![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কত্তোজনার কত্তোকিছুই হলো আমার না-হয় পান্তাভাতত নুন কত্তো কী যে হওয়ার কথাই ছিলো আমার না-হয় পাগলামিটাই গুণ! ------------------------------------ প্রকাশিত বই ১. লঘুচালে চোরাবালি খেলা; কাব্যগ্রন্থ; ২০০৪; অন্ত্যজ, ঢাকা ২. উন্মাদ; খালিল জিবরানের দ্য ম্যাডম্যান-এর অনুবাদ; বইমেলা ২০০৬; ইত্যাদি প্রকাশনী, বাংলাবাজার, ঢাকা। ৩. জেগে উঠছে ইরান, শিরিন এবাদি’র ইরান অ্যাওয়াকনিং-এর অনুবাদ; বইমেলা ২০০৭; সন্দেশ প্রকাশনী, আজিজ সুপার মার্কেট, শাহবাগ, ঢাকা। ৪. সরস সতী; কাব্যগ্রন্থ; বইমেলা ২০০৮; সন্দেশ প্রকাশনী, বইপাড়া, ১৬ আজিজ সুপার মার্কেট, শাহবাগ, ঢাকা। ৫. চে স্মৃতিকথা; ফিদেল কাস্ত্রোর চে: আ মেমোয়ার-এর অনুবাদ; বইমেলা ২০০৮; সন্দেশ প্রকাশনী, বইপাড়া, ১৬ আজিজ সুপার মার্কেট, শাহবাগ, ঢাকা। ৬. আমার ক্ষোভ আমার অহংকার; ওরিয়ানা ফাল্লাচির দ্য রেইজ অ্যান্ড দ্য প্রাইড-এর অনুবাদ; বইমেলা ২০০৮; সন্দেশ প্রকাশনী, বইপাড়া, ১৬ আজিজ সুপার মার্কেট, শাহবাগ, ঢাকা। ৭. কবিসঙ্গ অনুষঙ্গ, মুক্তগদ্য, জুলাই ২০০৮, যেহেতু বর্ষা, ২৭৫/জি, ধানমণ্ডি, ঢাকা। ৮. WOMB TO-LET; দ্বিভাষিক কাব্যসংকলন; জুলাই ২০০৯; ঢাকা। ৯. আমাদের আর তাহাদের আমেরিকা; একুশে বইমেলা ২০১০; সন্দেশ; বইপাড়া, ১৬ আজিজ সুপার মার্কেট, শাহবাগ, ঢাকা। ১০. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ (প্রা.) লি.; কাব্যগ্রন্থ; একুশে বইমেলা ২০১০; সন্দেশ; বইপাড়া, ১৬ আজিজ সুপার মার্কেট, শাহবাগ, ঢাকা। সম্পাদিত পত্রিকা করুল, ২০০৫- ই-মেইল: [email protected] ওয়েব: http://www.auboni-aunarjo.com প্রকাশিত বই ১. লঘুচালে চোরাবালি খেলা; কাব্যগ্রন্থ; ২০০৪; অন্ত্যজ, ঢাকা ২. উন্মাদ; খালিল জিবরানের দ্য ম্যাডম্যান-এর অনুবাদ; বইমেলা ২০০৬; ইত্যাদি প্রকাশনী, বাংলাবাজার, ঢাকা। ৩. জেগে উঠছে ইরান, শিরিন এবাদি’র ইরান অ্যাওয়াকনিং-এর অনুবাদ; বইমেলা ২০০৭; সন্দেশ প্রকাশনী, আজিজ সুপার মার্কেট, শাহবাগ, ঢাকা। ৪. সরস সতী; কাব্যগ্রন্থ; বইমেলা ২০০৮; সন্দেশ প্রকাশনী, বইপাড়া, ১৬ আজিজ সুপার মার্কেট, শাহবাগ, ঢাকা। ৫. চে স্মৃতিকথা; ফিদেল কাস্ত্রোর চে: আ মেমোয়ার-এর অনুবাদ; বইমেলা ২০০৮; সন্দেশ প্রকাশনী, বইপাড়া, ১৬ আজিজ সুপার মার্কেট, শাহবাগ, ঢাকা। ৬. আমার ক্ষোভ আমার অহংকার; ওরিয়ানা ফাল্লাচির দ্য রেইজ অ্যান্ড দ্য প্রাইড-এর অনুবাদ; বইমেলা ২০০৮; সন্দেশ প্রকাশনী, বইপাড়া, ১৬ আজিজ সুপার মার্কেট, শাহবাগ, ঢাকা। ৭. কবিসঙ্গ অনুষঙ্গ, মুক্তগদ্য, জুলাই ২০০৮, যেহেতু বর্ষা, ২৭৫/জি, ধানমণ্ডি, ঢাকা। ৮. WOMB TO-LET; দ্বিভাষিক কাব্যসংকলন; জুলাই ২০০৯; ঢাকা। ৯. আমাদের আর তাহাদের আমেরিকা; একুশে বইমেলা ২০১০; সন্দেশ; বইপাড়া, ১৬ আজিজ সুপার মার্কেট, শাহবাগ, ঢাকা। ১০. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ (প্রা.) লি.; কাব্যগ্রন্থ; একুশে বইমেলা ২০১০; সন্দেশ; বইপাড়া, ১৬ আজিজ সুপার মার্কেট, শাহবাগ, ঢাকা। সম্পাদিত পত্রিকা করুল, ২০০৫- ই-মেইল: [email protected] ওয়েব: http://www.auboni-aunarjo.com
[লেখাটি যায়যায়দিনের আর্ট অ্যান্ড কালচার ম্যাগাজিনে 27 জুলাই 2006 তারিখে প্রকাশিত]
জন আপডাইকের সর্বশেষ উপন্যাস 'টেরোরিস্ট'
অবনি অনার্য
টাইম পত্রিকার সঙ্গে সাাৎকারে জন আপডাইক তাঁর নতুন উপন্যাস, আমেরিকার সর্বগ্রাসী ুধা, পছন্দের বই আর তাঁর দুঃখবাদী না হবার কারণ নিয়ে কথা বলেছেন লেভ গ্রসম্যান-এর সঙ্গে
জন আপডাইক যুক্তরাষ্ট্রে টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে এসেছেন দুবার, 1968 আর 1982-তে। প্রথমবার এসেছেন উপশহরে শয্যাসঙ্গী অদলবদলের কাহিনী নিয়ে লেখা সাড়া জাগানো উপন্যাস কাপল্স-এর জন্য। তখন শিরোনাম হয়েছিলো এরকম_ ব্যাভিচারী সমাজ (দ্য অ্যাডাল্টারাস সোসাইটি)। অথচ চার খণ্ডের র্যাবিট সিরিজের তৃতীয় খণ্ড র্যাবিট ইজ রিচ-এর জন্য প্রায় সব সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী আপডাইক দ্বিতীয়বার প্রচ্ছদে এলেন অনেকটা নিষপ্রভ শিরোনাম নিয়ে_ পঞ্চাশেও নায়ক তিনি।
আপডাইকের পছন্দ কিন্তু দ্বিতীয় প্রচ্ছদ। মিটিমিটি বাঁকা হাসিতে তিনি বলেন, "এর ফলে আমাকে মনে হয়েছে শান্ত, প্রহেলিকাময়। আমি এরকমটাই চেয়েছিলাম।" আজ যদি তিনি প্রচ্ছদে আসেন তাহলে কেমন হওয়া উচিত শিরোনাম? "এখনো বেঁচে আছেন, বিস্ময়কর!" মুখের হাসি আরো মিটিমিটি, আরো বাঁকানো এবার, তিনি প্রস্তাব দেন, "এখনো জীবিত_ কিন্তু কেন?"
