নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবী কাব্যময় । জীবন ও প্রকৃতির সর্বত্রই কবিতা । যে কবিতা বোঝে না, কবিতা শুনতে বা পড়তে ভালবাসে না- কবিতা আছে তার জীবনেও । তাই কবিতাই আমার সাধনা, অনুপ্রেরণা আর ভালো লাগা ।
যার যত অর্থ, জগতে সে ততো উন্নত ! যার কাড়ি কাড়ি টাকা আছে সে বড় লোক, বাকিরা ছোট ! আমাদের চেতনায়, অর্জিত শিক্ষায়, মেধা ও মননে এই চিন্তাই বদ্ধমূল হয়ে আছে । এই হীনমন্যতা মানুষকে ভুগিয়েছে চিরকাল । এই অশুভ চিন্তাই মানবতার টুটি টিপে ধরে, তাকে বিপথে চালিত করে সভ্যতার অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করেছে । তাহলে কি অর্থের প্রয়োজন নাই ! এমন অনর্থ কথা আমি বলছিনে । বলছি জীবনের উদ্দেশ্য কেবল মাত্র যারা অর্থ উপার্জনে সীমাবদ্ধ রেখেছে বা অর্থ উপার্জনই জীবনের লক্ষ্য মনে করেছে, তাদের কথা । এই আমার কথাই যদি বলি তাহলে বলবো আমি কিন্তু ছোট বেলা থেকে এই শিক্ষাই পেয়েছি । সবাই বলেছে পড়তে কেননা বড় হতে হবে মানে অনেক অর্থ উপার্জন করতে হবে, বড় চাকুরী করতে হবে মানে অনেক টাকা মাইনে পেতে হবে । মানুষ হতে যে কেউ বলেনি তা বলছিনে, বাবা বলেছে, অনেক শিক্ষক বলেছে । কিন্তু তাদের সবার মনেই এই ধারণা বদ্ধমূল ছিল যে, মানুষ হওয়া মানেই অনেক উপার্জন করা । কিন্তু আমি সেই তথাকথিত মানুষ হতে পারিনি । অবশ্য আমার মন যেমন রূপ মানুষ হতে চেয়েছে, আমি আজ অব্দি তেমন টাও হতে পারিনি । প্রতিনিয়ত জ্ঞান সাধনার মাধ্যমে জীবনকে যে উন্নত করতে পেরেছে সেই তো প্রকৃত মানুষ । যারা অচেতন চিতে চেতনা জাগান তারাই এসব চেতনার কথা বুঝবে ।
ছোট বেলায় পড়া, আগডুম বাগডুম বা হাট্টিমাটিম টিম ছড়া আমাদের কতটা উন্নত করেছে তা আমার জানা নাই । তবে এই সময় থেকেই অনেক পড়াই আমার কাছে অসার মনে হতো । একটু বড় হয়ে তাই পাঠ্য বইয়ের ভেতর লুকিয়ে লুকিয়ে গল্প, কবিতা বা উপন্যাসের বই পড়তাম । ক্রমে ক্রমে যখন এই নেশা পাঠ্য বইকে একেবারেই দূরে সরিয়ে দিল তখন একাডেমিক পরীক্ষায় আমি অকৃতকার্য হতে লাগলাম । আত্মীয় স্বজন, পাড়া পড়শি আর পরিবারের অজস্র কথা সহ্য করতে না পেরে ঠিক করলাম, এবার কৃতকার্য হবোই । যে কথা সেই কাজ, মাত্র তিন মাসে দুই বছরের পড়া পড়ে পরীক্ষা দিয়ে ভালোভাবেই কৃতকার্য হয়ে ছিলাম । বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক জড়বাদী দার্শনিকের দর্শন আমার পাঠ্য ছিল, তারও আগে রাবির চারুকলার বোধ চত্বরের নিয়মিত ক্লাস, আঁকা আঁকি ইত্যাদি সব কিছু নিজের কাছে অসার মনে হতে লাগলো । মনে হতো, এ শিক্ষা আমার জীবনের কোন কাজে আসবে না । উন্নত জীবনের সন্ধানে সন্ধ্যায় থিয়েটারে যেতাম রোজ, শহরের পাবলিক লাইব্রেরী হয়ে উঠল আমার বিদ্যা অর্জনের পীঠস্থান । তবে, একাডেমিক ধাপ আমি কৃতিত্বের সাথে উতরে গেছি নিয়মিত ক্লাস করে । ছোট্ট বেলার সেই আগডুম বাগডুম, চুরি করে পাশের বই ফেলে ফেলের বই পড়া, কলেজের পরীক্ষায় ফেল করা, আর্ট কলেজের চত্বরে বসে আঁকা আঁকি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া বস্তুবাদ, প্রাচ্য বা ইসলামিক রাজনৈতিক চিন্তা, থিয়েটারের নাট্যাচার্যের দর্শন এসব আমার জীবন পথের পাথেয় হলেও তথাকথিত মানুষ বানাতে পারেনি । সেই মানুষ হওয়া নিয়ে আমার সহধর্মিণীর মত পরিবারের সকলের আফসোস হলেও, আমার হয় না । কারন, কবি নির্মলেন্দু গুণ বা কবি মহাদেব সাহার মত আমারও অতৃপ্তি নেই ।
