নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসাদুজ্জামান জুয়েল

আসাদুজ্জামান জুয়েল

রওশনারা বেগম ও আবদুর রশীদ খানের কনিষ্ঠ পুত্র আমি আসাদুজ্জামান জুয়েল। ১৯৭৮ সালের ০৫ জুন শরীয়তপুর জেলার পালং থানা পালং গ্রামের এক সাধারণ মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করি। শিক্ষা জীবন শুরু মায়ের হাতে। তুলাসার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে পালং তুলাসার গুরুদাস সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এস.এস.সি; শরীয়তপুর সরকারী মহাবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচ.এস.সি; জাজিরা ডিগ্রী কলেজে থেকে বাণিজ্য বিভাগ হতে বি.কম পাস করার পর প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন অনুষদ হতে এলএল.বি ও এলএল.এম সম্পন্ন করি। প্রতিটি ক্যাম্পাসেই কেটেছে মধুর দিনগুলো। ২০০৯ সালের ০৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে আইনজীবী হিসাবে তালিকাভূক্ত হয়ে ২৩ ডিসেম্বর ২০০৯ ঢাকা বার এসোসিয়েশনে সদস্যভূক্ত হই। পরবর্তীতে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১০ শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যভূক্ত হয়ে আইন পেশার সাথে যুক্ত আছি। ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতি, শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি ও শরীয়তপুর জেলা ট্যাক্সেস বার এসোসিয়েশনের সদস্য হিসাবে আইন পেশায় নিয়োজিত আছি। সাংবাদিকতা ও লেখালিখি করি মনের টানে। একই সাথে আইন পেশা ও সাংবাদিকতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে নিরন্তন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কর্ম জীবন শুরু লেখালিখির মাধ্যমে। দৈনিক ভোরের কাগজ দিয়ে সাংবাদিকতার শুরু। এর পর দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক কালের কন্ঠ, দৈনিক গণমুক্তি সহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কাজ করেছি। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৬টি। প্রবাসীদের সুখ-দুঃখ নিয়ে লেখা আমার প্রথম উপন্যাস ‘যেমন আছি লন্ডনে’ প্রকাশিত হয় ২০১২ সালের একুশে বই মেলায়। দীর্ঘ বিরতির পরে ২০১৯ এর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় ভ্রমণ কাহিনী ‘কলকাতা ভ্রমণঃ জীবনে প্রথম কিছু’; প্রবন্ধ সংকলন ‘সমকালীন ভাবনা’ ও প্রথম কাব্য গ্রন্থ ‘হৃদয়ের শব্দক্ষরণ’। ২০২০ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় প্রবন্ধ সংকল ‘সমকালীন ভাবনা-২’ ও দ্বিতীয় কাব্য গ্রন্থ ‘তুই থাকিস পরাণের গহীনে’। এছাড়াও বেশ কিছু বই প্রকাশের অপেক্ষায় আছি। লেখালিখি করি বিভিন্ন ব্লগে। আমার ওয়েবসাইটঃ www.asadjewel.com, নিজস্ব ব্লগঃ www.asadjewel.blogspot.com এছাড়া www.somewhereinblog.net এ নিয়মিত লেখালিখি করি। শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসাবে তিনবার ও লাইব্রেরী সম্পাদক হিসাবে দু্ইবার দায়িত্ব পালন করেছি। বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, শরীয়তপুর জেলা ইউনিটের জীবন সদস্য। প্রগতি লেখক সংঘ, শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি হিসাবে দ্বায়িত্বে আছি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি। সোনালী ব্যাংক লিমিটেড শরীয়তপুর, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, কর্মসংস্থান ব্যাংক, আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক শরীয়তপুর এর আইন উপদেষ্টা হিসাবেও কর্মরত আছি। গরীব-দুঃখীদের মামলা পরিচালনার জন্য জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা শরীয়তপুর জেলা শাখার প্যানেল আইনজীবী হিসাবে দুস্থ্যদের আইনগত সহায়তা প্রদান কাজে নিষ্ঠার সাথে জড়িত আছি। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), শরীয়তপুর জেলা শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, শিক্ষানিকেতন কর্ম কেন্দ্রীক পাঠাগার, শরীয়তপুরের কার্যনির্বাহী সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি দীর্ঘদিন। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও অস্ট্রেলিয়ান বার এসোসিয়েশনের উদ্যোগে ইনটেনসিভ ট্রায়েল এডভোকেসী ওয়ার্কশপ, ২০১০ সালে এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টার এর উদ্যোগে হিউম্যান রাইটস এন্ড রুল অফ ‘ল’, ২০০২ ও ২০১০ সালে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট এর উদ্যোগে শিশু ও নারী বিষয়ক রিপোর্টিং কর্মশালা, ১৯৯৯ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর আয়োজিত কম্পিউটার ট্রেড প্রশিক্ষণ, ২০১০ সালে ইউএসএইড-প্রগতি-কালেরকন্ঠ আয়োজিত দুর্নীতি বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরী ও তথ্য অধিকার আইন বিষয়ক প্রশিক্ষণসহ পেশাগত উৎকর্ষ সাধনের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি। লেখালিখি ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে নিজেকে জড়িয়ে সমাজ সংস্কারে একজন কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। আমার অর্ধপ্রাণ কন্যা রওশন আসাদ প্রিয়ন্তী। সহধর্মীনি মুনমুন সুলতানা লুনা পেশায় শিক্ষিকা। দুই বোন রেহানা আক্তার রেখা এবং কহিনুর আক্তার শিখা এবং একমাত্র ভাই মোহাম্মদ রুহুল আমীন খান আজাদ একজন প্রবাসী। যোগাযোগের জন্য আমাকে মেইল করতে পারেনঃ [email protected]

আসাদুজ্জামান জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিস্তি

০২ রা মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১:৪২

রাতে ঘুম হচ্ছে না মকিমের। ঘুম আসবেই বা কি করে? হাতে একটাও টাকা নেই। টাকার চিন্তা বড় চিন্তা। মহিলাদের শক্তি তার স্বামী আর পুরুষ মানুষের স্বামী হলো টাকা। তাইতো টাকাকে সেকেন্ড গডও বলে কেউ কেউ।
মকিম অলস প্রকৃতির মানুষ। তার কাজ ভালো লাগে না। মকিমের বন্ধু জাবেদ একটা ছেচড়া চোর। সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির পাশের চায়ের টং দোকানের সামনে গিয়ে দাড়াতেই দেখা জাবেদের সাথে। জাবেদের ডাকেই মকিম এগিয়ে গেলো দোকানের দিকে। দোকানের সামনে বাশের খুটি আর বাশের চটি দিয়ে তৈরী বেঞ্চের উপর বসা জাবেদ। জাবেদের ডাকে সাড়া দিয়ে কাছে যেতেই বললো
-কিরে, মুখটা হুটকির মত কইরা কই যাওন ধরছস?