নিজের 22-তম উপন্যাস টেরোরিস্ট নিয়ে আপডাইক নিজের প্রশ্নের নিজেই উত্তর দেন। টেরোরিস্ট আসলে খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত সমসাময়িক নিউজার্সির একটি হাই স্কুলের ছাত্র আহমাদের বিস্ময়কর গল্প। ইসলামের প্রতি অকুণ্ঠ বিশ্বাস আর আধুনিক জীবনযাত্রার প্রতি দ্রোহ তাকে পূর্ব-পশ্চিম তথা মুসলিম-খ্রিস্টান দ্বন্দ্ব-যুদ্ধের নাচের পুতুল করে তোলে। তারা অবশ্য তাকে আপডাইকের আমেরিকার সভ্যতার চিরস্থায়ী, চলমান সমালোচনার শক্তিমান কণ্ঠস্বর রূপেও গড়ে তুলেছে; ওদিকে নিজস্ব সরলতার এ এক স্বতন্ত্র করুণ পরিণতি।
চুয়াত্তর বছর বয়সেও আপডাইক আমেরিকার একজন বিশিষ্ট লেখক এবং দেশটার একজন নির্দয় পর্যবেক। তাঁর গদ্য উচ্চ-মতাসম্পন্ন টেলিভিশনের সাহিত্যরূপের সমার্থক। টেরোরিস্ট প্রমাণ করে, তাঁর স্থিরদৃষ্টি এখনো টলোমলো হয়নি, যদিও তাঁর অনুভূতির এতোটা মিশ্রণ এর আগে ঘটেনি।
টাইম: আঠারো বছর বয়স্ক একজন ইসলামি চরমপন্থী নিয়ে বই লেখার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?
আপডাইক: আমার মনে হয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষত আমেরিকার প্রতি মুসলমানদের বিদ্বেষের কারণ আমি দেখতে পাবো। কেননা, আমাদের অহংকার এবং উপভোগের অংশটুকু একটা সরল জ্বলন্ত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে চলে যায়। ভেবেছি, এ-বিষয়ে আমার অন্তদর্ৃষ্টি প্রকাশ করতে পারবো। জানি না, ঠিক কী কারণে এমন ভাবনা হয়েছে। যৌবনে ধর্মকর্মও সেরকম পালন করিনি।
টাইম: আপনি আহমাদের সঙ্গে সত্যিকারের সম্পর্ক তৈরি করতে পেরেছেন। অথচ তার সঙ্গে বাস্তবিকই আপনার তেমন মিল নেই।
আপডাইক: আমি ওর ভেতরে পুরোপুরি প্রবেশ করতে পেরেছিলাম। তাকে আমি পছন্দ করেছি, সমবেদনা জানিয়েছি; এমনকি ওর প্রশংসাও করেছি। নিজের কথা যদ্দুর মনে পড়ে, কোনো না কোনোভাবে ওর সঙ্গে আমার মিল আছে। অবশ্য, সে অনেক বেশি ধার্মিক, ঠাণ্ডা মেজাজের, আর স্থির। না, আমার মতো অগোছালো চুলের, অনুগত কুকুরছানার মতো তারুণ্য তার নয়। সে এতোটা নীচ নয়। তার মধ্যে সাংঘাতিক একটা ব্যাপার আছে।
টাইম: জাতিগত পরিচয় নিয়ে আজকাল লোকজন বেশ সজাগ। একজন আরব-আমেরিকানের কাহিনী নিয়ে লেখা আপনার বইটি পাঠক সেভাবে নেবে না_ এরকম ভীতি কাজ করেনি?
