নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/asadali.ht

মোহাম্মদ আসাদ আলী

সাংবাদিক

মোহাম্মদ আসাদ আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রকৃতপক্ষে ধর্মনিরপেক্ষ কে?

১১ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৪২

ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি যেন গোলআলুতে পরিণত হয়েছে, যে যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করছে, নিজেদের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে প্রত্যেকে ধর্মনিরপেক্ষতার যুগসই ব্যাখ্যা প্রদান করছে। আশ্চর্য হলেও সত্য যে, বাংলাদেশ সংবিধানের চারটি মূলনীতির অন্যতম হওয়া সত্ত্বেও এদেশের মানুষের কাছে ধর্মনিরপেক্ষতার স্বরূপ এখনও আলো-আঁধারে ঢাকা। কোন পরিস্থিতিতে কোন আর্থ-সামাজিক ও ধর্মীয় পরিমণ্ডলে কীভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার জন্ম হলো, কীভাবে সেটা অতি দ্রুত সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ল এবং কী ফল বয়ে আনল সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখেন এমন সচেতন মানুষ এদেশে খুব কমই আছেন। ইউরোপীয় ধর্মনিরপেক্ষতা হলো রাষ্ট্রীয় বিষয়, একটি রাজনীতিক সিস্টেম, অথচ সম্যক ধারণাহীনতার কারণে আজকাল অনেকে ব্যক্তিগতভাবেও নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ দাবি করে থাকেন, যা সম্পূর্ণ অবাস্তব ধারণা। অবশ্য রাষ্ট্রীয় ধর্মনিরপেক্ষতাও যে খুব বাস্তব তা বলছি না।
ধর্মনিরপেক্ষতা কী- এই বিভ্রান্তিটার আগে নিরসন হওয়া দরকার। বস্তুত বাংলায় যেটাকে ধর্মনিরপেক্ষতা বলা হচ্ছে এবং ব্যাখ্যাসাপেক্ষে যেসব অর্থ করা হচ্ছে, ইংরেজি সেক্যুলারিজম (Secularism) শব্দে সেই জটিলতা নেই। সহজ একটি টার্ম- সেক্যুলারিজম, যা নির্দেশ করে এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থার যাতে রাষ্ট্র বা সরকারের সাথে ধর্মের কোনো যোগাযোগ থাকবে না অর্থাৎ ধর্মহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা। একটি সেক্যুলার রাষ্ট্র তার জনসাধারণের মধ্যে কে কোন ধর্ম পালন করল, কে করল না সেদিকে ভ্রুক্ষেপও করবে না। রাজনীতি, অর্থনীতি, বিচার-দণ্ডবিধি, শিক্ষাব্যবস্থাসহ গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরগুলোতে ধর্মের কোনো প্রবেশাধিকার থাকবে না। যে কোনো মতবাদ, তন্ত্র বা ইজম রাষ্ট্র যাচাই-বাছাই করে দেখবে, পছন্দ হলে গ্রহণ করবে, অপছন্দ হলে ছুঁড়ে ফেলে দিবে কিন্তু ধর্ম যতই বাস্তবিক রাষ্ট্রীয় নীতি, বিচারব্যবস্থা, অর্থব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা ইত্যাদি হাজির করুক তা শুধু এই যুক্তিতে অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে যে, সেটা ধর্র্মীয় মতবাদ।
এখন দেখা যাক বাস্তবতা। আমাদের দেশের রাজনীতিক অঙ্গনে ধর্ম বরাবরই এক নাম্বার ইস্যু হয়ে থাকে, অথচ রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষ। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত আজ পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশ এবং একই সাথে ধর্মীয় উগ্র জাতীয়তাবাদীদের চারণক্ষেত্র। (ধর্মীয় ইফতার মাহফিলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর মুনাজাতের ছবি আশা করি সকলেই দেখেছেন) ধর্মনিরপেক্ষ মিয়ানমারে চলছে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলিম সংখ্যালঘুদের প্রতি দমন-পীড়ন-নির্যাতন। এশীয়ার বৃহৎ পরাশক্তি ধর্মনিরপেক্ষ চীন সে দেশের উইঘুর মুসলিমদের রোজা রাখা ও দাড়ি রাখার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মুসলিমদেরকে তারা স্বজাতি বলেই মনে করে না। ধর্মনিরপেক্ষতার তীর্থভূমি ইউরোপ আমেরিকায় সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে শুধু ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে অস্বাভাবিক বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে মুসলিম সংখ্যালঘুদের। রাষ্ট্র সেখানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে নয়, নিরপেক্ষও নয়, বরং অন্যায়ের পৃষ্ঠপোষক। আমেরিকার রাষ্ট্রপ্রধান প্রকাশ্যে ক্রুসেডের ঘোষণা দিয়ে নির্দিষ্ট একটি জাতিকে ধ্বংস করে দিল, তবু তাদের ধর্মনিরপেক্ষতাতে ব্যাঘাত ঘটল না। আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে যে পশ্চিমা মিডিয়াগুলো প্রত্যহ বাক-স্বাধীনতার ছবক দেয়, তারাই অনর্গল ইসলাম ও মুসলিমবিদ্বেষী প্রচারণায় নিত্য নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। তাহলে কে ধর্মনিরপেক্ষ? আসলে ধর্মনিরপেক্ষ বলে কোনো রাষ্ট্র নেই, কোনো জাতি নেই, থাকা সম্ভবও নয়।
