নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বৃষ্টিতে হাঁটতে ভাল লাগে আমার কারন কেউ দেখেনা দুচোখের জল ধুয়ে যায় বৃষ্টিধারায়

আশিক হাসান

আসলে নিজের কথা বলতে গেলে প্রথমে মনে হয় কেও হয়তো একটা ভিডিও ক্যামেরা সামনে নিয়ে লাইভ শো করছে ।এবং আমি যা বলবো সেটা সবাই দেখছে ফলে আর দশ জনের মত আমিও অনেক কথা বলতে গিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যাই । কি বলবো আর কি বলবোনা এই দুইয়ের দোলাচলে পড়ে সব গুলিয়ে ফেলি।তবে এটুকু বলতে পারি । জীবনের খাতা টি না মুড়ানো পর্যন্ত আসলে হিসাব কষা খুবই মুস্কিল কতটুকু বলার ছিল আর কতটুকু বলতে পেরেছি।।।।।।

আশিক হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট্ট বুকে আমি দেখি আগামীদিনের বিশাল মহীরুহের ছায়া ...........।

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৪:২১

কতক্ষন জানিনা ডুবে ছিলাম ভাবনার অথই সাগরে ,হঠাৎ করে ঘড়ির এলার্মের শব্দে ফিরে আসলাম বাস্তবতার জগতে। আর একটি ঘন্টা পার করলাম । তার মানে এই বিদেশ বিভুঁয়ে আর একটি প্রতীক্ষার মাইলস্টোন পার হল।মনে হল প্রিয়জনকে কাছে পাবার দূরত্বটুকু আরেকটু কমলো । প্রতীক্ষার প্রহর দীর্ঘ কিন্ত সেটাও একসময় শেষ হয় । এভাবে শেষ হয়ে যাবে আমার এই বেঁচে থাকার প্রহর এই সুন্দর পৃথিবীতে ।

একটা কবিতার কিছু লাইনের কথা মনে পড়ে গেল, কোথায় যেন শুনেছিলাম

" হঠাৎ নাম না জানা পাখি ডেকে ওঠে

অজান্তে চমকে উঠি

জীবন ফুরুলো নাকি?"



ছোটবেলায় প্রথম মনে পড়ে দাদার চলে যাওয়া। দাদা ছিলেন লাল টুকটুকে ফর্সা দীর্ঘদেহী গড়নের এক মানুষ।পেশায় উনি ছিলেন হোমিও প্যাথিক ডাক্তার, যদিও জ্ঞান হওয়ার পর থেকে দেখে এসেছিলাম উনি বিছানায় শয্যাশায়ী অসুস্হ এক মানুষ। আমাকে উনি আদর করে কাছে টানার আপ্রান চেষ্টা করতেন আর আমি উনার গায়ের রং আর আকার দেখে ভাবতাম উনি আমাদের কাছের কেউনা আর ভয়ে পালিয়ে যেতাম। তারপর একদিন সকালে দেখলাম বাসাজুড়ে সবাই কান্নাকাটি করছে এর পর দাদার বিছানায় দেখলাম উনি নেই ।জিজ্ঞেস করলে সবাই বলতো উনি আকাশে চলে গেছেন।ছোটবেলায় আকাশে খুঁজতাম আমার দীর্ঘদেহী লাল টুকটুকে ফর্সা ডাক্তার দাদাকে।



ছোটবেলায় দাদী ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবী এবং গুরুজন।তিনি মানুষ হয়েছিলেন খুবই রক্ষনশীল একটি পরিবারে।পুরান ঢাকার রোকনপুরের পাঁচ ভাই ঘাট লেনে তাঁর বাবার বিশাল বাড়ি "করিম কটেজ " ছিল। জানিনা সেই বাড়ী এখনও আছে কিনা। সেই বাড়ীর প্রবেশমুখের বিশাল স্তম্ভগুলো এখনও চোখে ভাসে ।



তার ছোটবোন ছিলেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান অভিনেত্রী রওশন আরা জামিল । তিনি যদিও তার বোনের মত খ্যতিমান ছিলেননা কিন্ত তিনি অসাধারন কবিতা লেখেতেন ,তার নিজস্ব কবিতার খাতায়।তাঁর প্রতিটি কবিতায় আমি নিত্য নতুন পরিচিত হতাম এক একটি সুন্দর বাংলা শব্দের সাথে।আমার ডাকনাম তিনি রেখেছিলেন শৈবাল,ভাইবোনরা জন্ম নেয়ার আগেই উনার কবিতার খাতায় লেখা হয়ে যেত অনাগত সন্তানের নাম ।সেই নামগুলো ছিল খুব সুন্দর ধ্রুব,নিঝুম আরও অনেক । দাদী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন ,আমার নামাজ শেখার হাতখড়ি ওনার হাতে ।উনি ছিলেন একজন ধার্মিক মহিলা এবং সব কাজ নিজের হাতে করতেন ।আমাকে নিয়ে উনি বাগান করতেন আর কাজের ফাঁকে ফাঁকে চলতো তার মানুষ গড়ার তালিম,তাঁর অনেকগুলো উপদেশের মধ্যে একটি উপদেশ উনি প্রায়ই আমাকে বলতেন যা এখনও আমি প্রতিটি মুহূর্তে মনে করি।



