![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যমুনাকে দেখলেই আমার গল্প গল্প লাগে।যেন একপাতা একটা গল্প,যা আমি পড়ি নাই কোনদিন।দাড়ি,কমা,সেমিকোলন সব আমার না-পড়া,অথচ আমি যেন জানি গল্পটাতে কি লেখা আছে,কাকে লেখা আছে।আমার যেন সবটাই জানা!
আশরাফ মামা ছাত্রজীবনে যখন মেসে থাকতো তখন তার এক ক্লাসমেটকে স্বপ্ন দিয়া দিছিলো।খাটো,একটু মোটা করে মেয়েটা রোজ নিয়ম কইরা কলেজে আসতো আর সেই স্বপ্ন ফেরী কইরা বেড়াইতো আরেকজনের কাছে।মামা নিশ্চুপ থাকতো,নীরব থাকতো।কাউকে কিছু জানাইতো না,এমনকি সেই মেয়েটিকেও না।
বকুল ঋতুতে মামা একদিন পাঁচ টাকা দিয়ে একটা গোটা বকুলের মালা কিনা নিয়া আসলো মেসে।মেস তখন নীরব,কেউ জাগনা নাই,সবাই ঘুমে।মামা সেই মালাটা এমন জায়গায় টাঙ্গাইলো যাতে কইরা সব সময় এমনকি শুইলেও মালাটা চোখে চোখে আটকায় থাকে।
মেয়েটাকে নিয়ে মামার স্বপ্ন দেখা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকার পাশাপাশি বকুল শুকাইতে শুরু করে।বকুল এমন একটা ফুল যা বাসী হইয়া গেলেও সুবাস বিলায়।মামা মালাটার দিকে তাকায় থাকে আর তাকায় থাকে।এই মালাটাকে যে মামা শুধু বকুল ফুল ভাবতো না সেইটা জানতে আমার চার বছর পার হইছে।একদিন মামা কইলো-বকুলের সাথে আজকে দেখা হইছিলো পথে।
আমি চোখ সরু কইরা এমন একটা ভাব নিলাম যার অর্থ আমি সব বুইঝা উল্টায় দেই নাই।আমারে খুইলা বলতে হইবো সব কিছু!
-ওর নামই বকুল ছিল।
আমি আর প্রশ্ন করি নাই যে সেই নামটা এখনও বকুল আছে কি না!
যমুনাকে দেখলেও আমার এমন গল্প গল্প লাগে,যেমন কইরা মালা দেখলে মামার বকুল বকুল লাগতো।
সেদিন আমার পকেটে সতের টাকা।রিক্সা নিয়া ফুটানি করার শখ ছিল না বইলা আমি শিববাড়ী থেইকা সোজা হাঁটা ধরলাম।দক্ষিণ ছায়াবীথিতে যাইতে আধাঘন্টার মতো লাগবো।রেলক্রসিংয়ে আইসা আমার চোখ আটকায় গেল মেয়েটায়,নাকি মেয়েটাই আমার চোখে আটকায় গেল কে জানে!দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া আমড়া খাইতেছিল।বামহাতে চারটা আমড়া ধরা আর ডানহাতে একটা।ওই চারটা আমড়ার দিকে তাকাইয়া আমার মনে হইতাছিল একগুচ্ছ কাঠগোলাপ।যদিও খুব কাছ থেইকা কারো নরম হাতের কাঠগোলাপ আমার স্মৃতিতে নাই।তারপরও আমি কাঠগোলাপ মনে কইরা মেয়েটার কাছে আগায় গেলাম।
পাঁচ টাকার ময়লা নোটটা সোজা কইরা দুই হাতের তলে ফালাইয়া চাপ দিলাম,যেন এখনই সেইটা কচকচা নোটে পরিণত হইবো।মেয়েটার দিকে সেই নোটটা বাড়ায় দিয়া কইলাম-এই বড় আমড়াটা দেন।এই যে টাকা...
আমার ইচ্ছা ছিল মেয়েটারে একটু না,অনেকখানি ভড়কাইয়া দেওয়া।মেয়েটা সবচেয়ে বড় আমড়াটা আমার দিকে বাড়ায়ইয়া দিয়া কইলো-বিটলবণ নাই।উল্টা আমিই যেন তব্দা খাইয়া গেলাম তার এই আচরণে।
এরপর তার সাথে ঘুইরা ফিরা আমার কয়েকবার বিচ্ছিন্ন কয়েকটা জায়গায় দেখা হইছে।জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে যেইবার দেখা হইলো,আমি জানতে পারলাম তার নাম যমুনা অথবা সে যমুনা।যমুনার সন্ধান পাওয়ার পর আমার তারে অচেনা লাগা শুরু হইলো।কেন জানি বারবার মনে হইতে থাকলো আমি তারে আগে আর কখনো দেখি নাই এবং সে-ও আমারে।
গল্পটার শুরু মূলত সেই দেখা হওয়ার পরপর থেইকাই।নারীরা নদী হয়।আমার যমুনারে নারী মনে না হইয়া সরাসরি নদী মনে হইলো।স্নিগ্ধ শীতল একটা নদী না,ভয়াবহ স্রোতস্বিনী।যে নদী তার করাল গ্রাসে গ্রামকে গ্রাম উজার কইরা দেয় একরাতের অন্ধকারে।ভূমিহীন বানায় দেয় শত পরিবাররে।বাস্তুভিটা হারানো মানুষের মতো আমার যমুনা দেখার সাধ জাগে।পরের মাসেই আমি ধার কর্জ কইরা যমুনা দেখতে যাই,যে যমুনা টাঙ্গাইল আর সিরাজগঞ্জকে একটা বিশাল সেতুর মাধ্যমে আটকাইয়া রাখছে।ঘোর বর্ষায় যে আততায়ী আর শীত গ্রীষ্মে বুকে চর!আমি দুই'ই দেখলাম দুইবার।
যমুনার গল্প যখন যমুনার কাছে করতাম তখন সে মুগ্ধতার ভান কইরা আমার গাল গল্পে কান দিতো।আমি তারে শুনাইতাম একই সাথে পাশাপাশি বয়ে চলা দুইরঙা পানির কথা।বেসুরো কণ্ঠে গাইয়া শোনাইতাম-আমার যমুনার জল দেখতে কালো স্নান করিতে লাগে ভালো...যৌবনও মিশিয়া গেল জলেএএএএএ...
কোন একটা কাজে খুব ব্যস্ততার পর আমি সেইসব চেনা রাস্তায় যখন ঘুইরা ঘুইরা যমুনারে খুঁজতে লাগলাম মাস দুয়েক পর,তখন একদিন আচানক মনে হইলো আমি একটা নদী হারাইয়া ফালাইছি।এমন একটা নদী যে নদীতে খুব স্রোত ছিল,যে নদী ভাসাইয়া নিতে গিয়া আমারে অতল জলে ডুবায় দিয়া গেছে।
সেই প্রথমবারের মতো আমার মনে হইলো নদীটা আসলে যমুনা ছিল না,ছিল কাল যমুনা।
©somewhere in net ltd.