নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্রষ্টার অতি আদরের সৃষ্টি মানুষ। একে তিনি সৃষ্টি করলেন নিজ হাতে। শুধু নিজ হাতে সৃষ্টি করেই তিনি ক্ষান্ত হলেন না। তিনি নিজের রূহ থেকে প্রাণ ফুৎকার করে দিলেন এর ভেতর। অথচ অন্য সমস্ত সৃষ্টির ক্ষেত্রে তা হয়নি। সমস্ত সৃষ্টির ক্ষেত্রে তিনি আদেশ করেছেন ‘কুন’ অর্থাৎ ‘হয়ে যাও’ আর হয়ে গেছে। কিন্তু ব্যতিক্রম হয়েছে একমাত্র মানুষ নামক এই সৃষ্টিটির ক্ষেত্রে। এটা তাঁর ভালোবাসারই একটি বড় নিদর্শন। অথচ এই মানুষ স্রষ্টার সৃষ্ট মহাজগতের তুলনায় অতিশয় ক্ষুদ্র। পুরো মহাবিশ্বের তুলনায় পৃথিবী নামক গ্রহটাই যেখানে ধূলি কণার চেয়ে ছোট, সেখানে একজন মানুষের অবস্থান কোথায় তা চিন্তাও করা যায় না। অথচ সেই ক্ষুদ্র মানুষটিই ধারণ করে আছে স্রষ্টার দেওয়া রূহ, সর্বশক্তিমানের দেওয়া আমানত।
আল্লাহ পাহাড়কে এই আমানত গ্রহণ করতে বলেছিলেন, কিন্তু পাহাড় অপারগতা প্রকাশ করেছে। কিন্তু মানুষ তা গ্রহণ করেছে, যদিও আল্লাহর ভাষায় তারা মানুষ সেই আমানত নিয়ে নিজেদেরকে অযোগ্যই হিসেবে প্রমাণ করেছে। কথা সেটা নয়, মানুষের এই ব্যর্থতা থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ এই মানুষের দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখছেন। নিজে নিজের পথ চলায় সীমাবদ্ধতা থাকায় আল্লাহ তাদেরকে যুগে যুগে পথপ্রদর্শক পাঠিয়ে এসেছেন। আল্লাহর বেশ কয়েকটি গুণ আছে যা অন্য কতক গুণকে ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে দয়া-মায়া, ক্ষমা ইত্যাদি, ছাড় দেওয়া উল্লেখযোগ্য। মানুষের উপর এই বিশেষ গুণগুলো আল্লাহ সর্বদাই বর্ষিত করতে থাকেন। এমনকি তার অনুগত একজন মো'মেন বান্দার প্রতিও তিনি সদা-সর্বদা নজর রাখেন। তাঁদের সম্মানও তাঁর কাছে অপরিসীম। রসুলাল্লাহ বলেছেন, একজন মো'মেনের সম্মান কাবা ঘরের প্রতিটি ইট খুলে বিক্রি করলেও সমান হবে না।
কিন্তু আজকের পৃথিবীর দিকে তাকালে আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি ক্রমাগত সেই সম্মানীত প্রাণীটি ধীরে ধীরে নিজেকে অবমাননার চূড়ান্ত পর্যায়ে নামিয়ে ফেলছে। সামান্য বাক-বিতণ্ডা, তুচ্ছ ব্যাপার, এমনকি এক দু’টাকার জন্য মানুষ মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলছে। এটা শুধু দু’একজনের মধ্যে সীমিত থাকছে না। গ্রামকে গ্রাম জুড়ে তা বি¯তৃত হচ্ছে।
