![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সম্প্রতি ইরানে একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীর ফাঁসীর মঞ্চ থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি ঘটে গত মঙ্গলবার ভোরে ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় শহর নোশাহরে। একজন ইরানি মা (যিনি কিনা উক্ত বিচারের বাদী ছিলেন) তার সন্তানের হত্যাকারীকে ফাঁসীর মঞ্চে ক্ষমা করে দেন। খবরের ভাষ্যে বলা হয়েছে- ‘২০০৭ সালে ১৯ বছর বয়সী বেলাল রাস্তায় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ছুরি মেরে তারই সমবয়সী তরুণ আব্দুল্লাহ হোসেইনযাদেহ’কে হত্যা করে। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে সম্প্রতি ইরানের সুপ্রিম কোর্ট বেলালকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার চূড়ান্ত নির্দেশ দেয়। আর এই মামলার বাদী ছিলেন নিহত আব্দুল্লাহর বাবা-মা। কিন্তু গত মঙ্গলবার বেলালের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবার ঠিক আগ মুহূর্তে নিহত আব্দুল্লাহর মা নিরাপত্তা কর্মীদের বলেন- ‘আমার সন্তানের ঘাতকের সঙ্গে আমার কথা আছে। আমাকে তার কাছে যেতে দিন।’ অতঃপর তিনি নিজ সন্তানের ঘাতকের সামনে গিয়ে অশ্র“শিক্ত নয়নে তাকে একটি থাপ্পড় মারেন এবং বলেন, ‘তোকে ক্ষমা করে দিলাম’। এরপর নিজ হাতে তার গলা থেকে ফাঁসির দড়ি খুলে দেন।’
খবরটি প্রকাশ হবার পর থেকে আমাদের মিডিয়া জগৎ, বিশেষতঃ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে আলোচনার ঝড় ওঠে। বিষয়টিকে নিয়ে যে যার মতো করে মন্তব্য প্রকাশ করছেন। উদারতা, মহানুভবতা থেকে শুরু করে ইরানের বিচারব্যবস্থার যথার্থতা ইত্যাদি কোন কিছুই এসব মন্তব্যের বাইরে নেই। তবে যা বাদ পড়েছে তাহলো, এর মধ্য দিয়ে প্রকৃত ইসলামের বিচারপ্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। উক্ত ঘটনাটিতে বাদীকেই বিচারকের আসনে বসানো হয়েছে। সেখানকার আইন হলো, অপরাধ প্রমাণিত হবার পর বাদী যদি অপরাধীকে ক্ষমা করে দেয় তাহলে কোন বিচারকই আর অপরাধীকে সাজা দিতে পারবে না, আবার যদি বাদী ক্ষমা না করে তাহলে কোন বিচারকই বাদীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে অপরাধীর সাজা চুল পরিমাণও মওকুফ করতে পারবে না। বস্তুত, এটাই হলো প্রকৃত ইসলামের নীতি। যদিও ইরানসহ পৃথিবীর যে কয়েকটি জায়গাতে আংশিকভাবে ইসলামের কিছু বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠিত আছে তা বিকৃত, প্রকৃত ইসলাম নয়, তথাপি তাদের বিচারব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠিত এই নীতিটি হলো প্রকৃত ইসলামেরই নীতি। কাজেই এই আইনকে শুধুমাত্র ইরানিদের আইন বলা উচিত হবে না, এটা সমস্ত মুসলিমদের জন্যই স্রষ্টার পাঠানো বিধানাবলীর অংশ। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, এই নীতি এখন মুসলিম দুনিয়ার অধিকাংশ দেশেই অচল হয়ে আছে। অন্যদিকে ইরানের মতো যে অঞ্চলগুলোতে এখনও প্রচলিত আছে তাও ভারসাম্যহীনতার শিকার।
