নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অখ্যাত একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আইসিটি বিভাগে চাকরি । নেশা- আড্ডা, ঘুরে বেড়ানো, বই পড়া ও কবিতা লেখা ।

রুদ্র আতিক

পৃথিবী কাব্যময় । জীবন ও প্রকৃতির সর্বত্রই কবিতা । যে কবিতা বোঝে না, কবিতা শুনতে বা পড়তে ভালবাসে না- কবিতা আছে তার জীবনেও । তাই কবিতাই আমার সাধনা, অনুপ্রেরণা আর ভালো লাগা ।

রুদ্র আতিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অভিশাপ

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৮:৩০


কে সেই নরপিশাচ, যে শ্রমিক, মজুর আর গরিবের ঘাম-রক্ত চুষে প্রমোদ অট্টালিকা বানায়? কে সেই নরাধম, যে অন্যায় ভাবে পয়সা কামিয়ে স্ত্রী-কন্যার জন্য হীরে মনি মুক্তা আর সোনার গয়না গড়ে দেয়? কে সেই কুলাঙ্গার, পূজা পার্বণ বা ঈদ আর বিশেষ দিনে বা নববর্ষে হারাম অর্জিত টাকায় সন্তানের জামাকাপড় কিনে দেয়? এদের তুমি দেখনি, তা নয় । দেখেছ, কিন্তু পরিচয় পাওনি । এরা বিলাসে লালিত আর সুখে পালিত তথাকথিত বড় লোক,শোষক । দরিদ্র আর অত্যাচারিত মানুষদের দুঃখ-বেদনা বোঝার ক্ষমতা তাদের নেই । এরা অত্যাচারী, পাষাণ-কঠিন হৃদয়সম । বিশ্বজগৎ আর মানবতা সম্বন্ধে এদের ধারণা নেতিবাচক আর অসম্পূর্ণ । মানবতা আর মানুষকে লাথি মেরে মানুষ ঠকিয়ে এরা যে অর্থ আহরণ করেছে তাই একদিন তাদের মহা-অনিষ্টের কারন হবে । তা এই জনমে বা পর জনমে, যে জনমেই হোক । বিশ্বের সকল শোষিত-বঞ্চিত মানুষদের পক্ষে এই অভিশাপ আমি দিয়ে রাখলুম ।

এরা যে সেচ্ছায় সকলেই অত্যাচারী হয়ে ওঠেন সে কথা আমি বলছি না, এদের অনেকে অজ্ঞাতসারেও অত্যাচারী হয়ে উঠতে পারেন । তা তিনি সেছায় বা অনিচ্ছায় বা অজ্ঞাতসারে যে ভাবেই হন না কেন, অত্যাচারী চিরকাল অত্যাচারীই । সকল মানুষ ভাই ভাই, এ কথা সকল অত্যাচারীই বিলক্ষণ ভুলে থাকে । ভাই হয়ে ভাই কে আঘাত দাও কোন সাহসে? মানুষকে কঠিন আর কঠোর কথা বলতে তোমার লজ্জা হয় না? কার দিন রাত্রির পরিশ্রমের ফসলে ভরেছে তোমার ভাণ্ডার, তা কি ভেবে দেখ না? ক্ষুধিত মানুষের ক্ষুধা নিবারণের আমরণ চেষ্টা বিফলে দিয়ে নিজের উদরপূর্তির মহা আয়োজনে তোমার লজ্জা হয় না? কাকে চেটে-পুটে খাচ্ছ তুমি, কার পয়সা জমাচ্ছ তুমি নিজের সঞ্চয়ী হিসেবে? তোমার পূজিত দেবদেবী অথবা ঈশ্বর, আল্লাহ্ বা বিধাতার কাছে তার হিসেব রহিল জমা ।