পশ্চিমা বিশ্ব বর্তমানে যে সফলতার আত্মতৃপ্তিতে ঢেকুর তুলছে তা যে রাষ্ট্রীয় ধর্মনিরপেক্ষতারই দান তা অস্বীকার করছি না, তবে ওই ধর্মনিরপেক্ষতা শাশ্বত নয়। যে আদর্শ পশ্চিমা বিশ্বে একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ সময়ে এবং বিশেষ ধর্মাবলম্বীদের সফলতা এনে দিয়েছিল সেটা বর্তমান সময়ে এসে সমগ্র পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের সকল মানুষকে সফলতার স্বাদ আস্বাদন করাবে এমনটাও তো আশা করা যায় না। তাছাড়া পাশ্চাত্যের সফলতার দিক বিবেচনা করুন, বুঝতে পারবেন পাশ্চাত্যের যত উন্নতি সব বস্তুগত ও অর্থনীতিসম্পর্কিত। যখন থেকে পাশ্চাত্য ধর্ম ছেড়েছে এবং জাতীয় ধর্মহীনতার চাপে ব্যক্তিগতভাবেও মানুষ যতই বস্তুবাদী হতে শুরু করেছে ততই আধ্যাতিক বা নৈতিক দিক দিয়ে সমাজ অধঃপতিত হয়েছে। এই নৈতিক অধঃপতনেরই চূড়ান্ত রূপ হলো চরম ভোগবাদী জীবনযাপন, বিবাহ ও পারিবারিক কাঠামো ধ্বংস, অবৈধ কুরুচিপূর্ণ যৌনাচার, চরম মানসিক বিকারগ্রস্ততা ও শেষ জীবনের হতাশা। অর্থনীতিক সমৃদ্ধিই যে একমাত্র সফলতা নয়, তা পাশ্চাত্য দেরিতে হলেও উপলব্ধি করতে শুরু করেছে। আর ধর্মকেও যে ইচ্ছা করলেই রাষ্ট্র থেকে আলাদা রাখা যায় না, সেটাও বোধ করি এতদিনে তাদের অভিজ্ঞতার ঝুড়িতে যোগ হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতার জন্মলগ্নে ইউরোপের সামনে দু’টি পথ ছিল, হয় ধর্মবিশ্বাস ত্যাগ করে নাস্তিক হয়ে যাওয়া, নয়তো ধর্মকে ব্যক্তিগত জীবনের সংকীর্ণ পরিধির মাঝে নির্বাসন দেওয়া। সেই সিদ্ধান্তের পরিণতি ভোগ করা থেকে আজ পৃথিবীর কেউ বাদ নেই। ইউরোপ-আমেরিকা ভোগ করছে ব্যক্তিজীবনে ধর্মবিশ্বাস না থাকার পরিণতি, আর আমরা ভোগ করছি ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাসকে অপপ্রয়োগের পরিণতি। এ ব্যর্থতা আর কারও নয়, ধর্মনিরপেক্ষতা নামক অপ্রাকৃতিক ও অবৈজ্ঞানিক ধ্যান-ধারণার। ধর্মকে মুছে ফেলার ব্যর্থ প্রয়াস না চালিয়ে যদি তারা ধর্মের বিকৃতিগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারত, মানুষের ধর্মবিশ্বাসের সঠিক প্রয়োগ ঘটানো যেত, কতই না ভালো হতো।
এদিকে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপনে বিভ্রান্ত হয়ে অনেকে রাষ্ট্রীয় ধর্মনিরপেক্ষতাকে ব্যক্তিগত জীবনেও চর্চা করতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এরা আসলে ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে কী বুঝেন ও বোঝাতে চান তা পরিষ্কার নয়। যদি বলি- আমি ভাষানিরপেক্ষ, কোনো অর্থ হয়? ভাষানিরপেক্ষ অর্থ দাঁড়ায় যে কোনো ভাষাতেই বিশ্বাসী নয়, অর্থাৎ ভাষাহীন, নির্বাক। একইভাবে পুরুষ হয়েও যদি বলি আমি লিঙ্গনিরপেক্ষ, সেটারও কোনো অর্থ হয় না। সব কিছুতে নিরপেক্ষতা চলে না। প্রকৃতির দিকে লক্ষ করুন, ধ্বংস হবার অসংখ্য সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এই পৃথিবী লক্ষ-কোটি বছর অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে এবং এখনও স্বাভাবিক রয়েছে একমাত্র তার স্বীয় ধর্ম মেনে চলার কারণে। সমগ্র সৃষ্টিজগৎ, গ্রহ-উপগ্রহ, তারকারাজি, জীব-অনুজীব, উদ্ভিদকূল, প্রাণীকূল লাখো-কোটি বছর টিকে আছে নিজ নিজ ধর্ম মেনে। এক মুহূর্তের জন্যও যদি সেই ধর্ম থেকে তারা বিচ্যুত হতো আজ হয়তো তাদের অস্তিত্বই থাকতো না। সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতার স্থান নেই। অথচ মানুষ হয়ে, আল্লাহর সৃষ্টির সেরা জীব হয়েও আমরা ধর্মনিরপেক্ষ হবার ভান করি। প্রশ্ন করতে পারেন- সৃষ্টিজগতের ধর্ম আর মানুষের ধর্ম অর্থাৎ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইসলাম ইত্যাদি কি সমার্থক? হ্যাঁ, সমার্থক, কিন্তু আমরা সেটা বুঝিনা আমাদেরই অজ্ঞতার কারণে। পৃথিবীতে প্রচলিত সকল ধর্মের উৎপত্তি এক স্রষ্টা থেকেই, তিনিই যুগে যুগে নবী-রসুল-অবতার পাঠিয়ে পথভ্রষ্ট মানুষকে সঠিক পথের দিশা প্রদান করেছেন। পরবর্তীতে মানুষ সেগুলোকে নিজেদের স্বার্থে বিকৃত করেছে, মতভেদ করেছে। যখন তাদের বিকৃতিকে শুধরে দেবার জন্য নতুন কোনো পথনির্দেশক এসেছেন, তাদের কেউ তাকে গ্রহণ করেছে, কেউ করে নি। যারা করে নি তারা আগের ধর্মের বিকৃত রূপকেই আকড়ে ধরে রেখেছে আর যারা নতুন নবীকে গ্রহণ করল তাদের পালিত ধর্ম নতুন নামে পরিচিত হয়েছে। এভাবেই বিভিন্ন ধর্মের জন্ম। প্রকৃতপক্ষে সকল ধর্মের অন্তর্গত সত্য হলো- মানবতার কল্যাণ। মানবতাই মানবধর্ম। যার ভেতরে মানবতা আছে সে ধার্মিক অর্থাৎ মানুষ, আর যার ভেতরে মানবতা নেই সে অধার্মিক অর্থাৎ পশু। এখানে নিরপেক্ষ থাকার কোনো সুযোগ নেই। ইতালীর কবি দান্তে বোধহয় এ কারণেই বলেছিলেন যে, The hottest place in hell are reserved for those who, in time of moral crisis maintain their neutrality. অর্থাৎ জাহান্নামের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্থান লাভ করবে ওইসকল ব্যক্তি যারা নৈতিক সঙ্কট উপস্থিত হলে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে চলে।
https://www.facebook.com/asadali.ht