আপডাইক: লেখালেখিতে প্রাচ্যের সত্তুরোধর্্ব লুথেরানদের জাতিগত সচেতনতা আর সমঅধিকারের বিষয়গুলোকে আপনি ভয় পাচ্ছেন কি-না, এটাই বিবেচ্য বিষয়। ভুল পদেেপর ভয়ে নিজেই সংকীর্ণ গণ্ডিতে আটকা পড়ছেন। সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন সমস্যাগুলো নিয়ে আমি বরং রিস্ক নিয়েছি। এটুকু রিস্কতো আপনাকে নিতেই হবে। এটা সামগ্রিক মজারই একটা অংশ। নিজেকে প্রসারিত করতে না চাওয়ার অর্থ তো খাঁচাবন্দি করে ফেলা, যার শেষ পরিণতি নিজেই নিজেকে ব্যঙ্গ করা। আপনাকে রিস্ক নিতে হবে আনন্দের সঙ্গে, কেননা এটা একজন আরব-আমেরিকানকে বোঝার একটা প্রয়াস। কোনোভাবেই এক্কেবারে গৎবাঁধা আরব-আমেরিকান তো সে নয়। তাদের একটা প্রকরণ।
টাইম: পশ্চিমা সভ্যতার প্রতি আহমাদের ঘৃণা পুরোপুরি_ অতোটা নিখুঁত না হলেও আপনার প্রত্যাশার চাইতে বেশি_ বিশ শতকের শেষভাগের আমেরিকান সভ্যতার সমালোচনার নকশা মোতাবেক, যেমনটা আমরা দেখতে পাই র্যাবিট বইগুলোতে: জাঙ্ক ফুড, শারীরিক স্থুলতা, পপ কালচার ইত্যাদির প্রতি ঘৃণা।
আপডাইক: আরো আছে। বর্জ্য, আমেরিকান বর্জ্য। সমপ্রতি আমি আরো বেশি বিরক্ত, কারণ একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ যে পরিমাণ খেতে চায়, রেস্তোরাঁগুলো দিচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি, আর পরিবেশনও করছে বড় প্যাকেট ভরতি করে, যেন আদা-যবরস আপনাকে খুব সামান্যই কিনতে হয়। ওদিকে রেস্তোরাঁর বড় বড় প্যাকেট ভরতি খাবার কিনতে হয় বেশি বেশি, যেগুলো রেফ্রিজারেটরেও ধরতে চায় না। ভোগবাদের শিকার হয়ে এই প্রথমবারের মতো আমি খুব সচেতন।
বুড়ো বয়সে খাবারের রুচি এমনিতেই কমে আসবে, বিরক্তির মাত্রা বোধ হয় বাড়তেই থাকবে। কেননা, এই সমাজ চায়, প্রয়োজনের অতিরিক্ত এবং প্রত্যাশার অধিক খাবারের পেছনে যেন আমাদের যা আছে, বা যে পরিমাণ থাকা উচিত তার চেয়ে বেশি খরচ করি। ধীরে ধীরে এ আমাদের মৃতু্যর দিকে নিয়ে যাচ্ছে, আবর্জনা ফেলার জায়গাগুলো ভরাট করে ফেলছে, পাখিদের কণ্ঠেও গান নেই...
টাইম: ওটা হালকা আবেগের ব্যাপার। আমার কাছেও উপন্যাসটা হালকা ধরনের মনে হয়।
আপডাইক: সত্যিই সেরকম? আমার মনে হয়, সবসময়ই লেখকের চাইতে পাঠকের কাছে উপন্যাস বেশি বিবর্ণ লাগে। নিজের আমেরিকান পরিচয়ের বিন্দুমাত্র ব্যাঘাত না ঘটিয়েও বলা যায়, আমেরিকার অধঃপতন তথা আমাদের সবার শূকরস্বভাব (চূড়ান্ত লোভী অর্থে) আমি অনুভব করি। পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে, পৃথিবীতে পেট্রোলিয়ামের একটা বড় সংকট আসন্ন। এবং এরকম সংকট-প্রত্যাশী লোকের সংখ্যা অনেক বেশি। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আঘাত হানলেও বিস্ময়ের কিছু নেই। আমাদের সীমিত সম্পদের মজুদ যত দ্রুত সম্ভব আমরা খরচ করে ফেলছি। পুরোটা নষ্ট করাই আমাদের কাছে একমাত্র সমাধান; এরপর জুয়ার খেলা চলবে, দেখবো তারপর কী করা যায়। পেছন ফিরে দেখা খুব সহজ_ আহা, অতীতের দিনগুলো কতো ভালো ছিলো, কৃত্রিমতা ছিলো না, আরো সহজ কথায়, অনেক সততা ছিলো, সামনে একটা ভবিষ্যৎ ছিলো।
টাইম: কিন্তু আপনি কি ঠিক এভাবেই ফিল করেন? আমার অবশ্য তাই মনে হয়।
আপডাইক: সবকিছু শেষ হয়ে যাবে_ এরকম ধারনায় আমি বিশ্বাসী নই। নিরাশ, হতাশ বা ক্রোধান্ধ না হয়ে অ্যাটম বোমা, হাইড্রোজেন বোমার ছায়ার ভেতর দিয়ে বেঁচে বর্তে আছি। হতে পারে অবচেতনে, জীনগতভাবেই আমি নির্বোধ আশাবাদী। আমি বিশ্বাস করি, এদেশ অবশেষে সত্যের মুখোমুখি হবে। যারা সরকারে আছে তাদেরকে আমি ভোট না দিলেও বিশ্বাস করতে চাই। আমি দুঃখবাদী নই, নঞ্র্থকও নই। অন্যদিকে পৃথিবীর ক্রমবিকাশ ল্য করলে কিছু জিনিস মিস তো হবেই।
টাইম: এই বইটি আপনার অন্যান্য বইগুলোর চাইতে থ্রিলার হিসাবে বেশি বাজারজাত করা হচ্ছে।
