নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবী কাব্যময় । জীবন ও প্রকৃতির সর্বত্রই কবিতা । যে কবিতা বোঝে না, কবিতা শুনতে বা পড়তে ভালবাসে না- কবিতা আছে তার জীবনেও । তাই কবিতাই আমার সাধনা, অনুপ্রেরণা আর ভালো লাগা ।
সাম্প্রতিক সময়ে ভেতরে বাইরে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বৈষম্যের শিকার বিশ্বের প্রতিটা মানুষ । কিন্তু প্রকাশ করতে পারছে না কেউ বিশ্বব্যাপী মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হওয়ায় । আবার প্রচলিত আইনের বিধি নিষেধ তোয়াক্কা না করে বহু দেশের রাজপথ এখন দখল করে নিয়েছে বৈষম্যের শিকার বিক্ষুব্ধ জনতা । আর এই বৈষম্যের মূল কারণ হল বিশ্বব্যাপী রাজ করা পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা । পুঁজিবাদী বৈষম্যের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক নগরীর জুকুটি পার্কে তরুণ-যুবারা জড়ো হয়ে ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ নামে এক অভিনব আন্দোলনের সূচনা করেছিল । ‘উই আর ৯৯ পারসেন্ট’ ছিল এই আন্দোলনের মূল স্লোগান । বৈষম্যের প্রধান কারণ হিসেবে ওই আন্দোলন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল বিদ্যমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকেই । চলমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সবার জন্য সমান সুযোগ না থাকায় সম্পদবৈষম্য বর্তমানে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে । তেলা মাথায় তেল দেওয়া বলতে আমাদের দেশে প্রচলিত প্রবাদ রয়েছে । পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটা ঠিক এই তেলা মাথায় তেল দেওয়ার মতোই । অর্থাৎ যার আছে তার আরও হবে, যার নেই সে হবে নিমজ্জিত । মানুষের রক্ত চোষা, লোভী, হায়না গুলো মানুষকে তার ন্যায্য পাওনা না দিয়ে দিনে দিনে গড়ে তুলেছে সম্পদের পাহাড় । সেই পাহাড় স্তুপের নিচে পড়ে রইল কত অনাহারি-অভাবি মৃত মানুষের হাড়-কঙ্কাল, তার হিসেব হায়নার দলের কাছে নেই । কিন্তু পাল্টে যাচ্ছে সময় । মানুষ প্রতিবাদী হয়ে উঠছে । অবশ্যম্ভাবী এই প্রকাশ একদিন সংঘর্ষকে অনিবার্য করে তুলবেই তুলবে, সেই দিন আর বেশি দূরে নয় । কবি সুকান্তের মতোই তারা শীঘ্র জবাব চাইবে এভাবেই,
শোন্ রে মালিক,শোন্ রে মজুতদার
তোদের প্রাসাদে জমা হলো কত মৃত মানুষের হাড় –
হিসাব কি দিবি তার ?
