নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অখ্যাত একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আইসিটি বিভাগে চাকরি । নেশা- আড্ডা, ঘুরে বেড়ানো, বই পড়া ও কবিতা লেখা ।

রুদ্র আতিক

পৃথিবী কাব্যময় । জীবন ও প্রকৃতির সর্বত্রই কবিতা । যে কবিতা বোঝে না, কবিতা শুনতে বা পড়তে ভালবাসে না- কবিতা আছে তার জীবনেও । তাই কবিতাই আমার সাধনা, অনুপ্রেরণা আর ভালো লাগা ।

রুদ্র আতিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালবাসার আদি ও অনন্ত দর্শন

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৪১


ভালবাসা একটি সর্বজনীন ধারণা । ইহা বিতর্ক, অনুমান এবং অন্তর্দর্শনের উপর প্রতিষ্ঠিত । সাধারণ মতে, ভালোবাসাকে একটি ব্যক্তিগত অনুভূতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যেটা একজন মানুষ অপর আরেকজন মানুষের প্রতি অনুভব করে । কারো প্রতি অতিরিক্ত যত্নশীলতা কিংবা প্রতিক্ষেত্রে কারো উপস্থিতি অনুভব করা ভালোবাসার সাথেই সম্পর্কযুক্ত । অধিকাংশ প্রচলিত ধারণায় ভালোবাসা নিঃস্বার্থতা, স্বার্থপরতা, বন্ধুত্ব, মিলন, পরিবার এবং পারিবারিক বন্ধনের সাথে গভীরভাবে যুক্ত ।
ভালোবাসা একটি মানবিক অনুভূতি এবং আবেগকেন্দ্রিক একটি অভিজ্ঞতা। বিশেষ কোন মানুষের জন্য স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে ভালোবাসা । তবুও ভালোবাসাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করা যায় । আবেগধর্মী ভালোবাসা সাধারণত গভীর হয়, বিশেষ কারো সাথে নিজের সকল মানবীয় অনুভূতি ভাগ করে নেওয়া, এমনকি শরীরের ব্যাপারটাও এই ধরনের ভালোবাসা থেকে পৃথক করা যায় না । ভালোবাসা বিভিন্ন রকম হতে পারে, যেমন: নিষ্কাম ভালোবাসা, ধর্মীয় ভালোবাসা, আত্মীয়দের প্রতি ভালোবাসা ইত্যাদি ।
ভালবাসার আদি ও অনন্ত দর্শন শিরোনামে গবেষণা ধর্মী এই লেখায় ভালবাসার উৎপত্তি ও বিস্তার খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে । সুফিবাদে তিন আকাশের কথা বলা হয়। এই তিনটি আকাশ হল- ভূত আকাশ, মন আকাশ ও চিদাকাশ। ব্যোম, মরুৎ, তেজ, অপ আর ক্ষিতির সমাহারকে বলা হয় পঞ্চভূত । এই পঞ্চভূতকে ঘিরে থাকা আকাশটাই হল ভূত আকাশ । জীবনের সমস্ত অস্তিত্ব (existence) ঘিরে থাকা আকাশটা হল মন আকাশ। এই দুই আকাশ অর্থাৎ ভূত আকাশ ও মন আকাশ সহ সমস্ত কিছুকে আচ্ছাদন করে বা ঢেকে রাখে এমন এক আকাশ যা স্থায়ী বা অবিনশ্বর । কোরআন ও বেদান্ত মতে ইহার লয় বা ধ্বংস নেই। একে চিদাকাশ বলে। পারস্যের কবি জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি বলেন, ভালবাসা সবকিছুকে জুড়ে রাখে,আর এই ‘সবকিছু’ হল- ভালবাসাই । অর্থাৎ সব কিছুকে আচ্ছাদন করে রাখা চিদাকাশই ভালবাসা বা এই চিদাকাশ থেকেই প্রথম আগমন ভালবাসার ।
অদ্বৈতবাদীরা একে মায়া বলে থাকে। ভারতবর্ষের নির্বিশেষবাদী দার্শনিক শংকরাচার্য এই মায়ার স্বরূপ সম্পর্কে বলেন, মায়া এক অনির্বচনীয় শক্তি। মায়া অনির্বচনীয় কারণ মায়া সৎ নয়, আবার অসৎও নয়। মায়া সৎ নয় কারণ তত্ত্বজ্ঞানীর কাছে ব্রহ্মই সত্য, জগৎ নয়। মায়া অসৎও নয়। কারণ মায়ার দ্বারা সৃষ্ট এ জগৎ সাধারণ মানুষের কাছে প্রত্যক্ষের বিষয় । এই মায়া বা ভালবাসা থেকে জীবাত্মার সৃষ্টি। কোরআন মতে এই জীবাত্মাই হল রুহ-ই-আজম বা The Great Soul. ভারতীয় অদ্বৈতবাদীরা একে হিরণ্যগর্ভ বা কনক বলে থাকে । অর্থাৎ স্রষ্টার ভালবাসার প্রকাশ প্রথম সৃষ্টিতে । ইসলামে প্রথম সৃষ্টি নিয়ে মতভেদ থাকলেও প্রসিদ্ধ মতটি হল স্রষ্টা সর্বপ্রথম তার ভালবাসার প্রকাশে রাসুলের নূর সৃষ্টি করেছেন । রাসুল মোহাম্মদ (সাঃ) কে সৃষ্টি না করলে না কি তিনি কোন কিছুই সৃষ্টি করতেন না, একথা কোরআন ও হাদিস সাক্ষ্য দেয় । তাই রাসুলই প্রথম, তার সত্ত্বাই প্রথম জীবাত্মা, তিনিই প্রথম ভালবাসা । মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহঃ এর অন্যতম সিরাত গ্রন্থ '' নশরুত্তীব ফি জিকরেন্নাবিয়িল হাবিব '' এ রাসুল নূরের সৃষ্টি মর্মে একটি অধ্যায়ের সন্ধান পাওয়া যায় । সুফিমতে রাসুল মোহাম্মদ (সাঃ) এর আত্মাই হল রুহ-ই-আজম।
