![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
৫ম শ্রেণীর ছাত্র তৌকির আহমেদ (নিশাত)। বাড়ী সরকার পাড়া, রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলের ছাত্র। রাজনীতি কি সে বুঝে না। পুরো পরিবার রাজনৈতিকভাবে সচেতন এবং সবাই এলাকায় ভদ্র লোক হিসাবে পরিচিতি। গত ১৬ই নভেম্বর ছিল পবিত্র আশুরা। কারবালার ময়দানে শহীদ হয়েছিলেন ইমাম হোসেন (রাঃ)। এ দিন সমস্ত পৃথিবী শোকে মূহ্যমান থাকলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি দল মেতেছিল নারকীয় উৎসবে। ঝড়ে যায় একটি তরতাজা প্রাণ। যে ছেলেটি মারা গেছে, সে ছিল অত্যন্ত ভদ্র, নীরিহ, সাব কণ্ট্রাকটরের কাজ করত। ঝগড়া থামাতে গিয়ে সে অকালে ঝড়ে যায়। নিশাত দাড়ানো ছিল সরকার পাড়া কবর স্হানের সামনে। গুলাগুলি শুরু হলে দৌড়ে চলে যায় পিটিআই এর সামনে। হঠাৎ একজন এলাবাসীর চোখ পড়ে নিশাতের পায়ের দিকে। রক্ত ঝড়ছে পা থেকে। তাড়াতাড়ি আনা হয় সদর হাসপাতালে। ডাক্তারের অভাবে চলে আসে প্রাইভেট হাসাপাতালে। বর্তমানে সে ঝুকিমুক্ত। কিন্তু তার এ আহত নাড়া দিয়ে গেছে সমস্ত সমাজকে।
এ ঘটনা অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। দক্ষিণ পৈরতলা বাস স্ট্যান্ডে অনেকগুলো বাস কাউন্টার। তিশা, সোহাগ, উত্তরা, বি আর টির বাস চলাচল করে এখান থেকে। নতুন এসেছে রয়েল বাস সাভিস। রয়েল বাস নিয়েই শুরু হয় উত্তেজনা । এখানে প্রতিটি কাউন্টার থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা নগদ লেনদেন হয়। নগদ টাকার লোভে এখানে শুরু হয় গ্রুপিং। সৃষ্টি হয় ৩/৪টি গ্রুপের। সংঘাত হয়ে উঠে অনিবার্য। বর্তমান সাংসদ র.আ.ম ওবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী দায়িত্ব নেবার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অভাবনীয়ভাবে উন্নতি লাভ করছিল। সরকারের মেয়াদের শেষ সময় এ ধরনের কাজকর্ম সম্পূর্ণভাবে উদ্দেশ্যমূলক মনে করছেন অনেকে। দক্ষিণ পৈরতলা বাস স্ট্যান্ডকে ঘিরে গত বেশ কিছুদিন ধরে চলছে উত্তেজনা। ইতিমধ্যে তিন/চার বার বাস স্ট্যান্ড এলকায় ভাংচুর, গুলি, বোমা বর্ষনের মত ঘটনাও ঘটেছে। এখান থেকে ছিনতাই হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। গোষ্ঠীগত দ্বন্ধ এখানে খুবই প্রকট। আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের নাম ভাঙ্গিয়ে তোলা হচ্ছে চাদা । শীর্ষ নেতৃত্ব ব্যাপারটি অস্বীকার করলেও দায়িত্ব এড়াবার সুযোগ নেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ওসি আবদুর রব একজন করিৎকর্ম ব্যক্তি। গত তিন বৎসরে উনার প্রত্যক্ষ ভূমিকার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও শহরতলী তুলনামূলকভাবে ছিল অনেক শান্ত। হত্যাকান্ডের দিন উনি ছিলেন ছুটিতে। উনার অনুপস্হিতিতে পরিস্হিতি সামাল দিতে সম্পূণভাবে ব্যথ হন দায়িত্বপ্রাপ্ত ওসি (তদন্ত)।১৬ নভেম্বরের এই হত্যাকান্ডটি সম্পূর্ণভাবে পুলিশের ব্যর্থতা বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। নিহতের পরিবার সরাসরি অভিযোগ করেছেন এ এস আই বশিরের বিরুদ্ধে। সংঘর্ষ শুরু হবার আগেই বশিরকে কয়েকবার তাগদা দেয়া হয় অতিরিক্ত পুলিশের ব্যবস্থা করতে। এ কথা মোটেই গুরুত্ব দেয় নাই বশির। বরং সে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেছে সংঘর্ষকারীদের।
