নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভুল জীবনব্যবস্থার চর্চার ফলই হোক অথবা আমাদের দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ব্যর্থতাই হোক অথবা তাদের অনুসারীদের নৃশংস আচরণই হোক-সবকিছু মিলিয়ে আজ এদেশের সাধারণ মানুষ যেমন নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন তার বর্ণনা পরিপূর্ণভাবে তুলে ধরার ভাষা আামার জানা নেই। কেউ তা পারবেন কিনা তাও আমার জানা নেই। একে অরাজকতা বলি, অমানবিকতা বলি, পাশবিক বলি, দানবিক বলি এ রকম কোন বিশেষণই এসবের বেলায় খাটে না। বাস্তব অবস্থা সকল বিশেষণকে ছাড়িয়ে গেছে। শীতের কাপড় কিনতে আসা রবিনদের পেট্রোল বোমার দাহ্যতা সহ্য করতে না পেরে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করা, ছোট শিশু মনিরদের বাবার সাথে ঢাকা শহর দেখতে এসে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা এবং পিতাকে নির্বাক দৃষ্টি উপহার দেওয়া, অন্তঃসত্ত্বা নারীর ঝলসে যাওয়ার মর্মন্তুদ যন্ত্রণা কিংবা আরও নাম না জানা বহু মানুষের কষ্টের ধারণ কোন করার কোন ধারকই ধারণ ধারণ করতে পারে না। মানুষের আত্মার এই ক্রন্দন নিশ্চয়ই স্রষ্টার আরশ স্পর্শ করছে।
অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। মানুষ স্রষ্টার নিজ হাতে গড়া অতি প্রিয় এক সৃষ্টি। স্বয়ং স্রষ্টার নিজ হাতে গড়া এই সৃষ্টিটির ভেতরে তাঁরই ফুকে দেওয়া রুহ রয়েছে। একে তিনি শিখিয়েছেন জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং ভাল-মন্দের বিচার করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা। অথচ তাঁর একান্ত অনুগত মালায়েকদেরকেও তিনি তা দেন নি, মানুষকে করেছেন আশরাফুল মাখলুকাত অর্থাৎ ফেরেশতা বা মালায়েকদের চেয়েও বেশি সম্মান দান করেছেন মানুষকে। মালায়েকদেরকে দিয়ে সাজদা করিয়েছেন মানুষকে। কিন্তু সেই মানুষের আজ কী অবস্থা?
আমি এ দেশের অধিবাসী। দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ আমার হয় নি। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতির দরুণ এবং সংবাদ মাধ্যমের সাথে সখ্যতা থাকায় সারা পৃথিবীর খোঁজ খবরই এখন সহজলভ্য। সব খবর পাওয়া গেলেও সেব প্রত্যক্ষ চোখে দেখা হয় না। তাই সেভাবে তাও উপলব্ধিও করা যায় না। কিন্তু বর্তমানে আমার জন্মভূমি এই বাংলাদেশেই যে হারে মানুষ নৃশংসতার শিকার হচ্ছে তা নিজ চোখেই দেখছি। বিগত কয়েক বছর যাবত বিশেষ করে সা¤প্রতিক এসব কর্মকাণ্ড আমাকে নির্বাক করে দিয়েছে। এটা যে শুধু আমার ক্ষেত্রেই নয়, অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই তাই হয়েছে। টেলিভিশনের পর্দা আর হাসপাতালের করিডোরগুলোতে আহত আর ঝলসে যাওয়া মানুষের বীভৎস মানুষের আর্তনাদ, আহাজারি, মৃত্যু এমনি মর্মান্তিক যে এসব দৃশ্য সহ্য করা কঠিন হৃদয়ের মানুষের জন্যও কষ্টকর। কিন্তু এর জন্য নৃশংসতা, ক্রোধ একটুও কি কমেছে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের? না, বরং পাল্লা দিয়ে তা বেড়েই চলেছে। দিন দিন বেগবান হচ্ছে তাণ্ডবলীলা, দিন দিন বাড়ছে একে অপরের প্রতি ঘৃণার মাত্রা। কে করছে এসব? ভীনগ্রহ থেকে আগত কোন প্রাণী? না, তা নয়। বরং আমরাই আমাদের দেশের এই পরিস্থিতির স্রষ্টা। তাই পুড়ে মরে যাওয়া, আঘাতের পর আঘাতে পৃথিবীর প্রতি তীব্র ঘৃণা নিয়ে যারা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন এবং আগামীতে যারা বিদায় নিতে চলেছেন তাদের প্রতি আমি বলবো- অন্যের প্রতি দোষারোপ করে লাভ কী? আমরাই কি আমাদের আজকের পরিস্থিতি টেনে আনি নি?
