নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক সময় আমাদের সমাজ ব্যবস্থা ছিল মূলত পরিবার কেন্দ্রিক। আমাদের সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো পরিবারকে কেন্দ্র করে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রয়োজনের তুলনায় পারিবারিক সম্পদ কমতে থাকলে এবং শিল্প বিপ্লবের কল্যাণে শহরকেন্দ্রিক যে কর্ম বাজার তৈরি হয় তাতে অংশগ্রহণের জন্য পরিবার ছেড়ে কর্মবাজার কেন্দ্রিক জীবন ব্যবস্থা বিকশিত হতে থাকে। এখন প্রযুক্তির কল্যাণে বিকেন্দ্রীকৃত শ্রম বাজারে অংশগ্রহণ করা সম্ভব পরিবার না ছেড়েই। তারপরেও বাস্তবতার কষাঘাতে আমাদের নিউক্লিয়াস পরিবারের ধারণা এখন প্রায় জাদুঘরে যেতে বসেছে।
এখন আমরা আর পরিবার কেন্দ্রিক নই তবে পারিবারিক ক্যাচাল কেন্দ্রিক, পারিবারিক দ্বন্দ্ব বা আভ্যন্তরীন ক্যাচাল মুক্ত পরিবার খুঁজে পাওয়া এখন খুবই মুশকিল। এখন আমাদের পরিবার স্বামী স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে কিন্তু যুগ যুগ ধরে যে নিউক্লিয়াস পরিবার আমাদের সমাজব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে তা এখন বিলুপ্তির পথে। এখন আমরা বড়জোর বছরে দুই একবার আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবারের সব সদস্যরা একত্রিত হই বটে তবে তা কেবল শারীরিকভাবে কিন্তু মানসিকভাবে আমাদের মধ্যে সৃষ্ট পঞ্জিভূত দূরত্ব আমাদেরকে পারিবারিকভাবে যৌথ কোন উদ্যোগ নিতে নিরুৎসাহিত করে, নিউক্লিয়াস পরিবারের মূল্যবোধ থেকে আমরা অনেক দূরে সরে এসেছি।
একসময় পারিবারিক বন্ধনের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করত পারিবারিক সম্পদ যা আমাদের প্রায় সকল মৌলিক চাহিদা মেটাতে সক্ষম ছিল, পারিবারিকভাবেই আমাদের পেশা নির্বাচিত হতো কিন্তু বর্তমানে সম্পদ হীনতা বা সীমিত সম্পদ পারিবারিক বন্ধনের চেয়ে কলহ সৃষ্টিতেই বেশি ভূমিকা রাখে। পারিবারিক পেশা এখন আর আমাদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে পারেনা।
ব্যক্তি স্বাতন্ত্র বোধের ধাক্কায় পশ্চিমা সমাজে পরিবার নামক সংগঠনটি ভীষণ দুর্বল বা অনুপস্থিত হয়ে গেছে যা এখন তারা উপলব্ধি করে আবারো পরিবার নামক সংগঠনটিকে শক্তিশালী করার জন্য সুপরিকল্পিত কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে রাষ্ট্রীয়ভাবে। বেশ কিছুদিন ধরে জাতিসংঘ এ বিষয়ে সচেতন হয়েছে এবং বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে/নিচ্ছে যাতে পরিবার নামক সংগঠনটি আবার ফিরে পায় তার হারানো ঐতিহ্য।
মানব সভ্যতার বিকাশ শুরু হয়েছিল পরিবারকে কেন্দ্র করেই এবং আমরা যতই আধুনিক হই না কেন এর প্রয়োজন আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যেই। বিশেষ করে এটা এখন পরীক্ষিত সত্য যে শিশু পালন ও বৃদ্ধ লালনে পরিবারের কোন বিকল্প নাই। জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রসর হয়ে আমরা যতই আধুনিক হই না কেন শিশু ও বৃদ্ধ মুক্ত সমাজ, রাষ্ট্র বা পৃথিবী আমরা