নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/asadali.ht

মোহাম্মদ আসাদ আলী

সাংবাদিক

মোহাম্মদ আসাদ আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

জঙ্গিবাদের ‘রাজনৈতিক সমাধান’ কি বাস্তবসম্মত?

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৭

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কিছু সহিংস ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক বিশ্লেষক জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদ বিস্তারের জন্য শুধুমাত্র বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে দায়ী করছেন। হালকা মতপার্থক্য বাদ দিলে তাদের সম্মিলিত অভিমত মোটামুটি এই যে,
একটি দেশের সরকার যখন ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার কাজে পুরোপুরি ব্যস্ত হয়ে পড়ে, বিরোধী মত প্রকাশের পথ সংকুচিত হয়ে পড়ে তখনই এ ধরনের সহিংসতা বেড়ে যায় ও জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে।
অতীতে আমাদের দেশের জঙ্গি উত্থানের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ক্ষেত্রবিশেষে জঙ্গিরা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছে। তাদেরকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা চলেছে। অর্থাৎ জঙ্গিবাদ আবর্তিত হয়েছে কার্যত ‘রাজনীতি’কে কেন্দ্র করেই।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘ধর্মভিত্তিক’ রাজনৈতিক দলের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ধর্মের নামে পরিচালিত এসব রাজনৈতিক দলের সাথে জোটবদ্ধ হয়েছে বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এসব ধর্মভিত্তিক দল এখন কোণঠাসা হয়ে আছে। কিছু কিছু দল কার্যত আন্ডারগ্রাউন্ড দলে পরিণত হয়েছে। সুতরাং যে কোনো প্রকারে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারলে এসব আন্ডারগ্রাউন্ড দলের সুবিধা হবে এ কথা বলা যায় নিশ্চিতভাবেই।
এ দৃষ্টিকোণ থেকে অনেকে বলছেন- প্রথমত রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হলে, দ্বিতীয়ত কার্যকরী বিরোধী দল থাকলে ও তৃতীয়ত মত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা গেলেই কেবল জঙ্গিবাদের মোকাবেলা করা সম্ভব। অর্থাৎ জঙ্গিবাদকে তারা দেখছেন রাজনৈতিক সঙ্কট হিসেবে, এবং সমাধানও দিতে চেষ্টা করছেন রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে।
তাদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই, জঙ্গিবাদকে প্রচলিত অর্থে রাজনৈতিক সঙ্কট ভাবলে ভুল হবে। এ সঙ্কট আদর্শিক। জঙ্গিমাত্রই একটি বিকৃত আদর্শকে ধারণ করে, লালন করে, যে বিকৃত আদর্শের জন্ম হয়েছে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা থেকে। সুতরাং ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা নিশ্চিত করে আদর্শিকভাবে তাদের মোকাবেলা করার পথে না হেঁটে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক মোকাবেলা করতে গেলে তা হবে প্রকৃতিবিরুদ্ধ সিদ্ধান্ত, রোগকে পাশ কাটিয়ে উপসর্গের চিকিৎসা করার মতো।
বীজ থাকলে চারা গজাবেই, প্রয়োজন শুধু সঠিক মৌসুম ও উপযুক্ত পরিবেশ। জঙ্গিবাদ নামক বিষবৃক্ষের বীজ হলো ‘ইসলামের বিকৃত ব্যাখ্যা’। আর উপযুক্ত মৌসুম নাজুক রাজনৈতিক পরিস্থিতি। ইসলামের বিকৃত ব্যাখ্যা আমাদের দেশে অতীতেও ছিল, এখনও আছে, অনেকটা সুপ্ত বীজের মতো। উপযুক্ত পরিবেশ যখনই এসেছে সেই বীজ থেকে চারা গজিয়েছে। এখানে পরিবেশের মাহাত্ম্য অবশ্যই আছে, কিন্তু আসল মাহাত্ম্য বীজের, যাকে আমরা সর্বদা বিবেচনার বাইরেই রেখে থাকি। সেই অসংখ্য বীজকে, সমস্যার মূলকে অক্ষত রেখে আমরা যদি চারাকেই একমাত্র বিবেচ্য বলে ধরে নেই, তাহলে আমাদের ধারণা অপূর্ণাঙ্গ থেকে যাবে, আর অপূর্ণাঙ্গ ধারণাপ্রসূত সিদ্ধান্ত ভুল হবে এতে অবাক হবার কিছু নেই।
আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অন্তত দুইটি পক্ষকে আমরা সর্বদাই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত থাকতে দেখি। তাদের চেষ্টা থাকে যে কোনো জাতীয় ইস্যুকে ব্যবহার করে দলীয় সুবিধা আদায়ের। জঙ্গিবাদও নিঃসন্দেহে বড় একটি ইস্যু। একে লুফে নিতে ছাড়ে না কোনো পক্ষই, কেবল খেয়াল রাখা হয়, কীভাবে বা কোন দৃষ্টিকোণ থেকে প্রচার-প্রচারণা চালালে নিজেদের সুবিধা হয় আর প্রতিপক্ষের ক্ষতি হয়। এ করতে গিয়ে ইস্যুটির যে গুরুত্ব প্রাপ্য ছিল, তা নষ্ট হয়ে কেবলই রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের একটা মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। জঙ্গিবাদ আসলে কী, কেন মানুষ জঙ্গি হয়, এর মোকাবেলার প্রকৃত উপায় কী- সেসব প্রশ্ন চাপা পড়ে যায় পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক বক্তব্য-বিবৃতি, অভিযোগ ও অপবাদের আড়ালে। আদৌ জঙ্গি আছে কি নেই- সেটাই হয়ে দাঁড়ায় মুখ্য বিষয়। কারও সুবিধা ‘জঙ্গি আছে’ প্রমাণিত হলে, আবার কারও সুবিধা হয় ‘জঙ্গি নাই’ প্রমাণে। এই ফাঁকে জঙ্গিরা তলে তলে ঠিকই সংগঠিত হয়ে যায়।