-যাইনা, বাইর হইছি মাত্র।
-আয়, বয়। চা খাবি?
-তুইতো জানোস, আমি শক্তের মধ্যে লোহা আর নরমের মধ্যে গু এই দুইডা জিনিস ছাড়া সব খাই! ক, চা দিতে ক খাই।
-মোকলেস ভাই, চা দাও দুইডা। লগে কুকিজও দিও।
দোকানি মোকলেস জাবেদ ও মকিম দুজনকেই ভালো ভাবে চেনে। হারে মাংসে বজ্জাত দুইটা। বাকি খাওয়ার সময় হুস থাকে না! টাকা চাইলে উল্টো ঝাড়ি মারবে। তাই দোকানি মোকলেস সতর্ক করতে বললো
-চা-বিস্কুট কিন্তু বাকি হইবো না!
-তোমার কাছে বাকিতে চাইছে কেডা?
-না, সতর্ক করলাম আরকি!
-বাকি খাইছি, আর টাকা দেইনাই এমন হইছেনি কোন সময়?
-দুই একবার যে হয়নাই সেইডা কইতে পারবা বুকে হাত দিয়া?
-হেই কবে একবার না দুইবার দিতে একটু দেরি হইছিলো, সেই খোডা কি জীবন ভইরা দিবানি মিয়া? দেরি করছি, মাইরা তো খাই নাই না?
-খোডা দেই নাই ভাই, মনে করাইয়া দিছি আরকি! পাইছি তয় জানের কিছু থাকে নাই!
-হইছে, হইছে। চা দাও এহন। টাহা কি আগে দেহান লাগবো নি?
-দেহান লাগবো না, যাওনের সময় খালি দিয়া গেলেই হইবো।
-দিমু, দিমু, এহন চা-কুকিজ দাও।
দোকানি মোকলেস মিয়া দুইটা কুকিজ দিলো দুজনকে। কুকিজ একটা আজব বিস্কুট। দুই মাথা ইংরেজী এস অক্ষরের মত বাকানো থাকে। কেন যে সোজা করে না বুঝতে পারে না মোকলেস। মনে মনে ভাবে, সোজা করলে এমন কি ক্ষতি হইতো? জায়গা বেশি লাগতো না ময়দা বেশি লাগতো না বানাইতে কয়লা বেশি লাগতো কি জানি! জাবেদ আর মকিমকে কুকিজ ধরিয়ে দিয়ে চা বানানো শুরু করলো মোকলেস। জাবেদ তাড়া দিলো
-চা হইতে হইতেতো কুকিজ শেষ হইয়া যাইবো। চা দিয়া কুকিজ ভিজাইয়া ভিজাইয়া খাইমু চিন্তা করছি! আর চা বানাইতে কি দুধ বাড়ি থিকা গরু দোয়াইয়া আইন্না তারপর বানাইবা নাকি?
-আমিতো যন্তর না যে টিপ দিলেই চা পড়বো! বানাইতে আছি। এত তারাহুড়া করতাছো যে? লঞ্চ ছাইড়া দিবো নাকি?
-লঞ্চ ছাড়বো কেন? খিদা লাগছে, সকালে কিছুই প্যাডে পড়ে নাই, কতা কম কইয়া চাডা দেও।
মোকলেস দুই কাপ চা নিয়ে মকিম আর জাবেদের সামনে রাখলো। জাবেদ চায়ের কাপে মুখ দিয়েই নাক কুচকে ফেললো। বিরক্তি নিয়ে মোকলেসকে বললো
-কি মোকলেস ভাই, দুধ আর চিনি কি এখন সোনারুর দোকানের সোনা মাপার নিক্তি দিয়া মাপা শুরু করছো নি?
-ক্যান কি হইছে?
-কি হইছে বোঝো না? না হইছে মিডা, না দিছো দুধ!
