ্ক ও আইএমএফ এর ঘোষিত বা অঘোষিত লক্ষ্য কোনটাই নয়।

১% এরও কম সুদে ২০-৪০ বছর দীর্ঘ মেয়াদী কোন ঋণকে "ফিনান্স ক্যাপিটালের" বিনিয়োগের মূল ফোকাস হলো- এর শর্তাবলী। বিশ্বব্যাঙ্ক হলো সব রূপের পুঁজির আরাম করে বসার কুশন তৈরির প্রতিষ্ঠান। সব ধরণের পুঁজি যাতে আরাম করে বসে স্ব স্ব কারবার করতে পারে তার পরিবেশ, শর্ত তৈরি করাই এর কাজ। ঐদেশের আইন, কনষ্টিটিউশন, রাষ্ট্র, রাজনৈতিক ব্যবস্থা, স্বাথের্র হাত মুচড়ে ধরে, প্রয়োজনে এর বদল ঘটিয়ে গ্লোবাল পুঁজির জন্য সুবিধাজনক আদল দেয়া, শর্ত ও পরিবেশ তৈরি করাই বিশ্বব্যাঙ্কের কাজ। এই কাজটা করতে বড় ধরণের ঋণ / বিনিয়োগ লাগে, তা সে করে। সবচেয়ে কম সুদে (০.৭৫%) এবং দীর্ঘ মেয়াদী ২০-৪০ বছর এবং কঠিন ও বিরাট শর্ত দিয়ে। সবকিছু সংস্কার, বদল করার শর্ত। ঋণে শর্ত দেবার ক্ষমতা অর্জন মানে হাত মুচড়ে ধরার ক্ষমতা। এই বিরাট অঙ্কের ঋণ / বিনিয়োগের লক্ষ্য মুনাফা কামানো নয়, শর্ত দেবার ক্ষমতা অর্জন। বরং লগ্নিপুঁজিসহ সবধরণের পুঁজি যাতে কারবার করতে পারে তার আয়োজন করার ক্ষমতা অর্জন।

পাঁচটা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে বিশ্বব্যাঙ্ক গ্রুপ গঠিত, যা সংক্ষেপে বিশ্বব্যাংক নামে পরিচিত। এই পাঁচটার মধ্যে যার তৎপরতা সবচেয়ে ব্যাপক, সবচেয়ে প্রাচীন এর নাম হলো IBRD (International Bank Reconstruction & Development)। অথবা The Bank । বিশ্বব্যাঙ্কের লোন বলতে আমরা যা বুঝে থাকি তা মূলত IBRD এর লোন। IBRD এর জন্ম সবার আগে, তখন বিশ্বব্যাঙ্ক বলতে এটাকেই বুঝা হত। বাকি চার সহযোগীর জন্ম পরে ধাপে ধাপে। একসাথে এখন তা বিশ্বব্যাঙ্ক গ্রুপ। এই IBRD এর গঠন প্রকৃতি শেয়ার হোল্ডারদের মালিকানাধীন জয়েন্ট ষ্টক কোম্পানীরই মতন। তবে তফাৎ হলো, এটা কোন বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক নয়।