সুতরাং জঙ্গিবাদের উত্থানে রাজনৈতিক ভূমিকা যদি থাকে সেটা এই যে, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যহীনতা ও স্বার্থপরের রাজনীতি জঙ্গিবাদ উত্থানের সহজ পরিবেশ তৈরি করে দেয়। যদি আমাদের রাজনৈতিক বাস্তবতা এমন হতো যে, জাতির সুদূরপ্রসারী কল্যাণের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো থাকতো ঐক্যবদ্ধ, জঙ্গিবাদকে নিছক দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে দেখা হতো জাতীয় সঙ্কট হিসেবে তাহলে জঙ্গিবাদের উত্থান অনেক কঠিন হয়ে পড়ত।
কিন্তু প্রশ্ন হলো- জঙ্গি উত্থানের পথ কঠিন হওয়াই কি চূড়ান্ত সফলতা, নাকি সাময়িক উপশমমাত্র?
বিশ্লেষকরা জঙ্গিবাদের যে রাজনৈতিক সমাধান দিচ্ছেন তা তীব্র শক্তিশালী গ্যাসকে ছিপি দিয়ে বোতলে আটকে রাখার মতো। এভাবে সাময়িক উত্তেজনা হ্রাস করা যায়, কিন্তু যে কোনো সময় সামান্য উদাসীনতাও বড় দুর্ঘটনার জন্ম দিতে পারে। প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন এক প্রভাবক যার দ্বারা জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও নির্মূল করে ফেলা সম্ভব নয়। যারা শুধু রাজনৈতিকভাবে জঙ্গিবাদের মোকাবেলা করার পক্ষপাতি তারা হয় এ সহজ সত্যটি জানেন না, নতুবা নির্মূলের উপযুক্ত উপায় না পেয়ে নিয়ন্ত্রণেই তুষ্ট থাকতে চান।
গত ১৯ শে অক্টোবর চ্যানেল আইয়ের টকশো অনুষ্ঠান ‘তৃতীয় মাত্রা’য় জঙ্গিবাদ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সাবেক বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল (অবঃ) ফজলুর রহমান অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন,
‘জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করতে হবে কোর’আন-হাদীস দিয়ে, সেক্যুলারিজম দিয়ে নয়।’
চমৎকার বলেছেন তিনি। সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টিকে কীভাবে নিবেন জানি না, তবে সমাধান এটাই। পূর্বেই বলেছি- জঙ্গিবাদ একটি আদর্শ, এবং অবশ্যই ভ্রান্ত আদর্শ। এই আদর্শের বীজকে অঙ্কুরিত হবার পূর্বেই মূলোৎপাটন করার এর চেয়ে কার্যকরী কোনো পদ্ধতি নেই।
আমরা বিপর্যয়ের গভীরে তাকাই না। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তাকেই ‘নিরপরাধী’ আখ্যা দিয়ে তারপর বিচারকার্য শুরু করলে সে বিচারের কার্যকারিতা তো থাকেই না, বরং বিচারকের উপর বিচারপ্রার্থীর আস্থা হারিয়ে যায়। গণতন্ত্রকেই যারা প্রকাশ্যে ‘কুফরি বা তাগুতি’ মতবাদ বলে প্রচার করে, পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থাকে তাগুতের শিক্ষাব্যবস্থা বলে ঘৃণা করে, ধর্মনিরপেক্ষতা যাদের অন্তরের বিষ, তাদের মোকাবেলা করার জন্য সেই গণতন্ত্র, সেই ধর্মনিরপেক্ষতার বুলি কপচানো কিংবা সেই পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থা কাজে লাগানোর কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাই না।
জঙ্গিদের বিশ্বাস কেবল কোর’আন-হাদীসে। কোর’আন হাদীসে জেহাদের কথা আছে, কেতালের কথা আছে, সে কারণে তারা জেহাদে প্রবৃত্ত হয়েছে। এখন আপনি যদি তাদের যুক্তি প্রদান করেন যে, কোর’আন-হাদীসে থাকলেও বাংলাদেশ সংবিধানে যেহেতু জেহাদের কথা নেই, সুতরাং এই কাজ অসাংবিধানিক, বাংলাদেশের দন্ডবিধি অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধও বটে, অতএব তোমরা এই কাজ করো না, তাহলে কোনো সুফল আসবে কি? তারা মানবে কি? কখনই মানবে না। কিন্তু মানতে বাধ্য হবে যদি তাদের বিশ্বাসের আধার কোর’আন-হাদীসকে রেফারেন্স করেই এ সত্য দেখিয়ে দেওয়া যায় যে, জেহাদের নামে তারা যা করছে তা কোর’আনসম্মত নয়, হাদীসসম্মত নয়, অর্থাৎ অনৈসলামিক। এ কাজটিই এখন করা দরকার। জঙ্গিবাদ নির্মূলে যারা কথিত রাজনৈতিক সমাধানের বৃত্তে আটকে আছেন তারা যত দ্রুত এ বিষয়টির মূলে প্রবেশ করে জঙ্গিদেরকে আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পারবেন ততই জাতির মঙ্গল।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:০৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ভাল বলেছেন।