আপডাইক: এভাবে আমি কখনো লিখিনি। তবে, কোনো নারীর সদর্পে এসে দুম করে দরজা বন্ধ করে দেয়ার চাইতেও খারাপ কিছু ঘটলেও লেখালেখিতে এক ধরনের অকৃত্রিম আনন্দ পাওয়া যায়। কেউ একজন কোনো একজনের সঙ্গে বেডে যেতে চাচ্ছে না। পারিবারিক বাস্তবতা এবং আনন্দঘন ঘটনা নিয়ে আমি অনেক লিখেছি। এসব বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা খুবই কম_ পরো দর্শক হিসাবে আমি কোনো যুদ্ধেই অংশগ্রহণ করিনি। এমনকি আমার জীবনে ধ্বংসাত্মক ঘটনাও ঘটেছে কমই। তাই, ওসব কল্পনা করে একটা আকৃতি দাঁড় করানো এবং ওটাকে নাটকীয় রূপ দিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। কারণ হচ্ছে, হরহামেশা ঘটলেও আমরা যতোটা সম্ভব ওসব এড়িয়ে যাচ্ছি।
টাইম: কোরান ছাড়া অন্য কোনো বইয়ের উল্লেখ নেই টেরোরিস্ট-এ। একেবারে বইমুক্ত জগত বলা যায়।
আপডাইক: আমার মনে হয়, আমেরিকা ক্রমশ বইমুক্ত একটি দেশে পরিণত হচ্ছে। আমার ছেলেবেলায় দেখেছি, সর্বত্র বই আর বই। পিয়ানো শিকের বই থাকতো, প্রায় সবখানেই ধার দেয়ার মতো লাইব্রেরি থাকতো, নিজের ডিপার্টমেন্টে বই ধার দেয়ার ব্যবস্থা থাকতো। এখনো দেখবেন বই কেনা হচ্ছে, আর ওগুলো পড়া হচ্ছে বিমানে; কিন্তু ওটাইতো শেষ আশ্রয়স্থল, তাই না? আর "লিটারেরি ফিকশন"-এর বর্তমান যে হাল, সেটা আমার মতো আনকোরা লেখকদের জন্য তীব্র যন্ত্রণাদায়ক। কেউ ওগুলো পড়তে গেলেই বোঝা যায় কী পরিমাণ ভয়ংকর, যতো পড়বেন ততোই কৌতুককর। আমি অন্য ধরনের লেখক। লিটারেরি ফিকশন (গল্প) লিখি, স্পাই ফিকশন বা চিক লিট (শিশু সাহিত্য) লিখি। ওয়াল্ট হুইটম্যানের মতো আমিও আমেরিকাকে বলতে চাই_ বিষয়টাকে এভাবেই বোঝা এবং ব্যাখ্যা করা উচিত।
টাইম: যুবকসমাজের কথা বলার রীতি অনুসরণ করা উপন্যাসটির প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে হয়। প্রবীন লেখকদের জন্য কাজটা কিছুটা রিস্কি।
আপডাইক: বাড়ি থেকে বেরিয়ে বেশকিছু টিন-এজ স্ল্যাং কম্পেন্ডিয়ামের ল্যাটেস্ট ভারসন কিনে নিয়ে আসলেন_ আপনি আসলে এরকম ভাবতেই চান না। আমি ঠিক জানি না, আমার কাজটা হয়তো হাস্যকর পলকা ধরনের। আমি যেরকম কল্পনা করেছি, সেরক করেই শুনতে চেয়েছি। আর সেটাই আমার একান্ত ছোট্ট পরিসরে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি।
বইটির একটা অংশ হচ্ছে বর্তমান টিন-এজের অ্যাটিচু্যড। কেবলমাত্র ইরাকের সু্যইসাইড বোম্বারদের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে এমন নয়, কলোরাডো কিংবা নিউ জার্সি বা অন্য যেকোনো জায়গার হাই স্কুলের ছাত্ররাও একইরকম গণহত্যার পরিকল্পনা করে মরতে চায়। আমার মনে হয়, আমাদের সময় এসব ভাবতেও পারতাম না। মৃতু্যর সাথে এই যে বন্ধুত্ব, নিজে মরা বা কাউকে হত্যা করা যে সামান্য ব্যাপার, এটা আমার পরের প্রজন্মের বিষয়। আপনি হয়তো বলবেন, কেন? পৃথিবীতে এরকম অনেক মানুষ আছে যারা বিশ্বাস করে, তাদের আর এই পৃথিবীতে থাকার প্রয়োজন নাই। আর এরকম মুমূর্ষু অর্থনৈতিক অবস্থায় মরতে চাওয়াটা মোটেও কঠিন নয়।
টাইম: গত মাসে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত গত পঁচিশ বছরের উল্লেখযোগ্য ফিকশনের সমালোচনায় আপনার র্যাবিট সিরিজও মনোনীত হয়েছে।
আপডাইক: আমার চোখে পড়েনি।
টাইম: দুভর্াগ্যের বিষয়, আপনি ফার্স্ট হন নাই।
আপডাইক: আসলে...
টাইম: যদ্দুর মনে পড়ে, ব্লাড মেরিডিয়ান-এর সঙ্গে র্যাবিট যৌথভাবে থার্ড পজিশনে ছিলো।
আপডাইক: করম্যাক ম্যাককারথির লেখা।
টাইম: হ্যাঁ, আপনি আর করম্যাক ম্যাককারথি।
আপডাইক: আহা, আবার একসঙ্গে। তাঁর লেখা খুব একটা পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি। এটা আমারই ব্যর্থতা। যাহোক, একেবারে কিছু না হওয়ার চাইতে থার্ড হওয়াও ভালো।
টাইম: অবসরে যাবার কথা ভেবেছেন কখনো?