প্রথমে কথা কাটাকাটি, পরে লোক ডাকাডাকি, এরপরে অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে হামলা, অতপর দাঙ্গা- হাঙ্গামা, অতঃপর দাঙ্গা পুলিশের আগমন, হাসপাতাল থেকে শেষ পর্যন্ত থানা কোর্ট-কাচারী পর্যন্ত গড়াচ্ছে। অথচ ঘটনাটুকু খুবই সামান্য। প্রশ্ন হচ্ছে কেন মানুষ এমন হয়ে যাচ্ছে? এর পেছনে একক কোন কারণ নেই। মূলত ধীরে ধীরে সভ্যতার ক্রমবর্ধমান চাপে পড়ে মানুষ মনুষত্ব হারিয়ে ফেলছে। কারণ বর্তমান সভ্যতাটি গড়েই উঠেছে আত্মাহীন যান্ত্রিকতা কেন্দ্র করে। এখানে আত্মা কিংবা আধ্যাত্মিকতা বলে কোন কিছুকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। বস্তুবাদ হচ্ছে এ সভ্যতার একমাত্র দর্শন। এখানকার বিজ্ঞান একচোখা। কোন কিছু হচ্ছে চোখ দিয়ে দেখলেই তবে তাকে বিশ্বাস করে, কিন্তু কোন কিছু কেন হয়, অন্তরালের সে বিষয়টিকে সে দেখে না সুতরাং বিশ্বাসও করে না। ঐ মহাসত্যকে অস্বীকার করাটাই এই সভ্যতার চরিত্র। কিন্তু এভাবে শুধু একটি দিক নিয়ে মানুষ চলতে পারে না। তার দেহ যেমন সত্য তেমনি মহাসত্য হচ্ছে তার প্রাণ, আত্মা বা আধ্যাত্মিকতা। সেই আত্মা মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে সে মানুষটি মারা যায়। আজকের সভ্যতার অধীনে বসবাস করা এই মানুষগুলো ক্রমশ আত্মাকে অস্বীকার করে ধীরে ধীরে অন্য সব প্রাণ সর্বস্ব জীবে পরিণত হচ্ছে। তাই স্রষ্টার প্রতিনিধি হিসেবে তাদের মধ্যে যে সাধারণ গুণগুলো থাকার কথা, অর্থাৎ দয়া-মায়া, ক্ষমা, ভালোবাসা ইত্যাদি হারিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু এভাবে চললে মানুষ তাকে পৃথিবীতে টিকিয়ে রাখতে পারবে না। অনৈক্য, একে অন্যের প্রতি ক্ষোভ, প্রতিশোধপরায়নতা প্রভৃতি মানুষকে ক্রমশ নিজেদের জন্যই হুমকিস্বরূপ করে তুলেছে। পৃথিবীর বুকে মজুদ করা মানবতা বিধ্বংসী অস্ত্র-শস্ত্র, পারমাণবিক বোমার পরিমাণ হিসেব করলে সহজেই বোঝা যায় যে, মানুষের হাতে এ পৃথিবী নিরাপদ নয়। মানুষ এখন সবাই মিলে সম্মিলিত আত্মহত্যার দোরগোড়ায় এসে হাজির হয়েছে। এ থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে নিজেদের আদি পরিচয়ে ফিরে যাওয়া। শুধু বস্তুবাদ নয়, স্রষ্টার সাথে নিজেদের সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। সেই সাথে আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া গুণগুলোকে জাগ্রত করে তুলতে হবে। এর মাধ্যমেই মানুষের প্রকৃত পরিচয় পুনরায় ফিরে আসতে পারে। অন্যথায় যান্ত্রিক প্রগতি হয়তো হবে, তবে মানবিক উন্নতি হবে না। মানুষ ক্রমশ একটা যান্ত্রিক প্রাণীতে পরিণত হবে। একের প্রাণের কোন মূল্য অন্যের কাছে থাকবে না। সস্তা হয়ে যাবে এই অনন্য সৃষ্টিটি। শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে তা কি আমাদের মর্যাদার সাথে মানায়?
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৩:৫৩
জাহাঙ্গীর জান বলেছেন: the world coming too an end. it's obvious.