অন্যায়-অনাচার, পাপে-তাপে জীবনকে কুলশিত করে অনেকেই মনে করে শেষ কালে স্রষ্টার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলেই হল ! অনেককে দেখেছি, সারা জীবন মানুষ ঠকিয়ে শেষ কালে মক্কায় গিয়ে টুপি-আলখেল্লা পরে চলে আসে, কেউ বা হয় কাশিবাসি । এদের দেখে হাসি পায়, আফসোস লাগে । বস্তুত, এরা কতই না হতভাগ্য, যদি তারা জানত । অন্যের অধিকার আর পয়সা লুট করে পাপের আয়ে তুমি একবার কেন হাজার বার কিবলা বা পুরি দর্শনেও তোমার মুক্তি নেই । মানুষের অধিকার যদি ফিরিয়ে দিতে পার, তার ন্যায্য পাওনা যদি বুঝিয়ে দিতে পার তবেই তোমার মুক্তি । কিন্তু, তা কি সম্ভব ! সব কিছু ফিরিয়ে দিতে পারলেও আসল অর্থ তো ফিরিয়ে দিতে পারবে না । সময় হল সেই আসল অর্থ । যা তুমি বঞ্চিতের জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছ অন্যায় আর অত্যাচারের বশবর্তী হয়ে । এ পাপের ক্ষমা হয় না । কোন ধর্মেই এই অধর্ম সইবে না । মানুষের সাথে নিষ্ঠুরতা আর অনাচার করে স্রষ্টার সাথে সখ্যতা খাতিরের চেষ্টা নির্বুদ্ধিতার নামান্তর ।

অন্যায়-অনাচারের অভিশাপ জলন্ত বিভীষিকার চেয়েও ভয়ানক । শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত মানুষের পক্ষে যদি কথা বলবার শক্তি ও সাহস তোমার না থাকে, তবে তুমি ভীরু-কাপুরুষ । অন্যায়ের প্রতিবাদ যদি না করতে পার তবে অন্তত তাকে ঘৃণা করতে সেখ । শুধু মসজিদ, মন্দির, গির্জা বা প্যাগোডায় বসে প্রার্থনা, পূজা-অর্চনা, আরাধনা বা উপাসনা করে তোমার মুক্তি নেই । মুক্তি চাইলে তুমি তোমার অধিকার বুঝে নাও, মুক্তি দিতে চাইলে মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দাও । অপরাধের টাকায় গড়ে তোলা তোমার রাজ প্রাসাদ চিরস্থায়ী নয়, নশ্বর এই পৃথিবীতে তুমিও অবিনশ্বর নও । ফেরাউন, নমরুদ, জুলিয়াস সিজার, সিকান্দার শাহ্‌, সম্রাট অশোক, সম্রাট আকবর, মহামতি আলেকজান্ডার সবাই মরেছে, তুমিও মরবে । মটে-মজুর, কৃষক-শ্রমিক, দরিদ্র-নিঃস্ব সহ সকল সাধারণের ঘাম-রক্ত চুষে অর্থ সম্পদের পাহাড়ের পাশাপাশি যে অভিশাপ তুমি অর্জন করেছ তার শাস্তি ভোগ করবার জন্য তৈরি থেকো । তোমার প্রমোদ অট্টালিকা, পাহাড়সম সম্পদের স্তুপ, রাজকীয় সাজ সজ্জা, বিলাস বহুল গাড়ী , শত সহস্র দাস-দাসী সেই অভিশাপের তীর থেকে তোমায় বাঁচাতে পারবে না ।

জীবনে অনেক অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছ, তোমার অধীনে কত শত মানুষ কাজ করে ! কিন্তু তুমি নিজের আত্মীয়-স্বজন আর পরিবার-পরিজন ছাড়া তোমার অধিনস্ত সহ সকল মানুষের প্রতিই নিষ্ঠুর । তোমাকে আমি ভক্তি করি না । ভক্তি বলছি কেন, তোমাকে আমি মানুষ বলেই মনে করি না । অর্থ সম্পদের বিনিময়ে বিচারককে প্রভাবিত করে নিজের সৌভাগ্য ক্রয় করতে গিয়ে যারা অন্যের অধিকারকে ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের আমি ঘৃণা করি । তাদের উপার্জিত অর্থে আর অত্যাচারীর সম্পদে আমি কোন ভেদ দেখি না । এদের দ্বারা অত্যাচারিত, শোষিত আর বঞ্চিত মানুষের অভিশাপ কখনো বিফলে যেতে পারে না ।

