![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি খুব-ই শান্ত থাকি। মানুষের উপকার করার চেষ্টা করি।
সিগারেটের জন্য পকেটে হাত
দিয়ে হতভম্ব হয়ে যায়
আতিক। গতকাল তার খোলা
প্যাকেটে চারটি সিগারেট
ছিল। ইদানিং সিগারেট কমিয়ে
দিয়েছে সে দিনে সাত থেকে আটটার বেশি খাওয়া হয়
না। ভেবেছিল আজ
নতুন প্যাকেট কিনবে, কিন্তু পকেটে
হাত দিয়ে দেখে
আস্ত নতুন একটি সিগারেটের
প্যাকেট। আজকাল অনেক কিছুই
মনে থাকে না তার। সে নিজেও
বুঝতে পারছে যে
পার্থিব ব্যাপারগুলোয় সে আনমনা।
কিন্তু সিগারেট
কিনে ভুলে যাওয়ার মত এতটা আনমনা সে নয়। প্যাকেট
খুলে মাঝ
থেকে একটি সিগারেট ধরিয়ে
আবার হাটতে শুরু করে
সে।
আতিক এখন ইন্দিরা রোডের থেকে পশ্চিম
রাজাবাজারের দিকে একটি গলি
দিয়ে হাটছে। হাটছে
আর দু’পাশের বাড়িগুলোর দিকে
তাকাচ্ছে। না বাড়ি
ঘরের দিকে তাকিয়ে থাকা তার শখ না। সে বোর্ড
খুজছে, যে বোর্ডে কালো রঙয়ের
উপরে সাদা রঙে
লিখা থাকে ‘To-let’.
এইমাসে আতিকের একটি চাকরি
হয়েছে, খুব ভালো বেতনের চাকরি।ভার্সিটি থেকে
বেড়িয়েছে চার বছর
হলো। এই চার বছরে অন্তত চার’শ
ইন্টারভিউ সে দিয়ে
ফেলেছে। কিন্তু কোথাও কোন কাজ
হয়নি। শেষে চার বছর পরেই একটা চাকরি হয়ে
গেলো, তাও আবার খুব
ভালো বেতন। চাকরির জন্য মামা
চাচার ধরনা দিতে
হয়নি ভেবেই কেমন যেন উৎফুল্ল
লাগছিল তার। এবার শুধু একটি ভালো বাসা পেলেই হাপ
ছেড়ে বাঁচবে। হাটতে
হাটতে ভার্সিটির দিনগুলোর কথা
ভাবছিল সে। কতই না
রঙিন ছি সেই সব দিনগুলো।
সারাদিন আড্ডা, রাতে হলে ফিরে আবার রাত জেগে
টুয়েন্টি নাইন খেলা।
পরীক্ষার আগে নোট কিংবা চোথা
বাবার সন্ধানে
বের হওয়া। বন্ধুদের সাথে বাইকে
করে ঘুরে বেড়ানো। কতই সুন্দর ছিল সেসব দিন, এখনো
অমলিন।
এখন অবশ্য বন্ধুরা আগের মত নেই।
যে যার মত কাজে
ব্যাস্ত। এতদিন ভবঘুরে থাকায়
বন্ধুদের অনেকেই পরিচয় দিতে লজ্জা পায়। মনে পরে
আসলামের বাইক নিয়ে
সারাদিনের জন্য উধাও হয়ে
যাওয়ার কথা। সাথে
থাকতো লিমা। লিমা ছিল আতিকের
গার্লফ্রেন্ড। ভীষণ সুন্দরী মেয়ে। ভার্সিটিতে
লিমার আশিক
নেহায়েত কম ছিল না। সেই লিমা-
