নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসাদুজ্জামান জুয়েল

আসাদুজ্জামান জুয়েল

রওশনারা বেগম ও আবদুর রশীদ খানের কনিষ্ঠ পুত্র আমি আসাদুজ্জামান জুয়েল। ১৯৭৮ সালের ০৫ জুন শরীয়তপুর জেলার পালং থানা পালং গ্রামের এক সাধারণ মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করি। শিক্ষা জীবন শুরু মায়ের হাতে। তুলাসার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে পালং তুলাসার গুরুদাস সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এস.এস.সি; শরীয়তপুর সরকারী মহাবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচ.এস.সি; জাজিরা ডিগ্রী কলেজে থেকে বাণিজ্য বিভাগ হতে বি.কম পাস করার পর প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন অনুষদ হতে এলএল.বি ও এলএল.এম সম্পন্ন করি। প্রতিটি ক্যাম্পাসেই কেটেছে মধুর দিনগুলো। ২০০৯ সালের ০৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে আইনজীবী হিসাবে তালিকাভূক্ত হয়ে ২৩ ডিসেম্বর ২০০৯ ঢাকা বার এসোসিয়েশনে সদস্যভূক্ত হই। পরবর্তীতে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১০ শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যভূক্ত হয়ে আইন পেশার সাথে যুক্ত আছি। ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতি, শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি ও শরীয়তপুর জেলা ট্যাক্সেস বার এসোসিয়েশনের সদস্য হিসাবে আইন পেশায় নিয়োজিত আছি। সাংবাদিকতা ও লেখালিখি করি মনের টানে। একই সাথে আইন পেশা ও সাংবাদিকতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে নিরন্তন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কর্ম জীবন শুরু লেখালিখির মাধ্যমে। দৈনিক ভোরের কাগজ দিয়ে সাংবাদিকতার শুরু। এর পর দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক কালের কন্ঠ, দৈনিক গণমুক্তি সহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কাজ করেছি। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৬টি। প্রবাসীদের সুখ-দুঃখ নিয়ে লেখা আমার প্রথম উপন্যাস ‘যেমন আছি লন্ডনে’ প্রকাশিত হয় ২০১২ সালের একুশে বই মেলায়। দীর্ঘ বিরতির পরে ২০১৯ এর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় ভ্রমণ কাহিনী ‘কলকাতা ভ্রমণঃ জীবনে প্রথম কিছু’; প্রবন্ধ সংকলন ‘সমকালীন ভাবনা’ ও প্রথম কাব্য গ্রন্থ ‘হৃদয়ের শব্দক্ষরণ’। ২০২০ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় প্রবন্ধ সংকল ‘সমকালীন ভাবনা-২’ ও দ্বিতীয় কাব্য গ্রন্থ ‘তুই থাকিস পরাণের গহীনে’। এছাড়াও বেশ কিছু বই প্রকাশের অপেক্ষায় আছি। লেখালিখি করি বিভিন্ন ব্লগে। আমার ওয়েবসাইটঃ www.asadjewel.com, নিজস্ব ব্লগঃ www.asadjewel.blogspot.com এছাড়া www.somewhereinblog.net এ নিয়মিত লেখালিখি করি। শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসাবে তিনবার ও লাইব্রেরী সম্পাদক হিসাবে দু্ইবার দায়িত্ব পালন করেছি। বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, শরীয়তপুর জেলা ইউনিটের জীবন সদস্য। প্রগতি লেখক সংঘ, শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি হিসাবে দ্বায়িত্বে আছি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি। সোনালী ব্যাংক লিমিটেড শরীয়তপুর, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, কর্মসংস্থান ব্যাংক, আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক শরীয়তপুর এর আইন উপদেষ্টা হিসাবেও কর্মরত আছি। গরীব-দুঃখীদের মামলা পরিচালনার জন্য জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা শরীয়তপুর জেলা শাখার প্যানেল আইনজীবী হিসাবে দুস্থ্যদের আইনগত সহায়তা প্রদান কাজে নিষ্ঠার সাথে জড়িত আছি। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), শরীয়তপুর জেলা শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, শিক্ষানিকেতন কর্ম কেন্দ্রীক পাঠাগার, শরীয়তপুরের কার্যনির্বাহী সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি দীর্ঘদিন। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও অস্ট্রেলিয়ান বার এসোসিয়েশনের উদ্যোগে ইনটেনসিভ ট্রায়েল এডভোকেসী ওয়ার্কশপ, ২০১০ সালে এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টার এর উদ্যোগে হিউম্যান রাইটস এন্ড রুল অফ ‘ল’, ২০০২ ও ২০১০ সালে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট এর উদ্যোগে শিশু ও নারী বিষয়ক রিপোর্টিং কর্মশালা, ১৯৯৯ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর আয়োজিত কম্পিউটার ট্রেড প্রশিক্ষণ, ২০১০ সালে ইউএসএইড-প্রগতি-কালেরকন্ঠ আয়োজিত দুর্নীতি বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরী ও তথ্য অধিকার আইন বিষয়ক প্রশিক্ষণসহ পেশাগত উৎকর্ষ সাধনের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি। লেখালিখি ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে নিজেকে জড়িয়ে সমাজ সংস্কারে একজন কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। আমার অর্ধপ্রাণ কন্যা রওশন আসাদ প্রিয়ন্তী। সহধর্মীনি মুনমুন সুলতানা লুনা পেশায় শিক্ষিকা। দুই বোন রেহানা আক্তার রেখা এবং কহিনুর আক্তার শিখা এবং একমাত্র ভাই মোহাম্মদ রুহুল আমীন খান আজাদ একজন প্রবাসী। যোগাযোগের জন্য আমাকে মেইল করতে পারেনঃ [email protected]