"স্বল্প আয়ের দেশগুলোকে সহায়তা দেবার জন্য ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বব্যাংক" - এই কথাটা সত্যি না। মুলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ধ্বংস প্রায় ইউরোপের অবকাঠামো "পুণর্গঠন ও উন্নয়নের " লক্ষ্যে পাঁচটা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে বিশ্বব্যাঙ্ক গ্রুপ গঠিত, যা সংক্ষেপে বিশ্বব্যাংক নামে পরিচিত। কিন্তু দ্রুত ইউরোপের বাজার সংকুচিত হয়ে এলে পুজির স্বার্থেই ১৯৬০ সালের পরে নতুন বাজার খুজতে অপেক্ষাকৃত অননুন্নত এশিয়া-আফ্রিকার দিকে নজর দেয়। যুদ্ধে ইউরোপের অবকাঠামো ধ্বংস হলেও ছিল তাদের দক্ষ জনশক্তি। ফলে ইউরোপে কাজ করা যত সহজ ছিল এশিয়া-আফ্রিকায় তত সহজ ছিলনা। এই সমস্যা নিরসনে বিশ্বব্যাংক তার ‘অবকাঠামো’ ধারণায় পরিবর্তন আনে। আগে অবকাঠামো ধারণায় উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট শ্রমকে অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করা হত না, পুঁজির আত্মস্ফীতি ঘটানোর জন্য দরকারী নিয়ামক শক্তি বলেও বিবেচনা করা হত না। শ্রমের অবকাঠামো মানে উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয়- ১. বিভিন্ন মাত্রার শিক্ষা, দক্ষতার যে শ্রম দরকার, ২. প্রতিদিন কারখানা, কারবারের দরজায় সুস্থ সবল শ্রমিক এর নিরবিচ্ছিন্ন হাজিরা, ৩. বুড়া কর্মক্ষম হয়ে গেলে সমাজের বড় আপদ না হয়ে যায়, ৪. বাচ্চা পয়দা করে, পেলে পুষে বড় করে সামাজিকভাবে নতুন নিরন্তর শ্রম প্রবাহ ইত্যাদি - সবকিছু যেন নিশ্চিত পাওয়া যায় এমন "শ্রমের অবকাঠামো" ও তার জন্য একটা পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ। ফলে তখন থেকেই "অবকাঠামো" উন্নয়নের ধারণা বদলে গিয়ে ফিজিক্যাল কাঠামো ইট কাঠ পাথর এর সাথে যুক্ত হয় - মানব কাঠমোর উন্নয়ন। শ্রমের অবকাঠামো ও ফিজিক্যাল অবকাঠামো উভয়ে মিলে অবকাঠামো ও তার উন্নয়ন। তাই বিশ্বব্যাংকের বিবেচনায় মানুষ ইট কাঠ পাথরের মত প্রকৃত অর্থেই আমরা এক একজন "বেনিফিসিয়ারি" বা object বৈ আর কিছু নয়।

১৯৩০ দশকের মত মন্দা ঠেকাতে আইএমএফ এর জন্ম। আজকে বলা হচ্ছে ২০০৮ এর মন্দা ১৯৩০ সালের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তাহলে আইএমএফ রাখার দরকার কী? gold standard ডলার, ডলারের হেফাজত আমেরিকার আর ডলারের সাথে অন্য মুদ্রার বিনিময় হার সি'র থাকবে এটা ধরে নিয়ে যে আইএমএফের জন্ম হয়েছিল ১৯৬৮ সালের শেষের দিকে আইএমএফের ভিত্তিমূলক সে ভাবনাগুলো বর্তমানে মৃত প্রায়, অকেজো। সংগঠন হিসাবে আইএমএফের অসি-ত্ত্ব, ন্যায্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। এক হিসাবে দেখা যায়, ১৯৬০ সাল থেকেই বিভিন্ন দেশকে দেয়া আমেরিকার মোট ঋণ (ডলারে হিসাব করে দেয়া) তার ঘরে মজুদ সোনার মূল্যের চেয়ে বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে; অথচ ঐ ডলারের সোনায় বদল করার যোগ্যতা থাকার কথা। আমেরিকা ডলার বদল করে সোনা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এককথায়, আইএমএফ দাঁড়িয়ে থাকার ভিত্তিমূলক ভাবনাগুলো সব ধসে পড়ে।

বর্তমান আর্থিক ব্যবস্থায় প্রত্যেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঐ দেশের মুদ্রা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকে। আগে টাকা ছাপতে ও বাজারে ছাড়ার আগে সমপরিমাণ মুল্যের সোনা ব্যাঙ্কে নগদ মজুদ রেখে তারপর ঐ টাকা বা মুদ্রা বাজারে ছাড়া হত। কাজেই নোট প্রদানকারী বা প্রতিশ্রুতিদানকারী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে যে এই মুদ্রা বা নোটের সমপরিমাণ সোনা তার কাছে মজুদ আছে। যে কেউ নোটের বিনিময়ে সোনা চাইলে সে তা দিতে বাধ্য থাকবে। এধরনের মুদ্রাকে বলা হয় gold standard মুদ্রা। যে মুদ্রা gold standard নয় সে মুদ্রা দাঁড়িয়ে আছে ফাঁকা রাষ্ট্রীয় বা কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের প্রতিশ্রুতির উপর। অর্থনৈতিক পরিভাষায় যাকে fiat money বলে। আজকের দিনে প্রায় সব মুদ্রাই fiat money বা স্রেফ রাষ্ট্রীয় ডিক্রি জারির ক্ষমতাগুণে সে মুদ্রা।