আপডাইক: আমার বয়সী প্রায় সবাই অবসর নিয়েছেন। লেখক মানে নিজেই নিজের চাকরি করা। কেউ আপনাকে অবসরে যেতে বলবে না। একে আশীর্বাদও বলতে পারেন।
টাইম: অবসরে যাবার পরিকল্পনা কী রকম? আমার ধারণা, ধীরে ধীরে আপনি নিশ্চুপ হয়ে যাবেন।
আপডাইক: আপনি নিশ্চুপ হবেন, আবার ব্যাক করবেন, সম্পাদকদের সঙ্গে বিব্রতকর কনফারেন্স হবে, এবং তখন উপলব্ধি করবেন, আপনি আসলেই বুড়ো হয়ে গেছেন। আমার ধারণা, একটু দেরিতে ওদের বোধোদয় হয়। আমি কিন্তু অবসর একটু দেরিতেই নিতে চাই।
টাইম: আমার মনে হয়, গত দশ কি পনের বছর যাবৎ তথাকথিত আপডাইকিয়ান ধারার বাইরে অবিরাম আবিষ্কারের নেশায় আপনি ছুটে বেড়িয়েছেন। ম্যাজিক রিয়েলিজম, সায়েন্স ফিকশন লিখেছেন, এবার থ্রিলার লিখলেন।
আপডাইক: আমার দোকান গড়ার পেছনে ইচ্ছা ছিলো প্রতি বছর একটা করে বই বের করবো। নরম্যান মেইলার ইত্যাদি আমেরিকান লেখকদের মতো নিজেকে যাজক-পয়গম্বর না ভেবে একজন লেখক হিসাবে বেঁচে থাকার এটাই ভালো উপায় বলে মনে হয়েছে। আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যা আর প্রোটেস্ট্যান্ট লাইফস্টাইলের সুবাদে দীর্ঘজীবন আমি পেয়েছি_ উপন্যাস লেখার সময় হয়েছে। ফলে, আপনি এমন জিনিস খুঁজবেন যা আপনাকে বিস্মিত করবে, মাঝেমধ্যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিও করবে। এ এক ভিন্ন জগৎ।
ষাটের দশকের আমেরিকান ডোমেস্টিক লাইফ নিয়ে লেখা কাপলস আমার সর্বকালের সেরা বেস্টসেলার। আমার মনে হয়েছে সেবিষয়ে আমার কিছু বলা উচিত। ছোট্ট শিশু হিসাবে আমার মনে হয়েছে, অভিভাবকদের দাম্পত্যকলহ, মানসিক টানাপোড়েন, বা ছোট্ট ঘরের ভেতর যেসব হাস্যরসাত্মক কর্মকাণ্ড হয়, এর বাইরেও অনেক কিছু আছে। এবং অধিকাংশ ফিকশনে যা দেখানো হয়, এগুলো তার চেয়ে অনেক বেশি জটিল। পারিবারিক জীবন নিয়ে যে আরো অনেক কিছু বলার আছে, আমি যে কিছু নতুন আলোকরেখার সন্ধান দিতে পারি_ এই ছিলো আমার লেখার জমিন।
স্বাভাবিকভাবেই ল্যে পৌঁছাবার জন্য আমি কিছু পথ খুঁজছিলাম, সেগুলো পরীাও করে দেখছিলাম। নিজের গান গাওয়ার সময়েও যতটা সম্ভব নিজেকে আমি পরীা করতে চাই। কেননা, আমি তো আর সারাজীবন গাইবো না।
জন আপডাইকের টেরোরিস্ট থেকে অনুবাদ
সব শয়তানের দল, আহমাদ ভাবে। এই শয়তানগুলো আমার আল্লাকে দূরে সরিয়ে নিতে চায়। সারাদিনই, সেন্ট্রাল হাই স্কুলের মেয়েগুলো নাকউঁচু ভাব নিয়ে হেলেদুলে ছুটছে, কোমল শরীর আর চিত্তাকর্ষক চুল প্রদর্শন করছে। নাভিতে ঝলমলে রিং, আর তারও নিচে ট্যাটুচিহ্ন নিয়ে ওদের নগ্ন তলপেট প্রশ্ন করে, কী এমন আছে ওখানে দেখার মতো? ছেলেগুলোর হাঁটাচলায় সদর্প আর গড়িমসি একটা ভাব, স্থির দৃষ্টি, জিঘাংসা আর উদ্ধত হাসি দিয়ে নির্দেশ করে পৃথিবীর সবকিছু এখানেই_ ধাতব দেরাজে খাঁজকাটা কোলাহলপূর্ণ বার্নিশ করা হলরুম, যার শেষ প্রান্তে চিকামারা, ঘন রোলার পেইন্ট করা বিবর্ণ দেয়াল।
দুর্বলচিত্তের খ্রিস্টান আর উন্যাসিক ইহুদি শিকরা শিার গুণাবলী আর আত্ম-সংযমের অভিনয় করলেও, তাদের সন্দিহান দৃষ্টি এবং শূন্য স্বর নিজেদের বিশ্বাসের সঙ্গে প্রতারণা করে। নিউ প্রোসপেক্ট সিটি আর নিউজার্সি স্টেট কতর্ৃপ তাদেরকে বেতন দিচ্ছে ওসব বলার জন্য। সত্যবিশ্বাস তাদের নেই, চলছে সরল পথের বাইরে, ওরা অপরিশুদ্ধ। আহমাদসহ আরো প্রায় হাজার দুয়েক ছাত্র তাদের দেখছে, স্কুল শেষে চড়চড় শব্দ করা, জঞ্জালে ছোপ ছোপ দাগে ভরা পার্কিং লনে রাখা গাড়ির ভেতরে কেমন দ্রুত কাপুরুষোচিত ভঙ্গিতে প্রবেশ করছে, যেমন করে ফ্যাকাশে বা জ্জ্বলজ্বলে কাঁকড়ার দল নিজের খোলসে ঢুকে পড়ে। আর সবার মতোই কাম, ভয়, ক্রয়যোগ্য জিনিসের প্রতি মিথ্যা ভালোবাসা নিয়ে এরাও নারী কিংবা পুরুষ। এরা ধর্মত্যাগী, এদের ভাবনা দুনিয়ার সব জিনিস মজুদ করা আর টিভি সেটের নীতিহীন বিনোদনের মধ্যেই নিরাপত্তা নিহিত। এরা মিথ্যে সুখ আর প্রাচুর্যের প্রতীক প্রতিমার ক্রীতদাস। কিন্তু সত্য প্রতিমাও আল্লার পাপপূর্ণ প্রতিকৃতি, যিনি একাই কেবল সৃষ্টি করতে পারেন। শিার্থীদেরকে অত অবস্থায় পরবর্তী দিনের জন্য মুক্তি দেয়ার স্বস্তি নিয়ে শিকদের হলের বকবকানি বন্ধ হয়, আর পার্কিং লনে বকবকানি শুরু হয়ে আরো উচ্চকিত হয় মাতালদের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মতো। স্কুল থেকে বেরুনোর পর শিকদের আমোদ প্রমোদ শুরু হয়। তাদের কারো কারো চোখের পাতা গোলাপী, নিঃশ্বাসে বিচ্ছিরী গন্ধ, থলথলে শরীর, বিশেষত যারা মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান করে। কারো কারো ডিভোর্স হয়ে গেছে; বিবাহ-বহিভর্ূত বসবাস করে কেউ কেউ। স্কুলের বাইরে তাদের জীবন বিশৃঙ্খল, অনিয়ন্ত্রিত, অসংযত। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ট্রেনটনে সঞ্চারনের জন্য সরকার তাদেরকে বেতন দিচ্ছে, আর সেই শয়তান সরকার সঞ্চারণ করছে আরো দূরে, ওয়াশিংটনে। কিন্তু তাদের বিশ্বাস জীববিদ্যা, পদার্থবিদ্য আর রসায়নের মতো ঈশ্বরবিহীন মূল্যবোধে। এগুলোর কার্য-কারণ আর সূত্রের উপর ভর করেই তাদের মিথ্যাস্বর কাসরুমে ঝনঝন করে বাজে। এরা বলে, সব কিছুরই উৎসস্থল নাকি নিষ্ঠুর অন্ধ পরমাণু, যার উপর নির্ভর করে লৌহের ভর, কাঁচের স্বচ্ছতা, মাটির নিস্তব্ধতা, মাংসের কম্পন। পানির কণাগুলোর মধ্যকার আন্তঃক্রিয়ার দরুন উৎপন্ন বজ্রপাত বায়ুতে যে আন্দোলনের সৃষ্টি করে, তার ফলে তামার তার আর কম্পিউটারের প্রবেশদ্বার দিয়ে ইলেক্ট্রন প্রবাহিত হয়। কেবল যা আমরা পরিমাপ করতে পারি আর পরিমাপ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারি সেটাই সত্য। বাকিটুকু আমরা বলতে পারি ণস্থায়ী স্বপ্ন।
আহমাদের বয়স আঠারো। এপ্রিলের শুরু, বীজগুলোর সজীবতা চুপিসারে হারিয়ে যাচ্ছে বিবর্ণ নগরীর মৃন্ময় চিড় ধরে। নিজের সর্বোচ্চ উচ্চতা থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে আহমাদ ভাবে, ঘাসের মধ্যকার অদৃশ্য কীটপতঙ্গগুলোর যদি তার মতো বোধশক্তি থাকতো, তবে তাদের কাছে সে ঈশ্বর প্রতীয়মান হতো। গত বছরে তার উচ্চতা তিন ইঞ্চি বেড়েছে, ছয় ফিটের অতিরিক্ত সে উচ্চতায় কার্যশীল অদৃশ্য জড়বাদী বল তার উপরই বর্তাচ্ছে। ওর ভাবনা, ইহকাল কি পরকালেও তার উচ্চতা আর বাড়বে না। ভেতর থেকেই একটা শয়তানের কণ্ঠ বেজে ওঠে_ পরকাল যদি থাকে। মুহাম্মদের স্বর্গীয় প্রত্যাদিষ্ট জ্বলন্ত শব্দমালার বাইরে আর কী প্রমাণ আছে পরকালের? কোথায় লুকিয়ে থাকতে পারে ওটা? নরকের অগি্নকুণ্ডে কে চিরকাল কয়লা দিতে থাকবে? কোন নিঃসীম শক্তির উৎস ইডেনের ঐশ্বর্য রা করবে, স্বর্গের হুরিদের খাবার দেবে, বড় বড় ঝুলন্ত ফলগুলোকে অরো টসটসে করবে, জলস্রোত আর চিত্তাকর্ষক ঝরনাধারার নবায়ন করবে, কোরানের নবম সুরা মোতাবেক যেখানে আল্লা শাশ্বত সুখানুভূতিতে বিরাজ করবেন?
কীটপতঙ্গ পোকামাকড় মরে গেলে দ্রুত তাদের মৃতদেহ শুষে নেয় মাটি, আগাছা কিংবা রাস্তার আলকাতরা। এদের মৃতু্য দেখে আহমাদেরও মনে হয়, তার মৃতু্যও এমনই হবে, সামান্য অথচ চূড়ান্ত। স্কুলে যাবার সময় সে ল্য করেছে, রাস্তার ধারে সর্পিলাকার উজ্জ্বল দাগ, যেন স্রষ্টার ধমনীর রক্ত আর দেবদূতের শ্লেষ্মা দিয়ে তৈরি, কেবলমাত্র পোকা বা শামুকের মতো নিম্নশ্রেণীর প্রাণীরাই এমন চিহ্ন রেখে যায়। কোথায় যাচ্ছে ওসব প্রাণী, যখন তাদের দাগ ভেতরের দিকে কেবল বাঁক নিচ্ছে উদ্দেশ্যহীন? তেজোদ্বীপ্ত সূর্যের তাপে প্রচণ্ড উত্তপ্ত ফুটপাত প্রাণীটিকে ঝলসিয়ে মৃতু্যর দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছিলো; এর থেকে মুক্তির প্রত্যাশা যদি প্রাণীটি করে থাকে তবে সে ব্যর্থ হয়েছে, বরং পতিত হয়েছে আরো ভয়ংকর বৃত্তে। কিন্তু, পা্যঁঁচানো দাগের মধ্যে প্রাণীটির কোনো অবশিষ্টাংশ পাওয়া যায়নি।
প্রাণীটির দেহ তবে কোথায় অদৃশ্য হলো? হতে পারে, ঈশ্বর তাকে তুলে নিয়ে গেছেন সোজা স্বর্গে। 1/2 ওয়েস্ট মেইন স্ট্রিটের 2781 নম্বরের উপরতলার মসজিদের ইমাম, অহমাদের শিক, শেখ রাশিদ বলেছেন, হাদিসের পবিত্র প্রথা মোতাবেক এরকম ঘটনা ঘটে: পাখাঅলা শাদা ঘোড়া বোরাকে চড়ে গ্যাব্রিয়েলের (জিব্রাইলের) পথনির্দেশনায় সাত স্বর্গের ভেতর দিয়ে একটা নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে যিশু (ইসা নবী), মোজেস (মুসা নবী) এবং আব্রাহামের (নবী ইব্রাহিম) সঙ্গে প্রার্থনা শেষে নবী মুহাম্মদ পৃথিবীতে আগমন করেন সর্বশেষ এবং চূড়ান্ত পয়গম্বর হিসাবে। বোরাকের তী্ম, পরিষ্কার খুরের দাগ প্রমাণ করে তাঁর সেই বিস্ময়কর দুঃসাহসিক অভিযান। বোরাকটি অবতরণ করে আল-কুদস-এর পবিত্র গম্বুজের নিচের পর্বতে, ধর্মত্যাগী আর জিয়োনিস্টরা যাকে বলে জেরুজালেম। জাহান্নামের আগুনে এদের উৎপীড়নের কথা পরিস্কার বর্ণনা করা হয়েছে সকল পুস্তকের সেরা পুস্তকের সপ্তম, এগারো অর পঞ্চাশত্তম সুরায়।
কোরানের 104-তম সুরা থেকে হুতামা তথা প্রজ্জ্বলিত অগি্নশিখা প্রসঙ্গে অসাধারণ সুন্দর উচ্চারণে তেলাওয়াত করেন শেখ রাশিদ:
আর হুতামা কী তা কি তুমি জানো?