আসাদুজ্জামান জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

করোনা রঙ্গঃ চিকিৎসক-নিরাপত্তা বাহিনী-প্রশাসন ও রাজনীতিকদের প্রতি দালালি বা কৃতজ্ঞতা

১২ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:০১


চিকিৎসক-নিরাপত্তা বাহিনী-প্রশাসন ও রাজনীতিকদের প্রতি দালালি বা কৃতজ্ঞতা, শীরনামটা কেন এমন দিলাম তার একটা বড় কারন আছে। আমার এ লেখাটা পড়ার পর যাদের পছন্দ হবে না তারা আমাকে নিঃসংকোচে বলবেন দালাল, দালালি করছি আমি। আর যাদের ভালো লাগবে তারা হয়তো বা বলবেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য লেখাটা লিখেছি। তাই যে যেভাবে নেন না কেন আমি তাতে কোন প্রতিকৃয়া করবো না। কারন আমি আপনার মতামত, ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা করি। আমার ভাবনার সাথে আপনার ভাবনা নাও মিলতে পারে। আমি যদি বলি একটা গ্লাস অর্ধেক ভর্তি, আপনি হয়তো বলতে পারেন অর্ধেক খালি। আপনি অর্ধেক খালি বলছেন বা দেখছেন তার মানে আমি মিথ্যা বলছি তা কিন্তু নয়, আবার আপনি মিথ্যা বলছেন তাও কিন্তু নয়। যা হোক, আজকের লেখাটা ডাক্তার, পুলিশ, সেনা বাহিনী, প্রশাসন ও রাজনীতিকদের নিয়ে। তাদের প্রতি আমার অর্ধেক ভর্তি গ্লাসের মত কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা আছে, এটাকে যদি বলেন দালালি তবে আমার কোনও প্রতিবাদ নেই আর যদি বলেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ তাতেও উৎফুল্ল হওয়ার কোন কারন নেই।

