![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিশ তারিখ শেষ হতে আর খুব বেশি দেরি নেই। যখন এই লেখাটা শুরু করছি তখন থেকে মাত্র আধাঘন্টা বাকি। তার পরেই একুশ তারিখ। একুশে জুন। একুশে জুনের একটা বিশেষত্ব আছে। এর দিনটা সবচেয়ে বড় দিন। বিভিন্ন পরীক্ষায় আসার মত বিষয়। বলো সবচেয়ে বড় দিন কোনটি, ক) তেইশে সেপ্টেম্বর খ) একুশে ডিসেম্বর গ) একুশে জুন ঘ) একত্রিশে ডিসেম্বর ?
তবে এ ছাড়াও দিনটার আরেকটা বিশেষত্ব আছে, আমার কাছে। বেশ অনেকদিন আগে এই একুশে জুনের প্রথম ভাগেই পৃথিবীতে এসেছিলাম। রাত প্রায় বারোটা পঁয়তাল্লিশে। ভীষণ বৃষ্টি হচ্ছিলো নাকি সেদিন। অবশ্যই আব্বু আম্মুর কাছ থেকে শোনা এগুলো, আমার মনে থাকার কোনা কারনই নেই সেই সময়ের কথা।
বোল্লাম আমার কাছে দিনটা বিশেষ, তবে কথাটা পুরোপুরি ঠিক না। আমার চেয়েও আব্বু আম্মুর কাছে দিনটা আরো বেশি বিশেষ। এইএকুশে জুনের পর থেকে তাদের জীবনটাই তো পালটে যায়। এই দিনে শুধু আমারি জন্ম হয় না, সাথে সাথে জন্মগ্রহন করে আরো কত স্বপ্ন। যেগুলোর বেশির ভাগই অপূর্ন থেকে গেছে। বেশিরভাগ সময়ই ভাবি যে জীবনটা তো আমার, আমার মত করে গড়ে নিব এটা। আসলেই কি তাই? আব্বু আম্মু না থাকলে কি জন্মাতে পারতাম? দেখতে পারতাম এই পৃথিবী? অস্তিত্ব থাকতো আমার? উত্তর তো না আসে সব প্রশ্নের। আমার জীবনের উপর আমার যতটা অধীকার, ততটা তো তাদেরও। শুনেছি রাতে নাকি ঘুমাতাম না। রাত হলেই নাকি কান্নাকাটি শুরু করে দিতাম। তখন কান্না থামানোর জন্য নাকি কোলেকরে ঘুরে বেড়াতে হতো। আব্বু আম্মু সারা রাত পালা করে জেগে আমার কান্না থামানোর চেষ্টা করতো। তার পর একটু বড় হলে শুরু হয় স্কুল জীবন, আমার সাথে সাথে তাদেরও রুটিনে হয় পরিবর্তন। সকালে উঠে কনোরকম নাস্তা বানিয়েই আমাকে নিয়ে তাদের স্কুলে ছুটতে হতো। আম্মু নাস্তা করার সময় পেত না। না খেয়েই আমার সাথে স্কুলে যেয়ে সারাটা সময় বসে থেকে আবার নিয়ে আসতো। এভাবে কেটেছে টানা দু বছর। এরপর স্কুল পরিবর্তন করার পর শুধু আমাকে আনা নেয়া করার জন্য আব্বু অফিসে রাতের শিফট নেয়।
আর আমার কি দরকার সেটা নিজে কখনোই বুঝতে পারিনি, কারন কিছু বলার আগেই সবকিছু পেয়ে গেছি। কিন্তু দিতে পারিনি কিছুই। আব্বুর কাছে যে কতটা গুরুত্ব ছিল তা সময়মত বুঝিনি। এখন বুঝি। যখন মানসিক ভারসাম্য পুরোপুরি হারিয়ে গেছে, তখনো আব্বু কেবলমাত্র আমার কথাই শুনতো কিছুটা। সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়েও অন্যেদের থেকে আমার প্রতি আব্বুর আচরন ছিল ভিন্ন। আব্বু মারা গেছে প্রায় চার বছর হতে চল্লো। চার বছর? বেশ অনেক সময় তো!
