![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ব্লগার ও তরুণ স্থপতি আহমেদ রাজীব হায়দার শোভনকে হত্যার পরপরই আট ব্লগারসহ দেশের প্রগতিশীল চেতনায় বিশ্বাসী এক বুদ্ধিজীবীকে হত্যার টার্গেট করা হয়েছিল। রাজীব হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের ই-মেইলভিত্তিক যোগাযোগ থেকে হত্যার ছকের ব্যাপারে জানতে পারেন গোয়েন্দারা। গ্রেফতারকৃত সব ছাত্রের কাছেই ওই বুদ্ধিজীবীর ছবি পাওয়া গেছে।
আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। মিয়ানমারের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর মুসলমানদের পক্ষ নিয়ে 'যুদ্ধ' করতে দেশটির সীমান্ত পর্যন্ত গিয়েছিলেন বাংলাদেশের শতাধিক তরুণ। তাদের মধ্যে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই পাঁচ ছাত্রও ছিলেন। শেষ পর্যন্ত 'আধ্যাত্মিক' গুরুর নির্দেশে তারা মিয়ানমারে না ঢুকে ঢাকায় ফিরে আসেন।
রাজীব হত্যায় জড়িত সন্দেহে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য জানতে পারেন গোয়েন্দারা। জানা যায় 'আনসারুল্লাহ বাংলা টিম' নামে সন্ত্রাসবাদী একটি নতুন সংগঠনের নাম। তারা আল কায়দার অনেক নীতিকে আদর্শ বলে বিশ্বাস করেন। গোয়েন্দা সূত্র সমকালকে এসব তথ্য জানায়। গোয়েন্দারা বলছেন, সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষকের নামও উঠে এসেছে। তাদের অনেকেই জামায়াত-শিবিরের মতাদর্শে বিশ্বাসী ও তাদের রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, রাজীব হত্যায় জড়িতদের জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এসব বিষয় নিয়ে গোয়েন্দারা কাজ করছেন।
জানা গেছে, উগ্র মতবাদে বিশ্বাসী একটি গ্রুপ বছরখানেক ধরে দেশে গোপন তৎপরতা শুরু করে। ইরাক, আফগানিস্তান ও ইয়েমেনে আল কায়দার মতাদর্শের ভিত্তিতে যুদ্ধ করাকে তারা 'জিহাদ' মনে করেন। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশি অনেক তরুণ নিজেদের প্রশিক্ষিতও করে তুলছেন। তারা কারাতে শিখছেন। শরীর 'ফিট' রাখতে এই গ্রুপের অনেকে রমনা পার্কে নিয়মিত ব্যায়ামও করছেন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, উগ্রপন্থি এই গ্রুপের অধিকাংশ সদস্য উচ্চশিক্ষিত ও অত্যন্ত মেধাবী। তাদের অনেকেই প্রাইভেট
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, এই গ্রুপের সদস্যরা বিশ্বাস করেন, মুসলমানদের পক্ষ নিয়ে বিশ্বের যে কোনো জায়গায় 'যুদ্ধ' করা তাদের 'ইমানি' দায়িত্ব। মিয়ানমারে যেতে না পারলেও তারা যে কোনো সময় আফগানিস্তান, ইরাক ও ইয়েমেনে যেতে প্রস্তুত। ইতিমধ্যে গোয়েন্দারা বেশ কয়েকজন শিক্ষকের নাম জানতে পেরেছেন। তাদের মধ্যে 'আ' আদ্যক্ষরের একজন রয়েছেন। যিনি এক সময় কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের নেতা ছিলেন। 'হ' আদ্যক্ষরের দু'জন, 'জ' ও 'আ' আদ্যক্ষরের আরও দু'জনের নাম জানা গেছে। তারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য, কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগ, ব্যবসায় প্রশাসন (বিবিএ) বিভাগের কয়েকজন শিক্ষকের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে।
উগ্রপন্থি এই গ্রুপের টার্গেট ছিল_ কয়েকজন ব্লগারসহ একজন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা। রাজীব হত্যায় গ্রেফতার ফয়সাল বিন নাঈম ওরফে দীপ, মাকসুদুল হাসান ওরফে অনিক, এহসান রেজা ওরফে রুম্মন, নাঈম সিকদার ওরফে ইরাদ ও নাফিস ইমতিয়াজকে গ্রেফতার করে ডিবি। এ হত্যার দায় স্বীকার করে গত রোববার এ পাঁচজন আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন। তারা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। গ্রেফতার পাঁচ ছাত্রের কম্পিউটার তল্লাশি করে একজন বুদ্ধিজীবীর ছবি পাওয়া গেছে। তাকে হত্যার ছক চূড়ান্ত করা হয়েছিল।
কেন ওই বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করার টার্গেট করা হয়েছিল_ এমন প্রশ্নের জবাবে পাঁচ ছাত্র জানিয়েছেন, 'তারা মনে করেন, তিনি ইসলামের শত্রু।' গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, উগ্রপন্থায় বিশ্বাসী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র ও শিক্ষকের সঙ্গে যোগসাজশ পাওয়া গেছে। এসব ব্যাপারে তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন। শিগগিরই তাদের ডাকা হবে।
উগ্রপন্থায় বিশ্বাসীদের আর্থিক উৎসের ব্যাপারে জানতে চাইলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, উগ্রপন্থায় বিশ্বাসী অনেকের পরিবারই অত্যন্ত সচ্ছল। তাদের মধ্যে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক রয়েছেন। তারা মুসলমানদের পক্ষে 'জিহাদে' অংশ নেওয়ার জন্য আর্থিক খরচকে 'ইমানি' দায়িত্ব মনে করেন। তাদের বিদেশি অর্থের জোগানদাতাও থাকতে পারে বলে গোয়েন্দারা সন্দেহ করছেন।
জানা গেছে, ব্লগার রাজীব হত্যার কয়েকদিন আগে পরিকল্পনাকারীরা বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোনের সিমকার্ড ও সেট কেনেন। হত্যার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে কিলিং মিশন শেষ হওয়া পর্যন্ত খুনিরা একে অপরের সঙ্গে এসব মোবাইলে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতেন। পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে যে মোবাইল ফোনে তারা কথা বলতেন, সেটিতে রাজীরের ব্যাপারে কোনো কথা উচ্চারণ করতেন না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিতেই পরিকল্পনাকারীরা এমন কৌশল নেন।
১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিরপুরের পলাশনগরে নিজ বাসার সামনে ব্লগার ও তরুণ স্থপতি আহমেদ রাজীব হায়দার শোভনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ১ মার্চ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মো. শাহজাহান সমকালকে বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ৮ সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। তাদের এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বলা হয়। কোনো শিক্ষক উগ্রপন্থার সঙ্গে জড়িত থাকলে তা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত করে বের করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে গিয়ে কে কী করেন, তা জানা সম্ভব নয়
Click This Link
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৩
দৃঢ় মানুষ বলেছেন: জামাত নিষিদ্ধ করা হোক ... যুদ্ধাপরাধীদের ফাসি দেয়া হোক ...