নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানবিকতা যার মধ্যে আছে সেই আল্লাহকে পায়

আতা স্বপন

আমি একজন মুসলমান। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি আমার ধর্ম ও আমার দেশকে ভালবাসি। ভালবাসি ধর্মমত নির্বিশেষে আমার দেশের সকল মানুষকে।আমি সৎ মানুষ ভালবাসি। নিজে সৎ হতে চাই।

আতা স্বপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেবি রাজাকার

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:২০

১.
জোহরের নামাজ আদায় করে বাসার পথে হাটছিল সে। এ পাড়ায় অনেক গলি আছে যেমন প্রেম গলি যেখানে পোলাপান থেকে শুরু করে জোয়ানবুড়া সবাই আড্ডা দেয়। আবার আছে ভুতের গলি। এ গলিতে গেলেই দিনের বেলায়ও সবার গা ছম ছম করে। এ গলিটার নাম অন্ধগলি। অন্যগলির মত এরও দোষ আছে। নেশার কারবার থেকে শুরু করে ছিনতাই , যত রকমের দুই নম্বারি ধান্দা সব এগিলেতে হয়। নাবিল নামের ছোট্ট ছেলেটি প্রতিদিন এ পথ দিয়ে মসজিদে যাতায়ত করে। তার বাড়ির থেকে মসজিদে যাওয়ার এই একটাই পথ। রোজকার মত আজও নামাজ শেষে নির্জন গলিপথে শুনশান নিরবতায় জিকিরে ফিকিরে পথ চলায় আত্মমগ্ন সে। ঠিক তখনি এলাকার কিছু মাস্তান টাইপের ছেলে তার পথ রোধ করে দাঁড়াল।

এদের মধ্যে বল্টু নামের কোঁকড়ানো উস্ক খুস্ক চলের ছেলেটি সম্ভবত মস্তান দলটির লিডার হবে, মুখ দিয়ে ষাঁড়ের মতো আওয়াজ করে বলল, এই রাজাকারের বাচ্চা থাম!

দেখ ভাই! আমার আব্বু একজন মুক্তিযোদ্ধা। এপাড়ার সবাই তা জানে। মুক্তিযোদ্ধার ছেলেকে এটা বলা কি ঠিক হলো। আমিতো রাজাকারের বাচ্চা না!

ভালই ডায়লগ শিখছস দেখতাছি। কোন ফিলমের লেকছার?

এটা লেকচার নয়। যা সত্য তাইতো বললাম।

ঐ বেডা বেশী ফুটর ফাটুর করবিনা কইলাম। ডায়লগ কম লবি! আর একটা কথা যদি কস এমন থাবরা দিমুনা বত্রিশ দাত পাউডার হইয়া যাইব।

আর হেই পাউডার দিয়া আমরা বেগতে দাত মাজমু। হি-হি-হি। বলল মদনা নামের এক মস্তান।

আরেক মস্তান বলল, গুরু ! এইডাতো পোলাপান। যারে কয় বেবি রাজাকার। এরতো বত্রিশ দাতই উডে নাই।

জব্বর কইছসতো! এক্কেবারে খাটিকতা! বেবি রাজাকার মুখটা ফাককরতো দেহি! তোর বত্রিশ দাত ঠিকমতন উঠছেনি। হা-হা-হা

তোমরা এমন করছ কেন? সামনে থেকে সর। বাসায় যাবো।

যাইবি! আবশ্যই বাসায় যাইবি! যাইতেতো তরে দিমুই। তয় তার আগে তরে একটু সাইজ কইরা লই। রাজাকার হইছস তুই! রাজকার বাইটা আজকা তরে খাওয়ামু!

আমি রাজাকার না!

হারাদিন মজ্জিদে দৌড়াছ !চলস দেহি দাড়ী টুপি অলাগো লগে, আর কস রাজাকার না তুই! বড়ই তাজ্জব হইলাম!

মসজিদে গেলেই কেউ রাজাকার হয় না! রাজাকার শব্দাটা কিন্তু ভাল তবে…………..
তাকে থামিয়ে দেয় বল্টু।

ঐ বেডা! তরে না কইছি ডায়লগ কম লবি! লেকছার বন্দ কর!