এ হচ্ছে আল্লার প্রজ্জ্বলিত অগি্নশিখা,
যা নরকবাসীদের হৃদপিন্ডগুলো গ্রাস করবে,
তাদেরকে বেঁধে রাখবে
প্রলম্বিত স্তম্ভে।
ফি আমাদিন মুমুাদ্দাদাহ_ প্রলম্বিত স্তম্ভ, নারুল্লাহিল মু'ক্বাদা_ নরকবাসীদের হৃদপিণ্ডগ্রাসী অগি্নশিখা, আহমাদ কোরানের এসব আরবী রূপকের নির্যাস জানতে চাইলে ইমাম চোখ নামিয়ে ফেলেন, চোখ দুটো ভীত পলায়নপর কাফির নারীদের মতো বিবর্ণ-ধূসর। তিনি বলেন, নবীর কাল্পনিক এসব বর্ণনা আসলে প্রতীকী অর্থে। প্রকৃত অর্থে, এসব আল্লা-নির্দেশিত পথভ্রষ্টদের সীমাহীন দুর্ভোগ আর আমাদের পাপের অনুশোচনায় দগ্ধ হবার কথা বোঝানো হয়েছে। কিন্তু, শেখ রাশিদের এসব কথা আহমাদের পছন্দ হয় না। সেন্ট্রাল হাই স্কুলের শিকদের কথার মতোই_ বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে না আহমাদের কাছে। এসবের মধ্যে সে শয়তানের চাপা স্বর শুনতে পায়, হাঁ-বোধক বাক্যের ভেতরে না-সূচক ধ্বনি। মুহাম্মদ বলেছেন সত্যিকার আগুনের কথা, অর তিনি ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, মা না পাওয়ার আগুন; মুহাম্মদ নিজে সচরাচর শাশ্বত অগি্নর প্রকৃত ব্যাখ্যা প্রচার করতেন না।
বয়সে আহমাদের চেয়ে খুব একটা বড় নয় শেখ রাশিদ_ দশ বছর, কিংবা বিশ বছর। মুখের শাদা চামড়ায় অল্প কিছু ভাঁজ পড়েছে। চলনে-বলনে নিখুঁত হলেও আত্মবিশ্বাসের তার বড়ই অভাব। যতোটা বয়সের ফলে সে বায়োজ্যেষ্ঠ, ততোটা সময়ের মধ্যেই এই পৃথিবী তাকে দুর্বর্ল করে ফেলেছে। নিজের ভেতরকার শয়তানের স্বরের যন্ত্রণার সঙ্গে ইমামের এসব কথা আহমাদকে এমনই করে তোলে যে, আহমাদের ইচ্ছা জাগে ইমামকে পিষ্ট করে ফেলার, ঠিক যেমন করে আল্লা সেই দীনহীন পোকাটাকে সর্পিল দাগের ভেতর ঝলসে দিয়েছেন। শিার্থীদের বিশ্বাস শিকদেরও ছাড়িয়ে যায়; ভয় পেয়ে শেখ রাশিদের ইচ্ছা জাগে ইসলামের শাদা পাখাঅলা অবোধ্য দ্রুতগতিসম্পন্ন ঘোড়ায় চড়তে। নবীর কথাগুলোর সঙ্গে মানবিক যুক্তি মিশিয়ে তিনি কিছুটা কোমল করতে চেয়েছেন, কিন্তু সেগুলো উল্টো মানবিক কোমলতায় তলোয়ারের আঘাত হেনেছে। আল্লা মহান, সবকিছুর উধের্্ব স্বতন্ত্র। তিনি জীবন্ত, স্বয়ং সত্তা, তিনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নাই; তাঁর আলোতে সূর্যও ম্লান হয়। তিনি আমাদের যুক্তিতে মিশে একাকার হন না, বরং আমাদের যুক্তি মাথা নত করে, আমাদের কপাল স্পর্শ করে বালি, আর হত্যাকারীর মতো সে-বালির দাগও থেকে যায় কপালে। মুহাম্মদ মরণশীল মানুষ হয়েও স্বর্গ ভ্রমণ করেছেন এবং সেখানকার বাস্তবতা প্রত্য করেছেন। আমাদের কর্ম এবং চিন্তা রসুলের চেতনায় সোনার হরফে লেখা ছিলো, যেমন কি-বোর্ডে চাপ দিলে পিক্সেলের আকারে ইলেক্ট্রনের শব্দ তৈরি করে কম্পিউটার।
তারুণ্যের উষ্ণতায় রেশমী-পশমী পোষাক ও জুতার সিনেথেটিক উপকরণ থেকে নির্গত গন্ধ, ক্যাফেটেরিয়ার অবিশুদ্ধ খাবার, চুইংগাম আর শরীরী ভ্যাপসা গন্ধে ভরপুর থাকে হাই স্কুলের হলরুমগুলো। দুটো কাসের মধ্যবর্তী সময়গুলোতে হাঁটাচলা-দৌড়ঝাঁপের তীব্রতা, অসংযত কোলাহল প্রসারিত হয় তার সঙ্গে। মাঝে মাঝে স্কুলদিবসের শেষের উপশমের সময়গুলোতে, যখন বিজয়ীদের বিদ্রূপকারী হল্লা বিদায় নেয়, আর পাঠ্যবহিভর্ূত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত শিার্থীরাই কেবল অবস্থান করে, তখন জরিলিন গ্র্যান্ট আহমাদের দেরাজ পর্যন্ত আসে। আহমাদ বসন্তে ট্র্যাকে যায়, আর গ্র্যান্ট মেয়েদের গি্ল কাবে গান গায়। সেন্ট্রাল হাই স্কুলের শিার্থী মানেই এখানকার সবাই ''ভালো"। আহমাদের ধর্ম নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে মাদক, লাম্পট্য ইত্যাদি থেকে, অবশ্য একইসঙ্গে তার কাসমেট এবং