নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ৩০ বছর চাকরি করেছি; অবসর নিয়েছি কর্নেল পদবীতে ২০০৬ সালে। এরপর এযাবৎ প্রিন্সিপাল হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে; এখন অর্কিড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা-তে। ‘স্কুল সাইকোলোজি’ নিয়েও কাজ করছি।

আশরাফ আল দীন

কবি, শিক্ষাবিদ ও প্যারেন্টিং এক্সপার্ট

আশরাফ আল দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

পজিটিভ থিংকিং : এই দুঃসময়ে এর অপরিহার্যতা

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:১৪

জ্ঞানীরা বলেন মানুষের গঠন প্রকৃতির মধ্যে দুটি উপাদান অপরিহার্যভাবে বর্তমানঃ একটি পজেটিভ অন্যটি নেগেটিভ। যদি কেউ পজেটিভ উপাদানকে প্রশ্রয় দেয়, খাদ্য দেয়, ও প্রয়োজনীয় যত্ন নেয় তাহলে তার গড়ে ওঠাটা হয় পজেটিভ পার্সোনালিটি হিসেবে। আর, যদি নেগেটিভ উপাদানকে (কোন কারনে বা অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে) যদি যত্ন নিতে হয় অথবা খোরাক দিতে হয় অথবা বেড়ে ওঠার সুযোগ দিতে হয় , তখন তার মধ্যে নেগেটিভ পার্সোনালিটি জায়গা করে নেয়। #পজিটিভথিংকিং মানুষের সেই পজিটিভ উপাদানকে বাড়তে দেয়, যত্ন নেয়, এবং শক্তিশালী করে।

পজিটিভ থিংকিং কি? বাংলায় বলা যায়ঃ ইতিবাচক চিন্তা বা #সুচিন্তা। এটা এক ধরনের মেন্টাল এটিচ্যুড বা মনোভাব যা থেকে মানুষ ভালো ও ইতিবাচক ফলাফল আশা করে। সুচিন্তা হলো চিন্তা ভাবনা তৈরির একটি প্রক্রিয়া। #পজিটিভথিংকিং এর কারণে যে #ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি হয় তা মানুষকে আশাবাদী করে সুস্বাস্থ্য, সাচ্ছন্দ্য এবং সুখের ব্যাপারে।

মূলকথা হলো, পজিটিভ থিংকিং মানেইঃ
ক. #হতাশ না হওয়া বা কখনো হাল ছেড়ে না দেওয়া,
খ. মনের ভিতর আশা পুষে রাখা। অকার্যকর বা অকম্মার আশা নয়, কাজ করতে করতে আশাবাদ পুষে রাখা, এবং
গ. কাজের শেষে যা'ই ফলাফল হিসেবে আসুক না কেন সেটাকে, #নেতিবাচক হিসেবে না নিয়ে, ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করে সন্তুষ্ট থাকা।

পজিটিভ থিংকিং এর দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হচ্ছে, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই, #শোকর এবং #ধৈর্য্য। আমরা যখন বলি "আলহামদুলিল্লাহ" অর্থাৎ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, আমরা তখন আল্লাহর শোকর গুজার করি। নিষ্কর্মা বসে থেকে নয়, নিজের যতটুকু কাজ করার শক্তি, যোগ্যতা ও সামর্থ্য তা দিয়ে সেই কাজটুকু করে যা ফলাফল পেলাম সেটার জন্য আল্লাহর প্রশংসা করা এবং আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট থাকা। আর, 'ধৈর্য্য' পজিটিভ থিংকিং-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। ধৈর্য্য মানেই নিয়ম মানার ধৈর্য্য, আইনের ভেতরে থাকার #ধৈর্য্য। অত্যন্ত দুরূহ পরিস্থিতিতেও সঠিক কাজগুলো সঠিকভাবে করা, নিজের দায়িত্ব পালন করাই হলো ধৈর্য্য। কেউ অধৈর্য্য হলে বা আতঙ্কিত হলে সে আইন মেনে চলতে পারে না; নিয়ম মানার #ধৈর্য্য তার থাকে না। অথচ, কেউ অধৈর্য হলেও যে ফলাফল হবে ধৈর্য ধারণ করলেও ফলাফল তা'ই হবে, বরং তার চেয়ে ভালোও হতে পারে। এই যে ফলাফলকে মেনে নেওয়ার ধৈর্য্য, এটাই পজিটিভ থিংকিং।

বর্তমানে করোনা ভাইরাসের একটি নতুন সংস্করণ, যার নাম দেয়া হয়েছে "কোভিড-১৯", সমগ্র পৃথিবীকে অচল করে দিয়েছে। সারা পৃথিবী আজ "#লকডাউন" নামক অচলাবস্থার শিকার। কতদিন এই অচলাবস্থা চলবে কেউ বলতে পারে না। মৃত্যুর হার, সংক্রমনের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই অনিশ্চিয়তার মধ্যেই পজিটিভ থিংকিং আমাদেরকে সাহায্য করতে পারে। এখানে আরো বলা যায়, মেন্টাল হেলথ-এর সঠিক দাওয়াই হচ্ছে পজিটিভ থিংকিং।