প্রথমেই যাদের প্রতি দালালি বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি তারা আর কেউ নয়, ডাক্তার বা চিকিৎসক। এই দুর্যোগের সময় যারা আমাদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে তারা হচ্ছেন আমাদেরই সন্তান, আমাদেরই ভাই-বোন, আমাদেরই স্বজন যারা চিকৎসাজ্ঞাণ অর্জন করেছেন। হয়তো অনেকে বলবেন আমাদের দেশের চিকিৎসকরা ডাক্তার না কষাই! কিন্তু বাস্তবতা এমনটা নয়। এক ঝুড়ি আম পঁচিয়ে দেয়ার জন্য ঝুড়ির ভিতর একটা পঁচা আমই যথেষ্ট। সত্যিই তাই। লক্ষ লক্ষ চিকিৎসকের মধ্যে এমন পঁচা আমের সংখ্যা নগন্য। কোন পেশাতে পঁচা আম নেই বলতে পারবেন? পারবেন না। সীমিত সম্পদ নিয়ে আমাদের দেশের চিকিৎসকরা দিনরাত পরিশ্রম করছে আমাদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য। এই দৃশ্য শুধু আমাদের দেশেই নয়। সাড়া বিশ্বে এই একই চিত্র। আমরা দেখেছি, সামান্য করোনা উপসর্গ দেখে স্বজনরা রোগীকে মাঠের মধ্যে ফেলে রেখে চলে গেছেন। এটা বিদেশে নয়, বাংলাদেশেরই ঘটনা। নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের এ ঘটনা। নরোত্তম সরকার নামে এক বৃদ্ধের শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দিলে পরিবারের লোকজন তাকে মাঠে রেখে আসে। এরপরই তিনি মারা যান। তবে তিনি করোনায় মারা গেছেন কি-না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এবার বুঝুন অবস্থা! চিকিৎসকদের আমরা পান থেকে চুন খসলেই গালি দেই, এই যে স্বজন, যাদের খাইয়ে পরিয়ে জীবন পার করলো সেই স্বজনরাই লোকটাকে মাঠে ফেলে রেখে গেলো। তাকে যদি হাসপাতালে ফেলে রেখে যেতো, চিকিৎসকরা কিন্তু ঠিকই সেবা দিতো, তার পরে বাঁচা মরা সৃস্টিকর্তার হাতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন অনেক ছবি দেখলাম, ভিডিও দেখলাম। দীর্ঘ পনের দিন-বিশ দিন যাবৎ চিকিৎসক বাবা, মা অথবা চিকিৎসা সহকারী নার্সসহ অন্যান্য কর্মীরা বাড়িতে যেতে পারছে না, স্বজনের মুখ দেখতে পারছে না। হাসপাতালেই কাজ করছে, আধপেটা খাচ্ছে, ফ্লোরে ঘুমাচ্ছে। ক্লান্ত শরীর এক কর্মীর উপর আরেক কর্মী এলিয়ে দিচ্ছে। সেই স্বজনকে দেখার জন্য দুধের শিশু যখন কান্নাকাটি করছে, বায়না ধরছে তখন তাকে নিয়ে চলে যাচ্ছে হাসপাতালের সামনে। হাসপাতালের দরজায় দাড়িয়ে মা অথবা বাবা মাস্ক দিয়ে মুখটা ঠিকই ঢাকতে পারছে কিন্তু চোখটা তো আর ঢাকতে পারছে না। মুখটা ঘুরিয়ে নিজেকে সংযত করতে চেষ্টা করছে। ছোট্ট শিশুরা মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য অঝরে কান্না করছে। কিন্তু উপায় নেই মায়ের-বাবার। মন চাইলেও ছুটে গিয়ে প্রিয় সন্তানকে কোলে নিয়ে একটু আদর করতে পারছেন না। চোখের পানিতে মাস্ক ভিজলেও নিজেকে উৎসর্গ করা মা-বাবা ভেজা চোখে বিদায় জানাচ্ছে, বলছে, বাবা-মা, বাসায় থেকো, খেলা করো, বাইরে বের হইও না, বাবার কথা শুনো বা মায়ের কথামতো চলো, কান্না করো না, আমি চলে আসবো। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের মায়েরা যেভাবে নাড়িছেড়া ধনকে বিদায় দিয়েছে কিন্তু আঁচলে চোখের পানি আড়াল করেছে, আজ আমাদের দেশের চিকিৎসকরাও চোখর পানি আড়াল করছে। এটা সারা বিশ্বের চিকিৎসকরাই করছে। এমন এক সময় যাচ্ছে যেখানে সবাই ইচ্ছা করলেই সব সেক্টরে যুদ্ধ করতে পারবে না, একমাত্র প্রশিক্ষিতরাই এই ময়দানে কাজ করবে এবং করছেও। অথচ আমরা আজ সেই চিকিৎসকদের-চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিতদের প্রতিপক্ষ ভাবছি। সামান্য কথায় তাদের গালমন্দ করছি। হয়তো গুটিকয়েক চিকিৎসক অমানুষের মত আচরন করছে। কিন্তু গুটিকয়েক চিকিৎসকের জন্য বিশাল জনগোষ্ঠীকে নিন্দায় মত্ত হচ্ছি। একবার ভাবুন, আপনি হলে কী করতেন, আমি হলে কী করতাম! একাত্তরে দেশের সবাই কিন্তু যুদ্ধে যায়নি, যারা গেছে তারা হিরো। অনেকে যুদ্ধে গিয়েও নিরাপদে সরে রয়েছে, অনেকে যায়ইনি। অনেকে আবার যুদ্ধে না গিয়ে বিরোধীতা করেছে। হিরোরা হিরোই আছে আমাদের হৃদয়ে, আর বিরোধীরা হয়েছে ঘৃণ্য। আজকের এই সংকটে যারা নিজের জীবন বাজি রেখে কাজ করছে তারা হিরো হয়ে থাকবে। গুটিকয়েক চিকিৎসকের কর্মকান্ড আমরা ফলাও করে প্রচার করি। বিশাল সংখ্যক চিকিৎসকরা দিন রাত খেটে যাচ্ছে তাদের আমরা সামনে আনি না, ভাবি ওটাতো তাদের দায়িত্ব! দায়িত্ব কী শুধু তাদেরই? আমাদেরও তো কত দায়িত্ব আছে, আমরা কি সেটা পালন করছি? দায়িত্ব সকলের জন্য সমান, দুই পাওয়ালা চেয়ারে বসা যায় না। চারটি পা সমান ভাবে সাপোর্ট দিলেই কেবল শান্তিতে বসে আরাম করা যায়। আমাদেরও দায়িত্ব আছে সেটা আমাদের মনে রাখা উচিত। তাই কে কিভাবে দেখছেন জানিনা, চিকিৎসকদের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা আছে এবং থাকবে, এই লেখায় তার ক্ষুদ্রতম অংশ প্রকাশ করলাম। সেলুট জানাই চিকৎসাসেবা কর্মীদের।

