নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ৩০ বছর চাকরি করেছি; অবসর নিয়েছি কর্নেল পদবীতে ২০০৬ সালে। এরপর এযাবৎ প্রিন্সিপাল হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে; এখন অর্কিড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা-তে। ‘স্কুল সাইকোলোজি’ নিয়েও কাজ করছি।

আশরাফ আল দীন

কবি, শিক্ষাবিদ ও প্যারেন্টিং এক্সপার্ট

আশরাফ আল দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসার গল্প, বুড়োদের জন্য

১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৬

না! বুড়োদের সাথে #ভালোবাসার কথা বলা 'ভীমরতি' নয়। আজকের এই বুড়োরাই পৃথিবীকে সমাজকে ভালোবাসার-কথা শিখিয়েছে অবদান রেখেছে সাহিত্যে শিল্পে কারিগরি উৎকর্ষতায় আর তিলে তিলে গড়ে উঠা সমগ্র সৌকর্যে। কিন্তু #বুড়ো বয়সে এসে ভালোবাসা হয়ে গেছে একটি অপাংক্তেয় শব্দ, তাঁদের কাছেই।

জীবনের ক্রান্তিকালে এসে আল্লাহর আর রাসূলের (দঃ) #ভালবাসা সম্বল করে অনেকেই হয়েছেন মসজিদমুখী। কিন্তু অন্য দিকটিও তো এখনও আছে বেঁচে! সেই দিকটি হলো, নাতিনাতনীর চেহারার দিকে তাকিয়ে ওদেরকে বুক উজাড় করে ভালোবাসা দেয়া। সন্তানরা বড় হয়ে গেলেও তাদেরও তো ভালবাসার দরকার! সেটুকু দিয়ে দেয়া। ভালোবাসা দিলে যে ভালোবাসা ফিরে আসবে তাও আবার বুঝে নেয়া দরকার। অথচ অনেকেরই রুক্ষ ভালবাসাহীন চেহারা দেখে মনে হয়, তাঁরা সবকিছু থেকে দূরে সরে গেছেন, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়।

যেভাবেই হোক, আমরা #বুড়োরা যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি সবকিছু থেকে, এমনকি ভালোবাসা থেকেও! মুখে হাসি নেই! জীবন-বিচ্ছিন্নতা নিয়ে পোষাকী পরহেজগারী নিয়ে ডুবে যাচ্ছি ক্রমশঃ। কিন্তু, এই ভালোবাসাকে ফিরে পেতে হবে।

কীভাবে? আমাদের গড়ে ওঠা, বেড়ে ওঠা এবং কর্মজীবনে ক্ষমতাধর শাসক বা একনায়কতান্ত্রিক মনোভাব নিয়ে আমাদের এতকালের বিচরণ! এসব এখন বদলাবো কীভাবে?

সমস্যা সেখানেই।
সে কাল আর এ কাল -- এই দুই কালের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা বা সেতু রচনায় আমাদের চরম ব্যর্থতা আজ প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে। বিষয়টা দোষারোপের নয়, বরং বাস্তবতাকে বুঝে নেয়ার!
আমাদের সময়টাই ছিল ভিন্ন রকম। সেটা ভুলে গেলে চলবে না! হয়তো অবস্থাটা এমন ছিল যে, আমরা ছাড় দিলে তখন আমাদের অস্তিত্বই বিনষ্ট হয়ে যেতো! তাই, আমরা ছাড় দিতে কখনো শিখিনি। এখনো তাই ছাড় দিতে পারি না।

আমাদের বেড়ে ওঠা মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত পাটাতন থেকে। ওই অবস্থানে সব সময় সাধ আর সাধ্য একসাথে যায় না। উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকে আকাশচুম্বী! প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়, কোন দিকে না তাকিয়ে, নাকমুখ বুজে, লক্ষ্য অর্জনের দৃঢ়তা নিয়ে। ছাড় দেওয়ার উপায় থাকে না এতটুকুও! আর, বর্তমানে আমরা যে বিত্তকে আয়ত্তের মধ্যে রেখেছি তাকে উচ্চ মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত বলতেই হবে।