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, একথা আমি পুরোপুরি বিশ্বাস করি না । আমি বিশ্বাস করি, মনুষ্যত্ব, বিবেক আর জ্ঞানই জাতির মেরুদণ্ড । আর এই সব কিছুর মূলে শিক্ষা নিয়ামক হলেও তা অবশ্যই সুশিক্ষা হতে হবে । এই সুশিক্ষা কেবল পাঠ্য বই পড়ে অর্জিত হয় না । তার জন্য অনেক পড়া পড়বার দরকার আছে, দরকার আছে পড়ার মত মহৎ কাজটি করবার জন্য বিপুল সাধনার । এই সাধনাই তোমার চোখ খুলে দেবে, সাধনায় অর্জিত হবে সম্পদ, অর্থ । অর্থ লাভের জন্য পড়বার যে মোহ আমাদের সকলের মনকে আকৃষ্ট করে রেখেছে, জ্ঞান সাধনাই পারে সে দীর্ণতাকে মুছে ফেলতে । আমি বড়, আমি জ্ঞানী এ কথা বলবার সাহসও তুমি হারিয়ে ফেলবে, এই জ্ঞানের সাধনায় । তুমি বড়, একথা বল কোন সাহসে ? একটুখানি প্রেমে উদ্গত রসে অঙ্কুরিত হয়েছিল তোমার অস্তিত্ব,সেখানে কত কাল তুমি ছিলে প্রাণহীন, তা কি জানো ? তুমি জ্ঞানী, এ কথা তুমি কোন বিশ্বাসে বল ? চাষার ছেলে নিউটন জ্ঞানের কত সাধনায় সফলতা লাভ করেছিলেন তা কি তুমি জানো ? ত্রিশ বছর সাধনা করে যদি তুমি একখানি বই লেখ আর তোমার পোষা কুকুর জ্বলন্ত প্রদীপ ফেলে সেই বইখানা যদি পুড়িয়ে ভস্ম করে ফেলে, তাহলে তোমার কেমন লাগবে ? নিউটনের ক্ষেত্রে তাই হয়েছিল । পরবর্তীতে তিনি পুনরায় বইখানি লিখে শেষ করেছিলেন । যদি কেবল অর্থ লাভের আশায় হত তাহলে নিউটন বুঝি পুনরায় বই খানি লিখবার আগ্রহ পেতেন না । তুমি কি নিউটনের চাইতেও জ্ঞান সাধনা করেছ ? মহা মনীষীরা যদি অর্থ লাভের আশায় সাধনা করতেন তাহলে নবী মহাম্মদ (সাঃ) এর চাইতে কারো সম্পদ বেশি হতো না ! মনে মনে ভাবছ আমি তো মনিষী নই, আমার এসব ভেবে লাভ কি ? মূর্খতা পরিহার কর । নবী মহাম্মদ (সাঃ) এর মাধ্যমে যে ঐশী গ্রন্থ আবির্ভূত হয়, তাতে স্রষ্টার প্রথম শব্দ, ‘পড়’ । এই পড়ার নির্দেশ কি শুধু মহাম্মদ (সাঃ) এর উপর ?
কোন একাডেমিক শিক্ষা যদি কাউকে যথার্থ মানুষ করে তুলতে না পারে সে দায়ভার তোমার নয়, আগডুম বাগডুম প্রণেতাদের । তাই বলে জ্ঞান সাধনার রণে ভঙ্গ দিলে তো চলবে না । বড় আমাকে হতেই হবে, এই প্রত্যয় নিয়ে যে বাঁচে, সেই তো সাধক । সাধনায় সফলতা আসুক বা না আসুক, এতে যে স্বাদ আমি পেয়েছি তা হাজার জনমেও ছাড়তে রাজি নই । এই স্বাদ আস্বাদন করতে গিয়ে কেউ যদি তোমাকে ছেড়ে চলেও যায়, দুঃখিত হইয়ো না । যাহা সত্য বলে জেনেছ তাহা আঁকড়ে ধর । শিল্প বিপ্লবের শুরুর দিকে ১৭৭১ সালে স্যার রিচার্ড আর্করাইট যুক্তরাজ্যের ডার্বিশায়ারে ক্রমফোর্ড মিল নামে বিশ্বের প্রাচীনতম পরিপূর্ণ স্পিনিং মিল প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন । ছেলেবেলায় তাকে স্কুলে পাঠাবার মত সামর্থ্য তার বাবার ছিল না বলে তার এক চাচাত ভাইয়ের কাছেই তার পড়া লেখার ব্যবস্থা হয় । ঠিকঠাক ব্যবস্থা নয়, নিজে নিজে পড়া আর কি! পাঠশালায় গিয়ে আগডুম বাগডুম