বাইবেলের জেনেসিস অনুসারে, ঈশ্বর আদিতে বিদ্যমান বিশৃঙ্খল শূন্যতাকে সুসজ্জিত করে তা থেকে জীবন সৃষ্টি করেছেন । এর পেছনেও কাজ করেছে ভালবাসা বা ইচ্ছা । সিদ্ধার্থ গৌতম প্রবর্তিত বৌদ্ধধর্মে শুধু পরমেশ্বরে অবিশ্বাসই নয়, বরং সৃষ্টিতত্ত্ব, আত্মার অমরত্ব, শেষ বিচার ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি আস্থাহীনতা নির্দেশ করে । বুদ্ধের চিন্তা-ভাবনা মানুষের দুঃখকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে। তিনি মানব জীবনের এই সর্বাপেক্ষা বাস্তব ও মৌলিক বিষয়ে যে সত্য আবিষ্কার ও প্রচার করেছেন তা সাধারণত ‘চতুরার্য সত্য’ নামে পরিচিত। সেগুলি হলো: দুঃখ, দুঃখের উৎপত্তি, দুঃখের নিরোধ এবং দুঃখ নিরোধের উপায় । উদ্দেশ্যের বিচারে এখানেও ভালবাসা বিদ্যমান, ভালবাসার খোঁজেই সিদ্ধার্থ অনুসারীদের নির্বাণ অবস্থা লাভের দীক্ষা দান করেছেন ।
হিন্দু পুরাণে একাধিক উপায়ে সৃষ্টিকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ঋগ্বেদের অন্যতম প্রাচীন সৃষ্টিতত্ত্ব অনুযায়ী সৃষ্টির প্রকাশ হয়েছিল হিরণ্যগর্ভ নামক এক মহাজাগতিক অণ্ডকোষ থেকে। পুরুষসূক্তের মতে, দেবতাদের দ্বারা পরাজিত পুরুষ নামক এক অলৌকিক মানবের ছিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে নানা বস্তুর সৃষ্টি । পুরাণ অনুসারে, বরাহরূপী বিষ্ণু কল্পের জল থেকে পৃথিবী বা ভূমিকে উদ্ধার করেছিলেন ।
পুরাণে বলা আছে, সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা, পালনকর্তা বিষ্ণু ও সংহারকর্তা মহেশ্বরের (শিব) সাথে যুক্ত হয়ে এক ত্রিমূর্তি গঠন করেন। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেন ব্রহ্মা, তা পালন করেন বিষ্ণু এবং পরবর্তী সৃষ্টির জন্য বর্তমান সৃষ্টিকে ধ্বংস করেন শিব। আবার কিছু গল্পে দেখা যায়, ব্রহ্মাও বিষ্ণু থেকে উৎপন্ন হয়েছেন। কল্পের সাগরে শেষনাগের অনন্তশয্যায় শায়িত বিষ্ণুর নাভি থেকে জাত পদ্মের ওপরে ব্রহ্মাকে বসে থাকতে দেখা যায়। সৃষ্টির আদিতে বিষ্ণুই একা ছিলেন, সৃষ্টির কথা স্মরণ হতেই তার নাভিজাত পদ্মে ব্রহ্মার উৎপত্তি হয়।
আবার শতপথ ব্রাহ্মণে লেখা আছে, সৃষ্টিকর্তা তথা পরমপিতা প্রজাপতি সৃষ্টির আদিতে সম্পূর্ণ একলা ছিলেন । তাই তিনি নিজেকে পুরুষ ও স্ত্রী-রূপী দুটি খণ্ডে বিভক্ত করেন। স্ত্রী ও পুরুষ ক্রমে ক্রমে প্রত্যেকটি প্রাণীর দুই ভিন্ন প্রজাতি তৈরী করলেন । পরে এই প্রজাপতিকেই পুরাণে ব্রহ্মা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে । অর্থাৎ এখানে ইচ্ছাই সৃষ্টি, সৃষ্টিই ব্রহ্মা আর ব্রহ্মাই ভালবাসা । আর এই ভালবাসার মধ্যে প্রাণ বা আত্মা অন্তর্নিহিত ।
এই অবিনশ্বর আত্মার ধ্বংস নেই। স্রষ্টা বা পরমাত্মা তাঁর সৃষ্টিতে বদ্ধ হয়ে সৃষ্টিকে অবিনশ্বর রুপ দান করেছেন। সৃষ্টির আগে এই সৃষ্ট জগৎ পরমাত্মায় গুপ্ত ছিল, এখন তিনি সৃষ্টিতে গুপ্ত আছেন। অস্তিত্বই তাঁকে আড়াল করে রেখেছে। তাই তাঁকে পেতে হলে তাঁর সৃষ্টিকে ভালবাসতে হবে, ভালবাসতে হবে আদি সৃষ্টিকে ও তাঁর আদর্শকে । ভালবেসেই সব সৃষ্টি, ভালবাসাতেই সব সৃষ্ট, সৃষ্টিতেই স্রষ্টা বর্তমান । স্রষ্টা সৃজিত ভালবাসা সর্বজনীন, সর্বব্যাপী । ভালবাসাই আদি, ভালবাসাই শেষ ও অনন্ত।

