নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অখ্যাত একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আইসিটি বিভাগে চাকরি । নেশা- আড্ডা, ঘুরে বেড়ানো, বই পড়া ও কবিতা লেখা ।

রুদ্র আতিক

পৃথিবী কাব্যময় । জীবন ও প্রকৃতির সর্বত্রই কবিতা । যে কবিতা বোঝে না, কবিতা শুনতে বা পড়তে ভালবাসে না- কবিতা আছে তার জীবনেও । তাই কবিতাই আমার সাধনা, অনুপ্রেরণা আর ভালো লাগা ।

রুদ্র আতিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

নজরানা

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৯:২৯


''জনগণ কর্তৃক যাহা না দিলে সরকারি কর্মচারী কর্মকর্তাদের কাজের প্রতি নজর ওঠে না তাহাকেই বলে নজরানা ! ইহাকেই কেউ বলে ঘুষ কেউ বলে উৎকোচ । ইহার আছে আরও অনেক বাহারি বিশেষণ যেমন- হাত খর্চা, পাওনা, উপরি, মাল্লু, মাল, সেলামি, অফিস খরচা, ফাইল খরচ, প্যাকেট,পকেট খর্চা, নাস্তা খরচ, টিকা, বখশিশ, তেল খরচ, মাসহারা, হপ্তা, এক্সট্রা ইত্যাদি । কেউ কেউ ইহাকে 'মিষ্টি' নামে অভিহিত করে রীতিমত হালাল খাদ্য বস্তুতে রূপান্তরিত করেছেন । আরও বলা যায়, উপহার বা উপঢৌকন শব্দ দুটি যেন উৎকোচেরই বা ঘুষেরই বৈধ রূপ । স্থান কাল পাত্র ভেদে ইহার যে আরও কত নাম আছে তাহা বলা মুশকিল ।
সরকার ও সরকারী লোকজন মানতেই চাইবেন না যে সরকারী প্রতিটা অফিস আদালতে চলে নজরানার মহোৎসব । কারণ বিষয়টা নিয়ে তাদের ভাববার সময় নেই, অপরাধ বোধ বা পাপ বোধও নেই । বিষয়টা তাদের কাছে যেন কেয়া কসমেটিকস লিঃ এর আলোচিত একশো ভাগ হালাল সাবানের মতো । পাবলিককে এ ব্যাপারে বেশি দোষ দিয়ে লাভ নেই কারণ তারা পরিস্থিতির শিকার । অবশ্য ক্ষেত্র বিশেষে একথাও বেমানান । আর একটা কথা বলে রাখা ভাল যে, শুধু সরকারী নয় অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও চলে লেনদেনের কারবার ।
যাই হোক পরিবেশ মাসুদের গল্প একদিন বলেছিলাম আজ আরেকটা ঘটনা বলি । নতুন মোটর সাইকেল কিনে পিপদে পড়ার মতো বিপদ যেন আর নাই । কারণ রেজিস্ট্রেশন করতে হবে যথাবিহিত উৎকোচ প্রদান পূর্বক । মেজারমেন্ট থেকে শুরু করে ফরম পূরণ ও ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া সহ সব একহাতে করে সমস্ত দলিলাদি জমা দিলাম স্থানীয় বিআরটিএ অফিসে । বহিরাগত একজন সহযোগী সহযোগে দীর্ঘ সময় পরে একজন মোটরযান পরিদর্শক গাড়ি পরিদর্শনে গেলেন । আমি নিজে বুঝেশুনে ভালভাবে সকল ফরম পূরণের পরেও ফাইল দেখে বললেন ভুল আছে, ভেতর থেকে ঠিক করে আনেন । আমি ভেবে ঠাহর করতে পারলাম না যে কোথায় ভুল, সাহস করে জিজ্ঞেসও করলাম । কথা বেশি বলি বলে ধমক দিয়ে ভেতর থেকেই ঠিক করে আনতে বললেন । একজন বহিরাগত সানন্দে এগিয়ে এসে বললেন ভাই আমাকে দেন, ঠিক করে দিচ্ছি, তিনশো লাগবে ! '' মনে ভাবিলাম, আমি মাস্টার্স পাশ করিয়াও দালালের জ্ঞান অর্জন করিতে পারিলাম না ।'' ফরম