গণতন্ত্রের খোলস পরে থাকা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার প্রশাসক প্রতিটি দেশের সরকার এই সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী হন না । নিচু তলার মানুষ ক্ষমতায় যাবে এটা এখন ভাবনার অতীত । তাই যারা ক্ষমতায় বসেন তারা উঁচু তলার লোক, সম্পদশালী, পুঁজিবাদের নিয়ন্ত্রক । তারা চান এই ব্যবস্থা টিকে থাকুক । তাই তারা তাদের উপদেষ্টাদের বুদ্ধি মতো নিজ নিজ রাষ্ট্রকে কল্যাণকামী রাষ্ট্র নামক টুপি পরিয়ে জনগণকে খুশি করতে চেষ্টা করেন প্রাণপণ । উন্নয়নের মহাসড়কে দেশ, সময় এখন আমাদের, মধ্যম আয়ের দেশ, উন্নত ব্যবস্থা এখন আমাদের হাতে ইত্যাদি ইত্যাদি স্লোগানে রাষ্ট্রনায়কগণ জনগণকে আশার বাণী শোনালেও সবার জন্য সমান সুযোগ প্রদানে তারা ব্যর্থ হন । বণ্টনের এই সমস্যা বিশ্বব্যাপী । সম্পদ ও ক্ষমতার সুষম বণ্টন না হওয়ায় বৈষম্য বেড়ে সমগ্র মানবজাতিকে দ্বিখণ্ডিত করে ফেলেছে । এই অবস্থা থেকে মানুষ মুক্তি চায়, দুবেলা দুমুঠো খেয়ে তারা সম্মানের সাথে বাঁচতে চায় । এই চাওয়া মানবিক, এই পাওয়া তাদের অধিকার । ইতিহাস বলে, অধিকার কবে কাকে কে দিয়েছে এমনি এমনি ! তাই দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষ গুলো শক্তি সঞ্চার করে প্রতিবাদী হয়ে উঠছে ।
দেশে দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য এতটাই বেড়ে গেছে যে, মানুষ প্রয়োজনীয় পণ্য দ্রব্যের ক্রয় ক্ষমতা হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত । সম্পদের বৈষম্যের জন্যই তারা শিকার হচ্ছে জুলুম আর নির্যাতনের । জীবন ধারণ যেখানে কঠিন সেখানে বঞ্চিতের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ বিক্ষোভে রূপ নিয়ে সহিংস অবস্থার সৃষ্টি করবেই । এই অচলাবস্থার শঙ্কা থেকেই বুঝি গত ১২ই নভেম্বর গ্রিনউইচ ইকোনমিক ফোরামে শতকোটিপতি পল টুডোরের সঙ্গে আলাপচারিতায় আরেক শতকোটিপতি রে দালিও বর্তমান অর্থনৈতিক কাঠামো নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলে বোমা ফাটিয়েছেন। তিনি সারা বিশ্বে বেড়ে চলা অর্থনৈতিক বৈষম্যের কথা উল্লেখ করে একে এতটাই গুরুতর হিসেবে শনাক্ত করেছেন যে,এ বিষয়ে তাঁর প্রস্তাব হচ্ছে,‘মার্কিন রাজনীতিবিদদের উচিত বিদ্যমান সম্পদবৈষম্যকে জাতীয় জরুরি অবস্থা হিসেবে ঘোষণা করে এটি মোকাবিলায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা,নয়তো সহিংস বিক্ষোভের জন্য প্রস্তুত থাকা,যেখানে আমরা সবাই পরস্পরকে হত্যায় উদ্যত হব।’
এবার আমার সোনার বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আসা যাক । অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মত এখানেও জেঁকে বসেছে পুঁজিবাদের ভূত । যার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি অর্থনৈতিক বৈষম্য । সুশাসন আর সুপরিকল্পনার অভাবে এখানে এই বৈষম্য দিন দিন আরও প্রকট হয়ে উঠছে । শুধু বর্তমান আমলেই নয় বিগত সকল সরকারই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে যতটা উৎসাহী হয়েছে অন্য কারো বেলায় ততোটা হয়নি । ফলে নিত্য পণের দাম বেড়েছে দিন দিন, মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে ব্যাপক । সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে । এই যে, সাধারণের কথা বলি এরা কিন্তু সংখ্যায় মামুলি নয় বরং সংখ্যাগরিষ্ঠ । এই সাধারণের বৃহৎ অংশই খেটে খাওয়া মানুষ । যারা সরাসরি কাজ করে কোন শিল্পপতি বা পুঁজিপতির অধীনে অথবা এদের হাতেই জিম্মি হয় পুঁজিবাদের প্রভাবে । উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য বা শ্রমের ন্যায্য পাওনা না পাওয়ায় তৈরি হয় সম্পদ বৈষম্যের ।
সরকার বা পুঁজিপতি শ্রেণীর সবাই সাধারণকে যা দেয় তা কেবল চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর প্রভাবে, অথবা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা ক্ষমতার ভীতকে শক্ত করতে । আমার এক বন্ধু একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে । প্রায় দুবছর যাবৎ সেখানকার কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট বন্ধ । অবশ্য শ্রমিকের বেলায় তা হয়নি, তাদের দেওয়া হয়েছে যৎসামান্য । না হলে এরা প্রতিবাদ আন্দোলন করতে পারে হয়তো এই ভয়ে । মালিক পক্ষ ভাবছে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চাকরি ছাড়বে না, তাছাড়া এদের সংখ্যাও নগণ্য, তাই এদের বেতন বৃদ্ধি না হলে কিছুই হবে না ! বলে রাখা ভাল এদের দলে বড় কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বাবুর্চি বা সুইপারও আছে । কেউ কেউ বলছে কোম্পানি বড় করবার জন্য অনেক কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নেওয়া হয়েছে বিধায় কর্মচারীদের ন্যায্য হিস্যা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না ! অভিনব যুক্তি বটে ! গরিবের রক্ত চুষে খেয়ে এভাবেই সম্পদের পাহাড় গড়ছে শিল্পপতিরা, বিত্তশালীরা । দেখার কেউ নেই, নেই সরকারি কোন বিধি ব্যবস্থা । হায়রে সোনার দেশ ! আর হায়রে তার অভাগা জনগণ !