আমেরিকা তার রপ্তানী আয়ের ঘাটতি মিটিয়ে নিচ্ছে নিজের ট্রেজারি বন্ড বিক্রি করে। আমদানির বিপরীতে ট্রেজারি বিল নামক কাগজ রপ্তানী করছে। এটাকেই পণ্য হিসেবে দাঁড় করিয়ে নিজের আমদানিকে সচল রাখছে। এটা যদি না হত তাহলে আমেরিকার সাথে বাণিজ্যে অংশ গ্রহণকারী দেশের পাওনা মিটাতে আইএমএফকে এগিয়ে আসতে হত। তাদেরকে ধার দিতে হত আর রপ্তানীমুখি খাত সৃষ্টি কারর জন্য পরামর্শ দিতে হতো, প্রকল্প বানাতে হতো! ডলারের সব দোষ জানা সত্ত্বেও আরও বড় ক্ষতির ভয়ে অগত্যা সবাই মেনে নিচ্ছে। হিতে-বিপরীত হতে পারে, কারণ সবাই গভীরভাবে ডলারের মাধ্যমে পরস্পর সম্পর্কিত হয়ে আছে। একেই বলে গ্যারাকল! এক কেচকিতে পড়া অবস্থা। ফলে এইসব সুবিধা ভোগ করে ডলার টিকে আছে; অন্য কথায় বলা যায় ক্ষতিগ্রস্থরাই আরও বড় ক্ষতির ভয়ে টিকিয়ে রাখছে।

আইএমএফের "রপ্তানিমুখী উৎপাদনের" নীতি আমাদেরকে পাটের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করেছে। পাট থেকে মুখ ফেরানোর পক্ষে আইএমএফের হাতে যে যুক্তি লেগে যায় তা হলো, আমাদের পাটকলগুলো লোকসানী, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ফলে এর ব্যয়, দায় মিটাতে সরকারী রাজস্ব আয়ের উপর মারাত্মক চাপ পড়ছে; সরকার চালানোর খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে এগুলো বিক্রি করে দেবার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, জুট স্পিনিং মিল যেগুলোর সবই প্রাইভেট কোম্পানী এগুলোকে সরকারী ভর্তুকি দেবার বন্দোবস্ত করা হয়। এই ভর্তুকির টাকা পাটখাত সংস্কার কর্মসূচির নামে সরকারকে ঋণ দেয়া হয়। সরকার সেই ঋণ নিয়ে প্রাইভেট কোম্পানীকে নগদ ভর্তুকি দেয়া হয়।

Foreign Investment Promotion & Protection Act বলে আইএমএফের সদস্যদেশের জন্য একটা আইনের ছাঁচ করা আছে। ঋণ গ্রহিতা দেশের ঋণ পাবার প্রাথমিক শর্ত এটা। ফলে মান্য করা বাধ্যতামূলক। দ্বিতীয়ত, শর্ত মেনে ঋণচুক্তি আইএমএফের সাথে করে নিয়ে চলে গেলে হবে না, একটা নির্দিষ্ট সময়ের ভিতর দেশের সংসদে এ আইন পাশ করতে হবে। বাংলাদেশ ১৯৮০ সালে Foreign Investment Promotion & Protection Act, ১৯৮০ নামে সংসদে এই আইন পাশ করেছে। আইএমএফের টেমপ্লেটেড এই আইনের কারণে বিনিয়োগ সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট দেশকর্তৃক বায়োজাপ্ত হয়ে যাবার বিরুদ্ধে একধরণের রক্ষাকবচ।