-চা খাইবা না সরবত খাইবা? সরবত খাইলে দাও বানাইয়া দেই।
মোকলেস চায়ের কাপ দুটি নিয়ে বেশি চিনি আর দুধ দিয়ে আবার দিলো। জাবেদ আর মকিম এবার কুকিজ খায় আর চায়ে চুমুক দেয়। মুখের ভাব দেখেই বুঝাযায় চা এবার পছন্দ হয়েছে। চা খেতে খেতে জাবেদ মকিমকে বললো
-এই বার ক কি হইছে? ভাবিসাবের লগে ঝগড়া করছোস নাকি?
-ঝগড়া করুম কি করতে? হাতে টাহা পয়সা না থাকলে মন খারাপ হইতে ঝগড়া লাগে? কোন কাম কাইজ নাই, আর কামকাইজ করতেও ভালো লাগে না। কিযে করি?
-আমার লগে কাম করবি? হেই কবে একবার করছিলি। এরপর তো আর গেলি না।
-তোর কি মনে নাই? একবার গেছিলাম তোর লগে! পরদিনইতো কিস্তিতে জুতার পিডান খাইছি। এক কিস্তি না, তিন জনে তিন কিস্তি পিডাইছে। আবারও জুতার পিডান খাওয়াইতে চাস নাকি? চা-কুকিজ খাওয়াইতে চাস খাই, কিন্তু জুতার পিডান আর খাইতে চাই না।
-প্রত্যেকবারই কি একরকম হয়? ঐডাতো একটা একসিডেন্ট আছিলো। একসিডেন্টতো একসিডেন্টই!
-নারে ভাই, আমারে এসব কামে সয় না। মাদবর সাবের জুতাযে সারাই করা আছিলো আমি কি জানি? আর যে মুচি জুতা সারাইছে ওরে পাইলে আমি নিজেই জুতা দিয়া পিডাইতাম। শালায় জুতায় তারকাটা মারছে, ঠিকমত মাতা বোতা করবো না! জুতার পিডানে যা ব্যাতা পাইছি তারচেয়ে বেশি ব্যাতা পাইছি তারকাটায়। এখনও দাগ আছে পিডে।
-পিডানতো আমিও খাইছি। একবার জুতার পিডান খাইলেই কি থামতে হইবো? কামডা আন্তরিকতার সাথে করতে হইবো না? এইযে কাইল সাতটা বড়ি থেকে বদনা চুরি করছি। কুত্তার কারনে অন্তত দুই মাইল দৌডান লাগছে! অল্পের জন্য কামড়াইতে পারে নাই! হেই বদনা বেচা টাহায়ইতো কুকিজ হান্দাও!
জাবেদের কথায় মকিমের মন কিছুটা গলে গেলো। একটু দ্বিধা দন্ধের মধ্যে আছে। কিন্তু পাতলা কাম ছাড়া মকিমের কোন কাজ ভালো লাগে না। চিন্তা করলো আবার শুরু করবে। বউকে কথাটা জানানো যাবে না। আগের বার জুতার বাড়ি খাওয়ার পর অনেক কাদছে। সেবা করছে ঠিকই, তবে কড়াল করাইয়া ছাড়ছে যেন আর ওপথে না যাই। মকিম বললো
-ঠিক আছে যামু আমি। কি করবি চিন্তা করছোস?
-সময় মত কইমুহানে! সন্ধায় বাজারের উত্তর মাতায় দেহা করিস।
চা খাওয়া শেষে জাবেদ চকচকে নতুন একটা একশ টাকার নোট মোকলেসের মুখের সামনে ধরে বললো ‘দাম রাখো’। এর পর মকিম আর জাবেদ যার যার পথে চলে গেলো। জাবেদের বাড়ি পশ্চিম পাড়ায়। যাওয়ার সময় দেখা জমিলা চাচির সাথে। জমিলা চাচির সাথে জাবেদ একটু খাতির করার চেষ্টা করে। কুশলাদি জানতে চায়, বড় মেয়েটা কেমন আছে এসব আরকি!
জামিলা চাচির তিনটা মেয়ে, কোন ছেলে নাই। জামিলার স্বামী রিক্সা চালায়। তিন চাকার উপর রিক্সা দাড়িয়ে থাকলেও ঐ আয়ের উপর সংসার ঠিকমত দাড়িয়ে থাকতে চায় না। রিক্সার ভারাসাম্য তিন চাকায় ধরে রাখে কিন্তু সংসারের ভারাসাম্য রাখা কঠিন। বাজারে ভ্যান বেরিয়েছে। একটি ভ্যানে ছয়জন যাত্রী টানতে পারে। রিক্সায় দুইজনের বেশি টানা যায় না। ভ্যানে মালামালও টানা যায় বেশি, রিক্সায় মালামাল বেশি নিতে পারে না। ফলে রিক্সার চেয়ে ভ্যানে ভাড়া খরচ কম হওয়ায় এখন মানুষ রিক্সায় খুব একটা উঠতেই চায় না। রিক্সা চালিয়ে আয় এতটাই কমেছে যে সংসার চালিয়ে মেয়েদের পড়াশুনা করানতো দুরের কথা তিন বেলার জায়গায় দুই বেলা ভরপেট খাবার তুলে দেয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে। একটু বাড়তি আয়ের আশায় জমিলা স্থানীয় এক এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়েছে।
স্বামীর কাছ থেকে প্রতিদিন কিছু টাকা নিয়ে কয়েকদিন সমিতিতে চাঁদা দিয়েছে। এর পর ঘুরে ঘুরে ঋণ পাওয়ার সুযোগ এসেছে জমিলার। মাত্র পাঁচ হাজার টাকা ঋণ তুলে একটা ছাগল কিনেছিলো। একটা বাচ্চা সহ ছাগল কিনেছিলো। এখন বেড়ে তিনটা হয়েছে। একটা খাশির বাচ্চা বেশ বড় হয়েছে। বাচ্চাটা আরেকটু বড় হলে সামনের কোরবানির ঈদে বিক্রি করে ভালো টাকা পাবে বলেই জমিলার আশা। খাশিটা বিক্রি করে টাকাটা খরচ করবে না চিন্তা করেছে। বড় মেয়েটা বড় হয়ে যাচ্ছে দ্রুত। ওর জন্য দুটি কানের দুল বানাবে। বিয়ে দিতে হবে মেয়েটাকে। হঠাৎ করে গয়না কিনতে পারবে না, আর রিক্সার আয় দিয়েযে করবে তারও সম্ভাবনা দেখছে না।
জমিলাকে দেখে দাড়িয়ে গেলো জাবেদ। জমিলার চেয়ে ছাগলের দিকে বেশি মনোযোগ জাবেদের। জাবেদ জিজ্ঞেস করে
-কয়ডা ছাগল চাচি?