" মানুষের উপকার করবি আর যদি তা করতে না পারিস তবে অন্তত তোর দ্বারা মানুষের যেন কোন ক্ষতি নাহয় সেটা খেয়াল রাখবি"



আমার দাদী আমাকে তার বড় ছেলের একমাত্র নাতী হিসেবে অনেক স্নেহ করতেন আর মজা করে বলতেন কবে যেতোর বউ দেখবো । তার বউ দেখা আর হয়নি, আমার কর্মক্ষেত্র হতে বাড়ী ফিরে আসার ঠিক আগের দিন আমার প্রিয় বান্ধবী, আমার দাদী আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন সেই আকাশের ঠিকানায়।শুনেছিলাম আমার নাম ধরে নাকি ডেকেছিলেন মৃত্যুর আগে।



এখন আমার কাছে আকাশটাকে ছোটবেলার মতো বিশাল মনে হয়না ।কারন ঐ আকাশে এখন আমার অনেক প্রিয়মানুষের ভীড় দেখতে পাই। যতই সময় গড়িয়ে যাচ্ছে ততই যেন ভীড় বাড়ছে ।এখন তাই মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবি আমার মেয়েও আমাকে এভাবে আকাশে খুঁজবে একদিন।

মাঝে মাঝে মনে হ্য় আমার বুকের মাঝে প্রিয়জনদের হারানোর বেদনা ঐ আকাশের বিশালতা থেকে অনেক বড় । মনে পড়ে আমার ছোটবেলার বন্ধু দুই ভাই আল আমিন আর আল ফারুকের কথা। কি আর এমন বয়স ছিল তাদের অথচ বড় অসময়ে চলে গেল।একজন কিডনী নষ্ট হয়ে আরেকজন লিওকোমিয়ায় ভুগে। এখনও মনে পড়ে মজা করে বলেছিলাম বুয়েটের আর্কিটেক্টের ছাত্র আল ফারুককে যে আমার বাড়ীর ডিজাইন তোমাকেই করতে হবে আর ও মজা করে বলতো কেউ যদি আমাকে বিরক্ত করে তোমারে খবর দিবো।



অথচ আজ তারা সব কিছুর উধর্ধে । একে একে স্হান খালি হচ্ছে আবার শুন্যস্হান পূরণ ও হচ্ছে । পুরোনো মুখগুলো হারিয়ে যাচ্ছে নতুন মুখের ভীড়ে । সেই সাথে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মত ছোট ছোট পরিবারের শিক্ষা, নৈতিকতা আর উপদেশ গুলো।

আমরা হয়ে পড়ছি এক একটা প্রানহীন যন্ত্রের মত।বোধজ্ঞান হীন

যেন এক একটা জড় পর্দাথ।সুন্দরকে সুন্দর বলার সৎসাহস যেমন হারিয়ে ফেলছি , তেমনি অন্যায় আর ন্যায় কে আলাদা করে চেনার শক্তি যেন আমাদের মাঝ থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে । তাই মেয়ের দিকে তাকিয়ে মনে মনে সিধার্ন্ত নেই এই অনিয়মের বিরুদ্ধে আমার নিরব যুদ্ধ আমাকেই শুরু করতে হবে । তাইতো অপেক্ষায় আছি আমার মেয়েকে বলবো আমার দাদীর

কথা । ওর ছোট্ট কচি বুকে এই পৃথিবীর কদর্যতা প্রবেশ করার আগেই আমার রক্তে প্রবাহিত দাদীর দেয়া মূল্যবোধের বীজটি স্বযতনে রোপণ করতে হবে।একদিন এই বীজ থেকে মহীরুহের সৃষ্টি হবে । তারই ছায়ায় হাসবে খেলবে আমাদের আগামী প্রজন্ম

,আমাদের বাংলাদেশ।



আজকের ওর ছোট্ট বুকে আমি দেখি আগামীদিনের বিশাল মহীরুহের ছায়া ...........।



মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৪:৩২

জিললু বলেছেন: thanks

২| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৪:৫৬

অলস বলেছেন: দারুণ লেখা! খুব ভালো লাগলো। ৫!
জীবন ফুরালো নাকি - কবিতাটা অনেক আগে ফীডব্যাক-এর পালকী নামের একটা গানে শুনেছিলাম। আমার কবিতা পড়ার দৌড় আসলে এই ব্লগসাইট পর্যন্তই!

৩| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৫:০৩

আশিক হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ জিললু ।
অলস ,আপনার স্মরণশক্তি আমার চেয়ে অনেক ভাল ।আমি ঐ গান থেকেই সম্ভবত শুনেছিলাম।এবং ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যর জন্য।

৪| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ ভোর ৫:৩৪

রাশেদ বলেছেন: ভালো লাগল পড়ে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.