ঘটনার সূত্রপাত হয়, অটোরিক্সার চালকের সাথে আরোহীদের তর্ক বিতর্ককে কেন্দ্র করে। সে সময় নিহত বুলেট ঝগড়া থামিয়ে দেবার চেষ্ঠা করে । আরোহীরা পঙ্খীরাজ চালককে মারধর করে চলে যায়। এ ঘটনার জের ধরে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির নেতৃত্বে একটি দল পৈরতলা বাস স্ট্যান্ডে তিশার কাউন্টার ভাংচুর করে। তখন থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। রাস্তা ঘাট জনশুন্য হয়ে যায়। গন্ডগোলের আশংকায় পুলিশ অবস্থান নেয়। চারজনের একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন এ.এস.আই বশির। সরকার পাড়ার মহল্লাবাসী বারবার অনুরোধেও এ.এস.আই বশির কর্ণপাত করেনি। তার বিরুদ্ধে আরো মারাত্মক অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। বুলেটের মৃত্যুর পর বশির এ.এস.আই কাউকে ফোনে জানাচ্ছিল, “ভাই, একজন মারা গেছে, এখন আপনারা চলে যান”।
নিহত বুলেটকে হাসপাতাল নেবার পর এখানে অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে আসেন সদর থানা ওসি (তদন্ত) কামাল। সরকার পাড়া ও আশপাশের এলাকা থেকে হাজার মানুষ নেমে আসে রাস্তায়। হাতে অস্ত্র-সস্ত্র। গুটি কয়েক পুলিশ সদস্য নিয়ে অসহায় অবস্থায় অবস্থান করছিলেন ওসি (তদন্ত) কামাল। হঠাৎ করে উত্তেজনা চরমে উঠে যায়। অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে বাস স্ট্যান্ডে অগ্রসরের জন্য চেষ্টা চালায় একটি দল। পুলিশকে তখন দেখা গেছে চরম অসহায় অবস্হায়। সদর থানার টি এস আই বেলাল ছুটে চলে যায় নিরাপদ আশ্রয়ে। ওসি তদন্ত রাস্তায় একা দাড়িয়ে জনস্রোত আটকানোর ব্যথ চেষ্টা করছিলেন। তখন যুবলীগ নেতা ভিপি হাসান, কাজী পাড়ার বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন রিপন, মইনুল আপ্রাণ চেষ্টা করে জনস্রোতটিকে আটকিয়ে দেয়।
রায়ট পুলিশের দেরিতে আসার সুযোগে বড় আকারের হিংসাত্মক কাজের সূচনা হয়। লুটপাট করার উদ্দেশ্যে একটি দল সোহাগ পরিবহনের কাউন্টার সহ অন্যান্য কাউন্টার ব্যাপক ভাংচুর শুরু করে এবং অগ্নি সংযোগ করে। এর অনেক পরে। অগ্নি সংযোগের পর ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি বাধাপ্রাপ্ত হয়। পুলিশ লাইন থেকে অতিরিক্ত রায়ট পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকাবাসী সবাই একবাক্যে বলছে, পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার জন্য এ ঘটনা ঘটেছে।
পরিবহন ব্যবসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সবগুলো বাস কাউন্টার এক সাথে থাকার জন্যই এ ধরনের ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছে। নগদ টাকার লোভে শহরের এক শ্রেণীর মানুষের চোখ পড়ে থাকে এসব এলাকার উপর। কর্তৃপক্ষের উচিত বাস কাউন্টারগুলো শহরের বাইপাসের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দেয়া। না হলে আরও কোন মায়ের বুক খালি হবার আশংকা থেকেই যায়। সূত্র:
©somewhere in net ltd.