![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সরকারি চাকুরী করি, কবিতা, প্রবন্ধ লিখি। ভ্রমণ এবং বই পড়া নেশা।
দিনাজপুর জেলার কসবা এলাকায় উত্পাদিত বেদানা লিচুর সঙ্গে স্ট্রবেরির অবয়ব এবং রংয়ে বেশ সাদৃশ্য রয়েছে। তবে ভেতরের অংশ এবং স্বাদে ভিন্নতা রয়েছে। বর্তমানে গবেষণার ফলে বেশকিছু নতুন নতুন জাতের উদ্ভাবন হয়েছে, যা উষ্ণমণ্ডলীয় এবং নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলেও বেশ ভালো জন্মে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় শৌখিন ফলচাষী এবং কৃষিবিদরা টবে এবং জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করে বেশ সফল হয়েছেন।
উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, হিমালয় পর্বতমালার আশপাশের এলাকা স্ট্রবেরির আদি নিবাশ। বর্তমানে প্রায় সমগ্র ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণাঞ্চল, উত্তর আমেরিকার দেশগুলো, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, উত্তর এশিয়ার দেশগুলো এবং আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে স্ট্রবেরির চাষ হয়ে থাকে।
স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি বেশ সহজ। অক্টোবর মাসের শুরুতেই জমিতে চারা লাগানো শুরু করা যাবে। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্ট্রবেরি গাছে রোগবালাই তেমন দেখা যায় না, এ জন্য কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। তবে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে অন্যান্য ফলের মতোই দমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবে গ্রিন হাউসে রোপিত স্ট্রবেরির গাছ থেকে সারা বছরই ফল পাওয়া সম্ভব। চারা লাগানোর এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে ফুল ফোটে এবং ফল ধরতে শুরু করে। মার্চ-এপ্রিল মাসে ফল সংগ্রহ করা যায়। আমাদের দেশে মার্চ থেকে শুরু করে জুন মাস পর্যন্ত জমিতে চাষকৃত স্ট্রবেরি সংগ্রহ করা যায়।
স্ট্রবেরি ফল পাকার পর টকটকে লালবর্ণ ধারণ করে। এ ফলে জলীয় অংশ বেশি থাকায় গাছ থেকে উত্তোলনের পর অল্প সময়ের মধ্যেই বাজারজাত করতে হয়, তা না হলে ফল পচে নষ্ট হয়ে যায়। একটি গাছ থেকে বছরে ২০-২৫ গ্রাম ওজনের ৩০-৪০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। দ্রুত পচনশীল এ ফল খুব সাবধানে গাছ থেকে সংগ্রহ করে ভালোভাবে প্যাকেটজাত করে বাজারে বা ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে হয়। খোলা মাঠে উত্পাদিত স্ট্রবেরির চেয়ে গ্রিন হাউসে উত্পাদিত স্ট্রবেরির স্থায়িত্ব বেশি হয়।
স্ট্রবেরি একটি ক্ষুদ্রাকার গুল্ম জাতীয় বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। লতানো গাছ মাটির ওপর দিয়ে বাড়তে থাকে। দীর্ঘ বোঁটাযুক্ত পাতায় তিনটি করে দাঁড়ানো পত্রক থাকে। স্ট্রবেরির ফল একটি স্ফীত পুষ্পাধার, যার গায়ে অসংখ্য অতি ক্ষুদ্র বীজ বসানো থাকে। ফল ধারণ প্রকৃতি পার্শ্বীয়। ফল একক সরস জাতীয় বেরী। পাকা ফল সরাসরি খাওয়া হয় কিংবা প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রী প্রস্তুত করা হয়।
স্ট্রবেরি চাষের জন্য সুনিষ্কাশিত উর্বর দোআঁশ মাটি প্রয়োজন হয়। এই গাছ জলাবদ্ধতা মোটেই সহ্য করতে পারে না। গ্রীষ্মকালে অধিক বৃষ্টিপাত হলে এ গাছ মারা যায়। গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সে জন্য উঁচু বেডে চারা রোপণ করতে হয়। জমির মাটির পিএইচ ৬-৭ হলে ভালো হয়।
স্ট্রবেরি গাছের লতা কেটে চারা হিসেবে রোপণ করা হয়। এছাড়া শেকড় থেকেও চারা তৈরি করা যায়। ৫০-৬০ সেমি দূরত্বে সারি করে উঁচু বেড তৈরি করতে হয়। এ বেডে ৪০-৪৫ সেমি ব্যবধানে চারা রোপণ করা হয়। বেড ছাড়াও ম্যাটেড সারি বা রিবোন সারি পদ্ধতিতে চারা লাগানো যেতে পারে। স্ট্রবেরি চাষের জন্য শুধু জৈব সার ব্যবহার করা উত্তম।
জমি তৈরির সময় হেক্টরপ্রতি ২০-২৫ টন গোবর ও অন্যান্য জৈব সার, ২০০ কেজি করে ইউরিয়া, টিএসপি ও পটাশ ব্যবহার করতে হবে। শুকনো মৌসুমে হালকা সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। আগাছা দমন এবং মাটির সংস্পর্শ থেকে ফলকে রক্ষা করার জন্য মাটির ওপর খড় বিছিয়ে তার ওপর গাছ তুলে দিতে হবে। একবার গাছ লাগালে তা থেকে ৪/৫ বছর ফল পাওয়া যায়।
©somewhere in net ltd.