-তিনডা। বুড়াডা আবার বিয়াইবো।
-ভালো। কয়ডা দিয়া শুরু করছিলা পালা?
-বুড়াডা বাচ্চা সহ কিনছিলাম।
-সাবধানে রাইখো। দিনকাল ভালা না।
-হ, বাইত্তে কুত্তা আছে। বাড়ির বাইরের কুত্তাকাত্তা আইলে খেদায়। গ্রামে কুত্তা কাত্তা বাইরা গেছে। কিছুই আর ঠিকঠাক রাহা যায় না!
-হ চাচি, তাইতো সাবধানে রাখতে কইলাম।
জমিলায় মনে মনে ভাবে, তুইতো বড় কুত্তা। গ্রামে তোর জন্যইতো কোন কিছু ঠিক থাকে না! আবার হাউকারি করে। জাবেদ আর কথা না বাড়িয়ে চলে যায়। জমিলা ছাগলগুলোকে বেধে রেখে কিছু লতা পাতা তুলে। রাতে সামনে দিলে চাবাবে। গরমের রাত। দীর্ঘ রাত ছাগলগুলো যাতে খুধা পেটে না থাকে সেই ভেবে প্রতিদিনই কিছু লতাপাতা তুলে সামনে দেয়।
সন্ধা লাগার সাথে সাথে বাজারের উত্তর মাথায় গিয়ে হাজির হয় মকিম। জাবেদের এখনও কোন খবর নাই। একটা বিড়ি ধরিয়ে কয়েকটা টান দিতে দিতেই জাবেদ এসে হাজির। দেখেই জাবেদ বলে
-কিরে, আইয়া পড়ছোস?
-হ, কইলি, তাই আইয়া পড়লাম। কি করবি চিন্তা করছো? ধরা খাওয়াবিনি আবার!
-আরে না না। ধরা খাইলে কি তুই একলা খাবি? আমি খাইমু না?
-তুইতো চালনের ফুডা দিয়া বাইর হইয়া যাস প্রতিবার।
-আমি চালনের ফুডা দিয়া বাইর হইতে পারলে কি হইবো? তুই ধরা খাইয়া প্রতিবারইতো আমার নাম কইয়া দেস। এর পরতো দুইজনে একসাথেই জুতার পিডান খাই!
-কি করুম? যেই মাইর দেয়, না কইয়া উপায় থাকে?
সুনসান নিরব বাজার। দুজনে বাজারের উত্তর মাথার একটা বেঞ্চে বসে। মকিম পরিকল্পনা জানতে চায়। সে খুবই উদগ্রিব। কি করবে সেই প্লান জানতে তার আগ্রহের শেষ নাই। জাবেদকে বলে
-আজ ধান্দাডা কি?
-জমিলা চাচিরেতো চিনস না?
-হ, চিনি। হের বাড়িতে কি পাবি, তিনডা মাইয়া ছাড়া?
-আরে দুর বেডা, মাইয়া দিয়া কি করুম? চাচি তিনডা ছাগল পালে। কিস্তি উঠাইয়া বাচ্চাসহ কিনছিলো। এহন তিনডা হইছে। খাশির বাচ্চাডা বেশ বড় হইছে। এখন আর বাচ্চা কইয়া লাভ নাই, পুরাই খাশি হইয়া গেছে। খাশিডাই চুরি করতে হইবো।
-কামডা কি ঠিক হইবো? কিস্তি উঠাইয়া কিনছে। চুরি করলে কিস্তি পরিশোধ করবো কেমনে?
-এইযে, তোর বিবেক আবার খাড়াইয়া গেছে! আমরা কি সবগুলা একসাথে নিমুনি? কিস্তিতে কেনা ছাগল আমরা কিস্তিতে চুরি করুম! আজকে একটা নিমু, বুড়াডা আবার বাচ্চা দিবো, চাচির বেশি সমস্যা হইবো না!
-তবুও চিন্তা কইরা দেখ! কামডা কি ঠিক হইবো?
-কোন চিন্তা করিস না, ধর খাসিডা হের জামাইরে দিছে! তুইতো বিয়া করছোস, আমি কি করছি? আমারে হের জামাই ভাবলেই হইলো!
-আইছি যহন, তহন এত চিন্তা ভাবনা কইরা লাভ নাই। কি করবি আর কখন করবি বল?