দেখ ভাই! প্রতিটি মোসলমানকে পাঁচ ওয়াক্ত নাজমা পড়তে মসজিদে যেতেই হবে! এটা আল্লাহর হুকুম। তার হুকুম না মানলে তিনি নারাজ হন।

গুরু! চান্দুতো রাজাকারী সবক ভালই লইছে!

এই ছবক অর পেড থেইকা এহনি বাইরকরতাছি দারাইয়া খালি দেখ।

কেমনে গুরু?

বেবি রাজকারডারে ধইরা এক ডোক ফিডার খাওয়াইয়া দে! দেখবি সোনারচানের রাজকারী ভাগব।

মদনা ফেনসিডিলের বতলটা নাবিলের মুখে চেপে ধরে।

খা বেবি রাজাকার! ফিডার খা! হি-হি-হি।

মদনার হাত থেকে ছুটার জন্য ধস্তা ধস্তি করে সে। তার জোড়াজুড়িতে বোতলটি মাটিতে পরে যায়। সে মুখ ভড়ে বমি করে মদনার সার শরির ভাসিয়ে দেয়।

দিছেরে! হালায় আমারে গান্দা কইরা দিছে। ধর রাজকারডারে!
পরিমরি করে নাবিল ছুটতে শুরু করল।

2.
ইদ্রিস আলী খিলগাঁও জামে মসজিদের ইমামতি করেন। অন্য ইমামদের মত তিনি কিন্তু বেতন ভুক্ত কর্মচারি নন। আল্লাহর খলিফা হিসেবে ইসলামের প্রতিটি কাজ তার সন্তুষ্টির জন্য করা উচিত।বিশেষ করে নামাজ রোজা হজ্জ যাকত এগুলা কোন দুনিয়াবি স্বার্থে করা ঠিক নয়। তিনি এটা বিশ্বাস করেন। তাই ইমামতি করে বেতন নেন না।

তার মতে, নামাজ হইল আল্লাহপাকের অপার করুনা! আর আমি তার নগন্য খাদেম! আমার কাজ হইল বিনাশর্তে আল্লাহর পয়গাম মানুষের কাছে পৌছানো। এতে আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি হাসিল করা যাইব।পয়সা করি লইয়া এইসব করা মানে তার সন্তুষ্টি থেইকা অগুলারে বেশী গুরুত্ব দেয়া।

ইমাম সাহেবকে মসজিদ কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব আজমত উল্লাহ তার গ্রাম থেকে নিয়ে এসেছেন। তিনি তার ছাত্র ছিলেন। ছোট বেলায় তার কাছে মক্তবে পড়েছেন। তার সততা আর স্পষ্ট কথা বলা আজমত সাহেবের খুব পছন্দ। তিনি ইমাম সাহেবকে মসজিদ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা করেছেন। তার উপদেশ ও পরামর্শ কমিটির সবাই মান্য করে। মসজিদের পাসে একটি টুপির দোকান আছে আছে। এর আয় দিয়ে ইমাম সাহেব সংসার চালান। সংসার বলতে এখন কেউ নাই! তার একটি মাত্র মেয়ে বড়ের সাথে সৌদী চলে গেছে। তিনি তাই এখন একা।অন্ধগলির শেষ মাথায় চারতলা বাড়িটি হল আজমত উল্লাহ সাহেবের বাড়ি। এ বাড়ীর নিচ তলায় ইদ্রিস আলি ভাড়া থাকেন।

জোহর নামাজ শেষ করে কালামে পাক তেলওয়াত করা তার প্রতিদিনকার রুটিন মাফিক কাজ। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

তিনি মধুর সুরে কুরআনা পড়ছিলেন- ইন্নাদ দিনা ঈনদাললাহীল ইসলাম (নিশ্চয় ইসলামই হল আল্লহর নিকট গ্রহন যোগ্য একমাত্র জীবন ব্যবস্থা)।
এমন সময় তার গায়ের উপর এলিয়ে পড়ল একটি দেহ।

কে? কে? হতচকিত ইমাম সাহেব ।

হুজুর! হুজুর।

আরে নাবিল! তোমার কি হইছে বাবা?

