নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জড়তার কাব্য শুনি, ক্লীব লিঙ্গ বলিয়া কিছু নাই

অ রণ্য

পুলকে পুলক আর সাদা দুধ, সাদা ঘর, মেঘের দোসরযে তুমি ঘুমিয়ে আছো, যেন ঘর ছেড়ে উড়ে গেছোআরব সাগর আর যাদু-কাঠি-ঘ্রাণগাগল, পাগল আমি রাত-দিন বসে টানিযাদুর ঝালর

অ রণ্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি সান্ধ্য-ভ্রমণ অথবা হৃদয়-রেখা

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৩৭

যে দেখছে, এবং যে দেখাচ্ছে, দু’জনেই একমত হলো, এমন অদ্ভুত হৃদয়-রেখা সচরাচর দেখা যায় না! হয়ত ‘অ’ বলতে চাইছিল, হৃদয়ও এমন হুট-হাট এভাবে সচরাচর তার গতিপথ বদলায় না, যখন আপনার মুখ সরাসরি সরল ও সুন্দর, আর সে আড় চোখে খুব গভীরভাবেই অনুসরণ করে চলেছে একজোড়া চোখের ইস্ততত গতিপথ ও তার দ্যুতি বিস্তার। ‘ত’ হয়ত সবকিছুই বুঝতে পারছিল, যখন সে জানে তার পাশের মানুষটি আসলেই আজকের এই সন্ধ্যাকলীন ভ্রমণের অবাস্তব সঙ্গী, যাকে সে চিনলেও এভাবে পাশে পাবার কোনো সম্ভাবনাই গত ২৫ বছরে ছিল না, ফলে সে হয়ত কিছুটা উত্তেজনা বশতঃ অথবা নিতান্তই ভাললাগা হেতু খুব স্বাভাবিকভাবেই বলে চলেছিল পাহাড়, নদী, আকাশ, সবুজের মেলা ও তার সীমাহীন ভাললাগা, এবং প্রেম ও ভালবাসার একমুখিতা, যখন ‘অ’ তার পায়ের পাতার দিকে একভাবে তাকিয়ে দেখছিল, নোখ, গোড়ালির স্বচ্ছতা, আর লক্ষ্য করল, চটিজোড়া আধাইঞ্চির মতো ছোট!



এ সবই ঘটছিল পড়ে আসা বিকেলের উজ্জ্বল আলোয়, আর বাতাসে অবাধ্যভাবে উড়তে চাওয়া চুলগুলো যখন কোনোভাবেই কুলিয়ে উঠতে হতে পারছিল না, তখন, ‘এভাবে ছোট করে চুল কাটার কোনো মানেই হয় না’, এই দারুণ বিরক্তি থাকার পরও যখন ‘অ’ দেখল, সে প্রকৃত অর্থেই হাসতে জানে, এবং টেউয়ের মতো একটানা কথা বলতে পারে কোনো ক্লান্তি ছাড়াই, এমন কী কোনোরূপ জড়তা ছাড়াই শিশুদের মতো কারও সাথে মুখ ভেংচিয়ে, ইনিয়ে-বিনিয়ে মশকরা করল, তখন প্রেম নিবেদন করার যথেষ্ট আবেগ নিয়েই সে ‘ত’-এর মুখের দিকে সরাসরি তাকাল। আশ্চর্য, এমন জড়তাহীন সাবলীল নারী, অথচ সে এখন পর্যন্ত তার গায়ের গন্ধটুকু পায়নি, এমন কী চুলেরও! ঈর্ষনীয় সোয়াটারটাকে কি ঘৃণা করা উচিত, যা গাঢ় কালো, সে পরে ছিল; নাকি ‘ত’-এর অভ্যাসকে, যে কী না লেপ গায়ে ফ্যান চালিয়ে ঘুমায়, আর চুলগুলো কাটতে কাটতে ঘাড় অব্দি নিয়ে এসেছে! ভাগ্য সহায়, কপালের মাঝামাঝি গোলাকার কোনো লাল ছিল না, আর তুমি সম্বোধন করেনি এখন পর্যন্ত, একবারও!