ই ছিল আতিকের
গার্লফ্রেন্ড। পেছন থেকে লিমা
জড়িয়ে ধরে রাখতো আর আতিক বাড়িয়ে দিত বাইকের
স্পিড।
কি যে রোমাঞ্চকর ছিল সেসব দিন।
ভার্সিটি থেকে
বের হওয়ার পরে তিন বছর আতিকের
কোন গতি হয়নি দেখে প্রবাসী এক ছেলেকে বিয়ে
করে গত বছর
আমেরিকায় সেটেল হয়েছে লিমা।
কিছুদিন খুব মানসিক
যন্ত্রনা ভোগ করার পরে আতিক
ভেবেই নিলো তার মত কাক- কপালে ছেলের তো এসব
পাওনাই ছিল।
আতিকের বাবা মারা যান আরও
অনেক বছর আগেই। বৃদ্ধ
মা পড়ে আছে গ্রামের
ভিটাবাড়িতে। চাকরি নেই আর ওদিকে মায়ের জন্য খরচ
পাঠাতে হবে। টিউশনি করে
নিজের খরচের টাকাই
উঠাতে হিমশিম খেতে হয়। একের
পর এক বাজেট আসছে
আর জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে। চারমাস আগে
আতিকের দূর সম্পর্কের এক চাচা হুট
করেই একটা প্রস্তাব
করলো। ঘরজামাই থাকার প্রস্তাব।
এক বড়লোক ব্যাবসায়ির মেয়েকে
বিয়ে করে ঘরজামাই থাকতে হবে। প্রথমে ফিরিয়ে
দিলেও শেষে বাধ্য হয়ে
সেই প্রস্তাব মেনে নেয় সে। যে
বাজারে চাকরি নেই,
সেই বাজারে ঘরজামাই থেকে
মায়ের জন্য আর নিজের জন্য কিছু টাকা আসলে খারাপ কি?
কিন্তু মেয়ে দেখে সত্যিই চিমসে
যায় সে। ইয়া মুটকি
এক মেয়ে। গোলগাল ফর্সা চেহারা,
নাক থ্যাবড়ানো।
এই মেয়ে এনিটাইম আতিককে তুলে আছাড় দেয়ার
ক্ষমতা রাখে বলে মনে হচ্ছিল
আতিকের কাছে। শেষে
বাস্তবতার স্বীকার হয়ে এই
মুটকিকে বিয়ে করে ঘরজামাই
হয়েছে সে তিনমাস আগে। মনে মনে ভাগ্যকে গালি
দিচ্ছে সে, “ শালার
চাকরি হইলি, তিনমাস আগে হইতে
পারলি না?” বউকে
নিয়ে বাইকে করে ঘুরার স্বপ্ন তার
নেই, কারন এই বউকে বাইকে বসালে তার নিজের বসার
জায়গা থাকবে না।
বাইক চালাবে কে?
মাঝে মাঝে এই ভেবে আতিকের
হাসি পায় যে,
হাতিটাকে ওয়েট মাপার যন্ত্রে উঠালে যন্ত্রটাই
অক্কা পাবে। এবার আতিক ভেবে
নিয়েছে সে
চাকরিতে জয়েন করে একাই উঠবে
ভাড়া বাসায়।
ঘরজামাই থাকার কিংবা বউয়ের কোন দরকার নেই তার।
একটু অন্যায় কাজ হবে বটে, তবে কত
অন্যায় তো আমরা
অকপটে করছি। খুন করার মত অন্যায়
মানুষ করতে পারলে
সে মুটকি বউকে ছেরে আসতে পারবে না কেন?