ফিলাপে কি এমন ভুল করেছি যা ওরা বুঝবে আমি বুঝব না ! একশো টাকায় দফারফা হল ! এটা চা সিগারেটের খরচ মাত্র, ঘুষ বা উৎকোচ নয় ! সব কাগজ ঠিক আছে এবার সই স্বাক্ষরের পালা । পিয়ন বলল, তিন হাজার লাগবে ! বললাম, ক্যানো ? সে জানাল, এটাই সিস্টেম ! সিস্টেম নিয়ে তর্কাতর্কি হল কিছুক্ষণ । পরে সাফ জানিয়ে দিলো, কথা বাড়াইয়েন না, ট্যাকা ছাড়া কাম হইব না । কালো, শুকনা, পাতলা মতন একজন এতক্ষণ সব নিরবে সহ্য করছিলেন । এবার উঠে আমার ফাইল হাতে নিয়ে বললেন দেখি কি সমস্যা আপনার ? বলতে বলতে পাশের নির্জন রুমে নিয়ে গেলেন । বললেন, দ্যাখেন এটা সিস্টেম । টাকা ছাড়া কাজ হয়না এখানে ! আপনি এক কাজ করেন, দুই হাজার দেন, এখনি করে দিচ্ছি । আমি সাফ জানিয়ে দিলাম আমি এক টাকাও ঘুষ দিতে পারব না । সে বলল, ঘুষ বলছেন ক্যানো ? এতো টাকা দিয়ে গাড়ি কিনেছেন আর আমাদের মিষ্টি খাওয়ার জন্য কিছু দিবেন না ? ঠিক আছে এক হাজারই দিয়েন ! যখন লোকটা কথা গুলো বলছিল তার কৃষ্ণ অধর যুক্ত মুখবিবর দিয়ে সিগারেটের মৌ মৌ গন্ধ বের হচ্ছিল । মনে হোল মিষ্টির অধিকাংশ টাকাই তিনি এই খাতে ব্যয় করেন ! কথায় যুক্তি আছে ভেবে, বললাম ঠিক আছে মিষ্টি খাবেন বলে পাঁচশো টাকা দিচ্ছি, এর বেশি পারব না । তিনি বললেন, হবে না ভাই । বলে লাঞ্চে চলে গেলেন । কি করা যায় ভেবে ভেবে পিয়নের কাছে গেলাম, বললাম আপনার বসের সাথে কথা হয়েছে, করে দিতে বলেছে, উনি লাঞ্চে গেছেন । পিয়ন জিজ্ঞেস করলো, টাকা ? আমি কচকচে পাঁচশো টাকার কোনা দেখালাম । প্রসন্ন হল সে, নজর তার নেচে উঠলো যেন । ফাইল হাতে নিয়ে গুছিয়ে স্টেপ্লিং করে যথাস্থানে রেখে বলল, বস আসলে আপনারটা আগে করে দেব । টাকা দেন ! পাঁচশো টাকা বের করে দিলাম । সে হাতে নিয়ে বিশ্বয় প্রকাশ করলো । বললাম, বসের সাথে কথা হয়েছে, এটাই মিটেছে । মহামান্য বস যতক্ষণে লাঞ্চ সেরে ফিরে এলেন ততোক্ষণে ক্ষুধায় আমার পেটের নাড়িভুরি হজম হওয়ার জোগাড় ! পিয়ন, ফাইল গুলো সামনে দিতেই জিজ্ঞেস করলেন, টাকা পয়সা দিয়েছে সব ? পিয়ন হ্যাঁ বললতেই স্বাক্ষর শুরু করলেন । ততোক্ষণে আমার কাছে পরিস্কার হোল খগেনের মতো দেখতে লোকটাই হোল মোটরযান পরিদর্শক ! কাজ শেষে বাইরে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম আর মনে মনে ভাবলাম, যাক বাবা অন্তত পাঁচশো টাকা সাশ্রয় হোল আর শেষমেশ চিটারের সাথে বাটপারিও করা গেল ! শালা !
এমন উদাহরণ ভুরিভুরি দেওয়া যাবে । দেশের সর্বত্রই জনগনের সেবক আর চাকরের অবস্থা এমনই শোচনীয় । এমনও কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে দিন শেষে পদমর্যাদা অনুযায়ী উৎকোচ এর টাকা ভাগ বাটোয়ারা করা হয় । কেঊ না নিতে চাইলেও তার নামে ঠিকই ভাগ হয় । নিতান্ত না নিলে পরে ঐ টাকা দিয়ে খাবার দাবারের আয়োজন করা হয় । তখন সবাই মিলে সানন্দে তা দিয়ে ভূরিভোজন করেন ।