আমরাইতো নেতা-নেত্রীদেরকে আমাদের ভোট দিয়ে তাদেরকে এই ‘গণতান্ত্রিক’ অধিকার অর্পণ করেছি। এমনকি তাদের কোন প্রতিশ্র“তি ভঙ্গেই আমরা নিরাশ হই নি। তারা বলে আমাদের ভোট নাকি তাদের কাছে পবিত্র আমানত। কিন্তু এই পবিত্র আমানত গ্রহণ করেও সেটাকে তারা তার উপর্যুপুরি খেয়ানত করে যাচ্ছে, যুগ যুগ ধরে আজান দিয়ে দুর্নীতি করে গেছেন। আমাদের মৃদু প্রতিবাদের কোন পাত্তাই তারা দেন নি। অন্যদিকে আমাদের মূর্খতার সুযোগে ধর্মব্যবসায়ী একশ্রেণীর আলেম-মোল্লা অর্থাৎ ধর্মীয় পুরোহিত শ্রেণী তৈরি হয়েছে। আমাদের ইহকাল পরকাল তাদের হাতে বন্ধক দিয়ে রেখেছি। আমরা স্রষ্টার দেওয়া নিখুঁত ও ত্র“টিহীন জীবনব্যবস্থাটি বোঝারও চেষ্টা করিনি। তাই তাদের হাতে এর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে। তাদের অনৈক্য ও মতভেদের কারণে তারা নিজেরা অনৈক্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে পতিত হয়েছে। আর এজন্য সাধারণ মানুষের কাছে তারা যেতেও পারেনি। তাদের মতভিন্নতার কারণে নানা জন নানা মত দিয়ে এই দীনটি জটিল ও দুর্বোধ্য করে ফেলেছেন। এখন এই জীবনব্যবস্থাটি কার্যকরী করে দেখার সাহসও কেউ পান না। বরং এক সময়ের ধার্মিক পিতার সন্তানেরা আজ দীনের এই করুণ দশা দেখে ঘৃণায়, অবজ্ঞায় নাস্তিকতাকে বেছে নিয়েছে। তারা সুযোগ পেলেই ধর্মকে নিয়ে কটাক্ষ করে, ক্ষেত্র বিশেষে আল্লাহ রসুলকে গালাগালি করে। দীনকে অচল, পশ্চাদ্মুখী ইত্যাদি তো সামান্য ব্যাপার। আমরা আমাদের নেতা-নেত্রীদেরকে বাধ্য করি নি আল্লাহর দেওয়া শাসনব্যবস্থা সার্বিকভাবে কায়েম করার জন্য। আমাদের পূর্বপুরুষদের ব্যর্থতার কারণে বিদেশী প্রভুরা সামরিকভাবে পরাজিত করে আমাদের উপর দীর্ঘ দুই শতাধিক বছর পর্যন্ত ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করে রেখেছিল। তারপর তারা আমাদের উপর গোলামী চাপিয়ে দেওয়ার মত একটি শাসনব্যবস্থা অর্থাৎ গণতন্ত্র চাপিয়ে দিয়ে যায়। এই শাসনব্যবস্থার ফলে আমরা বাহ্যিকভাবে স্বাধীনতা দাবি করলেও বাস্তবে সকল দিক দিয়ে তাদের গোলামে পরিণত হয়েছে। ঔপনিবেশিক শাসনামলে তারা এদেশে কুঠি তৈরি তাদের প্রতিনিধি বসিয়ে শাসন করতো আর এখন সাত সমুদ্র তের নদীর ওপার থেকেই শাসন করতে পারছে। কথিত আলেম-মোল্লার যেমন বহুভাগে বিভক্ত হয়ে গেছেন তেমনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে এদেশের হাজার হাজার দল ও মতের আবির্ভাব ঘটেছে। এমন এক ব্যবস্থা কায়েম করে রেখেছে যে এখানে একদল শাসন করার জন্য এবং আরেক দল সর্বদা তাদের এ কাজের বিরোধিতার করার জন্য বৈধতা পেয়ে বসেছে। বিরোধিতা করার বৈধ পথগুলো হচ্ছে হরতাল, বিক্ষোভ, রাস্তা-ঘাট অবরোধ করে মানুষের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধাদানসহ আজ আপনারা যে কারণে পুড়ে-ঝলসে, অঙ্গ হারিয়ে, রক্তাক্ত হয়ে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন ইত্যকার সবকিছু। অর্থাৎ দাবী আদায়ের নামে এসব কিছুর বৈধতা দান করেছে।
একজন গীতা সেনকে দেখেছি যিনি হাসপাতালে সান্ত্বনা দিতে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীর সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে নিজেকে সামাল দিতে পারেন নি। তিনি সকল সভ্যতা-ভদ্রতা কিংবা প্রটোকল ভুলে দেশের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষকে রীতিমত তুলোধুনা করে ছেড়েছেন। তিনি তার মুখের উপর বলে দিয়েছেন, “আমরা অসুস্থ সরকার চাই না। আমরা সুস্থ সরকার চাই।” ট্রিটমেন্টের সকল ব্যয় নির্বাহ করার প্রতিশ্র“তিতেও তিনি কোন সান্ত্বনা পান নি। আমরা সাধারণ মানুষ আর কতদিন রাজনীতির আগুনে অঙ্গার হবো আর ট্রিটমেন্টের খরচ লাভ করে ধন্য বোধ করবো? প্রেমে ব্যর্থ যুবক সহিংস হয়ে কাক্সিক্ষতাকে অ্যাসিডে ঝলসে দেয়, আর দাবি আদায়ে ব্যর্থ রাজনীতিক কর্মীরা জ্বলন্ত পেট্রোলে ঝলেছে তাদেরই ভোটারদের শরীর। ঘটনা একই, অথচ অ্যাসিড নিক্ষেপকারীকে আমরা ঘৃণা করি আর রাজনীতিবিদদেরকে লাইন ধরে ভোট দিতে যাই। ধিক আমাদের গণতন্ত্রপ্রীতি!
©somewhere in net ltd.