নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসিফ ইকবাল ইরন

মন জমিনে শব্দের চাষাবাদ

আসিফ ইকবাল ইরন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কয়েকফোটা সুখের জল

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৪৬



কয়েকফোটা সুখের জল







মা সুমা কই গেলে। আমার ব্যাগ টা দিয়া যা মা। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। সুমা রান্নাঘর থেকে হাতে করে নিয়ে আসে জমির আলীর ভিক্ষার থলি। জমির আলীর একমাত্র মেয়ে সুমা। সুমার বিয়ে হয়েছে আজ একবছর হলো। স্বামী পাশ্ববর্তী গ্রাম সুন্দরপুরের ফজলু মিয়ার সাথে। আজ একমাস হলো সুমা স্বামীর বাড়ী থেকে বাপের বাড়ী এসেছে। আদৌ কোনোদিন ফিরতে পারবে কিনা সুমা জানেনা। সুমার শাশুরী বলে দিয়েছেন ছেলের ব্যাবসার টাকা জোগার করতে পারলে যেনো বাড়ী ফিরে আসে। সুমা শাশুরীর পা ধরে অনেক অনুনয় বিনয় করেছে কিন্তু শাশুরীর এক কথা টাকা নিয়ে যদি কখনও আসতে পারে তবে তোমার জন্য এবাড়ীর দরোজা খোলা হবে। সুমা আসার আগে স্বামী ফজলু মিয়ার পা ধরে কেদেঁছে। কিন্তু ফজলু মিয়া ও নিরুত্তর। সুমা বুঝতে পারে মার কথায় তার স্বামী ও একমত। কিন্তু তার বাবা জমির আলী কোথায় থেকে টাকা দিবে? তার বিয়ের সময় দু শতকের বসত ভিটা মহাজনের কাছে বন্ধক দিয়ে টাকা নিয়ে ছিলেন বাবা। আজও সে টাকা পরিশোধ করা হয়নি। আর দিবেই বা কিভাবে? জমির আলী সড়ক দূর্ঘটনায় পা হারিয়েছে আজ একযুগ হলো। কোনো কাজ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু তার ভিক্ষা করতে ও ভালো লাগেনা। কারো কাছে হাত পাতাকে জমির আলী পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ মনে করেন। কিন্তু কোনো উপায় ও তার নেই। ছোটখাট যে মুদির দোকান দিবে সে পরিমান পুজি ও নেই। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বে মানুষের দারে দারে ঘুরে হাত পাতে জমির আলী। ভিক্ষার থেকে অল্প অল্প জমানো টাকা আর মহাজনের টাকা দিয়ে তার একমাত্র মেয়ে সুমাকে বিয়ে দেন । সুমা সুখে থাকবে এছিলো তার আশা। কিন্তু সে আশা-স্বপ্নের গুড়েবালি। বিয়ের সময় জামাই বাড়ীর আবদারে বসত ভিটা ব›ধক রেখে দশহাজার যৌতুক পন হিসেবে দিয়েছিলো। বড় প্রত্যাশা ছিলো মা মরা মেয়ের সুখ দেখে যাবেন। কিন্তু সে সুখ মনে হয় আর তার দেখা হলোনা। বিয়ের ছ’মাস পরে আরো যৌতুকের জন্য সুমার উপর নেমে আসে আরো নির্যাতন। সুমা অল্পশিক্ষিত মেয়ে তার উপর নির্যাতনের প্রতিবাদ সে করতে পারেনা। তার নিয়তি ভেবে মুখ বুজে সে সব সহ্য করে। কিন্তু যেদিন ঘর থাকে বের করে দেওয়া হয় তখন আর পারিনি। সোজা চলে এসেছে বাপের বাড়ী। বাবা জমির আলীর হাতে থলি দিয়ে বলে বাবা আজ তোমার শরীরটা ভালা না। আইজকা থাক বাবা তুমি যাইওনা। মেয়ের কথার প্রতিবাদ করে বলেন-

:আমি যদি না যাই মা তুই জামাইর ঘরে যাইবে কিলা?

:বাবা আমি যাইতাম চাইনা

:কিতা কছ মা! ইতা কইছনা।

:হাছা কইতাছে বাপ মুই এমুন জামাইর ঘরে আর যাইতামনায়

: মা ইতা মুখে আনিছনা পাপ আইবো।

:অইলো অইবো। এইটা আমার দিলের কথা কইতাছে। যে পোলা হউরের(শাশুর) ভিক করা টাইকা নিয়া তার ঘরে আর আমি মইরা গেলেও যাইমুনা।

মেয়ের কথায় দুশ্চিন্তায় পড়ে যান জমির আলী। এর মধ্যে জামাইর দাবী করা দশহাজার টাকা মধ্যে জমির আলী পাচঁ হাজার টাকা সংগ্রহ করেছেন। আর পাচঁহাজার টাকা হলেই মেয়েকে জামাই বাড়ী পাঠাতে পারতেন। কিন্তু মেয়ের কথায় যেনো জমির আলীর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।

:বাবা কিতা হইলো তুমি মাতো না দেখি

:আরেকবার ভাবরে মা

:না বাবা মোর চোখ খুইলা গেছে। আমাগো স্কুলের শিক্ষিত আপা কইছে যৌতুক নেওয়া দেওয়া দুইটা অপরাধ। আপায় আরো কইছে আমাগো লাখান মাইয়ার লাগি অনেক এনজিও সহযোগীতা করে। বাবা তোমারে আর ভিক্ষা করবার দিতামনায়। আমি লোন নিয়া হাস মুরগী পালন করমু।

:কিন্তু!

:না বাবা কোনো কিন্তু নাই। আমি নিজের পায়ে দাড়াইমু।

জমির আলী আর কোনো কথা বাড়াননা। মনে মনে বলেন মেয়ে তো ঠিকই বলেছে। যে ছেলে যৌতুক চায় বউয়ের উপর নির্যাতন করে আর যাই হোক সে ছেলের কাছে মেয়ে সুখী থাকতে পারেনা। সুমার অলক্ষ্যে জমির আলীর চোখ থেকে ঝরে পড়ে কয়েকফোটা জল। সে জল হয়তো দঃখের নয়





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.