তাছাড়া সেই মেয়ের সাথে এখনো
ঠিকভাবে কথাই
বলেনি আতিক। আতিকের মনে হয়
কথা বলতে গেলেই এই
মুটকির হাঁপানি উঠবে। আতিকের এই মুটকি বউয়ের নাম
খুকি, অথচ তাকে দেখলে মিনি
সাইজের দ্বৈত বলে মনে
হয়। অবশেষে বারো হাজার টাকায়
দুই রুমের সুন্দর একটি
বাসা পেয়ে গেলো সে। এবার গ্রাম থেকে মাকে নিয়ে
আসবে। তার মা এখনো জানেই না
তার ছেলে ঘরজামাই
থেকেছে তিন মাস। ব্যাপারটা
ভালোই মনে হচ্ছে
আতিকের কাছে। কখনোই মা জানবেন না যে ছেলে
বিয়ে করেছে, কারন আতিক সেই
মুটকিকে তুলবে না এই
বাসায়। বাসা কনফার্ম করে দিয়ে
পথে পা বাড়ালো
আতিক। এবার কোন ভাবে হাতিটাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে
ফেলে চলে আসবে।
হুম পারলে আজকেই বলবে যে সে
চলে যাচ্ছে। নতুন বাসা
এতটা পছন্দ হয়েছে যে আতিক চলতি
মাসের ভাড়া সহই দিয়ে এসেছে। সকালে ঘুম থেকে
উঠে খুকিকে দেখতে
পায়নি আতিক , অবশ্য দেখার কোন
প্রয়োজনও আতিকের
নেই। হাতি দেখে দিন মাটি
হওয়ার উপক্রম। খুকির সেই দিনটি
খুকির কি যেন হয়েছে। খুকি বুঝতে
পারছে তার কিছু
একটা হয়েছে, কিন্তু কি হয়েছে তা
সে বুঝতে পারছে
না। সারাক্ষন খুকির কেমন যেন সুখী সুখী মনে হয়
নিজেকে।সে একা একা হাসে। আবার
লজ্জাও পায়। সব
থেকে বেশি লজ্জা পায় তার স্বামী
আতিকের সামনে
গেলে। অথচ মানুষটা ওর দিকে ঠিক ভাবে তাকায় না।
এতেই খুশি খুকি, কারন আতিক যদি
তার দিকে তাকিয়ে
থাকে তাহলে তো সে আতিকের দিকে
তাকাতে পারবে
না। আতিকের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগে
খুকির। আতিক
বাসায় না থাকলে আতিকের শার্ট
জড়িয়ে ধরে নাচে
সে, গন্ধ নেয় আতিকের গায়ের।
বিয়ের তিন মাস পেড়িয়ে গেছে অথচ আতিক এখনো
তাকে স্পর্শই
করেনি। খুকির বয়স আঠারো বছর
চলছে। বয়সের তুলনায়
সে একটু বেশিই মোটা। এই স্বাস্থ্য
কমানোর কত কৌশল প্রয়োগ করা হলো, কিন্তু কিছুতেই
কাজ হলো না। শেষে
মেয়ের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে খুকির
বাবা বেকার এক
যুবককে ঘর জামাই হিসেবে
রাখলেন। কিন্তু ঘরজামাইয়ের উড়ু উড়ু মন ভালো
লাগে না খুকির মায়ের।
সে মাঝে মাঝে এসে মেয়েকে
জিজ্ঞাসা করে যে,
জামাই তাকে আদর করে কি না?
খুকি লজ্জা পেয়ে বলে, “
কি যে বলোনা মা?”
খুকির সত্যিই খুব ভালো লাগে
মানুষটাকে। সারাক্ষন
চুপচাপ বসে থাকে। কিছু জিজ্ঞাসা
করলে উত্তর দেয়, না করলে চুপ থাকে। লোকটাকে
‘তুমি’ সম্বোধনে ডাকতে
ইচ্ছে করে খুকির। খুকি অন্য
মেয়েদের দেখেছে যে
তারা জামাইকে তুমি বলে সম্বোধন
করে। একদিন খুকি আতিককে বললো, “আচ্ছা আপনাকে কি তুমি করে ডাকা
যাবে?”
উত্তরে আতিক কিছুক্ষন চুপ করে
থেকে বললো,
“যাবে।“ সেদিন যে কত খুশি
লাগছিল খুকির কাছে! খুকির খুব ইচ্ছে করে দু’জন ছাদের
উপরে পাশাপাশি বসে
পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে। সারারাত
গল্প করতে। কিন্তু
আতিক সব সময় মন মরা হয়ে থাকে।
খুকি কখনো তার ইচ্ছের কথা বলতে সাহস পায় না।
সে ভাবে, একই খাটে
ঘুমুচ্ছি দু’জনে, একই ঘরে থাকছি,
এটুকুই কি যথেষ্ট না?