লোক ঠকানোর এই নীতি বিশ্বব্যাপী বিরাজমান । প্রচলিত পুঁজিবাদী ব্যবস্থা দিন দিন এই নীতিকে উসকে দিয়ে সম্পদের বৈষম্য বাড়িয়ে সারা বিশ্বে রাজ করছে ঠিকই তবে একই সাথে সহিংস অবস্থার জন্ম দিচ্ছে নিজের অজান্তেই । এই সহিংস অবস্থার সৃষ্টি হলে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাথে সাথে যে রাষ্ট্র ব্যবস্থাও ধ্বংস হয়ে যাবে সে কথা বুঝতে প্লেটো বা এরিস্টটল বা হালের রে দালিও বা পল টুডোরে হবার প্রয়োজন পড়ে না । আজ নয় তো কাল, সংঘাত অনিবার্য ।
তথ্য কৃতজ্ঞতাঃ ইউ.কে ফিনান্সিয়াল টাইম
দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা
উইকিপিডিয়া বাংলা ।
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ গুগল ডট কম
রুদ্র আতিক, সিরাজগঞ্জ
০৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৬ বঙ্গাব্দ ।
২০ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:২৬
রুদ্র আতিক বলেছেন: এটা ঠিক যে সর্ব অর্থে বৈষম্য দূর করা সম্ভব না । তাই বলে উপায় নাই বলে তো হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না ভায়া ! নিজেরা মুক্তি পাই বা না পাই , অন্তত আগামী প্রজন্মকে তো পথ দেখাই ।
২| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৫৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
বৈষম্য, কে তুমি? কেমন করে আসো?
কেমন প্রতাপে তুমি ওগো সুখ সাগরে ভাসো?
যুগে যুগে এ পৃথিবীর সব যন্ত্রণার ইতিহাসে
কালে কালে সব দেশে দেশে বঞ্চনার ইতিহাসে
ক্ষয়ে ক্ষয়ে সব সয়ে সয়ে ব্যর্থ জীবনের বাঁকে
তুমি মিশে আছ মূল মন্ত্র হয়ে তুষ অনলের ফাঁকে!
কে পেরেছে রুখতে তোমায়, লাগাম ধরেছে কেবা?
যে গেয়েছে সাম্যের গান, কেতাবেই তা লেখা।
৩| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:২৮
রুদ্র আতিক বলেছেন: কিতাবি লেখা গুলো অতটা চর্বিত হয়নি বলেই সচেতনতা বাড়েনি ! মুক্ত ব্লগে তাই মুক্তির চেষ্টা ! সুন্দর মন্তব্য, অনেক অনুপ্রাণিত । ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:১৯
রাজীব নুর বলেছেন: বৈষম্য তো সেই আদিযুগ থেকেই চলে আসছে।
এর থেকে বের হয়ে আসার উপায় নাই আজকের আধুনিক বিশ্বে।