এবার যাদের প্রতি দালালি বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি তারা হচ্ছে আমাদের নিরাপত্তায় যারা কাজ করছেন সেই পুলিশ ভাইয়েরা। এই দুর্যোগের সময় যারা আমাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে, ঘরে থাকতে বাধ্য করছে তারা হচ্ছেন আমাদেরই সন্তান, আমাদেরই ভাই-স্বজন পুলিশ ভাইয়েরা। দেশে যখন করোনা হানা দিলো তখন এ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় জানালো বিশেষজ্ঞরা। উপায় আর কিছুই নয়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং ঘর থেকে বের না হওয়া। সরকার দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলো। আমরা কি করলাম? ছুটি পেয়ে মেয়ের আবদার, ছেলের বায়না মেটাতে চলে গেলাম সমুদ্র সৈকতে, পাহাড়ে, পার্কে। আমাদের ছুটি দিলো ঘরে থাকার জন্য, বাড়িতে অবস্থান করার জন্য আর আমরা বাড়িতে থাকার কথা শুনে ঢাকা থেকে ছুট মারলাম নিজ গ্রামের বাড়িতে। ঢাকা থেকে পাওরুটি, আপেল, কমলা, আনারসের মত করোনা বহন করে নিয়ে গেলাম প্রিয় স্বজনের জন্য। পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হলো। আমরা লকডাউনে ঈদের ছুটি কাটানোর মত গ্রামের মোড়ে মোড়ে, ছোট্ট চায়ের দোকানে ভীর করা শুরু করলাম। আমাদের পুলিশ বাহিনী মাঠে নেমে করোনায় আক্রান্ত, করোনা মুক্ত সবাইকে বুঝিয়ে, পেদিয়ে ঘরে ঢুকাতে চেষ্টা করলো। এই কাজ করতে গিয়ে তারাও ঝুকির মধ্যে পড়লো। কিন্তু কি আর করা! তারা যে প্রতিজ্ঞা করেছে মানুষের নিরাপত্তা দান করবে, সে যে কোন কিছুর মুখোমুখি হয়ে হোক। রাত জেগে পুলিশ পাহারায় থাকে, আর আমরা বাড়িতে নিরাপদে ঘুমাই। দিনের পর দিন খেয়ে না খেয়ে ডিউটি করছে। এই চিত্র শুধু আমাদের দেশে তা কিন্তু নয়। এটা সারা বিশ্বের চিত্র বলছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবই ফুটে উঠে। দেখেছি, বাড়ির বাইরে প্লাস্টিকের বালতির উপর থালা রেখে পোশাক পড়া অবস্থায় খাবার খাচ্ছে পুলিশ, অদূরে দরজায় দাড়িয়ে দেখছে ছোট্ট আদরের সন্তান। কোলে নিতে পারছে না, কাছে ডাকতে পারছে না, যদি তার থেকে সন্তান সংক্রমিত হয় সেই চিন্তায়। ঘরে ঢুকতে পারছে না, যদি পরিবারের মধ্যে সংক্রমিত হয় সেই ভেবে। এটা কি তাদের উদারতা নয়? পুলিশের মধ্যেও খারাপ পুলিশ আছে। কিন্তু সেটা সংখ্যায় কত? গুটিকয়েক পুলিশের অসৎ কর্মকান্ডের দায় কী পুরো পুলিশ বাহিনী বহন করবে, করা ঠিক হবে? তাদের আমরা ঢালাও ভাবে কী দোষারোপ করতে পারি, করাটা কী উচিত হবে। ভালো ভালো পুলিশ কর্মী এখনও আছে, আর আছে বলেই আমরা এখনও রাতে নিরাপদে, নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারি। আমাদের পুলিশ বাহিনীর ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আমাদের প্রিয়জনদের নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে যাই। তাই ঢালাও ভাবে দোষারোপ না করে যারা এই দুর্দিনে কাজ করছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। সেই চিন্তা থেকেই তাদের প্রতি আমার এই দালালি বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।