আজ খুকি সকাল সকাল ঘর থেকে
বেড়িয়ে গেছে। সে আজ আতিককে সারপ্রাইজড করাতে
চাচ্ছে। খুকি চায়
আতিকের হাসি দেখতে। হাসলে
মানুষটাকে কেমন
দেখায় খুকি এখনো জানে না। তবে
খুব সুন্দর লাগবে বলে খুকির বিশ্বাস। আতিক
এমনিতেই ভীষণ স্মার্ট
ছেলে। খুকি নিজেকে খুব ভাগ্যবতী
বলেই মনে করে।
আতিককে পেয়ে সে সত্যিই নিজেকে
খুব সুখী বলে ভাবে।
সেই দিনের বাকি ঘটনাঃ
শেষে আতিক ডিসিশন নিলো আর
একটি দিনও ঘরজামাই
থাকবে না সে। বাসাটা নিশ্চিত,
আজ রাতেই খুকিকে কোন ভাবে বুঝিয়ে চলে আসবে নতুন
বাসায়। খুকি একটু
বোকা টাইপের মেয়ে। তাকে যদি
বলা হয় কাউকে না
বলতে সে বলবে না কাউকে।
এখানেই সুবিধা। সুযোগ বুঝে রাতে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে
পরবে আতিক। আর
দেড়ি নয়। দুপুরে বাসায় এসে ব্যাগ
গোছাতে শুরু করে
আতিক। খুকি বাসায় না থাকায়
ভালোই হয়েছে, থাকলে একের পর এক প্রশ্ন করতো। রাতে
খুকি বাসায় আসলে
কেটে পরবে আতিক। বন্দী ঘর
জামাইয়ের জীবন থেকে
চিরতরে মুক্তি।
ব্যাগ গোছাতে যেয়ে ড্রয়ারে হাতিয়ে একটি ডায়ারি
পেলো আতিক। খুকির ডায়েরি। কারো
ব্যাক্তিগত
জিনিস নিয়ে কখনো মাথা ঘামায়
না আতিক।
তারপরেও সুন্দর মলাটের ডায়েরিটি একবার খুলে
দেখতে ইচ্ছে করলো। কিন্তু আতিক
ঠিক করলো ডায়েরি
সে খুলবে কিন্তু পড়বে না। ডায়েরি
খুলে প্রথম পতায়
চোখ পড়তেই ভ্রু কুচকে গেলো আতিকের। প্রথম
পাতার শিরোনামে
বড় করে লেখা,
“আজ আমার বিয়ে”
আজ আমার বিয়ের দিন। মজার
ব্যাপার হচ্ছে বিয়ের পরে মেয়েরা শ্বশুর বাড়িতে যায়,
কিন্তু আমার বর শ্বশুর
বাড়িতে উঠছেন। আমার বরের নাম
আতিক।ওর সাথে
আমার বিয়ের আগে একবার দেখা
হয়েছে। কি সুন্দর ছেলেরে বাবা! ইশ,আমার ভাগ্য
সত্যিই খুব ভালো। আজ
আমি নতুন ডায়েরি লিখা শুরু
করলাম। আমি ভাবছি এই
ডায়েরিতে শুধু আমার এবং আমার
বরকে নিয়ে লিখবো। আচ্ছা মিস্টার আতিক আমাকে কি
পছন্দ করেছে? মনে
হয় করেছে, নইলে বিয়ে করবে
কেন? আতিক খুব শিক্ষিত
ছেলে, তবে একটু গরিব। বিয়ের
পরে আতিক যদি ভালো চাকরি পায়
তাহলে আমি ওকে বলবো আমাদের
ছোট একটি বাড়ি
ভাড়া করতে। আমাদের দুজনের
সংসার। যাহ! এত প্ল্যান
সব লিখে ফেলছি! আচ্ছা এখন লিখা বন্ধ। কেউ
দেখে ফেললে কি বলবে! বলবে,
বিয়ে না হতেই বরের
জন্য পাগল হয়ে গেলি!
