নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবী কাব্যময় । জীবন ও প্রকৃতির সর্বত্রই কবিতা । যে কবিতা বোঝে না, কবিতা শুনতে বা পড়তে ভালবাসে না- কবিতা আছে তার জীবনেও । তাই কবিতাই আমার সাধনা, অনুপ্রেরণা আর ভালো লাগা ।
''আরে কবুতরের বাচ্চা যেমন
বিঁড়ি হইল তেমন,
গ্যাসটিকেরই ওষুধ বিঁড়ি
খাইয়া দ্যাখ ক্যামন !''
ধূমপান অতি জনপ্রিয় সুধা । এ সুধা বুঝি সুধাকর সুধাময়ীর ভাণ্ডার হতে চুরি করে ঢেলে দিয়েছে বিঁড়ি সিগারেটের মোড়কের মধ্যে ! খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ অব্দে প্রাচীন মিশরীয়রা ’কানাবিস’ নামক আমাদের দেশের হুক্কার ন্যায় ধূমপানের প্রচলন করেছিল । গুড়গুড় শব্দ আর মুখ ভর্তি ধোঁয়ায় যেন অমৃত সুধা ! আমার জীবনে প্রথম দেখা ধূমপায়ী আমার দাদা। তার মুখ দিয়ে ধোঁয়া বেরুতে দেখে মনে রাখার মতো প্রথম দর্শনে ভড়কে গিয়েছিলাম ! বড় হয়ে জেনেছি ইউরোপিয়ানদের মধ্যে প্রথম ধূমপানকারী স্পেনের নাগরিক রদ্রিগো ডি জেরেয ১৪৪২ সালের পরে কিউবা থেকে স্পেনে ফিরে এসে জনসম্মুখে ধূমপান করে মানুষকে চমকে দিতেন। মানুষের নাকমুখ দিয়ে ধোঁয়া বেরুতে দেখে সাধারণ মানুষ ভয় পেত । অনেকে ভাবতো যে রদ্রিগো ডি জেরেযর উপর শয়তান ভর করেছে । তাই রদ্রিগোকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল ।
মোগল চিত্রকলা অনুয়াযী ভারতীয় উপমহাদেশে ধূমপানের প্রচলন ঘটান মোগলরা । উপমহাদেশে নবাবি ঘরনার আভিজ্যাতের প্রতীক হয়ে উটেছিল সুগন্ধি তামাক সেবন । সেই থকে আমরাও নবাবি ধরেছিলাম । অবস্থার উন্নতির সাথে সাথে কিসমত বা আকিজ বিঁড়ি ছেড়ে ধরেছি মেঘনা, নাসির গোল্ড, কেটু, ডার্বি, নেভি, স্টার নামের নানা ব্র্যান্ডের সিগারেট ! হরহামেশা ভাব দেখাতেই ফুকাচ্ছি গোল্ডলিফ বা বেনসন সিগারেট । হরেক দামের সিগারেটের হরেক রকম নাম !
ধূমপান ক্ষতিকর এই বিষয়টি ধূমপায়ী থেকে শুরু করে অধূমপায়ী সকলেরই জানা । কিন্তু যারা ধূমপান করেন তাদের অবস্থা যেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের এই গানের মতোই,
'' আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান !"
অথবা ব্রিটিশ দার্শনিক বারট্রান্ড রাসেলের মতো । যিনি কিনা বলতেন,
'' সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেওয়া হোল পৃথিবীর সবচেয়ে সহজতম কাজ ! কারণ ইতিপূর্বে আমি বেশ কয়েকবার সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলাম ।''
ইংরেজ কবি ও নাট্যকার উইলিয়াম শেকসপিয়র তো ব্যর্থ প্রেমিকদের মাথাটাই নষ্ট করে দিয়েছেন । যিনি নাকি বলেছেন,
''Last one of the cigarette is the enjoy of sixteen age of girl !''
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান এ.পি.জে আবদুল কালাম অবশ্য এর মধ্যে অসারতা প্রত্যক্ষ করে বলেছিলেন;
''একটি ব্যাপার লক্ষ্য করলাম, সবচেয়ে চটজলদি বিক্রি হয় সিগারেট এবং বিড়ি। আচ্ছা গরীব লোকেরা এত সস্তায় নিজের উপার্জন বাতাসে উড়ায় কেন?''
একবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক স্যার কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, স্যার, এই যে ধূমপানের কারনে ক্যান্সার, টিবি, যক্ষ্মা ইত্যাদি হয়। কিন্তু ক্ষেতে খামারে যারা কাজ করে তারা তো বেশির ভাগই প্রতি মুহূর্তে বিঁড়ি খায়, তাদের তো যক্ষ্মা হয়না ! স্যার বললেন, ''দু ঘণ্টা রোদে থাকলে যক্ষ্মার জীবাণু মরে যায় ! এরা যেহেতু রোদে পুড়েই কাজ করে, তাই এদের যক্ষ্মা কম হয় ।''
হায়রে সিগারেট বিঁড়ি এই তোর ছিরি ! কদিন আগে এক কার্টুন চিত্রে দেখলাম ডাক্তার রোগীকে বলছেন, সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিন, কারণ একটা সিগারেট এক দিনের আয়ু কমিয়ে দেয় । রোগী জিজ্ঞেস করলো, ডাক্তার সাব আপনের হিসেব ঠিক আছে তো ? ডাক্তার জবাব দিলেন, অবশ্যই ঠিক আছে ! রোগী বলল, আমি সারা দিনে যে পরিমান সিগারেট খাই, আপনের হিসাব মতন তাইলে তো আমি আড়াইশ বছর আগেই মইরা গেছি গা !
আরেকটা কৌতুক মনে পড়ল । মা ছেলে কে বলছে, বাবু তুমি সিগারেট খাও ? ছেলে বলল, হ্যাঁ মা খাই !
-কেন খাও ?
- দেশের উপকারের জন্য !
- বিঁড়ি খেয়ে আবার দেশের উপকার ! কিভাবে ?
- বিঁড়ি সিগারেট দেশের শত্রু, ঠিক কিনা ?
- হ্যাঁ, ঠিক ।
- বিঁড়ি সিগারেট পরিবেশের শত্রু, ঠিক কিনা ?
- অবশ্যই ঠিক ।
- বিঁড়ি সিগারেট হোল যুব সমাজের শত্রু, ঠিক কিনা বল ?
- একশো ভাগ ঠিক ।
- তাইলে বোঝ, এই জন্যই বিঁড়ি সিগারেটরে জ্বালাইয়া পোড়াইয়া নিঃশেষ কইরা দিতাছি !
লেও ঠ্যালা ! আরেকটা ছোট্ট চুটকি বলি । স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কথা হচ্ছে,
স্ত্রী- কই শুনছো ? দেখ, পত্রিকায় সিগারেটের কুফল নিয়ে কত কথা লিখেছে ! তোমাকে এতো করে বলি, বাদ দাও, বাদ দাও ! তুমি কিন্তু শোনই না !
স্বামী- ঠিক আছে তাহলে, কাল থেকেই বাদ !
খুশিতে গদগদ হয়ে স্ত্রী বলল, আমি এত দিন ধরে বলি, বাদ দাও না, আজ পত্রিকায় লিখেছে বলে, বাদ !
স্বামী- আরে না, কাল থেকে ঐ পত্রিকা নেওয়া বাদ !
ধূমপান নাকি বিপদের সঙ্গী ! আমার এক চাচা রাত বিরাতে চলাচল করেন বলে পথে ঘাটে ভূতের উপদ্রপে পড়তে পারেন । তাই ভূত তাড়াতে তার সঙ্গী সিগারেটের আগুন!
এটি নাকি, অক্সিজেনের মতো ! যদি প্রয়োজনে হাতের কাছে সিগারেট না পাওয়া যায় তখন কি অবস্থা হবে ভেবে এক বন্ধুকে দেখেছি বিছানার তোশকের নিচে অক্সিজেন রূপী কাইট্যা বিঁড়ি বিছিয়ে রাখতে ।
মেস জীবনে দেখেছি ইহা মহা ঔষধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয় ! এক বন্ধুর কলম দানিতে একটা সিগারেট সব সময় পড়ে থাকতো, সকালের জন্য ! কেননা, ইহা ছাড়া তিনি প্রাত্যহিক ক্রিয়াদি সম্পন্ন করিতে পারিতেন না !