সে বিয়ে করতেই পারে, এমন কী আমাকে তা জানাতেও, যখন সে কিছুক্ষণ আগে ‘অ’-কে সামনে থেকে দেখল, আর ‘অ’-ও তার সহায়তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাধ্য বালকের মতো চলে এসেছে পেছন পেছন, পাশে ও বাসে। এতটা বেহায়া হবার কারণ ছিল তার পরিমিত ঠোঁট, যা কী না কোমল ও মাপা মাপা দারুণ ধ্বনি উৎপাদনে মুখর। সে আমাকে হুট-হাট ভালবাসতে না পারলেও, দেরীতে হলেও যে প্রেমে পড়তে পারে না, এমনটা মেনে নেবার কোনো অর্থই হয় না, এইসব ভাবতে ভাবতেই ‘অ’-এর মনে হলো এই নারীর বিশ্বাসগুলো সরল ও যৌক্তিক, এবং এমন একটি নারীর সাথে খুব সহজেই জাহান্নামে চলে যাওয়া যায়, অথচ মতিঝিল খুব দ্রুত এগিয়ে আসছিল সামনে থেকে!



‘ত’-এর হাতের রেখাগুলো ছিল সত্যিই অদ্ভুত ও সুন্দর! বিশেষ করে হৃদয়-রেখা এমনভাবে এগিয়েছে যে, মনে হচ্ছিল এই নারী কাউকে খুন করবে, অথবা কেউ তাকে। মোটেও এই ভাবনা রোমান্টিসিজমের ইঙ্গিত বহন করে না, বরং ওর চুলের ফ্যাকাসে কালো রঙ, নোখের ধূসরতা, আর হাসতে হাসতে খুব সহজাতভাবে ‘অ’-এর মনোযোগ সম্পূর্ণ নিজের দিকে টেনে নিয়ে ভিন্ন বিষয়ে মনোনিবেশ করা, বারবার এই কু-বার্তা বাসের পরিবেশ এভাবে ভারী করে তুলছিল, যেনবা এক কিশোরীকে কোনো পৌঢ় ডেকে কোলে বসাল, এবং সবার অলক্ষ্যে হাতখানা যৌনাঙ্গের দিকে এগিয়ে নিতে থাকল। ‘ত’ এবার বেশ খানিকটা চুপ হলো, আর ‘অ’-এর মুখের দিকে ওর থমথমে মুখ স্থির করে জানাল, ‘আপনাদের ঘৃণা করতে পারা সত্যিই সহজ!’



বাস্তবিক আজ কোথাও বাস চাপা পড়েনি কেউ, শহরে হরতাল নেই, নেই বোমাবাজি বা সন্ত্রাসের খবর, আর সে জন্যই হয়ত খুব চমৎকারভাবে ‘ত’ জানাল অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ নাকি ঢাকা শহরে যানজট কম, আর ওর এমন বার্তায় সমুদ্র পাড়ে ফিরে না গিয়ে উপায় ছিল না। ঢাকা শহর শেষ কবে এত সুন্দর ছিল, শেষ কবে এমন অনাবিল বাতাস বয়ে গেছে বাসের জানালা দিয়ে, মনে করতে পারছিল না ও। এভাবে মোহাবিষ্ট হয়ে পড়ার মানে এই, আমরা ঘৃণা করতে পারছি না আর, আমাদের বোধগুলো এখন খুব সহজ, আর সরল লোভগুলো আমাদের প্রলুব্ধ করে চলেছে একটানা, অথচ আমরা একে অপরকে বলছি সমঝোতার কথা, নিজেকে মানিয়ে নেবার কথা, যখন সচেতনতা এসে হঠাৎ আমাদের মৌন করে দিল, আর দু’জন মানুষ দু’জনের নিকট প্রকট হয়ে পড়ার বাস্তবতা নিয়ে একে অপরের পাশ থেকে এমন এক দূরত্বে গিয়ে নিশ্চুপ বসে থাকল, যেন ‘ত’-এর ভাবী স্বামী হঠাৎ মারা গেল, আর প্রেমহীন ঘোরের মধ্যে ওরা বসে থাকল পাশাপাশি, একাকী; যা কী না এরই মধ্যে কয়েকবার তার স্বাভাবিক গতিপথ বদলে সরে এসেছে মরুভূমির দিকে।



মতিঝিলের মাটিতে পা রেখে ‘অ’ যখন বাসের পাশে দাঁড়িয়ে কাচের ওপাশে ঝাপসা হয়ে থাকা ‘ত’-এর মুখের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়াল, এবং তাকে জানাল, ‘ধন্যবাদ, একই বাসে এভাবে পাশে থাকার জন্য’, তখন ‘ত’ দ্বিতীয়বারের মতো জানাল, ‘পাতালপুরী গিয়েই নাকি বারবার ওভাবে গভীর বেঁকে গেছে তার হৃদয়-রেখা!’







অরণ্য

১১.১২.১০

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৫৩

বলাক০৪ বলেছেন: +++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.