ব-বল্টু-উর দ-ল আমা-র পিছু নিয়েছে। হাপাতে থাকে সে।

পিছু নিছে! কই দেখি চলতো।

নাবিলের কাছেপুরো ঘটনাটা শুনে ছাতা হাতে মসজিদ থেকে বের হলেন ইমাম সাহেবে।

বল্টু তার সাংগো পাংগো নিয়ে মসজিদের বাইরে চেচাঁতে থাকে।

এ বেডা বেবি রাজকার বাইর হ! নইলে কপালে বহুত খারাবি আছে!

ঐ বজ্জাতের দল মসজিদের সামনে এমন চিল্লা ফাল্লা কেন?

যেই ইন্দুরডা আপনের গর্তে হান্দাইছে অরে বাইর করেন! নইলে…………..

নইলে! নইলে কি করবা তোমরা?

হেইডা আপনেরে কওন লাগবো?

আমারেই বলতে হইবো।সোজা সরল পোলাডারে রাস্তায় পাইয়া এমন কামটা কেমনে তোমরা করলা? ও তোমাগো ছোট ভাই! ওর সাথে এমন করা ঠিক হয় নাই। বেচারা বহুত ভয় পাইছে।

দেহেন ইমাম হইছেন মসজিদের বিত্তে যাইয়া ওয়াজ করেন! আমাগোরে হুনায়া কাম নাই! আমাগোরে আমাগো কাম করবার দেন। এ মামলার মইন্দে হান্দাইয়েন না!

হারামজাদারা! আমার লগে বেয়াদবি।

বেয়াদবির আমনে দেখছেন কি? অহন সময় আছে নিজের কামে যান! বহুত ফয়দা হইবো।

শয়তান কি আওলাদ! তোগ এতবড় সাহস! এইটা দিয়া (হাতের ছাতাটা দেখিয়ে) এমন বাড়ি দিমু বাপ-দাদার নাম ইয়াদ আইব না!

আমাগো লগে লাগতে আইলে কপালে বহুত খারাবি আছে কইলাম।

বেত্তুমিজের ছাও! হারামি কা আওলাদ! আমারে তোরা ডর দেহাস। এই ইদ্রীস মাওলানা আল্লা ছাড়া কাউরে ডরায় না।

রেগে গেলেন ইমাম সাহেব। রাগে গজগজ করতে করতে ঠাস করে ছাতার এ ঘা বসিয়ে দিলেন বল্টুর মাথায়। জ্ঞান হারালো সে। বাকি মস্তানরা তখন আক্রমন করলো ইমাম সাহেব কে। তিনিও কম কিসে ছাতাটা দিয়ে আক্রমন পতিহত করতে লাগলেন অনেকটা লাঠির মত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে।
চমৎকার লড়ে যাচ্ছেন তিনি মাস্তান দলটির সাথে। ইমাম সাহেরব ছাতার বাড়ি সইতে না পেরে একসময় বল্টু কে ফেলেই দৌড়ে পালাল মাস্তানরা।

নাবিল এতক্ষণ দূরে দাড়িয়ে ইমাম সাহেবের কেরামতি দেখছিল। ভাড়ি অবাক হল সে।

যাও বাবা! বাড়ি যাও! আর কোন ডর নাই।

বেত্তুমিজগুলারে জম্মের শিক্ষা দিয়াদিছি।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। হুজুর! কিন্তু এতগুলো লোকের সাথে আপনি একা যেভাবে লড়লেন সত্যই অবাক হবার মতো।

তাজ্জাব হইয়া গেছো না! তাজ্জাব হওনের কিছুই নাই। আমি হইলাম গ্রামের পোলা। ছোট থেইকা লাঠি খেলা ভালই জানি। কয়েবার পুরস্কারও পাইছি।

হুজুর ওর মনে হয় ফাস্ট এইড লাগবে। চলেন ওকে ফার্মেসিতে নিয়ে যাই।

তাই চল। ও অমানুষ হইতে পারে! আমরাতো মানুষ। যারে বলে আশ্রাফুল মাকলুকাত।

বল্টুর অচেতন দেহটা ধরে দুজনে পাসের ফার্মেসিতে নিয়ে গেল।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:৩২

যোগী বলেছেন:
আজ একটা রাজাকারের ফাঁসির রায় হয়েছে সেটা নিয়ে আপনার সৎ মতামত কী?

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:২৮

আতা স্বপন বলেছেন: যে রাজাকার তার ফাসিঁ হওয়াই উচিত। তাই নয় কি?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.