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:০১

চাঁদগাজী বলেছেন:

ব্যক্তি নয়, রাস্ট্র হয় ধর্ম নিরপেক্ষ; এটা বোধ হয় আপার মাথায় ঢুকবে না; আগে সহজ কিছু বুঝার চেস্টা করেন; ১ সাথে ১ যোগ করলে ২ হয়, এ জাতীয় কিছু সাহায্য করতে পারে।

১১ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:০৬

মোহাম্মদ আসাদ আলী বলেছেন: ব্যক্তি নয়, রাষ্ট্র হয় ধর্ম নিরপেক্ষ- এই লেখায় সেটাই প্রমাণ করার চেষ্টা করেছি। হয় আপনি লেখা পড়েন নি, নয়তো রিডিং পড়ে গেছেন এন্টেনায় ধরে নি। ব্যাক্কল কোথাকার।

২| ১১ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:০৩

প্রথম বাংলা বলেছেন: আসলে ধর্ম তো একটা মতাদর্শ। আর মতাদর্শের ব্যাপারে কেউ নিরপেক্ষ তাকেনা। যখন মানুষ কোন একটা ব্যাপারে সত্য মিথ্যার বিতর্কে জড়ায় তখন সবাই সাবার মতামতটাকে জাহির করতে চায়।
ধর্ম নিরপেক্ষ বলতে আমি যা বুঝি তা হলো আমরা যখন কোন সমাজ ব্যাবস্থা গড়ে তোলবো তখন তাতে সব ধর্মের মানুষের সামাজিক সুযোগ সুবিধা হবে ধর্মীয় দৃষ্টি ভঙ্গির বাইরে। সকল ধর্মের মানুষ সমাজে সমান অধিকার পাবে।
কিন্তু এখন ধর্ম নিরপেক্ষতা হয়ে গেছে নিজেকে পরিচিত করার মাপকাঠি । আলোচিত সমালোচিত হবার একটা বড় পথ। আর এর জন্য সব চাইতে উর্বর হলো স ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলা। তবে বিশেষ করে ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলা।

আপনি আদর্শ নাস্তিক হবেন? আপনাকে ইসলামের বিরুদ্ধে কতা বলা উচিত। কারন আপনাকে মিডিয়া এবং আমরা আবেগ প্রবন ধর্মীক রা এমন হাইলাইট করবো্ যে আপনি একন আইকন। আর তখনই বিভিন্ন মহর আপনাকে মুক্ত মনা বিজ্ঞান লেখন চিন্তা নায়ক, দার্শনিক ইত্যাদি ইত্যাদি উপাধিতে ভুষিত করবে। যেন মুক্ত মনাদের নাস্তিক হবার জন্য আর কোন ধর্ম নাই। একম মাত্র ধর্ম ইসলাম। নাস্তিক রা যদি কোন একটা বান্দর কে গত কয়েক হাজার বছর এর ভিতর মানুষ বানাইতে পারতো তাইলে আর কোন ধর্মে বীজ রাখলোনা। কিন্তু আফসুস, বান্দর তো আর মানুস হয়না। অবশ্য বান্দর মানুষ হইয়া কি করবো? আমরা মানুষরাকি আর কম বান্দর?