বাড়িতে মানুষ ছিলামই মাত্র তিন জন। আব্বু মারা যাবার পর দু জন। এখন আমিও বাড়িতে নেই। উচ্চশিক্ষা যেন লাভ করতে পারি সেজন্য উচ্চ মূল্য দিয়ে বাড়ির বাইরে আছি। এখন আম্মু বাসায় একা। একদম একা। তেইশ বছর আগের রাতে নিশ্চয় এই সময়ে আম্মু স্বপ্ন দ্যাখেনি যে তেইশ বছর পর তাকে পরোপুরি একা থাকতে হবে। কি ভয়ঙ্কর। কিন্তু আমার কিছুই করার নেই। কি করতে পারি? হ্যাঁ, এখনো একটা কাজ করতে পারি। বাকি সপ্নগুলো পূরন করতে পারি। মানুষের স্বপ্ন কখনো ফুরিয়ে যায় না। একটা পূরন না হলে অন্য একটা স্বপ্ন এসে তার জাইগা দখল করে। কিন্তু আমি এখনো বোকার মত যে সেই নতুন স্বপ্নগুলোকে আস্তে আস্তে খুন করে যাচ্ছি। না, এখনো মরেনি, তবে মৃত প্রায়। সেই স্বপ্ন গুলোকে বাঁচিয়ে তুলতে হলে যে নতুনভাবে সব শুরু করতে হবে। পারবো? না, "না" এর কোনো জাইগা নেই। পারতে হবেই।
যাইহোক, বারটা বেজে গেছে। Happy birthday to me. আগের, ছোটোবেলার জন্মদিন মানেই ছিল তৃতীয় ঈদ। নানু, নানি, খালা, মামারা, আব্বু, আম্মু সবাই মিলে অসাধারন সুখের একটা দিন হতো এই একুশে জুন। ভীষন আনন্দের কিছু স্মৃতি আছে এই দিনটাকে নিয়ে। আর আজ! একা একা ব্লগ লেখে দিনটা পালনের চেষ্টা করছি। পছন্দের মানুষগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে, অনেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে। আমিও তেমনিভাবে হারিয়ে জাবো একদিন। সেই অপেক্ষায়,
আতিক ইশরাক ইমন
( ২১ জুন ১৯৯৩ - এখনো চলছে )।
২১ শে জুন, ২০১৬ রাত ১:১১
আতিক ইশরাক ইমন বলেছেন: পড়ে ভালো লেগেছে জেনে আমারো ভালো লাগলো, ধন্যবাদ ভাই :-)
২| ২১ শে জুন, ২০১৬ রাত ১:১৬
লা-তাহ্যান বলেছেন: শুভ জন্মদিন!!
প্রতিটি পিতামাতার কাছেই সন্ত্বান মানে স্বপ্ন। তিলে তিলে সন্ত্বানের সাথে সাথে তাঁরা স্বপ্নও লালন করেন। কয়টা সন্ত্বানই বা তা উপলব্ধি করে!!আপনি উপলব্ধি করেছেন নিশ্চয় আপনি পারবেন স্বপ্নফুল গুলোকে ফুটাতে।
নিজের জন্মদিনে আপনার ভাবনা গুলোই প্রমাণ করে আপনি একজন সুসন্ত্বান।মাকে নিয়ে ভালো থাকুন সবসময়।
আপনার পিতার আত্বার মাগফিরাত কামনা করি।
২১ শে জুন, ২০১৬ রাত ২:০৫
আতিক ইশরাক ইমন বলেছেন: স্বপ্নফুল ফোটাতে হলে ভীষন পরিবর্তন প্রয়োজন, অনেকটা ভ্রূণ থেকে পূর্ণ মানুষ হবার মত। আপনার কথাগুলো বেশ অনুপ্রাণিত করছে, ধন্যবাদ ভাই।
৩| ২১ শে জুন, ২০১৬ রাত ২:২০
ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা
এসব নিয়েই আমাদের পথ চলা।
২১ শে জুন, ২০১৬ রাত ২:২৯
আতিক ইশরাক ইমন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ :-)
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে জুন, ২০১৬ রাত ১২:৫৮
সমূদ্র সফেন বলেছেন: সহমত .।হয়ত বা আজ থেকে ২৩ বছর পরে ,মহাকালের পথ -পরিক্রমায়,
আপনার অনাগত সন্তান ,কোন এক সপ্ন পুরুনের আখ্যান লিখতে বসবে।
সেদিন আপনি হয়তো ক্লান্ত পথিকের বেশে কোন এক নির্জন পথে অশথ ছায়ায় সময়ের সাথে একটু জিরিয়ে নিবেন।
জীবন হয়তো এমনই ।
পড়ে ভালো লাগলো ।
শুভ জন্মদিন