নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/asadali.ht

মোহাম্মদ আসাদ আলী

সাংবাদিক

মোহাম্মদ আসাদ আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারসাম্যহীন ‘পুঁজিবাদ-সাম্যবাদ’ বনাম ‘ইসলামী অর্থনীতি’

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:২৭

জড়বাদী পাশ্চাত্যের চিন্তার প্রভাবাধীন সমস্ত পৃথিবীতে এখন বোধহয় অর্থনীতিই মানুষের কাছে সবচেয়ে প্রয়োজনীয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দু’চার শতাব্দী আগে পর্য্যন্তও প্রাচ্যের বৌদ্ধ, জৈন, সনাতন ধর্মী, ভারতীয় ইত্যাদির কাছে অর্থনীতির অত গুরুত্ব ছিলো না, পার্থিব জীবনের চেয়ে আত্মার ও চরিত্রের উৎকর্ষের সম্মান ছিলো বেশী। একজন কোটিপতির চেয়ে একজন জ্ঞানী, শিক্ষিত, চরিত্রবান কিন্তু গরীব লোককে সমাজ অনেক বেশী সম্মান কোরত। আর শেষ ইসলামের অনুসারী মুসলিমদের কাছে উভয়েরই যথোপযুক্ত গুরুত্ব দেয়া হয়েছে কারণ, ইসলাম হল ভারসাম্যপূর্ণ জীবনবব্যবস্থা। এর একটি ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক সিস্টেমও রয়েছে, যদিও তা বর্তমানে উপেক্ষিত ও অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে। স্রষ্টার পাঠানো ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনীতিকে কার্যকর না করে আজ মুসলিমসহ সারা বিশ্বে এখন মানবসৃষ্ট অর্থনৈতিক মতবাদ তথা পুঁজিবাদ, সাম্যবাদ ইত্যাদির জয়জয়কার চলছে। কিন্তু বাস্তবতা হল, মানুষ যদি তাদের নিজের চলার পথ নিজেরাই দেখে নিতে পারতো, তাহলে আর স্রষ্টার সহজ-সরল পথ পাঠানোর দরকার হত না। কিন্তু মানুষ তা পারে না। তাকে স্রষ্টা এতখানি ক্ষমতা দেন নি। কাজেই যে পথে, যে সিস্টেমে, যে নীতিতে জীবনযাপন করলে তারা শান্তিতে থাকতে পারবে সেই নীতি একমাত্র স্রষ্টাই দিতে পারেন, কারণ, স্রষ্টায় জানেন তাঁর সৃষ্টি কেমন, তাঁর সৃষ্টির কোথায় কোথায় দুর্বলতা, কোথায় কোথায় তারা কী কী ভুল-ভ্রান্তি কোরতে পারে। এই ভুল-ভ্রান্তি থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য, যাবতীয় অশান্তি-অন্যায় ও বৈষম্য থেকে নিস্তার পাবার জন্য তাই স্রষ্টার পাঠানো ভারসাম্যপূর্ণ সিস্টেমের অনুসরণের কোনই বিকল্প নেই। অর্থনীতির ক্ষেত্রেও একই কথা বলা চলে। অর্থনৈতিক সিস্টেমে সুদ থাকবে কি না, অর্থ-সম্পদ জড়ো করা যাবে কি না, সম্পদের মালিকানা কার হাতে থাকবে, কীভাবে তা বণ্টিত হবে এই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর কেবল তিনিই দিতে পারেন যিনি এই পৃথিবী, পৃথিবীর তামাম সম্পদ, সর্বপোরি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। কেবলমাত্র তিনিই এর নিখুঁত সিদ্ধান্ত দিতে সক্ষম, দিয়েছেনও। কিন্তু মানুষ তা মানে নি। মানেনি বলেই জন্ম নিয়েছে পুঁজিবাদ, সাম্যবাদ ইত্যাদির। এই মানবসৃষ্ট অর্থনৈতিক মতবাদগুলো হল সম্পূর্ণ একপেশে অর্থাৎ ভারাসাম্যহীন। এমন কি প্রধান প্রধান নীতিতে একেবারে স্রষ্টা কর্তৃক প্রেরিত ইসলামী অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সম্পূর্ণ বিপরীত। কেমন করে, তা ব্যাখ্যা করছি।