যেকোন সংকটে আমাদের সেনা বাহিনী আমাদের পাশে থাকে। এমন সংকটময় মূহুর্তেও তারা চড়ে বেড়াচ্ছে শহরের অলিগলি। সশস্ত্র শত্রুর মোকাবিলা করতে ভারি অস্ত্র লাগে যা আমাদের সেনা বাহিনীর আছে। কিন্তু এই সংকট মোকাবেলায় তাদের নিরাপত্তা শুধু মুখে এক টুকরা মাস্ক। রাস্তায় ঘুরে ঘুরে আমাদের দাপিয়ে বেরাচ্ছে। ঘরে ঢুকতে বাধ্য করছে। নানান ছল ছুতোয় আমরা বাইরে বের হচ্ছি। আমাদের বাধ্য না করলে কোন কিছুই করতে চাই না। সুযোগ পেলেই আমরা রিলিফের চাল চুরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এই সময় আমরা দাবী তুলছি ত্রাণ সামগ্রী যেন সেনা বাহিনীকে দিয়ে বিতরণ করা হয়। এর একটাই কারন, তাদের প্রতি আমাদের অগাধ বিশ্বাস। তারা আমাদের আস্থার বিশাল জায়গা জুড়ে আছে। এই সেনা বাহিনীর কিছু বিপথগামী কর্মী হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিলো। তাই বলে সবাইতো খারাপ নয়। যারা করেছিলো তাদের জাতি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। আর হিরোর মত যারা মানুষের বিপদে ঝাপিয়ে পড়ে তাদের প্রতি এখনও আস্থা রেখে চলেছে সাধারণ মানুষ। তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধ আছে এবং সেটা প্রকাশ করি। হয়তো আপনি বলতে পারেন আমি দালালি করলাম।