১১ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৪০

মোহাম্মদ আসাদ আলী বলেছেন: ধর্ম নিরপেক্ষ বলতে আমি যা বুঝি তা হলো আমরা যখন কোন সমাজ ব্যাবস্থা গড়ে তোলবো তখন তাতে সব ধর্মের মানুষের সামাজিক সুযোগ সুবিধা হবে ধর্মীয় দৃষ্টি ভঙ্গির বাইরে। সকল ধর্মের মানুষ সমাজে সমান অধিকার পাবে।
ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে আপনি এটা বুঝলেও ধর্মনিরপেক্ষতা কিন্তু তা নয়। আমাদের দেশে মানুষের ধর্মানুভূতি প্রবল, তাই এমন সহনশীল ব্যাখ্যা প্রদান করে জনমত পক্ষে রাখার চেষ্টা হয়। ধর্মনিরপেক্ষতার প্রথম দাবিই হলো- ধর্মের যে কোনো প্রভাব থেকে প্রথমত রাষ্ট্র ও দ্বিতীয়ত সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তিকে দূরে রাখা।

৩| ১১ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৩২

গোধুলী রঙ বলেছেন: দান্তের কথামতো সেসব নিরপেক্ষদের ইসলামে তো মুনাফিকই তো বলে। আর তারাই তো থাকবে জাহান্নামের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্থানে।

পোস্টে অগুনতি প্লাস...........

১১ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৪২

মোহাম্মদ আসাদ আলী বলেছেন: তাই তো! কেমনে কেমনে মিলে গেল।

৪| ১২ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:১৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে আসলে ধর্মহীনতা বোঝায় । ধর্মের অপব্যবহারের কারণে হয়ত এটার উদ্ভব হয়ে থাকতে পারে । রাষ্ট্র সব সময় নিরপেক্ষ থাকবে । কারো প্রতি বৈষম্য থাকবেনা । ধর্ম ব্যক্তি পর্যায়ে থাকবে (চীনের দিকে তাকালে আবার খটকা লাগে) । বাম রাজনীতিকদের মতবাদ কেমন ঠিক জানিনা । সম্ভবত ধর্মহীন রাষ্ট্র । যাহোক, বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতা যে ধর্মহীনতা নয়, এটা নিশ্চিত । এর প্রমাণ হলোঃ বামদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে স্বাধীনতার স্থপতি রেডিও, টিভিতে আযান, কোরআন তেলাওয়াতের ব্যবস্থা করেছিলেন, ইজতেমার মাঠের জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । তাঁর যুক্তি ছিল, যে দেশের লোকদের আযানের ডাকে ঘুম ভাঙে, কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে দিন শুরু হয়; সে দেশে এগুলো অবশ্যই চলবে । তিনি অবশ্য কখনো রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার করেননি । ভাষানী, তর্কবাগীশদের মত মওলানারাও করেননি ।

১২ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৪২

মোহাম্মদ আসাদ আলী বলেছেন: হ্যা, এটা বলতে পারেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রয়োগ কিছুটা ভিন্ন। তবে যেহেতু সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা আছে, কাজেই ভবিষ্যতে যদি কেউ ধর্মনিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে কার্যত ধর্মহীনতা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে তাহলে অন্তত আইনগতভাবে তাকে বাধা দেবার মতো যুক্তি থাকবে না।
আরেকটি বিষয় হলো- ইজতেমার মাঠের জায়গা নির্ধারণ করা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা, রেডিও-টিভিতে আযান, কোর'আন তেলাওয়াতের ব্যবস্থা ইত্যাদি এক অর্থে ধর্মীয় বিষয় মনে হলেও এর সাথে কিন্তু ধর্মের উৎপাদনশীল কোনো বিষয় জড়িয়ে নেই। এর চেয়ে মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে যদি রাষ্ট্র ইতিবাচক পথে ব্যয় করত অন্ততপক্ষে ধর্মের যে সকল বিধি-বিধান রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কিত (যাকাতের কথাই ধরুন না কেন) সেগুলোতে রাষ্ট্র ও ধর্ম হাতে হাত ধরে চলত তাহলে কিন্তু দেশের উন্নয়নে ধর্ম বিরাট অবদান রাখতে সক্ষম হতো। আজ মানুষ মসজিদ-মাদ্রাসাতে দান করাকেই এবাদত মনে করে কিন্তু ব্রীজ, কালভার্ট, রাস্তাঘাট ইত্যাদি নির্মাণে অর্থসহায়তা দিলেও যে সেটা এবাদত হবে সেটা কয়জন জানে? যদি জানতো তাহলে পদ্মা সেতুর জন্য এত অপেক্ষা করতে হতো কি? কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। কারণ ওইযে ধর্মনিরপেক্ষতা, অর্থাৎ ধর্ম ও রাষ্ট্রের মধ্যে দূরত্ব।

৫| ১২ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৪০

সজিব্90 বলেছেন: ধর্মনিরপেক্ষতার একমাএ চর্চার জায়গা হচেছ পাবলিক টয়লেট,সেখানে কোন ধর্মের প্রয়োজন হয় না ,সেখানে সবাই যেতে পারে।

১২ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৪৪

মোহাম্মদ আসাদ আলী বলেছেন: এক অর্থে ঠিক। তবে অন্যভাবে দেখলে এখানেও ধর্মনিরপেক্ষতার স্থান হয় না। কারণ, ডাক আসলে টয়লেটে যেতে হবে- এটা মানুষের ধর্ম। কেউ এটাকে অস্বীকার করে ধর্মনিরপেক্ষ হবার ভান করলে তো বুঝতেই পারছেন।