কিন্তু আসলে কি জানেন- জঙ্গিবাদ তত্ত্বের প্রচার হয়েছে যে কারণে- বিনাশও হবে তা বন্ধ করলেই।

আমেরিকা যেমন বিশ্ব একক মোড়লি টিকিয়ে রাখতে কখনো আল কায়েদা, কখনো আইএস,, নামে মুসলিম জং্গিবাদের জুজুর খেলা খেলেছে- এখানে চলছে তার বাংলা ভার্সন!

অনির্বচািত স্বৈরাচার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে- এই চাল শুরু থেকে চেলে আসছে। ভিন্নমত হরেই জঙ্গি অপবাদে দমনে সুবিধা হয়- ব্যাস .. পান থেকে চুন খসলেই জঙ্গি জঙ্গি!

এই দেশের ধর্মভীরু আমজনতার অধিকাংশই নিরীহ! জঙ্গিবাদ দূরে থাক দিনান্ত জীবিকার যুদ্ধে আর পরকালের ভয়েই তারা মাথা গোজ করে জীবন পার করে দেয়!
তাদের উপর কলংক লেপনে রাষ্ট্র যখন উঠে পড়ে লাগে..বিদেশী পত্রিকায় নিবন্ধ প্রবন্ধ লিখে, এদেশের শিক্ষার ফাউন্ডেশন মাদ্রাসার বিরুদ্ধে জঙ্গী তকমা দিয়ে... দেশ গেল গেল ভাব নিয়ে প্রভাব শালী মন্ত্রী, প্রতি উপ, নেতা ক্ষেতা সকলেই শেয়ালের মতো জঙ্গি জঙ্গি কোরাস গাইতে থাকে মূলত বিরোধী দমনের কৌশল হিসাবেই!

কিন্তু তা যখন বুমেরাং হয়ে ফেরা শুরু করলো- অস্ট্রেলিয়া সফল বাতিল করলো, বিদেশী চাপ বাড়তে থাকলো তখন টনক নড়লো অনেকের। কিন্তুত ততক্ষনে দেলী হয়ে গেছে!! এবং দেশের যা ক্ষতি হবার হয়েও গেছে!
পরীক্ষায়র খাতায় যা লেখে তার উপরেইতো ফল!
আওয়ামীলীগ স্রেফ নিজেদের অনির্বচিত ক্ষমতাকে পোক্ত করতে গিয়ে দেশের যা করলো এখন শুধু তার ফল প্রকাশ হচ্ছে!

সুতরাং এইসব বন্ধ করতে হলে আগে নিজেরা ক্ষমতার মোহ ছাড়ুন। সুস্ঠু নির্বাচন দিন। এইসব কল্পগল্প বাতাসে কর্পূরের মতোই মিলিয়ে যাবে।
কারন এই দেশ আউল বাউল পাললিক মনের সহজ সরল মানুষের দেশ!


আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.