-বয়, বিড়ি টান। সময় হইলেই কইমু।
জাবেদ আর মকিম কিছুক্ষণ পায়চাড়ি আর বিড়ি টানাটানির পর রাত একটু গভীর হলে আস্তে আস্তে জমিলার বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলো। গ্রামের মানুষ সন্ধার পর পরই ঘুমিয়ে পড়ে। শুধু ঘুম নয় গভীর ঘুমে নিমজ্জিত হয়। সারা দিন প্রচুর খাটাখাটুনির পর কার মনে চায় রাত জাগতে?
জাবেদ আর মকিম জমিলার উঠানে পা রাখতেই জমিলা চাচির কুকুর কিভাবে যেন টের পেয়ে গেলো। জাবেদ ওস্তাদ চোর। পকেটে করে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে বনরুটি নিয়ে এসেছে। দুর থেকেই একটা ছুড়ে মারলো। কুকুরটা নিয়ে অমনি খাওয়া শুরু করলো। প্রথমটা খাওয়া শেষ হলে আরেকটা দিলো। সেটাও খেলো কুকুরটা। মকিম বললো
-কি করস? আমরা কি কুত্তারে রুডি খাওয়াইতে আইছি?
-কতা কইস না, দেখতে থাক। এবার চল একটু সইরা থাকি। বিশ মিনিট পর দেখবি কুত্তায় কোন জ্বালাতন করবো না।
-হেইডা আবার ক্যামনে? আবার গেলে আবারওতো রুডি দেওয়া লাগবো, রাইত ভইরা কি ওরে রুডিই খাওয়াইমু?
-আর লাগবো না। দুইডায়ই ও কাইল দুপুরের আগে ঘুম থেকে উঠতে পারবো না। গ্যারান্টি!!
-কস কি? কি করছস? তুইতো বেশ শিয়ানা!
-খালি রুডি খাওয়াইমু আমি কি এত খারাপ লোক?
-না না! তুইতো বায়তুল মোকারমের জুতা চোরা হাজি!
-বাজে কতা কইস না! চুপচাপ অপেক্ষা কর।
-মশায় তো চুমায়!
-জমিলা চাচির মাইয়্যায় তোর লাইগা কি কয়েল জ্বালাইয়া রাখবো? মশায় তো কামড়াইবোই। হাত নাড়, যাইবো গা।
মিনিট বিশেক পরে জাবেদ আর মকিম হাটা দিল জমিলার ঘরের দিকে। ছোট্ট ঘরের পাশেই একচালা দিয়ে ছাগল রাখার ঘর করছে। ঘরের ঝাপ দড়ি দিয়ে বাধা। বাধন খুলে ভিতরে প্রবেশ করে দেখে ছাগল শুয়ে শুয়ে পান চিবোনের মত ঘাষ চিবুচ্ছে। খুটির সাথে বাধা খাশির গলার দড়িয়া খুলে মকিমের হাতে ধরিয়ে দিলো জাবেদ। এবার যখন আরেকটা খুলতে যাবে তখন মকিম বাধা দিলো। চোর হলেও ইমান মজবুত। জাবেদকে থামিয়ে বললো
-এমন কতাতো ছিলো না! খাসিটা নেওয়ার কথা, লইছি, এখন ভালোয় ভালোয় চল। এমন ভাবে মাথার মাঝে বাড়ি মারার দরকার নাই। অভিষাপে ছারখার হইয়া যামু।
-তোর ইমান তো দেহি টনটনা! আচ্ছা যা, খাসিডা লইয়াই যাই। আরেকদিন আরেকটা নিমুনে। রাইখ্যা খাইতে হইবো। একদিনই সব খাইলে পরে খাইমু কি? তোর বুদ্ধিটা খারাপ না! এইবার চল।
মকিম খাশির মাথা ঢেকে কোলে নিয়ে হাটা শুরু করেছে! পিছন পিছন জাবেদ হাটতে শুরু করলো। এমন সময়ই কুকুর ঘেউ ঘেউ করা শুরু করলো। জাবেদ তো তাজ্জব! এ কেমন করে সম্ভব! ঘুমের ওষুদ মিশানো দুইটা বনরুটি খাওয়াইছে। এরপরও কিভাবে ঘুম ভাঙ্গে। ঔষধ কোম্পানির উপর আসলে ভরসা করা যায় না। ভেজালে দেশটা ছেয়ে গেছে। সব কিছুতে ভেজাল দেয় দিক আছে, তাই বলে ওষুধেও? অবাক হয়ে যায় জাবেদ। কুকুরের ডাকাডাকিতে ছাগল এবার সাহস পেয়েছে। সেও মেতাতে শুরু করলো। কুকুরের ঘেউ ঘেউ আর ছাগলের মেতানিতে জমিলার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। জমিলা বুঝতে পারলো ঘটনা কি। তারাতারি স্বামীকে ডেকে তুললো। জমিলা ও তার স্বামী দরজা খুলে চেচাতে থাকলো। চোর চোর বলে শোর দিতেই আশেপাশের প্রতিবেশিরাও ঘুম থেকে উঠে টর্চ লাইড নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। মকিম বললো
-কাম শেষ। ধরাই মনে হয় পইরা গেলাম।
-তুই আসলে একটা কুফা। আমার আগেই বুঝা উচিত আছিলো। তোরে লইয়া কামে বাইর হইলেই ধরা খাই। বদনা চুরি করলাম তাতে ধরা খাইলাম না, তোরে নিয়া আইয়া আজ ধরা খাইয়া যামু! দৌর দে।
-ছাগল কি করুম। ছাইরা দিমু?