আমাদের সন্তানদের শুরু এখান থেকেই। কিন্তু আমরা তো আমাদের পুরাতন মানসিকতাকে নতুন ছাঁচের ভিতর ঢুকাতে পারছি না! মানতে পারছি না সবকিছু অবলীলায়! বারবার আটকে যাচ্ছে, কোথাও না কোথাও। তাই কখনো মৃদু সংঘাত, কখনো দৃশ্যমান সংঘর্ষ এমনভাবে উঠে আসে যে সেটাকে এড়াতেই বিচ্ছিন্নতা-ভালোবাসাহীনতা-রুক্ষতার চাদরের নিচে আশ্রয় নিতে হচ্ছে আমাদের একেক জনকে একেক ভাবে। আমাদের প্রজন্মের অর্থাৎ বুড়োদের একটি বিরাট অংশ আশ্রয় নিচ্ছে মসজিদে আর ক্ষুদ্র একটি অংশ ক্লাবে বা বারে। মসজিদেও যে উনারা ছাড় দিতে পারেন তা নয়, এবং সেটা প্রায়ই দৃশ্যমান হয়! ক্লাব আর বারের পরিবেশ তো এই পরিপ্রেক্ষিতে আরও দূষিত!
তাহলে, সমাধান কি? সমাধান হলোঃ বদলাতে হবে।
কি! এই বয়সে বদলাবো?
হ্যাঁ। অনেক সময় ডাক্তারও হাত গুটিয়ে নেন, এটা 'ওল্ড এজ কম্প্লিকেশন' বলে!
আমি বলছিঃ আসুন! এটা সম্ভব। যতক্ষণ শ্বাস আছে চেষ্টা করলে আমরাও বদলাতে পারি। কিছুটা হলেও বদলাবো কল্যাণের আশায়। তারপর হাসি মুখে বিদায় নিয়ে যাবো।
যাদের সাথে আমার উপরের কথাগুলো কিছু মাত্রায় হলেও মিলে যায় তাদেরকে বলবো, আসুন! আজ থেকেই মুখে হাসি প্রাক্টিস করুন এবং আমার গল্পটা শুনুন।
থেরাপির গল্প। আমাদের জন্য "#মাইন্ডথেরাপি"।

বছর দেড়েক আগে হঠাৎ পায়ের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গেলাম। আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন, একটা দুর্ঘটনায় আমার ডান হাতটা কেটে নেয়া হয়েছে ২০০২ সালে এবং আমার ডান পায়ের গোড়ালিটা মারাত্মকভাবে ভেঙ্গে গিয়েছিল। অনেকদিন হুইলচেয়ারে ছিলাম। এরপর হাঁটতে শিখেছি নতুন করে। আলহামদুলিল্লাহ, এখন খুব একটা অসুবিধা হয় না। চলাফেরা করছি ভালোই।

সেই ডান পায়ের গোড়ালিতেই ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে (সিএমএইচে) ভর্তি হলাম। পুরো এক মাস হাসপাতালে থাকতে হলো। প্রচণ্ড যন্ত্রণা শেষতক চলে গেলো। এখন আমার আর কোন অসুবিধা নেই, ডাক্তাররা ঘোষণা দিলেন, হাসপাতাল ছেড়ে বাড়িতে চলে যেতে পারি। কিন্তু সমস্যা হলো, দীর্ঘ এক মাস ডান পা' ব্যবহার করতে না পারার কারণে আমি আর দুই পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারছিলাম না! ডাক্তাররা বললেন, এই বয়সে, অস্ট্রিও আর্থ্রাইটিস এর কারণে, হাত-পায়ের হাড়ের মাঝখানে যে নরম হাড়ের মত জিনিস গুলো বেড়ে ওঠে তার কারণে চলাচলে খুব ব্যথা হয়।

তাহলে, সমাধান? অপারেশন করে নরম হাড়গুলোকে ফেলে দেয়া যায়। কিন্তু এটা স্থায়ী সমাধান নয়। কারণ কিছুদিন পর আবার তার জন্ম হবে। সুতরাং ব্যাথাটাকে সহ্য করাই ভালো, অর্থাৎ নিজেকে মানিয়ে নেয়া। অথচ আমি আমার ডান পা'কে মাটিতে ছোঁয়াতেই পারছিনা, হাঁটবো কি! হুইলচেয়ারে চলাচল করতে হচ্ছে! ক্রাচ ব্যবহারের উপায় নেই, কারণ ডান হাত নেই। শেষে ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগে গেলাম। ওরা বললো, এই বয়সের একটাই সমাধান, সেটা হলো #ফিজিওথেরাপি। এতে আপনার অনেক সময় লাগতে পারে, কিন্তু সুফল পাবেন। পুরোপুরি আগের মতো না হলেও চলাফেরা করতে পারবেন। আমার অবস্থা দেখে কেউ আশাবাদী হওয়ার কথা নয়। কারণ আমার পায়ের ভিতর আগে ঢুকানো দুই টুকরো স্টিল প্লেট এখনো রয়ে গেছে। ফলে ডান গোড়ালিকে আমি খুব বেশি নাড়াতে পারিনা। এর মুভমেন্ট লিমিটেড। যাই হোক, আমি ধৈর্য ধরে #ফিজিওথেরাপি করতে থাকলাম। ভীষণ ব্যাথা দেয় ওরা। মুখ বুজে সহ্য করি, আমারি উপকার হবে চিন্তা করে। ক'দিন পর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। প্রচন্ড কষ্ট তবুও চেয়ারে বসে নামাজ পড়ি না, উঠে-বসে নামাজ পড়ি। আমি ভেবে নিয়েছি ওটাও আমার ফিজিওথেরাপি।