খ্রিস্টধর্মের ইতিহাস যারা জানেন তাদেরকে বলে দিতে হবে না যে, খ্রিস্টধর্মের ব্যর্থতার কারণে ইউরোপ যখন সমষ্টিগত রাষ্ট্রে ধর্মবর্জিত সিস্টেম-ধর্মনিরপেক্ষতাকে আবিষ্কার করল তখন তার অর্থনীতি ধার করেছিল ইহুদিদের কাছে থেকে। ইহুদিদের কাছে তখন ছিল মুসা (আ:) আনীত ব্যবস্থা। কিন্তু ইউরোপ সেটাকে অবিকৃতভাবে নিল না। তারা ওটার মধ্যে সুদ প্রবর্ত্তন করে ধনতন্ত্রে পরিবর্ত্তন করে নিলো। মানুষের তৈরী ব্যবস্থা সুষ্ঠু সমাধান দিতে পারে না, কাজেই এই অর্থনীতিও পারলো না। ফল হলো অন্যায়-শোষণ, জাতীয় সম্পদের অসম বণ্টন। এই অন্যায় যখন মানুষের সহ্যের সীমা অতিক্রম করলো তখন তার বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ালো আরেক অন্যায়; কার্ল মার্কসের রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ, কমিউনিজম। এটাও সেই মানুষের তৈরী ব্যবস্থা সুতরাং অবশ্যম্ভাবী পরিণতি সেই অন্যায়, শুধু অন্য রকমের অন্যায়। ফলে এটাও টিকে থাকতে পারল না। আজ কমিউনিজমের ধ্বংস আরম্ভ হয়ে গেছে এ কথা আর প্রমাণ করার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।

মূলতঃ মানবসৃষ্ট ব্যবস্থাগুলোর কার্যকারিতা এ পর্যন্তই। এর যতটুকু সুফল, তার চেয়ে কুফলও কোন অংশে কম নয়। বর্তমান পৃথিবীতে প্রচলিত এই ব্যবস্থাগুলোর যে বিষয়টি মানুষের সর্বাধিক ভোগান্তির সৃষ্টি করছে তন্মধ্যে প্রধান হল- সম্পদের পুঞ্জিভূতকরণ। পুঁজিবাদ, ধনতন্ত্রের নীতি হলো জনসাধারণের সম্পদ সাপটে এনে এক বা একাধিক স্থানে জড়ো করা। সমাজতন্ত্রের নীতি হলো জনসাধারণের সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে তুলে নেওয়া। মূলে একই কথা, দু’টোই জনসাধারণকে বঞ্চিত করা। পুঁজিবাদে দেশের, জাতির সম্পদ পুঞ্জীভূত করে সংখ্যালঘিষ্ট মানুষের হাতে ব্যাংক ইত্যাদির মাধ্যমে। যার ফলভোগ করে অতি অল্পসংখ্যক লোক এবং তারা সংখ্যাগরিষ্ট মানুষকে বঞ্চিত করে বিরাট ধনী হয়ে যায়। আর সমাজতন্ত্র দেশের বা জাতির সম্পদ পুঞ্জীভূত করে রাষ্ট্রের হাতে। জনসাধারণকে দেয় তাদের শুধু খাদ্য, পরিধেয়, শিক্ষা ও চিকিৎসা, বাসস্থানের মত প্রাথমিক, মৌলিক প্রয়োজনগুলি, যদিও কার্যক্ষেত্রে তাও সুষ্ঠুভাবে করতে ব্যর্থ হয়েছে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সম্পদ পুঞ্জীভূত করে হাতে গোনা কতকগুলি কোটিপতি সৃষ্টি হয়, বাকি জনসাধারণ জীবনের প্রাথমিক মৌলিক প্রয়োজনগুলি থেকেও বঞ্চিত হয়। এই ব্যবস্থা যতটুকু পরিধিতে প্রয়োগ করা হবে ততটুকু পরিধিতেই ঐ ফল হবে। একটি ভৌগোলিক রাষ্ট্রে (ঘধঃরড়হ ঝঃধঃব) এ ব্যবস্থা প্রয়োগ করলে যেমন ঐ রাষ্ট্রের জনসাধারণের ভীষণ দারিদ্রের বিনিময়ে মুষ্টিমেয় কোটিপতি সৃষ্টি হবে ঠিক তেমনি পুঁজিবাদী ব্যবস্থা পৃথিবীময় প্রয়োগ করলে কয়েকটি ভৌগোলিক রাষ্ট্র বিপুল ধনী হয়ে যাবে আর অধিকাংশ রাষ্ট্র চরম দারিদ্রের মধ্যে পতিত হবে যেমন বর্তমানে হয়েছে। এর কারণ হলো একটি ভৌগোলিক রাষ্ট্রের সম্পদ যেমন সীমিত- তেমনি পৃথিবীর সম্পদও সীমিত। সীমিত যে কোন জিনিসকেই কোথাও একত্রিত করা, পুঞ্জিভূত করা মানেই অন্যস্থানে অভাব সৃষ্টি করা। একটা রাষ্ট্রের ভেতরই হোক, আর সমস্ত পৃথিবীতেই হোক, সেটার সম্পদ, যা সমস্ত মানবজাতির মধ্যে ছড়িয়ে থাকার কথা, সেটাকে যদি কোথাও পুঞ্জীভূত করা হয় তবে অন্যত্র অভাব সৃষ্ট হওয়া অবশ্যম্ভাবী। আর সেটাই বর্তমান পৃথিবীতে হচ্ছে, যেটাকে এখনকার মানবজাতির সর্বপ্রধান সমস্যা বোললেও হয়তো ভুল হবে না।