-জানে বাঁচলে অনেক ছাগল চুরি করতে পারবি। এখন ফালাইয়া দৌর মার। আগে জান বাঁচা।
মকিম ছাগল ফেলে দৌর দেয়ার আগেই লোকজন লাইট নিয়ে বের হয়ে গেছে। জাবেদ আর মকিমের দিকে সবাই লাইট মেরে রাখছে। মকিম ছাগল ছেড়ে দিয়েছে হাত থেকে। ছাগল মেতাচ্ছে। দৌর দেয়ার সুযোগ আর নেই। সবার হাতেই দেশীয় অস্ত্র। কেউ টেঁটা, কেউ সড়কি, কেউ হুনকোচ, কেউ লাঠি, কেউ কাফলার ডাল ভেঙ্গে নিয়ে আসছে। দৌর দিলে যদি টেঁটা মারে তবে কাম শেষ চিন্তা করে ওরা দুজনেই দাড়িয়ে রইলো।
সবাই কাছে আসলে প্রথমেই জাবেদ মুখ খুললো। এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো
-কি হইছে? এমনে চাইয়া রইছেন ক্যান? আমরা কি করছি?
‘কি করছ বুঝ নাই এহনও? কাউফলা দিয়া পাছায় কয়েকটা মারলেই টেরপাইবা।’ জমিলার স্বামী বললো। জমিলা দৌড়ে গিয়ে খাশিটা কোলে তুলে নিয়ে আদর করতে থাকলো। কাদছে আর খাশির গায়ে হাত বুলাচ্ছে। দুজন এসে জাবেদ আর মকিমের হাত দুটি পিছনের দিকে নিয়ে ছাগলের দড়ি দিয়েই বেধে ফেললো। জাবেদ ও মকিমকে নিয়ে জমিলার বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলো সবাই। জমিলার বাড়িতে নিয়ে উঠানের পেয়ারা গাছটার সাথে বেধে রাখলো। উৎসাহি যুবকেরা কয়েক ঘা মাইর দিতেই চেচানি শুরু করলো দুজন। এলাকার মুরুব্বিরা যুবকদের থামিয়ে দিয়ে বললো
-থাম, মারার দরকার নাই। বেতালে বাড়ি পরলে মইরাও যাইতে পারে। চোর মাইরা মাডার কেসের আসামী হওয়া লাগবো। মারার দরকার নাই। যা করার কালকে সকালে চেয়ারম্যান সাবের কাছে নিয়াই করবো। কয়েকজন ওদের পাহারার জন্য থাক। সকালে চেয়ারম্যানের বাড়ির উঠানে নিয়া আসিস। সবাই থাকুম আমরা।
এই বলে আস্তে আস্তে সবাই চলে গেলো যার যার বাড়ি। সকালে চেয়ারম্যান কোলাহালের কারনে উঠে গেলো। বাইরে এসে দেখে দুই চোর সহ এলাকার মানুষ এসেছে। জানতে চাইলে সবাই একসাথে বলতে শুরু করলো। চেয়ারম্যান সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বললো
-একজন একজন করে বলো।
এক মুরুব্বি উঠে বললো
-চেয়ারম্যান সাব। ওদের কারনে কেউ শান্তিতে থাকতে পারে না। পরশু রাতে কারো বাড়ির সিলভারের আর পেতলের বদনা রাখে নাই। প্লাস্টিক আর মাটির বদনা বাদে সব সাফ কইরা ফালাইছে। কাল রাতে জমিলার খাসিটা নিয়ে রওয়ানা দিয়েছে। আমরা সবাই হাতে নাতে ধরছি। একটা উপযুক্ত বিচার করোন লাগবো।
-খালি কি তোমাগোডাই নিছে! আমার বদনা, আমার মায় যেইডায় কইরা রাইতে মোতে সেই পিতলের পিসপটও নিয়া গেছে। তোমরা কইছো, আমিতো কই নাই সরমে! কত বড় সাহস চিন্তা করা যায়?
-তাইলে আপনিই ওদের বিচার করেন।
চেয়ারম্যান ওদের কাছে ডাকলেন। জিজ্ঞেস করলেন এমন কাজ আর করবে কিনা? ওরা দুজনেই মাইরের ভয়ে জানালো আর করবে না। তখন চেয়ারম্যান ঘোষনা করলো যে ওরা এই এলাকায় থাকতে পারবে না। সেই শর্তে ওদের ছেড়ে দেয়া হবে। নয়তো পুলিশে দেয়া হবে। সাথে দশটা করে জুতার বাড়ি দেয়া হবে। উপস্থিত সবাই এক বাক্যে চেয়ারম্যানের সাথে সায় দিলো। উপস্থিত দুজন করে ষন্ডা মার্কা যুবক দুই কিস্তিতে জুতাপেটা করলো। জুতা পেটা করার পর জাবেদ ও মকিমকে চেয়ারম্যান বলে দিলো,
-তোদের যদি এই এলাকায় আর দেখি তবে কি শাস্তি অপেক্ষা করতাছে তা তোরা চিন্তাও করতে পারছিস না। এলাকা ছেড়ে চলে যাবি এবং নতুন জায়গায় নতুন ভাবে মাথা উচু করে বাঁচবি। এসব আকাম ছাকাম ছেড়ে দিবি, ঠিক মনে থাকবে।
-জি চেয়ারম্যান সাব, মনে থাকবে।
বিচারের পরে জাবেদ আর মকিম শরীরে প্রচন্ড জুতা পেটার ব্যথা নিয়ে যার যার বাড়ি চলে গেলো। বাড়ি গিয়ে মকিম তার স্ত্রীকে বললো,
-সব গুছাও। এই এলাকায় আর থাকা যাবে না।
-তোমারে কতবার কইছি ভালো হইয়া যাও! আমার কথা শুনলা না। আজ আবার মাইর খাইলা। এখন আমি সমাজে মুখ দেখাবো কেমন করে, সেইটা একবার চিন্তা কইরা দেখলা না!