৬| ১৮ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:৫৫

রিমেশা বলেছেন: মীরজাফর ছিলেন নিরপেক্ষ।

৭| ১৮ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৬

এ আর ১৫ বলেছেন: ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম ধর্মহীনতা

ডিকশনারীতে লেখা আছে ধর্মনিরপেক্ষতা অর্থাৎ সেকুলারিজম্-এর অর্থ হল এমন রাষ্ট্রব্যবস্থা যা ধর্মবিশ্বাসকে প্রত্যাখ্যান করে। এর কারণও আছে। হাজার হাজার বছর ধরে ধর্মীয় রাষ্ট্রের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তিতিবিরক্ত জনগণ ঘৃণা ও গণবিক্ষোভের দ্বারা ধর্মীয় রাষ্ট্র উৎখাত করে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেছিল। তাই স্বাভাবিকভাবেই বলা ছিল রাষ্ট্রযন্ত্রে ধর্মের স্থান নেই। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থার কথা প্রাচীনকাল থেকে বলেছেন ইবনে রুশ্দের মত দার্শনিকেরাও (উইকিপিডিয়া)। কিন্তু “নিরপেক্ষতা” শব্দের অর্থ যাঁরা বলেন “হীনতা” তাঁরা বলতে চান বিবেকহীন লোক আসলে বিবেক-নিরপেক্ষ লোক, প্রাণহীন দেহ আসলে প্রাণ-নিরপেক্ষ এবং বৃষ্টিহীন মরু আসলে বৃষ্টিনিরপেক্ষ মরুভূমি। কথাটা মতলবি তা ব্যাখ্যার দরকার হয় না।

ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে প্রত্যেকের মানবাধিকার সুরক্ষিত এবং আইনের চোখে সবাই হুবহু এক তা সে রাস্তা-পরিষ্কারকারী হোক বা দেশের প্রেসিডেণ্ট হোক। অথচ ধর্মরাষ্ট্রে − ‘‘রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে আদালতী কার্যক্রম’’ ধারার উদ্ধৃতি দিচ্ছি ঃ- (রাষ্ট্রপ্রধান) ‘‘হদ্দ-এর আওতাভুক্ত কোন্ অপরাধ করিলে (ডাকাতি, চুরি, মদ্যপান, মানুষ-খুন, যৌন-ব্যাভিচার ইত্যাদি − লেখক) তাহার বিরুদ্ধে আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করা যাইবে না’’ − বিধিবদ্ধ ইসলামি আইন ৩য় খণ্ড আইন নং ৯১৪ গ (উদ্ধৃতি শেষ) এবং হানাফি আইন হেদায়া পৃষ্ঠা ১৮৮। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে এরকম ভয়াবহ আইন হয় না। তওবা করলেই গণহত্যাকারীর শাস্তি মাফ − বিধিবদ্ধ ইসলামি আইন ১ম খণ্ড ধারা ১৩, − ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে এরকম ভয়াবহ আইনও হয় না। পাকিস্তান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রথম মহিলা গভর্নর ডঃ শামশাদ আখতার ব্যাংকের কিছু বিশেষ দলিলে সই করতে পারবেন না − এটাও ঘটে ধর্মীয় রাষ্ট্রেই, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে এটা কল্পনাও করা যায় না − দৈনিক ডন ২৯-০৯-২০০৮ − কেউ কেউ বলেন এসবের ব্যাখ্যা আছে। আমরা খুঁজে দেখেছি এসবের কোনোই গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা নেই, থাকতে পারে না। তাছাড়া দুনিয়ায় প্রতিটি ধর্মের আলাদা ধর্মীয়রাষ্ট্র হ’লে বিশ্ব-মানবসমাজ ধর্মের ভিত্তিতে টুকরো টুকরো হয়ে পারস্পরিক ঘৃণাভিত্তিক মারাত্মক হানাহানির মধ্যে পড়ে যাবে। এসব কারণ ছাড়াও ন্যায় ও যুক্তির আলোকে অসংখ্য মুসলিম কোরাণের ভিত্তিতে ও অন্যান্য ধর্মবিশ্বাসীরা তাঁদের ধর্মগ্রন্থের ভিত্তিতে ধর্মে রাজনীতি এবং রাজনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে ধর্ম মেশানোকে প্রচণ্ড ধর্ম-বিরোধী মনে করেন।

