নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কোন রকমে বেঁচেবর্তে থাকার জন্য একটা চাকরি বা কাজ পাওয়া আজকাল শুধু সোনার হরিণই নয়, রীতিমত যেন ইউরেনিয়ামের হরিণ। চারিদিকে হাহাকার, শুধু নাই নাই আর নাই। লক্ষ মেধাবী তরুণ বেকার ঘুরে বেড়াচ্ছে কাজের অভাবে, নীরবে ঝরে যাচ্ছে হাজারো সম্ভাবনা। স্বাধীনতার প্রায় চার দশক পেরলেও উৎকৃষ্ট মানের চাকর তৈরির লক্ষ্যে ব্রিটিশ আমলে যে শিক্ষা ব্যবস্থার শুরু তার গতরে লাগেনি আজো কোন মৌলিক পরিবর্তনের ছোঁয়া। লুণ্ঠন আর নির্যাতনের হাতিয়ার থেকে এখনো আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা কল্যাণ মুখী হয়ে উঠতে পারেনি। আমাদের রাষ্ট্র বা শিক্ষা কোন ব্যবস্থাই আমাদের সম্ভাবনাগুলোকে বিকশিত হবার জন্যে সহায়ক নয়। প্রাকৃতিক, সামাজিক ও জ্ঞান সম্পদের উপর সম অধিকার মানব কুলের জন্মগত মানবাধিকার হলেও অল্প কিছু মানুষ বা শক্তি সব কিছু কুক্ষিগত করে রেখেছে নিজের করে, যেন আর কারো কোন অধিকার নেই। মানুষের রক্ষা কবচ না হয়ে রাষ্ট্র যেন রাক্ষসদের পক্ষ নিয়েছে! আর এজন্য আমাদের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে শিক্ষা ব্যবস্থাও সেভাবে সাজানো যাতে মানুষকে এই অদৃশ্য রাক্ষসরা অনায়াসেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা হয়তো ‘স্মার্ট চাকর’ তৈরি করতে পারে, কিন্তু এমন মানুষ তৈরি করতে পারেনা যারা শিক্ষা জীবন শেষ করে কাজের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকেনা, চাকুরী না পেলেও তাদের শিক্ষা জীবন ব্যর্থ হয়ে যায়না। অথচ আজকের যে বেকার সন্তানটি পরিবার, সমাজ ও দেশের বোঝা, সামান্য সুযোগ পেলেই উল্টো সে নিজেই টানতে পারে পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্রের বোঝা।
অল্প কিছু সাহসী মানুষই এর বিরুদ্ধ স্রোতের মুখে মাথা তুলে দাড়াতে পেরেছে, দাঁড়াচ্ছে ও দাঁড়াবে। এই মানুষগুলোই আমাদের সভ্যতার প্রগতিকে নিত্য শক্তি যোগাচ্ছে সামনে এগিয়ে যাবার জন্য। এই শক্তি জোগানো মানুষগুলোই এন্টারপ্রেনর বা স্বউদ্যোক্তা। এরা চাকুরী বা কাজ খোঁজেন, কাজ তৈরি করে, নিজের জন্যে, অন্যের জন্যে আবার দেশের জন্যেও। বাদবাকিদের অধিকাংশই কোন রকমে বেঁচে থাকে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কৃপায় বা বোঝা হয়ে। এন্টারপ্রেনর জন্মায় না, জন্মে সৃষ্টি হয়, তার পারিপার্শ্বিক অবস্থাই তাকে তৈরি করে। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং স্বল্প, মধ্য বা দীর্ঘ মেয়াদী রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন নীতি-কাঠামো এন্টারপ্রেনর সহায়ক হলে আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠী অন্যের মুনাফা সৃষ্টির হাতিয়ার না হয়ে প্রকৃতপক্ষেই মানবসম্পদে পরিণত হবে । আমাদের স্বাভাবিক জীবনধারায় একটা বয়স পর্যন্ত কেউ জিজ্ঞাসা করেনা সে কি করে, কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে চারিদিকের জিজ্ঞাসা ও মাথায় দু: চিন্তা দুটোই বেড়ে যায়। একটা কিছু করতে হবে; কিছু একটা করা দরকার! এমন টানাপোড়ন এর সময় শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবার জীবনেই আসে। যারা সোনার চামচ হাতে-মুখে-পকেটে বা ব্যাংকে নিয়ে জন্মায় তাদের কথা আলাদা। নিকট অতীতেও আমাদের পুরব পুরুষদের পেশা নিয়ে চিন্তা করতে হয়নি; উত্তরাধিকার সূত্রে কৃষকের ছেলে কৃষক, কামারের ছেলে কামার তেমনিভাবে সুতার-মজুরদের ছেলেরাও পিতার হাল ধরত। কৈশোরে প্রকৃতির হাতে জীবন যুদ্ধের কৌশল রপ্ত করে কমে প্রবেশের জন্য এখন দরকার কেবল একজন কিশোরী বধূ, ব্যস হয়ে গেল ছেলে সংসারী! জিবনযুদ্ধের ময়দানে আরেকজন সৈনিক বাড়ল। প্রকৃতির মতই সরল জীবনের পর্যায়গুলো। কিন্তু হাল আমলে আমাদের সনাতনী পেশাগুলো আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়, কেবলমাত্র প্রাকৃতিক সম্পদ নির্ভর জীবন ব্যবস্থা আমাদের লালন করতে দৃশ্যত অক্ষম হলে এবং অপরদিকে বাজার অর্থনীতির পরিকল্পিত ও ক্রমবর্ধমান আগ্রাসনে শুরু হয় পেটের টানে ঘর ছাড়া, মানুষ নিজের এলাকা ছেড়ে দূর থেকে দূরতম স্থানে চালিয়েছে দুঃস্বাহসি অভিযান, নিজের জীবন দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে গেছে তাদের আহরিতই সম্পদ ও জ্ঞান যার ফলাফল আজকের এই সুন্দর পৃথিবী।
