নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আতাহার হোসাইন

উড়োজাহাজ

ফেসবুক প্রোফাইল-https://www.facebook.com/ataharh

উড়োজাহাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নদী আর মানুষ

৩০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ২:০৪



মানুষের দেহকে যেমন সচল রাখতে প্রয়োজন রক্ত চলাচল, তেমনি পৃথিবীর জন্য প্রয়োজন নদী ও সাগর, অর্থাৎ পানির প্রবাহ চালু রাখা। মানুষের দেহের সাথে পৃথিবীর আরো একটি সাযুজ্য এই যে মানুষের দেহের তিন ভাগই যেমন পানি তেমনি পৃথিবীর তিন ভাগও পানি। রক্ত চলাচল ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না, পানি ছাড়া পৃথিবীও নয়। কিন্তু এ ব্যাপারে আমরা কতটা সচেতন? আমরা যে এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল নই তা নয়। আমরা জেনে শুনেই নদীতে বাঁধ দিই, নদীর পানিকে দূষিত করি, নদীকে হত্যা করি। আখেরে এর ফল ভোগ কিন্তু ভোগ করতে হচ্ছে আমাদের নিজেদেরকেই। আমরা পৃথিবীর শিরাগুলোকে রোধ করে ফেলছি।



শিরায় রক্ত চলাচল বন্ধ করলে যেমন মানুষের হৃৎপি- বন্ধ হয়ে যায়, স্ট্রোক করে, তেমনি পৃথিবীও বিরূপ আচরণ করছে। কোথাও অতিবৃষ্টি-বন্যা, কোথাও খরা, কোথাও তাপ বেশি আবার কোথাও তাপ কম। এসবই আসলে মানবসৃষ্ট পরিণতি। কিন্তু মানুষ এক প্রকার বাধ্য হয়ে গেছে পৃথিবীর প্রতি এমন আচরণ করতে। এর জন্য দায়ি আসলে মানব জাতির অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ইত্যাদি পরিস্থিতি। নগরায়ণের প্রয়োজনে মানুষকে প্রকৃতির অনাবিলতাকে নষ্ট করতে হচ্ছে। কিন্তু যদি মানবজাতির অবস্থা স্থিতিশীল থাকত, অস্থিরতা না থাকতো, রাজনৈতিক কোন্দল, সহিংসতা, যুদ্ধ ইত্যাদি না থাকত তাহলে মানুষ প্রকৃতির দিকে মনোযোগ দিতে পারত। উদাহরণস্বরূপ ধরুন ভৌগোলিক সীমারেখাকে। পৃথিবীর বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষ পৃথিবীর উপর কল্পিত দাগ টেনে, কাটাতারের বেড়া দিয়ে যার যার দেশকে ভাগ করে নিয়েছে।



সেই মোতাবেক নদীর মালিকানাও প্রতিষ্ঠা করেছে। সঠিকভাবে নদীর কাছ থেকে প্রয়োজনীয়ত পূরণে নদীর বুকে বাঁধ দিয়ে কৃষিতে ব্যবহার করছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। ভৌগোলিক সীমা রেখা সৃষ্টির এই ফল হয়েছে যে কোথাও ক্ষুদ্র কোন ভূ-খ-ে অধিক মানুষ আটকা পড়েছে, আবার কোথাও বিশাল একটি দেশে অতি সামান্য মানুষ বসবাস করছে। ছোট দেশের ঐ অধিক পরিমাণে মানুষগুলো সেখানে অতি কষ্টে জীবন-যাপন করছে, অপরদিকে বিশাল দেশে অল্প সংখ্যক মানুষ সে দেশের বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ রাজার হালে ভোগ করছে। এছাড়াও সীমান্ত নিয়ে যুদ্ধ, অভ্যন্তরীণভাবে রাজনৈতিক হানাহানি ও কোন্দল নিয়ে ব্যস্ত থাকায় মানুষ প্রকৃতির দিকে নজর দেওয়ার সময় পায় না।





যুদ্ধের প্রয়োজনে তারা ঠিকই অর্থ খরচের যোগান দিতে পারে, বিলাসিতায় ব্যয় করে হাজার কোটি ডলার, কিন্তু প্রকৃতির ক্ষতিপূরণে তেমন কোন বড় উদ্যোগ নেই। বড় বড় শিল্পোন্নত দেশগুলোই প্রকৃতির উপর খারাপ প্রভাব ফেলছে বেশি। ফলশ্রুতিতে বৈশ্বিক উঞ্চতা বৃদ্ধি, প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পরিণতি ভোগ করছে অনুন্নত দেশগুলোই বেশি। আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। এক সময়ের ¯্রােতস্বিনী নদী, ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা দূষণ আজ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এর উন্নয়নে গৃহীত ‘বাঁচাও বুড়িগঙ্গা’ প্রকল্পের দুই বছর অতিবাহিত হওয়ার পর কাজ সম্পন্ন হয়ে মাত্র পাঁচ শতাংশ। ৯৪৪ কোটি টাকার এই প্রজেক্টে এ পর্যন্ত অর্থ ছাড় হয়েছে মাত্র ১০০ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এটা যে কবে শেষ হবে তার কোন সঠিক হিসেব নেই। অন্যান্য নদীর ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। বিশ্বের উন্নত, অনুন্নত দেশগুলোর এই অবহেলার দরুণ প্রকৃতি তার রুদ্ররূপ ধারণ করতে বাধ্য হচ্ছে। মানব জাতির বেঁচে থাকার স্বার্থে, ভবিষ্যত প্রজন্মকে একটি নিরাপদ ও সুন্দর বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য বিভেদ-ব্যবধান, যুদ্ধ ইত্যাদি বাঁধাগুলোকে পেছনে ফেলে এখনি প্রকৃতির উপর মানুষের মনোযোগ দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.