যাই হোক আরও একটি শব্দের সাথে এবার পরিচিত হব । শব্দটি হোল, রিশওয়াহ । এটি একটি আরবি শব্দ যার সজাসাপ্টা বাংলা হোল ঘুষ । ইসলামে ঘুষ একটি হারাম জিনিস । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়ের ওপর আল্লাহর লা’নত। রিশওয়াহ বা ঘুষ বিচারের ক্ষেত্রে কুফরি । ঘুষের অর্থে যে নিজে পানাহার করে এবং তার পোষ্যদের পানাহার করায় সকলের জন্যই তা খুবই মন্দ কাজ। এই ঘুষ-লালিত দেহের ইবাদত আল্লাহ কবুল তো করবেনই না বরং তাদের জন্য লাঞ্ছনা, আখিরাতের আগুণ অপেক্ষা করছে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্‌ সুবহানু তায়ালা বলেন, “তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনেশুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকদের বা প্রশাসকদের কাছে পেশ করো না। (আল-কুরআন, ২: ১৮৮) এখানে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কথা বুঝানো হয়েছে যাদের সিদ্ধান্তে একজনের সম্পদে অন্য কেউ অন্যায়ভাবে (অর্থাৎ ঘুষ দিয়ে চাকরি নিয়ে বা সুবিধা নিয়ে) ভাগ বসাতে পারবে।
“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন সাহাবীকে কর্মচারী নিয়োগ করে যাকাত আদায়ের জন্য পাঠালেন। সে ফিরে এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, এটা যাকাতের মাল আর এটা আমাকে উপঢৌকনস্বরূপ দেওয়া হয়েছে। এতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়ে বললেন- সরকারী কর্মচারীর কি হলো ! আমরা যখন তাকে কোনো দায়িত্ব দিয়ে কোথায়ও প্রেরণ করি তখন সে ফিরে এসে বলে এই মাল আপনাদের (সরকারের) এবং এটা আমাকে প্রদত্ত উপহার । সে তার বাড়িতে বসে থেকে দেখুক তাকে উপহার দেওয়া হয় কি-না ।
একবার এক সরকারী উর্ধ্বতন কর্মকর্তা উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে কিছু উপহার দিলেন । উপহারগুলো দেখে উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছিলেন- তুমি যে বললে এগুলো বায়তুলমালের আর এগুলো আমার উপহার ! তুমি এই পদ ছেড়ে বাপের ঘরে বসে থাক, দেখ তো কে তোমার জন্য উপহার নিয়ে আসে । সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করার এই জ্ঞান ও সাহসের জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আল-ফারুক উপাধি দিয়েছিলেন ।

অনেক কথা হোল । প্রসঙ্গক্রমে বাস্তব সত্য ও ধর্মীয় আলচনাও উঠে এল । এবার যেতে হবে কিন্তু সংশয় ও শঙ্কা থেকেই গেল । এই দেশ, এই জনগণ এদের উপায় কি ? দাতা আর গ্রহীতা যদি ধর্মের বিচারে একই অপরাধে দোষী হন, তবে যারা নিরুপায় হয়ে ঘুষ প্রদান করে থাকেন তাদের কি উপরওয়ালা একটু দয়া করবেন না ! যদি না করেন তাহলে তো তাদের দুই কালেই বাঁশ !''

রুদ্র আতিক, সিরাজগঞ্জ,
১০ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪ বঙ্গাব্দ
ছবিঃ ইন্টারনেট ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৯:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: লেখার সারমর্ম টাই ধরতে পারলাম না।

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ১১:১৯

রুদ্র আতিক বলেছেন: অনেকটা সংসারের মতো । সারা জীবন সং করে গেলাম তবু সার খুঁজে পেলাম না ! ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.