ধর্মীয় রাষ্ট্র হাজার হাজার বছর সময় পেয়েছিল নিজেদের যৌক্তিকতা প্রমাণ করার, এখনো পাচ্ছে কিছু দেশে। কিন্তু কিছু হাতেগোনা শাসকের সময় ছাড়া এর ইতিহাস ভারাক্রান্ত হয়ে আছে জনগণের দুর্ভোগে, মানবাধিকার লঙ্ঘনে, নারীর অশ্রু আর রক্তে। ভ্রান্তিময় মানুষ যখন ঐশী ধর্মের মালিক হবার অপচেষ্টা করে তখন এসব হতে বাধ্য। এক ধর্মের ধর্মরাষ্ট্র বানাবার চেষ্টা করলে দুনিয়ার প্রতিটি ধর্মের আলাদা রাষ্ট্রকে বৈধ ও উৎসাহিত করা হয়। ইউরোপ-অ্যামেরিকা-অষ্ট্রেলিয়ায় ওরা ঈহুদী-খ্রীষ্টান রাষ্ট্র বানিয়ে আমাদের ঘাড়ে ওদের শারিয়া চাপিয়ে দিলে কোটি কোটি মুসলমানের কি দুর্দশা হবে আর তার জন্য কে দায়ী থাকবে ? ভারতের মুসলমানদের জন্য কি সর্বনাশের কথা, মওদুদি ভারতে হিন্দু-রাষ্ট্র সমর্থন করেছেন “যদি সেখানে মুসলমানদের সাথে শূদ্র-র মত ব্যবহার করা হয় তবুও” (মুনির কমিশন রিপোর্ট)। এই কি মওদুদি’র বিশ্ব-মুসলিম ভ্রাতৃত্ব ? কিংবা “যদি সেখানে মুসলমানদের অধিকার থাকে যেমন ইসলামি রাষ্ট্রে অমুসলিমদের আছে” (শাহ আবদুল হানড়বান − আন্তর্জাল আলোচনা ফোরাম)। কথাটা ঠিক নয়। শারিয়া আইনগুলো পড়ে দেখুন, শারিয়া-রাষ্ট্রগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখুন, পাকিস্তান-ইরাণ-নাইজেরিয়ার অমুসলিমদেরকে জিজ্ঞেস ক’রে দেখুন, ভারত ও ইসরাইলে মুসলিমদের জিজ্ঞেস ক’রে দেখুন তাদের সম্মান ও মানবাধিকার কি অন্যায় ও নিষ্ঠুরভাবে পদদলিত করা হয়েছে । এ হবেই কারণ এ না-হলে ধর্মরাষ্ট্রই হয় না। “শারিয়া আইনের উদাহরণ” পরিচ্ছেদে দেখিয়েছি অতীতের হিন্দু-রাষ্ট্রে (মূল নাম সনাতন ধর্ম) কত অন্যায় ও হিংস্র আইন প্রয়োগ করা হতো − আবার দিচ্ছি (সূত্র ঃ প্রাচীন ভারত, সমাজ ও সাহিত্য − ডঃ সুকুমারী ভট্টাচার্য্য) ঃ

বিধবাকে মৃত স্বামীর সাথে পুড়িয়ে মারার আইন (অথর্ববেদ ১৮/৩/৩)।
“পিতামাতার জন্য কন্যা অভিশাপ” (ঐত্তরীয় ব্রাহ্মণ ৬/৩/১৩)।
“লাঠি দিয়ে স্ত্রীকে মেরে দুর্বল করা উচিত যাতে শরীরের ওপরে তার কোনো অধিকার না থাকে” (শতপথ ব্রাহ্মণ ৪/৪/২/১৩)।
সর্বগুণান্বিতা নারীও অধমতম পুরুষের চেয়ে অধম” (তৈত্তরীয় সংহিতা ৬/৫/৮/২)।
“পুত্র-কন্যার সামনে স্বামী উপপতড়বী আনা বা বেশ্যাগমন করতে পারবে কিন্তু স্ত্রীর সামান্য পদস্খলনে সমাজ কঠোর দণ্ড দেবে” (মৈত্রায়নী-র বিভিনড়ব আইন ও তৈত্তিরীয় সংহিতা ৬/৫/৮/২)।
“কালো পাখি, শকুন, নেউল, ছুঁচো, কুকুর ও নারী হত্যার প্রায়শ্চিত্ত একই” (আপস্তম্ভ ধর্মসূত্র ১/৯/২৩/৪৫)।
“নারীকে অবরুদ্ধ রাখো, নাহলে তার শক্তিক্ষয় হবে” (শতপথ ব্রাহ্মণ ১৪/১/১/৩১)।
একটি যজ্ঞে “সদ্যোজাত পুত্রকে ওপরে তুলে ধরা হয়, কন্যাকে মাটিতে শুইয়ে রাখা হয়” (তৈত্তরীয় সংহিতা ৬/৫/১০/৩)।
“উত্তম নারী হল ‘যে স্বামীকে সন্তুষ্ট করে, পুত্র-সন্তানের জন্ম দেয় ও স্বামীর কথার ওপরে কথা বলে না’ ” (ঐত্তরীয় ব্রাহ্মণ ৩/২৪/২৭)।
“সন্তান না জন্মালে ১০ বছর পর ও পুত্র না জন্মালে ১২ বছর পর স্ত্রীকে ত্যাগ করা যাবে” (আপস্তম্ভ ধর্মসূত্র ১/১০-৫১-৫৩)।
“যার স্ত্রীর চেয়ে পশুর সংখ্যা বেশি সে সৌভাগ্যবান” (শতপথ ব্রাহ্মণ ২/৩/২/৮)।
ভয়াবহ ব্যাপার, কল্পনা করলেও গা’ শিউরে ওঠে। ইউরোপের গীর্জা-রাষ্ট্রের অত্যাচারও ছিল ভয়ংকর।

সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিবর্তনের ঐতিহাসিক শক্তির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলে তবে তা জাতির দুর্ভাগ্য ও দুর্ভোগ বয়ে আনবে। মীর জাফর বা কুইসলিং নাম দ’ুটোর আদি অর্থ ভারী চমৎকার কিন্তু তা এখন এতই ঘৃণিত যে কোন বাঙালি বা নরওয়েবাসী তার ছেলের ও-নাম কোনদিনও রাখবে না। রাজাকার বা আল্ বদর শব্দেরও ওই দশা। বাস্তবে এখন সেকিউলারিজম-এর অর্থও বদলে গেছে আমূল। দুনিয়াময় ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলো এখন ধর্মের বিরোধী তো নয়ই বরং সাংবিধানিকভাবে সব ধর্মকে রক্ষা ও সহায়তা করে। আমাদের প্রথম ধর্মনিরপেক্ষ সরকার বানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামি ফাউণ্ডেশন। বায়তুল মুকাররমের সমস্ত খরচ দেয় আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ সরকার। ইউরোপ-আমেরিকা-ক্যানাডা-অস্ট্রেলিয়ার ধর্মনিরপেক্ষ সরকারগুলোর অজস্র টাকা ও সহায়তায় মুসলিম ইমিগ্র্যাণ্ট, ইসলামি সংগঠন, মসজিদ-মাদ্রাসা, ওয়াজ-মহফিল, রেডিও-টিভি চ্যানেল, এমনকি শারিয়া-ব্যাঙ্ক, শারিয়া-মিউচুয়াল ফাণ্ড, শারিয়া-ইকুয়িটি ইত্যাদি গত কয় দশকে বেড়েছে কয়েক গুণ বললে ভুল হবে-বিস্ফোরিত হয়েছে কয়েকশ’ গুণ। কোন ধর্মনিরপেক্ষ সরকার কোটি কোটি দিনার-দিরহামকে বাধা দেয়নি হাজার হাজার মসজিদ ও ইসলামি সংগঠন বানাতে। এমনকি জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে শারিয়া’র সমালোচনা নিষিদ্ধ করে ক্রমাগত প্রস্তাব গ্রহণ করেছে গত বছরগুলো থেকে। উদ্ধৃতি দিচ্ছি ধর্মনিরপেক্ষতার বিরোধী আমাদের দৈনিক থেকেও


“জার্মানীতেই বর্তমানে আড়াই হাজারের ওপর মসজিদ রয়েছে। সে-দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন তাঁর সরকার জার্মানীতে আরো মসজিদ তৈরি করবে। একই ঘোষণায় তিনি এ’ও জানান, জার্মানীর সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় জার্মান ভাষায় ইসলাম শিক্ষা দেয়া হবে … এ বোধোদয় ফরাসী প্রেসিডেণ্ট সারাকোজীর মধ্যেও এসেছে … উদ্যোগ নিয়েছেন যাতে তিনি ফ্রান্সে ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে অর্থ সহায়তা দিতে পারেন। বৃটেন ইতোমধ্যে মুসলমানদের বিভিনড়ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অর্থ সাহায্য প্রদান করেছে … ইতালীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘ইতালীয় ইসলামি সংহতকরণ’ নামে ইতালীতে মুসলমানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারের পক্ষ থেকে অনুদান চালু করেছেন। এভাবে ইউরোপের প্রায় সব দেশই রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামের পৃষ্ঠপোষকতায় নিজেদের সম্পৃক্ত করেছে” (ইউরোপ ও ইসলাম − দৈনিক নয়া দিগন্ত − ২৩শে জুলাই, ২০০৮)।

আমেরিকার ডলারে লেখা নেই “ইন্ গড উই ট্রাস্ট”? হ্যাঁ, লেখা আছে। আদালতগুলোতে বাদী-বিবাদীকে ধর্মীয় শপথ নিতে হয় না ? হয়। সাংসদ ও রাষ্ট্রপ্রধানকে ধর্মীয় শপথ নিতে হয় না ? হয়। ক্যানাডায় সাংবিধানিকভাবে ক্যাথলিক স্কুলে প্রচুর সরকারি টাকা যায় না ? যায়। সমস্ত ধর্মীয় স্কুলে সরকারি আর্থিক অনুদানের প্রস্তাব করেনি এক রাজনৈতিক দল ? করেছে। বিলেতের সরকার রাষ্ট্রীয় ট্রেজারি থেকে শারিয়া-বণ্ড বাজারে ছাড়েনি ? ছেড়েছে। আমেরিকার ট্রেজারী ইসলামি ব্যাঙ্কিং-এর অনুমোদন দেয়নি ? দিয়েছে। আমেরিকার সরকারি প্রতিষ্ঠান এআই- জি শারিয়া-ব্যাঙ্কিং অনুমোদন দেয়নি ? দিয়েছে। লণ্ডনের বিশাল মসজিদের জন্য দশ কোটি পাউণ্ড সরকারি অনুদানের প্রস্তাব ছিল না ? ছিল, সে ই-মেল আমরা পেয়েছি। জার্মানীর কোলন-এ বৈধভাবে সুবিশাল মসজিদ নির্মিত হচ্ছে না ? হচ্ছে। বিলেত ও জার্মানী তাদের আইনে মুসলিম নাগরিকদের জন্য বহুবিবাহের কিছু উপাদান গ্রহণ করেনি ? করেছে। লণ্ডনের টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিল আটত্রিশ হাজার পাউণ্ড অনুদান দেয়নি কর্ডোভা ফাউণ্ডেশনকে ? দিয়েছে। সরকারগুলো পুলিশ দিয়ে ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোর তত্ত্বাবধান করে না ? করে। বেলজিয়ামের ব্রাসেল্স্ শহরে সরকার শারিয়ার বিরুদ্ধে মিছিল নিষিদ্ধ করেনি ? করেছে। এক টরণ্টো শহরেই রেজিস্টার্ড ইসলামি সংগঠন নেই একশ’ একুশটা ? আছে। অনানুষ্ঠিানিক আরো কয়শ’? আছে। ইংল্যাণ্ডে জার্মানীতে ফ্রান্সে প্রায় সাত হাজার বৈধ ইসলামি সংগঠন নেই ? আছে। ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো সাধারণত বিশাল জমির ওপরে বিরাট দালান হয়, অনেক দেশে সাংবিধানিকভাবে সেগুলোর সম্পত্তি-কর ও পানি-বিজলির কর মওকুফ করা হয় না যার পরিমাণ বিপুল ? হয়। সরকারগুলোর ক্ষমতা নেই এগুলোর প্রত্যেকটি বন্ধ করার ? আছে, কিন্তু করেনি। এরই নাম ধর্মনিরপেক্ষ সরকার। কাজেই ধর্মনিরপেক্ষতাকে ধর্মহীন বা ধর্মবিরুদ্ধ বলাটা প্রতারণামূলক অকৃতজ্ঞতা।

ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থায় কিছু ত্র“টি অবশ্যই আছে যেমন এর ভেতর থেকেই বুশ-বেয়ার- এর মত গণহত্যাকরী দানব উঠে এসেছে, কিংবা দুর্নীতি, অস্ত্র ও পেশীশক্তির কারণে অনেক দেশে জনগণ ইচ্ছেমতো ভোট দিতে পারে না, ইত্যাদি। কিন্তু বহু দেশে এটা অত্যন্ত সফলও, সময়ের বিবর্তনে জনগণের শিক্ষা-সচেতনতায় ত্র“টিগুলো কেটে যাবে।

ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান ইহুদী-খ্রীষ্টানদের পাদ্রী-রাবাইরাও বানায়নি, গীর্জাতেও বানানো হয়নি। ওগুলো সংসদে বসে বানিয়েছেন সমাজবিজ্ঞানীরা যাঁরা আধুনিক বিষয়ে উচ্চশিক্ষিত, বাইবেল-এ নয়। সমাজ-বিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে সংবিধানকে সংসদে বসে পরিবর্তন করছেন জনগণের নির্বাচিত সাংসদেরাই, গীর্জার পাদ্রী-রাবাইরা নন। ঠিক যেমন বিজ্ঞানীরা ল্যাবরেটরিতে বহু কষ্টের গবেষণায় বানিয়েছে বহু ওষুধ যা আমাদের প্রাণ রক্ষা করে বা দালান-ব্রিজ-কারখানা ও শিল্পায়নের প্রযুক্তি দেয়। তাই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থা যদি “ইহুদী-খ্রীষ্টানদের শয়তানি ষড়যন্ত্র” ও “কুফরি আকিদা” হয় তবে ইহুদী- খ্রীষ্টানদের আবিষ্কৃত টু ব্রাশ চিরুণি থেকে শুরু করে বক্তৃতার মাইক বাস ট্রাক কাপড় হিটার এয়ারকণ্ডিশনার জুতো মাথাব্যথার ট্যাবলেট বুড়ো বাবা-মা’র ইনসুলিন কম্পিউটার রেডিও টিভি গাড়ি হাসপাতালের যন্ত্রপাতি হাজারো ওষুধ-সবই “ইহুদী-খ্রীষ্টানদের শয়তানি ষড়যন্ত্র” এবং “কুফরি আকিদা” হতে হয়।

যেখানে মানুষের জীবন ঘিরে আছে হাজারো ধর্মনিরপেক্ষ উপাদান সেখানে রাষ্ট্রযন্ত্রে ধর্মনিরপেক্ষতাকে অস্বীকার করাটা অজ্ঞতা বা আত্মপ্রতারণা ছাড়া আর কি হতে পারে আমি জানি না। “নিরপেক্ষতা” শব্দের অর্থ ”হীনতা” করলে মিথ্যাকে জায়েজ করা হয়। এই মিথ্যার সাথে যোগ হয়েছে, “কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাক্ষ্য গোপন করার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হইয়াছে”− বিধিবদ্ধ ইসলামি আইন ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা ২৩১। বলাই বাহুল্য, এই “কোনো কোনো ক্ষেত্র”-টা আসলে কি তার তালিকা দেয়া হয়নি। তাই এউে দ্দশ্যে রাষ্ট্র-বিরোধী ষড়যন্ত্র, জঙ্গীতন্ত্র, বিদেশ থেকে গোপন অর্থ-সমাগম, গোপন অস্ত্রশিক্ষা, গোপন জঙ্গীসাহিত্য ইত্যাদি জানার পরেও “সাক্ষ্য গোপন রাখার উৎসাহ প্রদান করা হইয়াছে”। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে ওরকম আইন হয়না, − সেখানে হয় “তোমরা সাক্ষ্য গোপন করিও না”− বাকারা ২৮৩, মায়েদা ১০৬, ইমরাণ ১৬১ ইত্যাদি।

এর সাথে এটাও দেখা দরকার −“যদি উদ্দেশ্যটি বাধ্যতামূলক হয় তবে মিথ্যা বলা বাধ্যতামুলক”− শাফি আইন নং আর.৮.২ ইত্যাদি। অর্থাৎ যিনি ধর্মীয় রাষ্ট্রকে বাধ্যতামূলক মনে করেন তাঁর জন্য এ উদ্দেশ্যে ধর্মনিরপেক্ষতাকে ধর্মহীনতা, এই মিথ্যা বলাও বাধ্যতামূলক।

“মিথ্যা বলা বাধ্যতামুলক” আইনও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে হয় না। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে হয় − “মিথ্যা বলা থেকে দূরে থাকো … সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিও না”− সুরা হজ্ব ৩০ এবং বাকারা ৪২।

সে নির্দেশ লঙ্ঘন করলে কি হবে ?

“তাদের মিথ্যাচারের দরুণ তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে ভয়াবহ আজাব”− বাকারা ১০ ॥

৮| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:২৫

তাজ - সৈয়দাবাদী । বলেছেন: Informative writing...............

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.