না পড়ে যৎসামান্য লেখাপড়া শেষে নাপিতের কাজ করে তার উপার্জন শুরু হয় । পরে তার পরচুলা লাগানোর ব্যবসাও স্থায়িত্ব পায়নি । উন্নত সুতা তৈরি করার যন্ত্র আবিস্কারের কথা তার মাথায় আসা মাত্র দিন রাত ভাবতে লাগলেন । রোজগার না থাকায় সংসার উচ্ছন্নে যাবার জোগাড় হল । স্বামীর ভীমরতি ছাড়াবার জন্য তার স্ত্রী ক্ষেপে গিয়ে, গবেষণার সমস্ত যন্ত্রপাতি ভেঙে চূড়ে বাইরে ফেলে দিলেন । আর্করাইটও খুব রেগে গেলেন । চিরতরে স্বামী স্ত্রীর ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল । আর্করাইটের গবেষণা চলতে থাকল । ঘরে খাবার নাই, পায়ে জুতা নাই, পরনে জীর্ণ পোশাক, এসবে তার ভ্রুক্ষেপ নাই । আর্করাইটের গবেষণা সফল হল । স্যার রিচার্ড আর্করাইট ‘স্পিনিং ফ্রেম’ আবিস্কার করে বিশ্ব সভ্যতার প্রধান ভিত্তি প্রতিষ্ঠায় সফল হলেন ।
আমাদের দেশের বিদ্যায়তন গুলোতে বেশির ভাগ শিক্ষক মণ্ডলী শিক্ষার্থীদের আগডুম বাগডুম পড়াতে পছন্দ করেন । জ্ঞান দানের ক্ষেত্রে কৃপণতা বা দীনতা অর্থ বোঝাতে এই আগডুম বাগডুম শব্দ যুগলের ব্যবহার । অবশ্য যথার্থ জ্ঞানী যিনি তিনি কৃপণতা করেন না । তিনি জানেন, জ্ঞান দানেই বাড়ে । প্রকৃত জ্ঞানের সাধক যিনি তিনিই হবেন মানুষ গড়ার কারিগর । আমাদের দেশে তা হয় না । নিয়োগ বাণিজ্যের দেশে কত অযোগ্য লোকই না এই পেশাতে ঢুকে পড়েছে, তার হিসেব কে রাখে ! সব জায়গায় নিয়োগ বাণিজ্য হলেও এই পেশায় কেন ? তোমার টাকা আছে অন্য পেশায় যাও বাপু, অন্য ভাবে সম্মান ক্রয় কর । তোমার বাপের টাকায় তোমার অধিকার আছে, তা দিয়ে তুমি যাচ্ছেতাই করতে পার । কিন্তু দোহাই তোমার,একটা জাতিকে নষ্ট করে দেবার ষড়যন্ত্রে তুমি লিপ্ত হইয়ো না । সারা জীবন ফাঁকি দিয়ে নিজেও শিখেছ আগডুম বাগডুম,স্কুল-কলেজে গিয়ে ছেলে-মেয়েদের পড়াবে তুমি ঘোড়ার ডিম । আগডুম বাগডুম অনর্থ অর্থে চেতনায় মিশে যাবার আগেই ঘোড়াডুম না সাজিয়ে বিশ্ব সভ্যতাকে সাজাবার মহৎ কাজে নিবেদিত হই । মনুষ্যত্ব, বিবেক আর জ্ঞান সাধনার স্পৃহা বিদ্যার্থীর মধ্যে জাগিয়ে তুলতে পারলেই তোমার শিক্ষক জীবন সার্থক । জ্ঞান সাধনায় উজ্জীবিত মানবাত্মা হবে যথার্থ মানুষ । অর্থে-বিত্তে, মেধা ও মননে নানা অর্থে সে উদ্ভাসিত হবেই হবে, এই বিশ্বাস সকলের থাকা চাই ।
কবি ও লেখকঃ রুদ্র আতিক, সিরাজগঞ্জ
১১ ফাল্গুন ১৪২৬ বঙ্গাব্দ ।
২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৮:২৫
রুদ্র আতিক বলেছেন: কেবল মাত্র ধারণাই নয়, বিশ্বাসও বটে ! ধন্যবাদ
২| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৫৩
রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
সর্বোওম মানুষ দুইটি গুনের অধিকারী, একটি হচ্ছে ‘জেন’ আর অপরটি হল ‘ই’। জেন হল অপরের প্রতি ভালোবাসা ও মমত্ববোধ। ই গুনের অর্থ হল সদাচার ও ন্যায়পরায়নতা।
২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৮:৩৪
রুদ্র আতিক বলেছেন: সর্বোত্তমই শুধু নয় সর্বোপরি মানুষের মধ্যেও এসব গুণ থাকা আবশ্যক বলে আমি মনে করি । ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৩৬
নেওয়াজ আলি বলেছেন: আপনার ধারণা সঠিক ।