নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কারা যেন লিখছে পান্ডুলিপি ললাটের ক্যানভাসে আকঁছে ব্যবচ্ছেদ বিকলাঙ্গ শরীর ,চোখ ,হাত , পা , মুখ- মুখশ্রী ,তলপেট, ঊরু , ঠুকরে খাওয়া হৃদয় । ব্যধি নয় ,ব্যধিবোধ কুরে খায় আমাদের সময় ।

কারা যেন লিখছে পান্ডুলিপি ললাটের ক্যানভাসে আকঁছে ব্যবচ্ছেদ বিকলাঙ্গ শরীর ,চোখ ,হাত , পা , মুখ- মুখশ্রী ,তলপেট, ঊরু , ঠুকরে খাওয়া হৃদয় । ব্যধি নয় ,ব্যধিবোধ কুরে খায় আমাদের সময় ।

উপদ্রুত উপকূল

উপদ্রুত উপকূল › বিস্তারিত পোস্টঃ

গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ অবলম্বনে গল্প :

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৮

বিদায় ম্যাজিক রিয়ালিজমের প্রবাদ পুরুষ গার্সিয়া মার্কেজ। একশ বছর নয় গোটা জীবনের জন্য নির্জনতায় চলে গেলেন আপনি।



মার্কেজের জন্য :

One Hundred Years of Solitude (1967) প্রভাবিত /আংশিক অনূদিত আমার লেখা বেশ আগের একটি গল্প :

---------------------------------------------------------------------------------------

পৃথিবীর সাথে কোন রক্তের সম্পর্কই রইলো না বুঝি শেষতক! হঠাৎ অগোচরে নাসারন্ধ্র থেকে এক চোঙ্গা বাতাস ভুস করে বের হয়ে গেল। দীর্ঘশ্বাসই বুঝি বলে তাকে ! এক - দুই - তিনবার ,একটু খাপছাড়াভাবে দীর্ঘশ্বাসটাকে পূর্ণ হতে দিয়ে পাউচে হাত দিলো গোমেজ । অতগুলো টাকার অস্তিত্ব মনে আসতেই তার অস্তিত্বের সমস্ত বন্দি পাখিগুলো হাওয়ায় উড়াল দিলো পাখনা খুলে। বোতল খুলে মুখে পানির ঝাপটা দিলো । চুলের ভেতরে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়ে মনে হলো সারা পথের লাল ধুলো শুকনো রক্তের দাগের মত লেগে আছে শরীরময়। মাত্র বিশটা বছর !এর মধ্যেই নেই হয়ে গেল তার প্রজন্মের সমস্ত দাগ ? অদ্ভূত! কেউ চেনেনা তাকে? অথচ মাত্র বিশ - বাইশ বছর আগে কতবার ওই বউভাসা পাহাড়টা ডিঙ্গিয়েছে তার সুঠামদেহী পিতার সাথে । নাহ !নিজেকে খানিকটা শাসালো গোমেজ। অনতিদূরে কমলা আলোয় মৃদু আলোকিত দরজার পাশে বুড়িটাকে দেখতে পেলো সে। দোলকেদারায় হাতপাখা দিয়ে নিজেকে বাতাস করছে । তার সামনে দিয়ে লোকজন আসছে যাচ্ছে ,কোলের ওপরে রাখা কৌটোটায় মুদ্রা ছুড়ে দিয়ে ভেতরে ঢুকছে - বেরোচ্ছে। রাতে একটা থাকার জায়গা চাই তাঁর। উঠে দাড়াল গোমেজ । বুড়িটার সাথে চোখাচোখি হতে ডাকলো সে । "তুমি চাইলে যেতে পারো, মাত্র বিশ সেন্ট লাগবে। "কৌটাটার মধ্যে টাকাগুলো ছুড়ে দিয়ে কমলা আভার আলোকিত দরজা দিয়ে তাবুর ভেতরে ঢুকে পড়ল কিছু না বুঝেই । কুপির আলোয় নগ্ন -মাদি কুকুরের মত যোনি নিয়ে শুয়ে থাকা ক্লান্ত কিশোরীটি উঠে দাঁড়ালো ।উত্তোরোত্তর ব্যাবহারে ঘাম আর দীর্ঘশ্বাসের সোঁদা গন্ধে ভারী বাতাস যেন স্যাতঁসেতে হয়ে উঠেছে ঘরময় । স্বেদ -ক্লেদে ভিজে সপঁসপে হয়ে আছে চাদর ও তোষক দুটোই।

মেয়েটি চাদরটা তুলে গোমেজকে সাহায্য করতে বলে । দুজনে মিলে ওটাকে মোচড়াতে থাকে যতক্ষণ না ওটার আসল ওজন ফিরে পায়।বিছানাটা গোছানো শেষ হলে গোমেজকে নগ্ন হতে বলে মেয়েটা । গোমেজের হাঁটু কাঁপতে থাকে। এলোমেলো করে একটা কৈফিয়ত দেয় সে । "ওরাই আমকে ভেতরে পাঠালো। বললো কৌটার মধ্যে বিশ সেন্ট ফেলে ভেতরে যেতে । "তার আড়ষ্টতা দেখে মেয়েটির একটু দয়া হয় বুঝি!