হি হি হি।
এতটুক পড়েই পিপাসা পেয়ে গেলো আতিকের। টেবিল
থেকে গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে
নিলো পানি।
জানালায় বাইরে তাকিয়ে দেখলো
পশ্চিমাকাশের
রক্তিম আভা এসে পরেছে জানালার কাঁচে।
অনিচ্ছা স্বত্বেও
ডায়েরীর পাতা উল্টাল আতিক।
“আজ বিয়ের দ্বিতীয় দিন”
আতিকের সাথে আমার বিয়ে হয়ে
গেছে। বিয়ে যে এতটা সহজ আমি জানতামই না।
তিনবার কবুল বলেই আমি আতিকের
বউ হয়ে গেলাম।
বরের নাম নিতে নেই, কিন্তু
আমি তাহলে ওকে কি নামে
ডাকবো ? সবাই তো জান, পরান, ময়না ডাকে। আমি ভাবছি
ওকে অন্য নামে
ডাকবো। ডাহুক পাখি নামটা কেমন?
আনকমন তাই না?
আমার বরটাও আনকমন। একদম
চুপচাপ। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে যখন বাসর ঘরে এলো নাক
ডেকে ঘুমাতে শুরু
করলো। নাক ডাকার শব্দে আমি
ঘুমাতে পারি না।
তবুও ভালো লাগছিল। আমি না
অনেক্ষন ধরে তাকিয়ে ছিলাম আমার ডাহুক পাখিটার
দিকে। প্রথম প্রথম লজ্জা করছিল।
পরে মনে হলো ও তো
আমার ডাহুক পাখি, লজ্জা কিসের?
একবার ইচ্ছে
করছিল ওকে ডেকে দুজনে সারারাত গল্প করবো। কিন্তু
কি গল্প করবো ভেবেই পেলাম না।
তাছারা মনে হলো
আমাকে বিয়ে করে ও খুশি হয়নি।
আবার মনে হলো ওর বোধহয় কোন
প্রেমিকা আছে।কিন্তু প্রেমিকা থাকলে আমাকে বিয়ে
করবে কেন? আমার খুব
কান্না পাচ্ছিল। একটা সত্য কথা
বলবো? বলেই ফেলি,
আমার না নিজেকে কেমন বউ বউ
মনে হচ্ছে। আমিতো সত্যিই এখন বউ। আচ্ছা আমি একটু
মোটা বলে কি ও
আমাকে পছন্দ করছে না? ইশ কোন
ওষুধ খেয়ে যদি হুট
করেই চিকন হয়ে যেতে পারতাম!
ওর জন্য আমি ডায়েট করা শুরু করবো।
নিয়মিত এক্সারসাইজ করবো,
তাহলে দুষ্ট ডাহুকটা খুশি
হবে। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে
দেখি ও জানালার
কাছে দাঁড়িয়ে আছে। আমার ডাকতে লজ্জা করছিল।
একই বিছানায় দুজনে ছিলাম
সারারাত, ভাবতেই লজ্জা
লাগে। কিন্তু আমাদের বাসর গল্প
সিনেমার মত সুন্দর
হয়নি। ও ঘুমিয়েছে সারারাত। “ডাহুক পাখিটা ধূমপান
করে”
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেছি
সিগারেটের গন্ধে। দেখি
আমার ডাহুক পাখিটা সিগারেট
টানছে। আমার এত মন খারাপ লাগছিল যে চোখে পানি
এসে গেলো।
আমি সিগারেট একেবারেই সহ্য
করতে পারি না। কিন্তু
ডাহুক পাখিটাকে ভালো লাগছে
সিগারেট টানতে দেখে। কি সুন্দর পুরুষালি ভাব!
পুরুষ মানুষ তো এক আধটু
সিগারেট টানবেই!
“ওর জ্বর”
রাতে ওর জ্বর এসেছে। সারারাত
শুধু প্রলাপ বকেছে। আমার খুব ইচ্ছে করছিল ওর মাথায়
হাত রেখে দেখি জ্বর
কতটুক। কিন্তু ও যদি রাগ করে!
এখনো পর্যন্ত ঠিক ভাবে
তাকায়ই-নি আমার দিকে। রাতে যে
কি অবস্থাটা হলো! ওর অনেক জ্বর বেড়ে গেলো।
এত রাতে আমি কাকে ডাকবো? আমার
ইছে করছিল ওকে
জড়িয়ে ধরে বলি,”কিছু হবে না
তোমার, আমি আছি না?”