ইসলামী জীবনব্যবস্থার প্রতিটি বিধান হলো ভারসাম্যযুক্ত এবং একটি অপরটির সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কিত। এটা আংশিকভাবে মানলে ভারসাম্য বিনষ্ট হবে ফলে সামগ্রিকভাবে ইসলামের যে শান্তিময় ফল আসার কথা তা আসবে না। অর্থাৎ সমাজে নীতিশিক্ষা, রসুলাল্লাহর আদর্শ গ্রহণের শিক্ষা, চারিত্রক প্রশিক্ষণ, আত্মিক শিক্ষা প্রকৃত ইসলামের মতো না থাকায় হত্যা, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাই ইত্যাদি চলছেই। অপরদিকে শুধুমাত্র বিচারব্যবস্থায় ইসলামের নীতিকে মেনে চলায় এগুলোর শাস্তিও পেতে বাধ্য। ফলে আজ দেখা যাচ্ছে, ইসলামী শরিয়াহ দিয়ে বিচার করে এমন দেশগুলোতে প্রায় প্রতিদিনই অনেক মানুষ মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হচ্ছে, চুরি করে হাত কাটা পড়ছে, যেনা করে প্রাণে মারা পড়ছে কিন্তু এত কিছুর পরও অপরাধ কমছে না, বরং দিন দিন তা ধা ধা করে বেড়েই চলেছে। অপরদিকে এত মানুষের মৃত্যুদণ্ডের ফলে একটি শ্রেণি ইসলামকে মানবতাবিরোধী ধর্ম হিসেবে চিত্রায়িত করার সুযোগ পাচ্ছে। অথচ ইসলামের স্বর্ণযুগে অর্থাৎ প্রকৃত ইসলামের যুগে আদালতগুলিতে প্রায় কোন বিচারই আসত না, কারণ সমাজ থেকে অপরাধ প্রায় নির্মূল হয়েগিয়েছিল।
তবে প্রতিহিংসাপূর্ণ সমাজের মধ্যে এসব ঘটনায় বাদী পক্ষ কর্তৃক অপরাধীকে মাফ করে দেওয়ার নজিরও খুব বেশি নয়। যে দু’এক জায়গায় মাফ করে দেওয়ার মত ঘটনা ঘটছে তারই একটি হলো ইরানের উক্ত ঘটনাটি। এমন ঘটনা যে ইরানে খুব একটা ঘটে না তার একটি প্রমাণ হলো, বৃহ¯প্রতিবারে ইরানের প্রতিটি মিডিয়াতেই ঘটনাটিকে বিস্ময় ও গুরুত্বের সাথে ছবিসহ প্রচার করা হয়েছে। সচরাচর এমনটি ঘটলে উক্ত ঘটনাকে এত গুরুত্ব দেওয়া হত না। সুতরাং ইরানে যে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত আছে তাও আংশিক, ফলে ভারসাম্যহীন অর্থাৎ বিকৃত। তবে তাদের বিচারব্যবস্থায় উপরোক্ত নীতিটি আনুষ্ঠানিক হলেও তা যে সামগ্রিক ইসলামেরই একটি অংশ তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।
আর প্রকৃত ইসলাম কেমন ছিল, তার বিচারব্যবস্থা পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠা হলে তার সরূপ কেমন হবে, তা ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে আছে। ইসলামের বিধান বাস্তবায়নে আখেরি নবী মোহাম্মদ (দ সর্বদাই তাঁর জাতিকে ক্ষমার প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন। তিনি বলেছেন- প্রতিশোধের আনন্দ একদিন স্থায়ী হয়; আর ক্ষমার আনন্দ অন্তরকে প্রশান্তি দেয় চিরকাল। এই ক্ষমা ও শাস্তি- দুই মিলে তিনি এমন একটি ভারসাম্যপূর্ণ জাতি গঠন করেছিলেন যে জাতিতে সবার হাতেই অস্ত্র ছিল (তৎকালীন সমাজে অস্ত্রের কোন লাইসেন্স লাগতো না, যে যত পারে অস্ত্র কিনে ঘর ভরে ফেলতে পারত) কিন্তু খুন-খারাপি হত না, মানুষ রাতে দরজা খুলে ঘুমতো, দোকানপাট খুলে রেখে সালাহ কায়েম করতে যেত কিন্তু কোন কিছুই চুরি হতো না। এমন একটি বৃহত্তর সমাজ তৈরি হয়েছিল কেবলমাত্র জাতির সামগ্রিক জীবনে ভারসাম্যপূর্ণ প্রকৃত ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবার কারণে। কিন্তু আজকে আর সেই সমাজ তৈরি হচ্ছে না কারণ সেই ভারসাম্য এখন নেই। আজকের মুসলিম নামধারী জাতিটির মধ্যে না আছে অন্যায়-অপরাধ থেকে সচেতন করার জন্য কোন শিক্ষার ব্যবস্থা, না আছে শাস্তির ব্যবস্থা। আবার যেখানে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা আছে সেখানেও ভারসাম্য না থাকায় তা সুফল বয়ে আনতে পারছে না। তবে ইরানের ঐ ঘটনাটি অবশ্যই প্রকৃত ইসলামের যুগের কথাই স্বরণ করিয়ে দেয়।
©somewhere in net ltd.