বলে,"আরও বিশ সেন্ট দিলে খানিকটা বেশি সময় থাকতে পারবে তুমি । "লজ্জায় অধোবোধন হয়ে কাপড় খুলতে থাকে গোমেজ । তাঁর শারীরিক সমস্ত আড়ষ্টতা নগ্ন শরীরের ভূষণ হয়ে ওঠে ।মেয়েটির তাকে জাগানোর নিরন্তর কলা -কৃত্যের বিফলতায় নিজেকে আরও নিসঙ্গ আরও বেশি ভয়ংকর একলা মনে হয় । বিষণ্ণ গলায় সে বলে ওঠে "আরও বিশ সেন্ট দিয়ে যাব আমি । " নরম চোখে মেয়েটা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নীরবে । তার পিঠে দগদগে ঘাঁ । বুকের খাঁচার সাথে লেপ্টে আছে ফ্যাকাঁসে চামড়া । ক্ষুধার্ত পুরুষের থাবার আদলে দুটো মাংসপিন্ড আর ক্লান্তির নিস্পাপ লাবণ্যের ভেতর দুটো কাতর চোখ বড় বেশি স্পষ্ট । দু বছর ,মাত্র দুবছর আগে এখান থেকে অনেক দূরে সে রাতে মোমবাতি না নিভিয়েই ঘুমিয়ে পরেছিল মেয়েটা ,জেগে উঠে লকলকে আগুনের খাচাঁর ভেতর নিজেকে আবিষ্কার করে সে । দাদীই তাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে । তারপর থেকে শহর থেকে শহরে বয়ে নিয়ে বেড়িয়েছে আর পুড়ে যাওয়া বাড়িটার দাম উসুল করতে প্রতি রাতে মাত্র বিশ সেন্টের বদলে বিছানায় শোয়াচ্ছে সত্তরজন করে পুরুষ। মেয়েটির হিসেব মোতাবেক আরও দশ বছর প্রতি রাতে সত্তরজন পুরুষের সাথে শুতে হবে তাঁকে।

দ্বিতীয়বারের মত দরজায় টোকা দেয় বুড়িটি ,কান্নার অদম্য একটি ইচ্ছে নিয়ে বাইরে বেড়িয়ে আসে গোমেজ । ইতস্তত টিমটিমে আলোগুলির বাড়িয়ে দেয়া অন্ধকারে ভাসতে থাকা লাল ধুলোগুলো বুকের ভেতরে তার সমস্ত প্লাবন আটকে দেয় প্রলেপের মত ।

একটা শুড়ি খানায় গিয়ে ঢোকে গোমেজ ,সমস্ত রাত মাতাল -কামনা -করুণায় জ্বরগ্রস্ত হয়ে ভাবতে থাকে মেয়েটির কথা । শুধু মেয়েটির কথা। মেয়েটিকে আদর করবার, নিরাপত্তা দেবার এক অদম্য ইচ্ছায় দোদুল্য হয়ে তার সমস্ত রাত নির্ঘুম কাটে । ভোর নাগাদ মেয়েটিকে বিয়ে করবার সিদ্ধান্তে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। যাতে দাদীর অত্যাচারের হাত থেকে মেয়েটিকে নিস্তার দেয়া যায় আর পরম তৃপ্তির সাথে তাকে উপভোগ করা যায় সেই রাতগুলো যে রাতগুলো সে দেবে সত্তরজন পুরুষকে ।



সকাল সকাল মাওরি দোকানে গিয়ে দ্যাখে মেয়েটা নেই, শহরে চলে গ্যাছে । বাড়ি ফেরা- ইচ্ছু ট্রেন মিস করা তাড়াটে যাত্রীর মত কাঁপতে কাঁপতে দোকান থেকে বেড়িয়ে এসে রাস্তায় দাঁড়ায়। শহরের দিকে চলে যাওয়া রাস্তাটার লাল ধুলো বাতাসে ভর করে শূন্যে ভাসছে কোথাও কোথাও। সেই মঙ্গলের মাটির মত ধুলোর লাল ঘূর্ণির দিকে উদভ্রান্তের মত চেয়ে থাকে গোমেজ । ধুলো ওড়া রাস্তায়।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৪

সিকদারভাই বলেছেন: সুন্দর হয়েছে । সাবলীল লেখা।

২| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:০৮

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ইরেন্দিরার নির্মম ঠাকুমার কথাটা মনে পড়ে গেল। সত্যিই সাবলীল লেগেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.