এবারে আসি সম্পদ জড় করা বা ব্যয় করা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে, এ বিষয়ে। এই ব্যবস্থার ভিত্তি বা নীতি হোচ্ছে সম্পদকে মানুষের মধ্যে দ্রুত গতিতে চালিত করা, কোথাও সঞ্চিত হতে না দেওয়া। পুঁজিবাদ বলছে সম্পদ খরচ না করে সঞ্চয় কর; সবার সঞ্চয় একত্র কর, পুঞ্জীভূত কর (ব্যাংকে), আল্লাহ কোর’আনে বলছেন খরচ কর, ব্যয় কর, সম্পদ জমা করোনা, পুঞ্জীভূত করোনা। অর্থাৎ ইসলামের অর্থনীতি পুঁজিবাদী অর্থনীতির ঠিক বিপরীত। একটায় সঞ্চয় কর অন্যটায় ব্যয় কর। অন্যদিকে সমাজতন্ত্রী সাম্যবাদী অর্থনীতি ব্যক্তিগত মালিকানা নিষিদ্ধ করে জাতির সমস্ত সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে পুঞ্জীভূত করে। এটাও ইসলামের বিপরীত। কারণ, ইসলাম ব্যক্তিগত মালিকানা সম্পূর্ণ স্বীকার করে এবং রাষ্ট্রের হাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত করে না। এই জন্যই কোর’আনে এই অর্থনীতির বিধাতা, বিধানদাতা বহুবার তাগিদ দিয়েছেন খরচ কর, ব্যয় কর, কিন্তু বোধহয় একবারও বলেন নি যে, সঞ্চয় কর। যাকাত দেয়া, খারাজ, খুমস ও ওশর দেয়া এবং তার উপর সাদকা দান ইত্যাদি খরচের কথা এতবার তিনি বলেছেন যে, বোধহয় শুধুমাত্র তওহীদ অর্থাৎ জীবনের সর্বক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহকে প্রভু, এলাহ বলে স্বীকার ও বিশ্বাস করা এবং জেহাদ ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে এতবার বলেন নি। কারণ, একটা জাতির এবং পরবর্তীতে সমগ্র পৃথিবীতে অর্থাৎ যে কোন পরিধিতে সম্পদ যথাযথ এবং বণ্টনের জন্য প্রয়োজন হচ্ছে সঞ্চয় নয় ব্যয়। একজনের হাতে থেকে অন্য জনের হাতে হস্তান্তর, অর্থাৎ গতিশীলতা। প্রতিটি হস্তান্তর যত দ্রুত হতে থাকবে তত বেশী সংখ্যক লোক ঐ একই সম্পদ থেকে লাভবান হতে থাকবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, ধরুণ একটা এক টাকার নোট। এই নোটটা যার হাতেই পড়লো, সে যথা সম্ভব শীঘ্র সেটা খরচ করে ফেলল। সে খরচ যেমন করেই হোক, কোন কিছু কিনেই হোক বা দান করেই হোক বা কাউকে ধার দিয়েই হোক বা কোন ব্যবসাতে বিনিয়োগ করেই হোক। ঐ নোটটা যদি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দশজন লোকের হাত বদলায় তবে ঐ এক দিনে নোটটা দশজন লোককে লাভবান করবে। আর যদি একশ’ জনের হাত বদলায় তবে একশ’ জনকে লাভবান করবে। কারণ প্রতিবার হাত বদলাবার সময় দু’জনের মধ্যে একজনকে অবশ্যই লাভবান হতেই হবে। অর্থাৎ ঐ সীমিত সম্পদটা অর্থাৎ ঐ এক টাকার নোটটা যত দ্রুত গতিতে হাত বদলাবে যত দ্রুত গতিতে সমাজের মধ্যে চালিত হবে তত বেশী সংখ্যক লোককে লাভবান করবে; তত বেশী সংখ্যক লোক অর্থনৈতিক উন্নতি করবে এবং পরিণতিতে সমস্ত সমাজকে অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত করবে, সম্পদশালী করবে। ঐ গতিশীলতার জন্য যে কোন পরিধির সীমিত সম্পদ সমাজে নিজে থেকেই সুষ্ঠুভাবে বণ্টন হয়ে যাবে কোথাও পুঞ্জীভূত হোতে পারবে না এবং হবার দরকারও নেই। সম্পদের এই গতিশীলতার জন্য নিজে থেকেই সুষম-সুষ্টু বণ্টন হয়ে যাবার কারণে একে রাষ্ট্রায়াত্ব করার কোন প্রয়োজন নেই, ব্যক্তির মালিকানাকে নিষেধ করারও কোন প্রয়োজন নেই। ব্যক্তি মালিকানা নিষিদ্ধ করার কুফল, যে কুফলের জন্য রাশিয়া আজও খাদ্যে-পণ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে নি এবং আজও আমেরিকা থেকে লক্ষ লক্ষ টন খাদ্য আমদানী করতে হয় সে কুফলও ভোগ করতে হয় না। যা হোক, উদাহরণস্বরূপ যে এক টাকার নোটের কথা বললাম, সেই নোটটা যদি সমস্ত দিনে কোন হস্তান্তর না হয়ে কোন লোকের পকেটে বা কোন ব্যাংকে পড়ে থাকে তবে ওটার আসল মূল্য এক টুকরো বাজে ছেঁড়া কাগজের সমান। কারণ সারাদিনে সেটা সমাজের মানুষের কোন উপকার করতে পারলো না, কারো অর্থনৈতিক উন্নতি করতে পারলো না। আবার বলছি আল্লাহর দেয়া জীবন-বিধানের অর্থনীতির বুনিয়াদ-ভিত্তি হলো সম্পদের দ্রুত থেকে দ্রুততর গতিশীলতা (ঋধংঃ ধহফ ংঃরষষ ভধংঃবৎ পরৎপঁষধঃরড়হ ড়ভ বিধষঃয)।