এই যে “এখনো কিছু করিনা” পর্যায় থেকে “এখন কিছু করি” এই পর্যায়ে রূপান্তরের পরিবেশ ও শর্তাবলী তৈরির দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু নির্মম সত্য হচ্ছে স্বাধীন ভাবে নিজস্ব সম্ভাবনা বিকাশের প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থসামাজিক পরি-কাঠামো কোনটাই বিদ্যমান না থাকায় আমরা শেষ পর্যন্ত যা কিছুই করিনা কেন তা প্রায় সম্পূর্ণটাই ‘চান্স’ বা সুযোগ নির্ভর। নিজের চাওয়া বা পরিকল্পনা মাফিক চাকরি বা কাজ খুব কম মানুষের কপালেই জোটে। আমাদের রাষ্ট্রীয় নীতি-কাঠামো বা আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘এখনো কিছু করিনা’ পর্যায় থেকে ‘এখন কিছু করি’ পর্যায়ে রূপান্তরের জন্য মাঝখানে ‘এখন কিছু করব’ এই পর্যায়ে সংযোগের কোন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নেই। ফলে কেউ কিছু করতে চাইলেও তার সুযোগ খুবই কম, আমাদের কর্মজীবনে প্রবেশের পথ নির্মম, বন্ধুর ও প্রকৃতি বা ‘চান্স’ নির্ভর। কিন্তু যারা যে কাজে দক্ষ বা যে কাজে যে আনন্দ পায় সেই কাজ যদি প্রচলিত আইনের সাথে সংঘাতপূর্ন না হয় তবে তা করার অধিকার আমাদের অন্যতম মৌলিক অধিকার-জীবনের প্রতি অধিকার, মর্যাদার সাথে বেচে থাকার অধিকার যা মহান সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদ দ্বারা সুরক্ষিত আছে (“প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানব সত্ত্বার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে”)। এজন্য প্রয়োজনীয় সকল শর্তাবলী নিশ্চিত করণ ও তদনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে রাষ্ট্র দায় বদ্ধ।
২| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫৭
আহমেদ জী এস বলেছেন: অরণ্য মিজান,
অরণ্যের মতো অবিচল অনেক সত্যকথা বলে গেছেন।
এই যে “এখনো কিছু করিনা” পর্যায় থেকে “এখন কিছু করি” এই পর্যায়ে রূপান্তরের পরিবেশ ও শর্তাবলী তৈরির দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু এই রাষ্ট্র কি জনকল্যানমুখি ?
উত্তরটা আপনার লেখাতেই আছে - "মানুষের রক্ষা কবচ না হয়ে রাষ্ট্র যেন রাক্ষসদের পক্ষ নিয়েছে!
সংবিধানে যা-ই থাকুক, আসলে সংবিধান তো শাষকদেরই রক্ষাকবচ; জনগণ সেখানে উদ্বাস্তু!
একারণেই বেঁচে থাকার মহাকাব্য আমাদের লিখে যেতেই হয়, ঘাম আর রক্তে ভেজা নিঃশ্বাসের কালিতে।"
৩| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:২৭
মনিরা সুলতানা বলেছেন: জীবন এত বিচিত্র ! এত বাঁক মহাবাঁক যে সত্যি বেঁচে থাকাটাই দারুণ একটা ব্যপার , এক মহা কাব্য।
৪| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:৩৬
রাজীব নুর বলেছেন: যারা নিজেকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তুলতে পেরেছে তাদের দীর্ঘদিন বেকার থাকা লাগে না। অযোগ্য অদক্ষরাই বেকার থাকে।
৫| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:৫৫
শেরজা তপন বলেছেন: বিষয়টা নিয়ে অতীতেও অনেকে ভেবেছেন এখনো ভাবছেন ভবিষ্যতে হয়তো ভাববেন- সমাজতন্ত্র রাজতন্ত্র গণতন্ত্র পুঁজিবাদ যেটার কথাই বলেন না কেন সব শাসকেরাই চায় এরকম প্রতিবন্ধী দুরদৃষ্টিশক্তিহীন এইরকম চাকর।
৬| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ ভোর ৪:০১
কালো যাদুকর বলেছেন: আমার কাছে মনে হয় রাষ্ট্র পুরোপুরি দাইয়ী না। ব্যাক্তি উদ্যোগ ই একজন মানুষকে অনেকাংশে সাবলম্বী করতে পারে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৪৯
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- প্রথম পাতায় একাধিক পোস্ট না করাই ভালো।