স্কুল-নির্ধারিত পাঠ্য থেকেও। খাটো, গোলগাল জরিলিন কাসে কথা বলতে পারে খুব সুন্দর করে, শিকরা ওর উপর বেশ সন্তুষ্ট। গোলগাল চকলেট-বাদামী রঙের শরীর স্নেহমাখা আত্মবিশ্বাস নিয়ে তার পরিহিত পোষাকে কী দারুণ ভরাট হয়ে যায়। আজ গ্র্যান্ট পরে এসেছে জোড়াতালি দেয়া ধাতব আংটা ইত্যাদি সজ্জিত জিনসের প্যান্ট, বসার জায়গা বরাবর প্যান্টের বাইরের অংশ কিছুটা হালকা হয়ে গেছে, আর যতখানি উপরে আর নিচে থাকার কথা তার চাইতেও নিচে আর উপরে পরিহিত ম্যাজেন্টা কালারের সংপ্তি টপস। নীলরঙা প্লাস্টিকের কিপ তার ঝলোমলো চুলগুলো ধরে রেখেছে সোজা করে, ডান কানের সুগোল প্রান্তের কুচকানো অংশে শোভা পাচ্ছে একসারি ছোট রূপালী কানের দুল। অ্যাসেম্বলিতে সে গান গায়, যিশুর গান অথবা যৌনাকাঙ্ার গান, দুটোই আহমাদের কাছে ঘৃণ্য। তারপরও ওকে ভালো লাগে কেননা সে তাকে পাত্তা দেয়, এখানে এসেছে, তদুপরি সংবেদনশীল দাঁতকে পরীা করা জিহ্বার মতো।
অর্ধনগ্ন কাঁধ খানিকটা উঁচুতে উঠিয়ে, অনেকটা শ্রাগ করার মতো, খুব অমোদপ্রিয় একটা ভঙ্গিতে আহমাদকে বলে, 'আনন্দ করো আহমাদ, সবকিছু অতোটা খারাপ নয়।'
সে উত্তর করে, 'সবকিছুতো খারাপ নয়। আমিও ব্যাথিত নই।' ট্র্যাক প্র্যাকটিস থেকে ফিরে গোসল করেছে মাত্র। শাদা শার্ট, আঁটসাঁট কালো জিনসের প্যান্টের ভেতরে ওর শরীর এখনো কিছুটা কাঁপছে।
জরিলিন বলে, 'তুমি খুব সিরিয়াসলি দেখছো, একটু হাসি-আনন্দের চেষ্টা করো।'
'কেন জরিলিন, কেন করা উচিত?'
'সবাই তোমাকে অনেক অনেক পছন্দ করবে।'
'আমি ওসবে গুরুত্ব দেই না। আমি চাই না সবাই আমাকে পছন্দ করুক।'
বুক রিভিউ করার জন আপডাইক প্রবর্তিত ছয়টি নীতি
একত্রিশ বছর আগে, তাঁর দ্বিতীয় গদ্যসমগ্র "পিকড আপ পিসেস"-এর ভূমিকায় বুক রিভিউ করার ছয়টি নীতির উল্লেখ করেছিলেন জন আপডাইক। নিরপে রিভিউয়ের েেত্র এখনো পর্যন্ত সেগুলোই সবচাইতে ভালো নীতি বলে বিবেচিত:
1. লেখক কী করতে চেয়েছেন সেটা বোঝার চেষ্টা করুন, তিনি যা করার চেষ্টাই করেন নাই তা সম্পন্ন না হওয়ার জন্য তাঁকে দোষারোপ করবেন না।
2. বই থেকে পর্যাপ্ত উদ্ধৃতি_ অন্তত একটা বড় প্যারা_ তুলে দিন, যাতে রিভিউ-পাঠকের নিজস্ব একটা ধারণা জন্মাতে পারে, নিজের মতো করে আস্বাদ নিতে পারেন।
3. অস্পষ্ট মন্তব্য না করে বরং আপনার ব্যাখ্যা নিশ্চিত করার জন্য বই থেকে সরাসরি উদ্ধৃতি দিন।
4. আখ্যানভাগের সারকথা বলুন, সমাপ্তিটা বাদ দেবেন না।
5. বইটি যদি ব্যর্থ বলে প্রতীয়মান হয়, তবে সেটা প্রমাণের জন্য সার্থক কোনো উদাহরণ তুলে ধরুন। ব্যর্থতা উপলব্ধির চেষ্টা করুন। নিশ্চিত তো, ব্যর্থতা আপনার নয় তারই?
রচনা এবং বিচারকের মধ্যকার রাসায়নিক বিক্রিয়ার শুদ্ধতা বজায় রাখার জন্য উপরিউক্ত পাঁচটির সঙ্গে আরো বিস্তৃত পরিসরের ছয় নম্বর নিয়ম যোগ হতে পারে। পূর্বপ্রবৃত্তির কারণে অপছন্দ কিংবা বন্ধুত্বের প্রতিশ্রুতির কারণে পছন্দ করতে হবে, এরকম বই রিভিউ-এর জন্য গ্রহণ করবেন না। নিজেকে কোনো প্রথা-ঐতিহ্যের তত্ত্বাবধায়ক, কোনো দলমতের প্রচারক, আদর্শবাদী যুদ্ধের যোদ্ধা, কিংবা কোনোরকম ভুল সংশোধনকারী কর্মকর্তা হিসেবে ভাববেন না। অন্য আরো রিভিউয়ারদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লেখককে বন্ধক রেখে কখনোই তাঁকে "তার জায়গায় " ফেলবেন না। বিভিউ করুন বইয়ের, তাঁর খ্যাতির নয়। দুর্বল শক্তিশালী, যা আছে ঠিক তা-ই উপস্থাপন করুন। নিন্দা এবং বাতিল করার চেয়ে প্রশংসা এবং শেয়ার করা ভালো। পঠনের মধ্যে সম্ভাব্য আনন্দের ধারণা দেয়ার মধ্য দিয়ে রিভিউকারী এবং তার পাঠকের যোগাযোগ নির্ভর করে, আর তাই আমাদের সব সুদর্শন সর্বদাই সেদিকেই মোড় নেয়া উচিত।
©somewhere in net ltd.