না বাবা, এত ইচ্ছে ভালো না। ওর পাশে ঘুমুতে পারছি,
সারারাত ওকে দেখছি সেই কত
ভালো। শেষে আম-ও
যাবে ছালা-ও যাবে। আল্মিরা
থেকে যখন ডুভেট বের
করে ওর গায়ে টেনে দিলাম। ও তখন আমার হাত ধরে
বললো, “লিমা!” আচ্ছা এই লিমা
কে? আমার খুব কাঁদতে
ইচ্ছে করছে। ডাহুক, লিমা কি খুব
সুন্দরী?
“আজ আমি খুব খুশি” সেদিন অরু আপা জিজ্ঞাসা করলেন
আমি ডাহুক
পাখিটাকে আপনি বলি নাকি তুমি
বলি? এখন নাকি মেয়েরা বরকে
তুমি করে ডাকে। আমার
না ওকে তুমি করে ডাকতে ইচ্ছে করে। ওকে যদি কখনো
বলতে পারতাম,”এই তুমি শোন,আমি
তোমাকে অন্নেক
ভালোবাসি!” হি হি। আজ আমি যখন
ওকে বললাম,
“আমি কি আপনাকে তুমি করে ডাকতে পারি?” ও শুধু ঘাড়
নেড়ে “যাবে” বলে সম্মতি দিয়ে
দিল। আমার যে কত
ভালো লাগছে! তুমি তুমি এবং তুমি।
“আজ আমার জন্মদিন ছিল”
আজ আমার জন্মদিন ছিল। আমার ঊনিশতম জন্মদিন।
ভেবেছিলাম আমার ডাকুক এসে
আমাকে উইশ করবে।
কিন্তু ও জানেই না। নিজের
জন্মদিনের কথা কি কেউ
স্বামীকে বলতে পারে? এখন রাত তিনটা বাজে। আমার
খুব মন খারাপ। আমার মন খারাপ
হলে আমি বারান্দায়
বসে চাঁদদেখি। “আমি কমে গেছি!”
ইয়েয়েয়েয়ে.........
গত একমাস ধরে আমি নিয়মিত ডায়েট করছি। এই
একমাসে আমার ওয়েট দুই
কেজি কমে গেছে। প্রয়োজনে আমি
সারাজীবন ডায়েট
করবো! ডাহুহুহুহুক পাখি......,
আমি কমে গেছি! “সালমান খান/ ক্যাট্রিনা কাইফ”
আজকে ডাহুক পাখিটাকে বললাম
তুমি কাকে সবথেকে বেশি
ভালোবাসো? সে আস্তে
করে বললো, “ক্যাট্রিনা কাইফ।”
আমার ইচ্ছে করছিল ক্যাট্রিনার দুইগালে কষে দুইটা
চড় মারতে। ও না আবার
আমাকে জিজ্ঞাসা করলো আমি কাকে
বেশি
ভালোবাসি? আমার
মাথায় তখন শুধু ঘুড়ছে, “তোমাকে তোমাকে তোমাকে।“
আমিও আস্তে করে বললাম, “সালমান
খান।”
সন্ধ্যা হারিয়ে যায় যায় প্রায়।
আতিকের মুখ থমথম
করছে। মাথাটা ঝিম ধরে গেছে। চোখেমুখে পানি
ছিটিয়ে আবার খুকির ডায়েরি
হাতে নিয়ে বসে। একটি
করে পাতা উল্টায় আর অবাক হয়ে
পড়তে থাকে।
অবশেষে শেষ পাতায় এসে পড়তে শুরু করে আতিক।
“আজ ওকে সারপ্রাইজ দেব”
আজকে ডাহুক পাখিটার বিশেষ
একটি দিন। আমার
জন্যে খুব বিশেষ। সকালে ওর
পকেটে নতুন একটি সিগারেটের প্যাকেট রেখে
দিয়েছি। ও পকেটে হাত
দিয়েই অবাক হয়ে যাবে। ওর
চেহারা তখন কেমন হয়,
আমার খুব দেখার শখ। কিন্তু আমি
দেখতে পাবো না। আজ খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে
হয়েছে। এক্ষুনি
বেড়িয়ে পড়তে হবে। ওর জন্য দারুন
একটা সারপ্রাইজ
থাকবে রাতে। ও অনেক খুশি হবে।
ওর হাসিমুখ এখনো দেখিনি। ওকে আমি
যাই। লাভ ইউ ডাহুক
পাখি।
ডায়েরি বন্ধ করে জানালায়
দাঁড়ায় আতিক। রাত
নেমেছে শহর জুড়ে। খুকি এখনো আসেনি। সিগারেট
ধরায় সে। ভাবতে থাকে খুকি কি
সারপ্রাইজ দেবে
তাকে? তাছারা আজ আবার কিসের
বিশেষ দিন? কি
আছে তার এমন চাওয়া, যা পেলে সে খুব খুশি হবে!