-আমি এই এলাকায় আর থাকবো না। আর তোরে আজ কথা দিলাম, আমি ভালো হইয়া যাইমু। এমন কাম আর কোনদিন করুম না। এই এলাকায় থাকলে আমি ভালো হইতে পারুম না। সবাই আমায় খোটা দিবো। চাইলেও ভালো থাকতে পারুম না। চল এই এলাকা থেকে যাইগা।
-তুমি কি কতা রাখবা? আবার যদি কর?
-না, তোর মাথা ছুইয়া কথা দিলাম। আমি কষ্ট কইরা খামু, তবুও আর এই পতে যামু না। আমারে বিশ্বাস কর।
-বিশ্বাস কইরা কইরাইতো এতদিন ধইরা সংসার করতাছি। আইজও করলাম। চলো, যাইগা। নতুন কোন জায়গায় বাসা নেই। তয়, কই যাইবা?
-ঢাকা যামুগা। বিশাল জায়গা, কোটি মানুষ। একটা না একটা কাম কাইজ জুটবোই। কাম কইরা খাইমু।
মকিম ঢাকায় এক বস্তিতে ছোট্ট একটা ঘর নিলো। পরিচিত এক লোকের মাধ্যমে একটা রিক্সা নিলো। প্রতিদিন রিক্সা চালিয়ে যে আয় করে তার থেকে খরচের টাকাটা বাদ দিয়ে বাকি টাকা বউয়ের হাতে তুলে দেয়। সংসারে দুজন মানুষ। খরচ খুব একটা বেশি করে না মকিমের বউ। মকিম সারাদিন পরিশ্রম করে যা আয় করে তার বড় একটা অংশ চলে যায় রিক্সা মালিককে ভাড়া বাবদ দিতে। মকিমের বউ পাশের ঘরের ভাবিদের সাথে একটা সমিতি করেছে। ভাসমান সমবায় সমিতি। স্থানীয় একটি এনজিওর এক আপা এসে প্রতিদিন সমিতির চাঁদা নিয়ে যায়। সঞ্চয় বেশ ভালোই জমেছে। অন্য সদস্যরা ঋণ নিয়েছে আগেই। এবার মকিমের বউয়ের পালা। মকিম রাতে বাড়ি আসলে বউ বলে,
-তুমিতো অনেক কষ্ট কর। যা আয় করো তার বড় একটা অংশ চইলা যায় মালিকের ভাড়া দিতে। নিজে যদি একটা রিক্সা কিন তাইলে যা আয় করবা তার পুরাটাই তোমার থাকতো। তখন পরিশ্রম আরেকটু কম করলেও চলতো। তুমি একটা রিক্সা কিনো।
-রিক্সা কিনুম টাকা পাইমু কই। প্রতিদিন যা একটু একটু কইরা জমাইছো তাতে কি রিক্সা কিনা যাইবো, একটা চাক্কাও কিনা যাইবো না।
-তুমি চিন্তা কইরো না। আমি কিছু সঞ্চয় করছি। এখন ঋণ নেওয়ার পালা আইছে। আমি ঋণ নেই। তুমি একটা রিক্সা কিনো!
সমিতির থেকে ঋণ নিয়ে মকিম একটা রিক্সা কিনলো। আয় রোজগার ভালোই হয় এখন। তবে রিক্সা মালিকের জমার মতই বড় অংকের একটা টাকা চলে যায় ঋণের কিস্তি বাবদ। কিস্তির কথা মনে পরলে মকিমের ঘুম আসতে চায় না। এ এক নতুন আপদ ঘরে এসেছে। মাঝে মাঝে ভাবে, এর চেয়ে ভাড়ার রিক্সাই ভালো ছিলো। এতটা চাপ ছিলো না। এখন ঋণের কিস্তি দিতে দেরি হলে বা দিতে না পারলে সমিতির লোকজন এসে বউকে বকাঝকা করে, খারাপ ব্যবহার করে। মকিম সকল লাঞ্চনা-বঞ্চনা নিজে সহ্য করতে রাজি কিন্তু বউকে সে কোন কটু কথা শুনাতে চায় না।
মকিম বউকে খুবই ভালোবাসে। শত কষ্ট হলেও সে বউকে কষ্ট দিতে চায় না। পূর্বে এদিক ওদিক করলেও এখন সে বউয়ের প্রতি খুবই আন্তরিক। বউ ছাড়া অন্য কোন মেয়ের সাথে সম্পর্ক করার কথা চিন্তাও করে না। এত ভালোবাসার বউকে যদি সমিতির লোকজন এসে দুর্ব্যাবহার করে যায় তা কি সহ্য করার মত? সম্প্রতি রিক্সা চালিয়ে আয়ও অনেক কমে গেছে। সপ্তাহে দু এক কিস্তি মিস হয়ে যাচ্ছে। এটা মকিম ইচ্ছাকৃত করে না। রাস্তায় নামলে প্রতিদিন যে একই রকম আয় হবে তাও কিন্তু নয়।
চৌদ্দ ফেব্রুয়ারি। রিক্সা নিয়ে নেমেছে মকিম। সারাদিন রিক্সা চালিয়েছে। জোড়ায় জোড়ায় ছেলে মেয়ে ঘুরছে। সারাদিন জোড়ায় জোড়ায় যাত্রী টেনেছে মকিম। সন্ধা হওয়ার সাথে সাথে চিন্তা করলো আজ আর কাজ করবে না। বাসায় চলে যাবে। বউকে একটু আদর করবে, ভালোবাসবে। চাইলে বউকে নিয়ে রিক্সায় ঘুরবে। বউ যদিও মকিমের রিক্সায় চড়তে চায় না। মকিম কষ্ট করে চালাবে আর সে বসে থাকবে সেটা সহ্য করতে পারে না। মকিম বাসায় গিয়ে দেখে বউ বসে আছে। মকিম বললো
-চলো আজ বাইরে ঘুরতে যাবো।
-আজ হঠাৎ ঘুরতে যাওনের কি হইছে।
-আজকে নাকি ভালোবাসোনের দিবস। গরিবের কি ভালোবাসা নাই? আমরাও চলো ঘুরতে যাই।
-না, না। আমার সরম লাগতাছে। তুমি কি যে কও!