একটি গবেষণা ধর্মী লেখা
লেখকঃ রুদ্র আতিক, সিরাজগঞ্জ
৮ই ফাল্গুন ১৪২৩ বঙ্গাব্দ।

তথ্যসুত্রঃ
আল-কোরআন ও হাদিস (অনুবাদ)
বাইবেল (অনুবাদ)
নজরুল রচনাবলি, একাদশ ও দ্বাদশ খণ্ড,
মসনবি শরিফ (অনুবাদ),
মহাভারত (রাজ শেখর বসুর সারানুবাদ্‌ )
ভাগবত গীতা (বঙ্গানুবাদ)
উইকিপিডিয়া (বাংলা) ।


মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৫৯

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: গবেষণাধর্মী পোস্ট ভালো লাগলো। পোস্টে ভালো লাগা জানবেন।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:০২

রুদ্র আতিক বলেছেন: অনুপ্রাণিত হলাম । ভালবাসা ও ভালোলাগা জানাতে কৃপণতা বোধ করব না, যদিও অবকাশ সামান্যই ! ধন্যবাদ

২| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: যারা মানবিক তারাই সত্যিকারভাবে ভালোবাসতে পারে।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:০৩

রুদ্র আতিক বলেছেন: জানি সে সক্ষমতা আপনার আছে । ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.