এই যে অভিশপ্ত শোষক শ্রেণীর বড়লোক বা পুঁজিপতি, শিল্পপতি বা মজুদদার এর কথা বলছি এরা কিন্তু একা নন । এরা এমনই চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী যারা রাষ্ট্রযন্ত্র ও প্রশাসনকেও নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থতায় কাজে লাগায় । ফলশ্রুতিতে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষের সময় রাষ্ট্রীয় প্রশাসন তথা পুলিশ মালিকদের পক্ষ নিয়েই নিরস্ত্র শ্রমিকদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালাতে দ্বিধা করে না। হালের আমলে দেশে দেশে মালিক আর শ্রমিকের ঐক্যের কথা বলা হলেও শ্রমিকের অধিকার আন্দোলন দমনের ক্ষেত্রে মালিক শ্রেণী ও সরকারের মধ্যে ঐক্য ও সমঝোতা গড়ে উঠেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের কথা বাদ দিলেও বাংলাদেশের বেলায় এ কথা হাড়ে হাড়ে সত্য ।

কথায় কথায় আমরা ধর্ম ব্যবহারে (ধর্মের দোহাই) ওস্তাদ । অনেকে সারাদিন অনেক হাদিস, কোরআন, বেদ-বেদান্ত থেকে উদ্ধৃতি দেই । আপন স্বার্থের খেলাপ হলেই মনগড়া মতবাদ দিতেও পিছপা হই না । অনেক নীতি আমরা মানি আবার অনেক নীতি আমরা বিসর্জন দেই । কিন্তু লোক ঠকানোর নীতি আমরা বিসর্জন দিতে পারব না ! এর চাইতে হীন প্রতিজ্ঞা আর কি হতে পারে ? ঠকে যাওয়া নিপীড়িত-বঞ্চিত মানুষ গুলোর অভিশাপ কি আমাদের লাগবে না, বল ?

তোমার ধন আছে বলেই কি নির্ধন তোমার কাছে মূল্যহীন ? তোমার অধীনে কাজ করে বলেই কি তুমি তার সত্ত্বা ও অধিকারকে ক্রয় করে নিয়েছ ? এই যে নিয়ম আর ধর্মের কথা বলে অধর্ম করে বেড়াও, আসলে ধর্ম কি তা কি তুমি জানো ? জীবন কে শুদ্ধ আর পবিত্র করে তুলতে পারাটাই ধর্ম ! সমস্ত ন্যায় আর সত্যই নিয়ম ! অন্যের অনিষ্ট করে, মানবতা কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, শোষণ আর বঞ্চনার স্ট্রিমরোলার চালিয়ে, মানুষে মানুষে বিভেদ ঘটিয়ে, রক্ত-মাংস-হাড় ক্ষয় করা পরিশ্রমের অর্থ লুটে যে অন্যায় তুমি করেছ, তাতে ধর্ম বজায় থাকে কি ? আমরা যারা কলে-কারখানায়, মাঠে-ময়দানে, হাটে-বাটে, অফিস-আদালতে অন্যের অধীনে কাজ করি, তারা সবাই কোন না কোন ভাবে নিগৃহীত । কেন ? উচ্চ পদে আসীন বলেই কি তুমি মানুষকে পদানত করে রাখতে চাও ? এ অধিকার তোমায় কে দিয়েছে ? আমরা বিশ্বের খেটে খাওয়া সকল নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত, নিগৃহীত মানুষ এক হয়ে সমস্ত অত্যাচারীকে অভিশাপ দিচ্ছি, তোমরা মানুষ হও ! নিরর্থক অহঙ্কার আর দাম্ভিকতা ভুলে মানুষের পাশে দাঁড়াও । মানুষ হয়েই বুঝতে সেখ মানবের বেদনা ! যদি তা না হয়, তবে বাজাও ভেরি, বাজাও ডঙ্কা ! যুদ্ধারম্ভের প্রস্তুতি নাও এখনই । এ যুদ্ধ ন্যায় আর অন্যায়ের, এ যুদ্ধ অত্যাচারী আর শোষিতের, এ যুদ্ধ অমানুষ আর মনুষ্যত্বের ! এ আহ্বান নিষ্পেষিত মনুষ্যত্বের,এ আহ্বান জাগ্রত বিবেকের,শুদ্ধি সাধনার এই আহ্বান নির্মল আত্মার ! তবে আর দ্বিধা কেন, সংশয় আর সঙ্কোচ কিসের? মৃত্যু যেখানে অবশ্যম্ভাবী সেখানে মৃত্যুর ভয় পুষে লাভ কি? বারবার মরে বেঁচে থাকবার যন্ত্রণা ভুলে এসো একবারই মরি!
‘’ঐ রেঙেছে পুব আকাশে অরুণ রাঙা রবি
যুদ্ধে নামার ডাক দিয়েছে মানুষ নামের কবি,
ভেঙে আবার সভ্যতাকে নূতন করে গড়ি
বারেবারে না মরে আজ একবারে সব মরি !’’