আমি যদি ডাক্তারের কাছে অভিযোগ করতাম, ডাক্তার আমাকে ব্যথার ওষুধ দিত। যদি বলতাম, কষ্ট হচ্ছে! তারা বলতো, "আপনি চেয়ারে বসে নামাজ পড়বেন। খবরদার! একবারও দাঁড়াবেন না।" কিন্তু তাহলে তো আমি আর মুক্ত হতে পারবো না! আমি তাই ডাক্তারের কাছে অভিযোগ করিনি। নিজে নিজেই কষ্ট সহ্য করেছি। আমি বিশ্বাস করি, মানুষ চেষ্টা ও পরিশ্রম করলে আল্লাহ তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেন। আমারও ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হলো। কষ্টটা ধীরে ধীরে কমতে লাগলো। কয়েক মাসের মধ্যেই আমি চলাচল শুরু করলাম কোনরকম সহায়তা ছাড়া এবং তারপর স্বাভাবিক হয়ে গেল সবকিছু। #মানসিকদৃঢ়তা ছিলো আমার এবং আমি ফিজিক্যাল মেডিসিনের ডাক্তারদের বিশ্বাস করেছিলাম যে, আমার হাঁটা আবার ফিরে আসবে। আল্লাহর শোকর, আবার আমি স্বচ্ছন্দে হাঁটতে শুরু করলাম। পরে আমি ভারতের একজন ডাক্তারকে আমার পা দেখালাম। আমি ভেবেছিলাম তিনি আমাকে বলবেন, অপারেশন করে প্লেট দুটো ফেলে দিতে। কিন্তু ডাক্তার আমাকে বললেন, "আপনার তো কোনো অসুবিধা নেই! চলাচল করতে পারছেন, বেশ! আপনি আমার কাছে কেন এসেছেন?" তাঁর প্রশ্নটাই আমার মনে স্বস্তি দিলো খুব।

এই অভিজ্ঞতা থেকে আমি আপনাদেরকে বুঝাতে চাই, এখন আমাদেরকে থেরাপি নিতে হবে আপন আপন মনের ও মগজের। এতে কোনো রকম অভিযোগ করা চলবে না। নিজেকেই সবকিছু সহ্য করতে হবে মুখে হাসি রেখে। নিজেকে বদলানোর কাজ শুরু করতে হবে। প্রত্যেকের অবস্থা ভিন্ন ভিন্ন রকম। সুতরাং নিজের অবস্থা নিজেই বুঝতে হবে সবচেয়ে বেশি। আপনি-আমিইতো সব কিছুতেই সক্ষম ছিলাম, সব কাজে নির্দেশনা দিয়েছি, পরিচালনা করেছি! এখন কেন আমরা ব্যর্থ হবো!
আসুন, বদলে যাই।
বাকি কথা পরে বলবো, ইনশাআল্লাহ।

মিরপুর ঢাকা ১৪.০৪.২০২০
আশরাফ আল দীন।। শিক্ষাবিদ, গবেষক, কবি ও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:১৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


হয়তো আপনার লেখাগুলোর মাঝে ভালো লেখা; কিন্তু লেখা ভুল ধারণা ও ভুল ভাবনার ফসল।

২| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: আমি উন্মাদ,আমি উন্মাদ !!
আমি চিনেছি আমারে,আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!!

৩| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:২৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন:   পাঠে মুগ্ধ  হলাম। 

২১ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:১৬

আশরাফ আল দীন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ।

৪| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৪০

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: স্যালুট স্যার। ++
আমার পরলোকগত দাদার কথা মনে পড়লো। চোখের ছানি তিনি অপারেশন করাতে দেননি। ভীষণ ভয় পেতেন। অথচ বিশাল একটি পরিবারকে একা সামলেছেন 40 বছর। মানসিক দৃঢ়তা থাকলে কখনোই একজন বৃদ্ধ মানুষ ভালনারেবল বা বোঝা হতে পারেননা।

২১ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:১৫

আশরাফ আল দীন বলেছেন: ধন্যবাদ ও শুভকামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.