নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইংরেজিতে একটি কথা আছে Justice delayed is justice denied. অর্থাৎ বিচারে দীর্ঘসূত্রীতা মানে বিচার না পাওয়ারই নামান্তর। আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থার দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই এমনও মামলা এখন চলছে যা স্বাধীনতার আগে শুরু হয়েছিলো। মামলার বাদী গত হয়ে গেছেন, কিন্তু নতুন বাদী যুক্ত হয়ে এখন পর্যন্ত সে মামলা চলমান। এমনি একটি মামলার বিবরণ উঠে এল দৈনিক যুগান্তরের ১৯ জানুয়ারিতে ছাপানো সংখ্যায়। জমি-জমা সংক্রান্ত এ মামলাটির বয়স এখন ৬২ বছর। আর ২০/৩০বছর চলা মামলার সংখ্যাতো ভুরি ভুরি। শুধু জমি-জমা সংক্রান্ত মামলাই নয়, এমনকি ফৌজদারি মামলার অবস্থাও অনুরূপ। কথা হচ্ছে বিচারে এই দীর্ঘসূত্রীতা একটি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য কতটা সহায়ক? এর মাধ্যমে কি মূলত অপরাধ বৃদ্ধিকেই উৎসাহিত করা হয় না?
বিচারে দীর্ঘসূত্রীতার কারণ হিসেবে দেখা যায় মূলত বিচারক সংখ্যা, অবকাঠামোগত অপ্রতুলতাকেই দায়ী করা হয়। কিন্তু এছাড়াও নিজেদের গাফেলতি, আন্তরিকতার কি অভাব নেই? অবশ্যই রয়েছে। এর সাথে রয়েছে পেশাদারিত্বেরও যথেষ্ট অভাব। অথচ বিচার কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট লোকজন যদি যথাযথ উদ্যোগী হতেন তাহলে সাধারণ মানুষের এই ভোগান্তি নিশ্চয় আরো কম হত। বিচার কাজে দীর্ঘসূত্রীতার পেছনে অবশ্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও রয়েছে। একে সিস্টেমগত ত্রুটিও বলা যায়। সুশাসনের জন্য এই ত্র“টিগুলো দ্রুত সারিয়ে তোলা অতীব জরুরি।
প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয় যে, গত একযুগে প্রতিবছর ২ লাখ মামলা করে মামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর জেলা ও দায়রা জজ আদালতসহ সব ধরনের ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ১৫ লাখ ৫২ হাজার ৯৮৯টি এবং সব ধরনের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৯ হাজার ৪৯১ টি। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩ লাখ ১৬ হাজার ২১৮টি। সব মিলিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশের বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ২৭ লাখ ৯৩ হাজার ১৯২টি। ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সংখ্যা ২৮ লাখ ছাড়িয়েছে বলে আশংকা সংশ্লিষ্টদের। কথা হচ্ছে চলমান গতিতে যদি মামলা চলতে থাকে তাহলে এসব মামলা কি আদৌ নিষ্পত্তি হবে, আর হলেই বা কবে হতে পারে তা নিয়ে রীতিমত গবেষণা করে বের করতে হবে।
এতো গেলো শুধুমাত্র দীর্ঘসূত্রীতার একটি তালিকা। কিন্তু এর পেছনে যে ভোগান্তি, সময় ও অর্থের অপচয় হয়েছে কিংবা হচ্ছে তার হিসেব করে কি কোন কূল কিনারা পাওয়া যাবে? কত পরিবার মামলার পেছনে ঘর-বাড়ি, জমি-জমা বিক্রি করে নিঃম্ব হয়েছে, কত সম্ভ্রান্ত পরিবার নষ্ট হয়ে পথে নেমেছে তার কোন লেখা-জোখা নেই। অথচ সঠিক বিচারের আশায়ই মানুষ আদালতের দ্বারস্ত হয়ে থাকে। কিন্তু প্রচলিত বিচারব্যবস্থা আমাদেরকে সেই কাক্সিক্ষত সমস্যার যথাযথ সমাধান দিতে পারছে না। যদি বিচারব্যবস্থা আমাদেরকে উপযুক্ত সমাধান না দিতে পারে তবে পার্থিব জগতে আর কোথায় যাওয়ার রাস্তা থাকে?
এ ব্যাপারে দায় কে নেবে? আসলে কাউকে ধরার মত পাওয়া যায় না। অজুহাতেরও অভাব নেই। কিন্তু এতে করে মানুষ শান্তিময় পৃথিবী থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে একটি কথা বলা যায় যেভাবে সবকিছু চলছে তা যদি সেভাবেই চলতে থাকে তাহলে কেয়ামত পর্যন্ত এই মামলা জট দূর হবে না। বরং যে হারে বাড়ছে সে হারে বাড়তেই থাকবে। কেউ হয়তো দায়ভার গ্রহণ করবে না। কিন্তু মানুষের সমস্যাও দূর হবে না। তাই বিচার প্রক্রিয়ার এই সিস্টেম থেকে বেরিয়ে আসার কোন চিন্তা করতে হবে। আমলাতান্ত্রিকতা দূর করতে হবে। যখনকার বিচার তখনই করতে হবে। কারণ সেই একই কথা- দেরীতে বিচার পাওয়া বিচার না পাওয়ারই নামান্তর।
©somewhere in net ltd.