কেউ বোলতে পারেন- কেন? টাকার নোটটা অর্থাৎ সম্পদ পকেটে থেকে গেলে, বাক্সে ভরে রাখলে না হয় বুঝলাম ওটা উৎপাদনহীন, নিষ্ফল হয়ে গেলো কিন্তু ব্যাংকে জমা পুঁজি তো বিনিয়োগ করা হয় এবং তা উৎপাদনে লাগে। ঠিক কথা কিন্তু ব্যাংকে জমা করা ঐ পুঁজি বিনিয়োগের গতি স্বাধীন মুক্ত হস্তান্তরের চেয়ে বহু কম, কোন তুলনাই হয় না। ব্যাংকের সম্পদ বিনিয়োগ করতে বহু তদন্ত, আইন-কানুন লাল ফিতার দৌরাত্ম এবং তারপরও ঐ বিনিয়োগের সুফল ভোগ করে সমাজের একটি বিশেষ শ্রেণীর মানুষ। শুধু ঐ শ্রেণীটি- যে শ্রেণীটি ইতিমধ্যেই সম্পদশালী, জনসাধারণের অনেক ঊর্দ্ধে। ব্যাংক কি যে চায় তাকেই পুঁজি ধার দেয়? অবশ্যই নয়। যে লোক দেখাতে পারবে যে, তার আগে থেকেই যথেষ্ট সম্পদ আছে কিন্তু আরো চাই, শুধু তাকেই ব্যাংক পুঁজি ধার দেয়, এটা সবারই জানা। যার কিছু নেই, যে ব্যাংকের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ বন্ধক দিতে পারবে না তাকে ব্যাংক কখনো পুঁজি ধার দেয় না, দেবে না। এক কথায় তৈলাক্ত মাথায় আরও তেল দেয়া, ধনীকে আরো ধনী করা, গরীবকে আরও গরীব করা। সুতরাং ঐ পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন অসম্ভব। শেষ ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় জনসাধারণকে তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে হয় নি সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার মত। জনসাধারণকে ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগতভাবে কোন অর্থনৈতিক উদ্যোগ-প্রচেষ্টাকেও নিষিদ্ধ করতে হয় নি। কারণ সম্পদের ঐ দ্রুত গতিই কোথাও সম্পদকে অস্বাভাবিকভাবে পুঞ্জিভূত হতে দেবে না। পানির প্রবল স্রোত যেমন বালির বাঁধ ভেঙ্গে দেয়, সম্পদের স্রোত তেমনি কোথাও সম্পদকে স্তুপীকৃত হতে দেবে না। অথচ ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক উদ্যোগ প্রচেষ্টার যে শক্তিশালী সুফল তারও ফল ভোগ করবে সমাজ। যে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টাকে নিষিদ্ধ করার ফলে আজ সমাজতন্ত্রের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে, আজ তারা বাধ্য হচ্ছে মানুষকে ব্যক্তিগত সম্পত্তির ও অর্থনৈতিক প্রচেষ্টার মালিকানার অধিকার ফিরিয়ে দিতে। রাশিয়া ও চীনে এমনকি কিউবায় ইতিমধ্যেই এ নীতি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়ে গেছে।