সেই মহা ঔষধ একদিন অনেক রাত্রি বেলা তার আরেক বন্ধু ধার চেয়ে ব্যর্থ হয়েছিল । পরে সে রেগেমেগে অত রাতে রেল লাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে একাই গিয়েছিল বিশ্বরোডে সিগারেট কিনতে । কিনে নিয়ে মনের সুখে সিগারেট টানতে টানতে যখন একই পথ দিয়ে ফিরছিল তখন তাকে পুলিশে ধরেছিল । পুলিশ তাকে পিকআপে তুলে সারা শহর ঘুরিয়ে তার পকেটের প্যাকেটের সবগুলো সিগারেট সাবাড় করার পর রাত্রি শেষের বেলায় গন্তব্যে নামিয়ে দিয়ে গিয়েছিল !
ধূমপায়ীদের সবচেয়ে বড় সমস্যায় ফেলে যে ব্যাপারটি, তাহলো অনেকের সামনে তারা ধূমপান করতে পারেন না । সিনিয়র, জুনিয়র বা বাপ দাদা, চাচা খালু, শালা দুলাভাই ইত্যাদি ব্যাপারগুলো এখানে অনেক সময়ই বাধা হয়ে দাঁড়ায় । দেখা যায় হাতের সিগারেট শেষ হয়ে হাতে আগুন লাগার উপক্রম হলেও যাদেরকে সম্মান দেখিয়ে লুকানো হয়েছে, তারা বেকুবের মতো সামনেই থাকেন বা কথা বলতেই থাকেন । ভাবা যায় ? সাধের এক সিগারেটের দাম ১১ টাকা ! এমন বিপদে পড়লে টাকার ও ক্ষতি আবার ফিলিংসও নষ্ট । তাই আমার এক চাচা অনেক গবেষণা করে উদ্ভাবন করেছেন ইহার মহা সমাধান । শুনুন তবে তার মুখেই,
'' আমি লক্ষ্য করলাম মানুষকে সম্মান দেখাতে গিয়ে প্রতিদিন আমার অনেক টাকা ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে । কারণ, অনেককে দেখে সিগারেট ফেলে দিতে হয়, ভয়ে অন্যত্র পালাতে হয়ে । একদিন তো বড় ভাইকে দেখে ধোঁয়া আটকিয়ে কি যে অবস্থায় পড়েছিলাম, বলে বোঝানো যাবে না । ভাবলাম, এভাবে চলতে পারে না, চলতে দেওয়া যায় না । ঠিক করলাম, এখন থেকে হাতে যখনি সিগারেট থাকবে তখন সামনে থাকা কাউকে মানুষ ভাবা চলবে না ! এমনকি, বাপ দাদা চৌদ্দ গুষ্টির কাউকেই না ! ভাবতে হবে, আমি একাই মানুষ ! সামনে সব গরু ,ছাগল, ভেরা মহিশের দল বা পাগল ! ভাবনা মতো কাজ শুরু করলাম । গবেষণা কাজ দিল । কেউ আর বাধা হয়ে সামনে রইল না, আমারও টাকা পয়সার ক্ষতি হোল না । আবার ফিলিংসও ঠিক থাকল ।''
ধূমপায়ীদের অনেকেরই গলার কাঁটা বউ! জনৈক বড় ভাই যখন প্রেম করত তখন ধূমপান করত না । একদিন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সুদর্শন এক যুবককে দেখিয়ে ভাইয়ের প্রেমিকা বলল, দেখেছো , ঐ ছেলেটার হাতে যদি একটা সিগারেট থাকতো তাহলে ওকে আরও স্মার্ট দেখাত ! বড় ভাই সেদিন সিগারেটের প্যাকেট হাতে মেসে ফিরে প্রথম টানে ট্যাল হয়েছিল ! তারপর থেকে পকেটে প্যাকেটে সব সময় সিগারেট রাখত সে । একদিন সে বিয়ে করলো তাকেই সে যাকে ভালবাসত । কিন্তু সেই বউ, এখন তার সিগারেট খাওয়াটা ভালবাসে না আর ! অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সিগারেট বাদ দিতে গিয়েও পারেননি বলে চুপে চুপে খান, খাওয়ার পরে চুইং গাম চিবান । একদিন বউয়ের কাছে তাও ফাঁস হয়ে গেল এস,এস,সি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের মতো । এর পর থেকে সিগারেট আর বউ দুটোই তার গলার কাঁটার মতো । না খেলেও বউ সন্দেহ করে, শার্ট প্যান্টের পকেট শুকে দেখে, অকারণে চকলেট চিবালেও বউ ভাবে -'কাম সেরেই আইলো'!
