নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছণ্ণ্ ছাড়া

ছণ্ণ্ ছাড়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

জানেন কে এই ‘কুলাঙ্গার’?

২০ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:৫৬

মাকে দেখভাল করতে চান না। তাই আদালতে দাঁড়িয়ে ৮৮ বছরের বৃদ্ধাকে ‘ভাড়া করা ভিখারি’ বলে দাবি করেছিলেন ছেলে। কে এই ‘কুলাঙ্গার’? নাম অমল অধিকারী। কলকাতা রাজ্য সরকারের আবাসন পর্ষদের এক পদস্থ অফিসার।



স্ত্রী সল্টলেকের একটি মেয়েদের স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা।কলকাতার উপকণ্ঠে, ৬৪/৫৬ বেলগাছিয়া রোডে একটি তিনতলা বাড়িতে থাকেন তারা। বাড়িটি অবশ্য তৈরি করেছিলেন অমল অধিকারীর বাবা। সে কয়েক যুগ আগের কথা। অমলরা তিন ভাই। তিনি মেজ। দাদা ও ভাই বিদেশে। বৃদ্ধা মা মনিকা অধিকারী এই মেজ ছেলের সঙ্গেই থাকতেন।স্বামীর মৃত্যুর পরে আইনের চোখে মনিকাদেবীই বাড়ির আসল মালিক। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিটা সম্পূর্ণ আলাদা। অকথ্য শারীরিক আর মানসিক অত্যাচার ছিল তার নিত্যদিনের সঙ্গী। বুড়ো বয়সে সব কাজ আর পেরে ওঠেন না। তাই নিজের জন্য এক জন আয়া রাখতে চেয়েছিলেন বৃদ্ধা।শুনেই খেপে ওঠেন ছেলে। মায়ের জন্য পানীয় জল নেয়া বন্ধ করে দেন। আদালতে মনিকাদেবী জানিয়েছেন, অত্যাচারের মাত্রা যখন আর তিনি নিতে পারতেন না, বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেন। তাতেও অবশ্য হুঁশ ফেরেনি অফিসার-পুত্রের।সন্তানের এ হেন আচরণে বীতশ্রদ্ধ হয়ে শেষমেশ শিয়ালদহের বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলা করেন বৃদ্ধা। সেটা ২০০৯ সাল।দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে অমলবাবুকে বিচারক নির্দেশ দেন, মাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিতে হবে। মায়ের দেখাশোনার জন্য লোক রাখতে হবে। প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে খোরপোষ বাবদ ৫ হাজার টাকা দিতে হবে।এ ছাড়া, মামলার সময়কাল বিচার করে বকেয়া বাবদ এককালীন দেড় লক্ষ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক। শিয়ালদহ আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আলিপুর আদালতে মামলা করেছিলেন অমলবাবু। কিন্তু তাতে রায়ের কোনও হেরফের হয়নি।এ বার কলকাতা হাইকোর্টে যান অমলবাবু। তার দাবি, যাকে খোরপোষ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নিম্ন আদালত, সেই বৃদ্ধা তার মা নন। শিয়ালদহ স্টেশন থেকে এক ভিখিরিকে ভাড়া করে এনে তার মা বলে দাবি করা হচ্ছে।ছেলের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পেয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি দুই পক্ষের আইনজীবীকে যাবতীয় কাগজপত্র, মায়ের ছবি এবং অন্যান্য নথি পেশ করতে বলেন।ব্যক্তিগতভাবে বৃদ্ধাকে আদালতে হাজির হওয়ারও নির্দেশ দেন বিচারপতি। সব দিক খতিয়ে দেখে তিনি নিশ্চিত হন, ভিখিরি নন, এই বৃদ্ধাই অমলবাবুর মা মনিকাদেবী। নিজের মাকে ‘ভিখারি’ পরিচয় দেয়াতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কানোয়ালজিৎ সিংহ অহলুওয়ালিয়া মন্তব্য করেন, এই দুর্বিনীত, কুলাঙ্গার ছেলের নিজের মাকে ন্যায্য প্রাপ্য দেয়ার মতো ভব্যতা ও মনুষ্যত্বটুকুও নেই! পরে বৃদ্ধার ভবিষ্যৎ-সুরক্ষায় প্রতি মাসে খোরপোষ বাবদ চার হাজার টাকা দিতে হবে অমল অধিকারীকে এই রায় দেন বিচারপতি। এছাড়া অমল অধিকারীকে রাজ্য লিগাল এইডস-এর কাছে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে জমা দিতে হবে। ওই টাকা দরিদ্র মহিলাদের মামলার কাজে ব্যয় করবে লিগাল এইডস। এই দম্পতির মাসিক আয় কত, তদন্ত করে তা-ও আদালতকে জানাতে বলেছেন বিচারপতি।এই মামলায় মনিকাদেবীর আইনজীবী ছিলেন সুপ্রদীপ রায় এবং সিদ্ধার্থ রায়। তাদের মন্তব্য, “শেষ পর্যন্ত মানবিকতারই জয় হলো। এই মামলা লড়ে যা তৃপ্তি পেলাম, তা আগে কখনও পাইনি।” সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.