চেয়ারের চার পা যেমন একে অপরের পরিপূরক তেমনি এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসক, পুলিশ, সেনা বাহিনীর মত আরো পা আছে চেয়ারের। এর মধ্যে প্রশাসন ও আমাদের রাজনীতিকরাও জড়িত। সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমন্বয় করে চলেছে আমাদের প্রশাসনের কর্তারা। দেশে সরকার যখন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলো তখন অনেক বিভাগের কর্তারা কিন্তু ছুটি পেয়ে আয়েশী জীবন কাটাচ্ছে বাড়িতে। কিন্তু প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগের সহ অন্যান্য কয়েকটি বিভাগের কর্মীদের কিন্তু কোন ছুটি নেই। যারা নিয়মিত প্রাপ্য ছুটিতে ছিলেন তাদেরও ছুটি বাতিল করে দ্রুত যোগদান করতে বলা হয়েছে এবং যোগদান করেছেও। করোনা যুদ্ধে প্রশাসনের যারাই সমন্বয়ের কাজ করছে তারাও কেউ বাড়িতে ফিরতে পারছেন না। চিকিৎসক যখন সকল চেষ্টা শেষে ঘোষণা দিচ্ছেন যে রোগী আর বেঁচে নেই তখন তাদের দাফন করার সমন্বয় করছেন আমাদের প্রশাসনের কর্মীরা। তারা সমন্বয় করছেন ত্রাণ কার্য। আমরা যেখানে ত্রাণের মাল আত্মসাতে ব্যস্ত সেখানে তারা হানা দিয়ে ছিনিয়ে আনছেন আত্মসাৎকৃত চাল। আমরা যারা কথা শুনিনা, দোকান খোলা রাখি, আমাদের দোকান বন্ধ করতে বাধ্য করছেন, জরিমানা করছেন। এটা করতে গিয়ে কেউ কেউ অতি উৎসাহি আচরণ করছেন সেটাও আছে, কিন্তু সবাই তো আর করছেন না। আমাদের প্রশাসনে অনেক ঘুষখোর আছেন। আমরা তাদের ঘৃণা করি, গালি দেই। কিন্তু অনেকেই আছেন যারা দিন রাত আমাদের সেবা করছেন, যে সেবার প্রতিজ্ঞা তিনি করেছিলেন। আমাদের রাজনীতিকরা আমাদের জন্য কাজ করছেন।

আমাদের রাজনীতিতে পচন ধরেছে, তাই বলে পুরোটাই কি পচে গেছে? না, এখনও পুরোটা পচেনি। তারা এই সংকটের সময় জনবান্ধব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। বিরোধী রাজনীতিক যারা আছেন তারাও এগিয়ে আসছেন মানুষের পাশে দাড়াতে। যারা সুযোগ সন্ধানী তারা ঠিকই সুযোগ নিচ্ছেন। কিন্তু সুযোগ সন্ধানীর সংখ্যা কত? অবশ্যই কম। রংচোরা সুযোগ সন্ধানী ভালো মানুষগুলোর সাথে মিশে ভালো মানুষগুলোর চরিত্রে কালিমা লেপন করছেন। প্রশাসন বলি আর রাজনীতিক বলি তাদের প্রতিও আছে কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা।
এই সংকটের সময় আমরা নিজেদের বিভক্ত না করে আসুন ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি। সকলের হাতগুলো একত্রে কাজ করলে এই সংকট থেকে আমরা বেরুতে পারবো। যারা সুবিধাবাদী, রংচোরা, অকৃতজ্ঞ, ভিতু, কাপুরুষ, লোভী, দুর্নীতিবাজ তারা যুগে যুগে সুযোগ নিয়েছে, এখনও নিবে। তাদের জাতি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে। আর যারা এই সময়ে কাজ করবে তাদের জাতি হিরো হিসাবেই চিরদিন স্মরণ করবে। হিরোদের প্রতি আমার দালালি, ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধাবোধ নিরন্তর। এখন দোষারপের সময় নয়, ঐক্যের সময়।
লেখকঃ আইনজীবী ও কলামিস্ট।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: আল্লাহ আল্লাহ করেন।
বিপদ কাটুক। বেচে থাকলে তারপর দুষ্টলোকদের বিচার করা যাবে।

২| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫০

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: সরকারকে কৌশলী হতে হবে। পরিস্থিতি সামলানোর দায়িত্ব সরকারের। তারা ভুল পদক্ষেপ নিলে পুরা জাতি বিপদে পরবে। কঠোরও হতে হবে আবার কখনও মাথায় হাত বুলাতে হবে। কাজ আদায় করে নিতে হবে।

৩| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৩২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অনিয়ম করতে করতে অনেকে নিজেকে রাজা ভাবছে। তবে সবার বাঁচার অধিকার আছেই।

৪| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৪৪

ঢাবিয়ান বলেছেন: এরাই সত্যিকারের হিরো। অন্তরের অন্তস্থল থেকে দোয়া রইল এই রিয়েল হিরোদের জন্য । এই যোদ্ধাদের সর্বোচ্চ রাস্ট্রীয় সম্মান ও সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার দাবী জানাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.