অর্থবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ ধূমপান পকেটের জন্য ক্ষতিকর ! অবশ্য যার বাপের আছে ঢের তার জন্য প্রযোজ্য নয়।
চৈতন্যবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ নিজের ভাল পাগলেও বোঝে, ধূমপায়ী বোঝে না !
আর যারা রবীন্দ্রনাথের গানের মতো বলতে ভালবাসেন, '' আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান !" তাদের জন্য বহুল জনপ্রিয় একটাই বাণী- '' বিঁড়ি খাবি খা, মইরা যাবি যা !''
পুনশ্চঃ
এ.পি.জে আবদুল কালামের একটি মহাউক্তি যে কারো জীবনই পাল্টে দিতে পারে, মেনেই দেখুন না । উক্তিটি হল; ''আপনি চাইলেই আপনার ভবিষ্যৎ পাল্টাতে পারেন না কিন্তু অভ্যাস অবশ্যই পরিবর্তন করতে পারেন। আর এই অভ্যাস পরিবর্তনই নির্ধারণ করবে আপনার ভবিষ্যৎ।''
(সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর)
রুদ্র আতিক, সিরাজগঞ্জ,
২৮শে চৈত্র, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ ।
ছবিঃ ইন্টারনেট
০৬ ই মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৩:১১
রুদ্র আতিক বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ।
২| ০৬ ই মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১২:২৩
বোকা পুরুষ বলেছেন: বাংলাদেশে সবকিছুতেই ভেজাল, একমাত্র সিগারেটে কোন ভেজাল নাই
০৬ ই মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৩:১৩
রুদ্র আতিক বলেছেন: হা, হা, হা... আমারও তাই মনে হয় ! ধন্যবাদ
৩| ০৬ ই মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১:৩৮
রাজীব নুর বলেছেন: দেখি চেষ্টা করে পারি কিনা।
০৬ ই মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৩:১৫
রুদ্র আতিক বলেছেন: হা, হা, হা..... বারট্রান্ড রাসেলের মতো হলে শত চেষ্টায়ও পারবেন না ! শুভ কামনা রইল ।
৪| ০৬ ই মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৩:০২
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: একজন মানুষের বর্তমানের উপর ভিত্তি করে তার ভবিষ্যৎ নির্মিত হয়।
০৬ ই মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৩:১৭
রুদ্র আতিক বলেছেন: হুম, খাঁটি কথা ! তাহলে কি আজ যারা ধূমপান করছে আগামীতেও তারা একই থাকবে !
৫| ০৬ ই মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৪:২৪
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: লেখক বলেছেন: হুম, খাঁটি কথা ! তাহলে কি আজ যারা ধূমপান করছে আগামীতেও তারা একই থাকবে !
ধরুন, একজন ব্যক্তি খুব মনোযোগ সহকারে পড়া-শোনা করে,তাহলে অবশ্যই সে ভালো রেজাল্ট করবে।
কিন্তু একজন ব্যক্তি যদি মনোযোগ দিয়ে না পড়ে,তাহলে সে খারাপ রেজাল্ট করবে।
০৬ ই মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৫:০৭
রুদ্র আতিক বলেছেন: হুম, ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই মার্চ, ২০১৯ সকাল ১০:৫২
নয়া পাঠক বলেছেন: হুম, ইতিহাস ঐতিহ্য, নীতিবাক্য অনেক কিছুই শেখা হলো।