কোনদিনই গড়ে তুলতে পারব না। পরিবার আমাদের প্রথম পাঠশালা যেখান থেকে পাই আমরা জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক শিক্ষাগুলি এবং আমাদের মনস্তত্ত্ব তৈরিতে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে আমাদের পরিবার। তাই আমাদের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন বা বুদ্ধিভিত্তিক উন্নয়নে পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া শিশু পালন ও বৃদ্ধ লালনে পরিবারই পৃথিবীর উৎকৃষ্টতম স্থান। আমাদের বর্তমান পারিবারিক ব্যবস্থায় সন্তান পালনে আমাদের প্রচেষ্টার কোন ঘাটতি নেই কিন্তু সেখানে বৃদ্ধ বাবা মায়ের জন্য জায়গার বড়ই অভাব।
আমাদের সমাজে যেহেতু এখনো পারিবারিক ব্যবস্থা অন্তত পশ্চিমাদের চেয়ে ভালোভাবে টিকে আছে তাই এখনো সময় আছে হেলায় না হারিয়ে এই ব্যবস্থার সুফল যাতে আমরা পেতে পারি সেজন্য রাষ্ট্রীয় কিছু উদ্যোগ। পারিবারিক সম্পদ যখন ব্যক্তিগত চাহিদা মেটাতে অক্ষম হয় তখনই শুরু হয় পরিবারে ভাঙ্গন। আর এই ধাক্কাতেই বিলুপ্তির পথে পারিবারিক বন্ধন নামে সবচেয়ে মূল্যবান সামাজিক সম্পদ। এক সময় আমাদের কর্মব্যবস্থা ছিল পরিবার কেন্দ্রিক এবং পারিবারিকভাবেই আমাদের পেশা নির্বাচিত হতো, এখন পারিবারিক কারবার বা ব্যবসা খুব কম একই পরিবারের সদস্যরা তাদের পূর্বপুরুষদের পেশা ছেড়ে বিভিন্ন জনে বিভিন্ন পেশা বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে কিন্তু স্বল্প-মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে পরিবার ফিরে পেতে পারে আবারও সেই হারানো ঐতিহ্য এবং পারিবারিক কারবার বা ব্যবসা হতে পারে আমাদের প্রধান কর্মক্ষেত্র। তার মানে এই নয় যে আমাদের সবাইকে এখন আমাদের পূর্বপুরুষদের আদি পেশায় ফিরে যেতে হবে কিংবা একই পরিবারের সবাইকে একই পেশায় আসতে হবে বরং বর্তমান সময়, সুযোগ ও সম্পদ অনুযায়ী পরিবার কেন্দ্রিক কারবার বা ব্যবসা (যেখানে পরিবারের সদস্যরা সম্পৃক্ত থাকবে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে) আমাদের বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র হ্রাস ও টেকসই উন্নয়নের হাতিয়ার হতে পারে। পৃথিবী নামক কাঁঠালের কোয়া হচ্ছে পরিবার তাই পৃথিবী আসলে পরিবার নামক কোয়ার যৌগিক ফল। পরিবারের উন্নতি মানে সমাজের উন্নতি, সমাজের উন্নতি মানে দেশের উন্নতি আর দেশের উন্নতি মানে বিশ্বের উন্নতি।।
০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ২:১৯
অরণ্য মিজান বলেছেন: এটা নিয়ে যাদের ভাবার কথা তারা কি আদৌ ভাবছে নাকি প্রকল্পের টাকা কিভাবে পাওয়া যায় তাই নিয়ে ব্যস্ত!
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:২৫
রাজীব নুর বলেছেন: ২৭ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশের ১১% দখল হয়ে যাবে।
দখল করবে বঙ্গোপসাগর। গ্লোবাল ওয়ারমিং এর ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে বঙ্গোপসাগর এর জল বাড়বে এবং সি-লেভেল বেড়ে যাবে ৫০ সেমি মত।