কবি ও লেখকঃ রুদ্র আতিক, সিরাজগঞ্জ,
০৫ ফাল্গুন ১৪২৬ বঙ্গাব্দ ।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:২২

রাজীব নুর বলেছেন: বিশ্বে শ্রমিক বেশি। অথচ আজও শ্রমিকরাই ঠকে যাচ্ছে।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৪৫

রুদ্র আতিক বলেছেন: সব কালে তাই ছিল, আজও তাই আছে !

২| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:২৪

নেওয়াজ আলি বলেছেন: লেখা খুবই ভালো লাগলো।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৫৭

রুদ্র আতিক বলেছেন: খুবই অনুপ্রাণিত হলাম, ধন্যবাদ

৩| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ২:২০

সোহানী বলেছেন: সব ধর্মেই শ্রমিকের পাওনা পরিশোধের কথা বলা হয়েছে, সব আইনেরই তা নিয়ে বিধান আছে, সব মানবিকতার স্লোগানেই প্রথমেই তাদের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে অবহেলিত শ্রমই তারা দিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন।

আমার একটা প্রশ্ন, একটা শ্রমিককে ঠকিয়ে কত বেশী আয় করতে পারবে? সে বাড়তি আয়টুকু কিসে খরচ করবে????

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:২৬

রুদ্র আতিক বলেছেন: একটা শ্রমিক কে দিনে ১০০ টাকা ঠকালে মাসে ৩০০০ টাকা সঞ্চয় ! বছরে ৩৬০০০ টাকা ! আর একটি কারখানায় যদি হাজার হাজার শ্রমিক খাটে, তাহলে নিজেই হিসেব করুন বছরে কত কোটি টাকার শোষণ হয় ! ভাল থাকুন, ধন্যবাদ

৪| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৩:২০

শের শায়রী বলেছেন: দারুন লিখছেন, একদিনেই লিখে হয়ত সমাজ পরিবর্তন হয় না, তবে অনেক দিনের প্রচেষ্টায় পরিবর্তন হয় এর প্রমান ভুড়ি ভুড়ি।

ভালো থাকুন শুভ কামনা।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:৩১

রুদ্র আতিক বলেছেন: শত সহস্র বছর ধরে এই চেষ্টা অব্যাহত ! পরিবর্তন আসে নি তা নয়, তবে আজও লাভের গুড় পিঁপড়েই খাচ্ছে ! ধন্যবাদ, ভাল থাকুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.