আতিক আবার ব্যাগ গোছাতে শুরু
করে। খুকি এখনো
আসেনি। খুকির সাথে কথা বলা
দরকার। রাত প্রায়
সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে। খুকি এখনো আসেনি।
রাত বারোটায় বার্থডে কেক নিয়ে
ঘরে ঢোকে খুকি।
হাসিমুখে উইশ করে আতিককে। কেক
কাটা শেষে খুকি
বললো, “এইযে, একটু চোখ বন্ধ করবে
প্লীজ?”
চোখ বন্ধ করে আতিক। দু’মিনিট
পরে খুকি আবার
বললো,”হ্যা, এবার চোখ খোলো।“
চোখ খুলে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আতিক। চোখ ভিজে
আসে তার।
টেবিলে খুকি সামান্য একটি
মাটির খেলনা ঘোড়া
রেখেছে। কিন্তু আতিকের অনেক
স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই মাটির খেলনায়। ছোটবেলায় তার
বাবা যে বছর মারা
যান, সে বছর বাবা মেলা থেকে
কিনে দিয়েছিলেন।
আতিক খুকিকে জিজ্ঞাসা করে
কোথায় পেয়েছে এই খেলনা? খুকি হাসিমুখে বলে, “আজ
দেখা করে এলাম
তোমার মায়ের সাথে।“
আতিক আরও অবাক হয় খুকির
ভালোবাসা দেখে।
এইমেয়ে তাকে খুশি করার জন্যে কত কি করছে। অথচ
এখনো সে মেয়েটির সাথে
ঠিকভাবে কথাই বলেনি বরং
একটু
হলে পালিয়েই যেতো আতিক।
ভাগ্যিস সময় মত ডায়েরিটা হাতে এসেছিল! আসলে
এই তো ভালোবাসা।
এর থেকে বেশি আর কি? আতিক চোখ
মুছে খুকির দিকে
তাকিয়ে বললো, ”খুকি চোখ বন্ধ
করো, তোমার জন্যেও একটি সারপ্রাইজ আছে।“
বাধ্যমেয়ের মত চোখ বন্ধ করে
খুকি। দু’মিনিট আতিক তাকিয়ে
থাকে খুকির দিকে।
কতটা সরলতা মেয়েটির মাঝে।
কতটা অন্ধ ভালোবাসা এই মেয়েটি বাসতে পারে!
আতিক আরও একটু কাছে ভিড়ে বলে,
”এবার চোখ খুলো খুকি।“
খুকি চোখ খুলে দেখতে পায় একটি
চাবির রিং। আতিক
বলে, ”আমাদের নতুন বাসার চাবি। আমার খুব ভালো
একটা চাকরি হয়েছে। কাল
তোমাকে নিয়ে নতুন বাসায়
উঠবো। আমার সব গুছিয়ে নিয়েছি,
তুমিও সকালের মাঝে
তৈরি হয়ে নিও। আর খুকি শোন, বিয়ের দিন যে শাড়িটা
পড়েছিলে, আজকে কি একবার পড়বে
১৪ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৩
নবিন ব্লগার বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে, সামনে থেকে গুছিয়ে লিখার চেসি করবো। ইনশাআল্লাহ
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১১:২৪
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: ইশ পড়তে পড়তে হারিয়ে গেছিলাম । কি সুন্দর অনুভূতি
ভালবাসার গল্প আমার খুব ভাল লাগে। আরো লিখুন তবে ফরম্যাট আরেকটু গুছাতে হবে