Structural Adjustment Facility (SAF) (১৯৮৫) ও পরে নতুন ভার্সানে Enhanced Structural Adjustment Facility (ESAF) (১৯৮৬) - এগুলোর কোনটাই আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। সারা দুনিয়াকে রপ্তানিমুখী করে আকার দিতে Structural Adjustment Facility (SAF) চলেছিল ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত। এরপর ১৯৯৯ সাল থেকে The Poverty Reduction and Growth Facility (PRGF) এর জায়গা নেয়, যার শেষ এবছরে। আগামি বছর থেকে নতুন প্রোগ্রাম Extended Credit Facility (ECF) নামে যা হাজির হবে। এর বিশেষত্ত্ব ডোনারদের কাছে অর্থ সংগ্রহের পদ্ধতিতে, তাছাড়া এটা নতুন বোতলে পুরান মালই । এতদিন দাতাদের কাছে থেকে তিন-চার বছরের কমিটমেন্ট/অর্থ সংগ্রহ করে PRGF জাতীয় Facilities চালানো হত। এবারে নতুন পদ্ধতিতে অর্থ সংগ্রহ করা হবে বাজার থেকে; মানে আন্তর্জাতিক বাজারে যারা লগ্নিপুঁজির বিনিয়োগের ব্যবসা করে। স্বভাবতই সুদের হার হবে অনেক বেশি, বাণিজ্যিক ব্যবসার লোনের মত। এই অর্থ ঋণ নিয়ে আইএমএফ আবার ০.৫% সুদে ঋণসুবিধা আকারে বিতরণ করবে - এতে যে লোকশান হবে; অর্থাৎ দুই সুদের হারের যে ফারাক এই সুদ দাতাদেশগুলো দিয়ে দেবে। এতে নিট যা ফারাক, তা হলো, আগে পুরা অর্থ ছিল সরাসরি দাতা রাষ্ট্রের কোষাগারের এখন সে অর্থ আসবে টাকার বাজার থেকে, প্রাইভেট লগ্নিবিনিয়োগকারী ব্যবসায়ীর কাছে থেকে আর কেবল এর সুদটা কেবল দাতাদেশের রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে।

পোষাকে কোটা ব্যবস্‌হা আমেরিকান জাতীয় অর্থনীতির পক্ষে একটা উৎপাদনে সুরক্ষা (protectionist) নীতি ও ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে আমাদের রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ক্ষমতা আমেরিকার হাতে তুলে দেবার ব্যবস্থা করে দিয়েছে আইএমএফ। আইএমএফ আমাদের বেলায় বলছে, আমাদের আমদানি নীতিতে কোন সুরক্ষা নীতি থাকতে পারবে না, অবাধ আমদানির সুযোগ রাখতে হবে। আবার Multi-Fibre Agreement এর মাধ্যমে আমেরিকার protectionist পদক্ষেপ আমাদের মাথা পেতে দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।

এই সব বাস-বতার জন্যই আমাদের দেশে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ ইত্যাদি সংস্থা (বা তথাকথিত আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানসমুহ) আমাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে তথা রাষ্ট্রের সার্বভেৌমত্ব জলাঞ্জলী দিয়ে সংস্কারের নামে তাদের প্রেসক্রিপশন গিলতে বাধ্য করছে। আর বিশ্বপুজিঁ যখন যেভাবে চায় আমরা সেভাবেই তৈরী হতে বাধ্য হচ্ছি । বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ কখনোই গনমানুষের উন্নয়নের কথা বিবেচনা করেনা বরং দরিদ্র দেশের দরিদ্র মানুষদের দারিদ্রের সূযোগ নিয়ে তাদের অদৃশ্য জিঞ্জিরে বাধা আজন্ম দাসে পরিণত করার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের বিশেষ করে দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলির উচিৎ একসাথে কিছু পদক্ষেপ নেয়া, যেমন:

 ‘Foreign Investment Promotion & Protection Act’ বাতিল/সংশোধন/প্রতিস্থাপন এর জন্য জনমত তৈরী ও সরকারকে চাপ প্রয়োগ।

 IFIs অর্থায়িত বা প্রেসক্রিপশনকৃত প্রকল্পসমূহের Social/citizen audit পূর্বক ক্ষতি (আর্থিক, সামাজিক, পরিবেশগত ও অন্যান্য) নিরুপণ এবং সে হিসাবে ক্ষতিপূরণ আদায়ের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।

 চলমান এবং প্রক্রিয়াধিন/প্রস্তাবিত সকল প্রস্তাব/প্রকল্পের শর্তাবলী জনসম্মুখে উন্মুক্ত করে দেয়া এবং জনগনের মতামত গ্রহণের কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা ও তাদের মতামত আমলে নেয়া।

 আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে অভিন্ন আঞ্চলিক মুদ্রা ব্যবস্থা গড়ে তুলে ক্রমান্বয়ে ডলার নিভর্রতা থেকে সম্পূর্ন বেড়িয়ে আসা।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩৭

বাংলার ফেসবুক বলেছেন: এখন অনেজনের কালো টাকা গুলি ব্যংকে লকার বন্ধি হয়ে আছে। সে কারণে দেশে টাকার প্রচুর সংকট দেখা দিয়েছে।

২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫৬

বাক স্বাধীনতা বলেছেন: হবে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.