-চলোই না। যাই।
-আমার কাম আছে। রান্দোন লাগবো।
-লাগবো না। রাইতে ঘুইরা ঘাইরা বাইরেই খাইয়া লইমু।
মকিম তার বউকে নিয়ে বেরিয়ে পরলো। একটা রিক্সা ভাড়া করলো। ঘন্টা চুক্তিতে রিক্সা নিলো। দুই ঘন্টা শহর দিয়ে ঘুরিয়ে আবার এই বস্তিতেই নামিয়ে দেবে। মকিম ঘুরাঘুরি ফাকে ফাকে বউকে চটপটি, ফুচকা খাওয়ালো, ফুটপাত থেকে আলু পুরি কিনে রিক্সায় বসে খেলো। দারুন সময় কাটলো দুজনের। বাসায় ফিরে এসে অনেক রাত হওয়ায় শুয়ে পড়লো। সারাদিন যুবক যুবতিদের ভালোবাসাবাসির কর্মকান্ড দেখে বউকে একটু আদর করতে মন চাইলো। হাতটা ধরে কাছে টেনে নিয়ে গল্প করলো। আদরের এক পর্যায়ে বউ বললো
-কালকে কিন্তু কিস্তি দিতে হইবো, মনে আছে?
মকিম এবার বউয়ের হাতটি ছেড়ে দিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। মকিমের বউ মকিমের নিরবতা দেখে বললো
-কি হইলো! ঘুমাইয়া পরলা নাকি? আদর গেলো কই? চুপ হইয়া গেলা যে?
-না, এমনিই!
-কি হইছে বলো, একটু আগেতো কতা বার্তা কইলা। হঠাৎ কইরা চুপচাপ হইয়া গেলা, কারন কি?
-কোন কারন নাইরে বউ!
-কারনতো একটা আছেই। নইলে হঠাৎ কথা বন্ধ কইরা দিলা যে। কি হইছে বলো। আমার কোন অপরাধ?
-কিছু না। আসলে কিস্তির কতা উডাইলা পরে সব কিছু মাটি হইয়া গেলো। এখন আর কিছুই ভালো লাগতাছে না। সব যেন ভিতরে ঢুইক্কা গেলো। বউ, কিসের লাইগা যে কিস্তির কতা মনে কইরা দিলা! আরেকটু পরে কইলে কি হইতো বলো? কিস্তি এমন একটা জিনিস, এই কথা মাতায় আসার সাথে সাথে সব সুখ উইড়া যায়। তোমার কোন দোষ নাই বউ! হায়রে কিস্তি............দিতে না পারলে বউও নিয়া যাইতে চায়! কেন যে কিস্তি উঠাইয়া রিক্সা কিনতে গেছিলাম!

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা মার্চ, ২০১৯ দুপুর ২:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: কারো কাছ থেকে টাকা লোন নেওয়া আমি কোনো কালেই পছন্দ করি নাই।
কিস্তি তে জিনিসপত্র কেনাও আমার পছন্দ না।

২| ০২ রা মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৩:৩২

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: সুদ খাওয়া এবং দেওয়া হারাম।

৩| ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ সকাল ৯:৫৫

মা.হাসান বলেছেন: ভাই আপনার গল্পটা ভালো, তবে পাঠক হিসেবে আমার দুটি অবজারভেশন আছেঃ
১) গল্পের দুটি অংশ- নায়কের চোর জীবন এবং রিকশাওয়ালার জীবন। দুটি অংশ যেখানে জোড়া লাগিয়েছেন সেই জোড়াটা ভাল হয়নি, মনে হয় যেন তাল কেটে গেছে।
২) একটা রিকশার যা দাম, তাতে সমিতির টাকা কিছু সঞ্চয় থাকলে বকি ঋণের যা কিস্তি তা দিনের জমার চেয়ে বড় হবার কথা না। কাজেই কিস্তির টাকা দিতে না পেরে যে গাল-মন্দ খাওয়ার কথা বলা হয়েছে তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছে। বদলে অন্য কারনে ঋণ নেয়ার কথা বললে বিষয়টা আরো গ্রহনযোগ্য হতে পারতো।

আরো লিখবে, লেখার হাত ও মান আমার কাছে ভালো মনে হয়েছে। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.