বর্তমানে লকডাউনের অনিশ্চয়তার মধ্যে ইতিবাচক চিন্তা হিসেবে আমরা যা করতে পারি তা হলোঃ
১. নিজের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয়তাকে কমিয়ে আনা। আমার প্রয়োজন কমে গেলে আমার বাইরে যাওয়ার প্রয়োজনও কমে যাবে। আহার এবং চলাফেরায় আমি ন্যূনতম নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবো।
২. লকডাউন-এর ফলে যে অখন্ড কর্মহীন সময় আমার ভাগ্যে জুটে গেল তাকে আমাদের নানাপ্রকার কাজ, শিক্ষাদিক্ষা, প্রশিক্ষণ, ব্যক্তিগত মানোন্নয়নমুলক কর্মকান্ড ইত্যাদি দিয়ে ভরে ফেলতে হবে। "মরেই তো যাবো! এখন কাজ করে কি হবে!"-ধরনের কথাবার্তা হলো নেতিবাচক চিন্তা।
৩. মিডিয়ার খবরা-খবর দ্বারা ভারাক্রান্ত হওয়া থেকে বেঁচে থাকতে হবে। মিডিয়ার এত বেশি তথ্য এবং বর্ণনার প্রভাব প্রত্যেক ব্যক্তির উপর অত্যন্ত নেতিবাচক। এত বেশি সংবাদ জানার আমার প্রয়োজন নেই। দিনের একটি বিশেষ সময়ে মূল খবর গুলো জানবো, বাকি সময় নিজের জন্য ব্যয় করবো। অযথা খবর শুনে হা-হুতাশ করে কোন উপকার হবে না। যতক্ষণ বাঁচি, সচেতনভাবে কিন্তু হাসিমুখে বাঁচতে হবে; ভয়-তাড়িত হয়ে নয়।
৪. সমাজের ও মানুষের সমস্যা নিয়ে ভাবতে হবে। এই মুহূর্তে আমাদের সমাজের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, লকডাউনের কারণে ক্ষুধার অন্ন জোগাড় করতে ব্যর্থ হওয়া মানুষগুলোর খাবারের ব্যবস্থা করা। এলাকা ভিত্তিক যোগাযোগের মাধ্যমে বেসরকারি উদ্যোগে এই কাজ করতে হবে।
৫. অন্যকে সাহায্য করতে হবে; নিদেনপক্ষে সুপরামর্শ, সান্তনা, ও ধৈর্যের উপদেশ দিয়ে হলেও! অন্যকে ধৈর্যের উপদেশ দিতে গেলে নিজেকে ধৈর্য্য ধরতে হবে। অন্যকে সান্ত্বনা দিতে গেলে সেটা নিজের সান্তনার কারন হবে।
৬. ভবিষ্যৎ নিয়ে, কোন প্রকার হতাশা নয়, প্রচন্ড আশাবাদ লালন করতে হবে। যদি এমন হয় যে পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ এই করানোভাইরাসে মরে গেল, তারপরও যারা বেঁচে থাকবে তাদের নিয়ে নতুন দিন শুরু হবে এবং নতুন যাত্রা শুরু হবে। যদি পৃথিবীর অর্থনীতি সম্পূর্ণ ধ্বংসও হয়ে যায়, সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে আবার নতুন অর্থনীতির যাত্রা শুরু হবে, নতুন দিনের যাত্রা শুরু হবে। সুতরাং আশাবাদ রাখতে হবে যে, এখানেই পৃথিবীর শেষ নয়! আল্লাহ অবশ্যই তাঁর বান্দাদের এই দুর্যোগ থেকে রক্ষা করবেন। ‌
৭. তাই, লকডাউনের কল্যাণে, যেটুকু অখন্ড সময় হাতে পাওয়া গেল তাকে অপচয় না করে, আগামী দিনের জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার কাজ করতে হবে। এই সময়কে ব্যয় করে আগামী প্রজন্মকে জ্ঞানে ও গুণে তৈরি করতে হবে উজ্জ্বল দিনের জন্য।
৮. কোভিড-১৯এর প্রভাবে আজ পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষই মৃত্যু-ভয়-তাড়িত জীবন যাপন করছে। আমাদেরকে 'মৃত্যু ভয়ে ভীত' নয় বরং '#মৃত্যু চিন্তায় সমৃদ্ধ' হয়ে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে, ভালো কাজের মাধ্যমে এবং সুচিন্তার মাধ্যমে। আসুন, আজকে থেকেই ভালো কাজের চিন্তাভাবনা ও পরিকল্পনা গ্রহণ শুরু করি এবং লিখে রাখি।
৯. শেষ কথা হলো, মৃত্যু যদি এসেই যায়, মৃত্যু যদি আমাকে পেয়ে বসে, তাহলে পজিটিভ থিংকিং হচ্ছেঃ #মহামারীতে মৃত্যুর কারণেই, হাদিসের সুসংবাদ মোতাবেক, আমি #শহীদের মর্যাদা পাবো এবং আমাকেও #জান্নাত দেয়া হবে পুরস্কার হিসেবে। এমন দুর্দিনে এর চেয়ে ইতিবাচক চিন্তা আর কী হতে পারে!

আশরাফ আল দীন।। শিক্ষাবিদ, কবি, গবেষক ও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা।
মিরপুর, ঢাকা, ০৩/০৪/২০২০

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:৪১

রাজীব নুর বলেছেন: সেব্রিনা কিংবা রুবানা
করোনায় ডরায় না!

০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৫৪

আশরাফ আল দীন বলেছেন: আমি তো ভুল শিক্ষা দিতে শিখিনি!
তাই সুচিন্তার কথা বলি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.