অন্যদিকে শেষ দীনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মূলনীতি হচ্ছে সমস্ত সম্পদকে যত দ্রুত সম্ভব গতিশীল করে দেওয়া এবং অর্থনীতিকে স্বাধীন-মুক্ত করে দেওয়া। প্রত্যেক মানুষের সম্পদ সম্পত্তির মালিকানা স্বীকার করা, প্রত্যেকের অর্থনৈতিক উদ্যোগ-প্রচেষ্টাকে শুধু স্বীকৃতি দেওয়া নয় উৎসাহিত করা (কোর’আন- সুরা আল-বাকারা ২৭৫)। একদিকে অর্থনৈতিক উদ্যোগ প্রচেষ্টা অর্থাৎ ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পকে আল্লাহ উৎসাহিত করছেন অন্যদিকে ক্রমাগত বলে চলেছেন খরচ কর, ব্যয় কর। উদ্দেশ্য সেই গতিশীল সম্পদের নীতি। পরিণাম সমাজের সর্বস্তরে সম্পদের সুষ্ঠু-সুষম বণ্টন, দারিদ্রের ইতি। এই হল স্রষ্টা প্রদত্ত জীবনব্যবস্থার সাথে মানবসৃষ্ট জীবনব্যবস্থার ফলাফলের চিরায়ত ব্যবধান।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:১৬

বাঙ্গালী মামুন বলেছেন: পড়ে চমৎকৃত হলাম। লেখককে অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.