নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটা বগিতেও দেখি দাঁড়াবার জো নাই।
শাহিন একদম শেষ বগি থেকে ডাক দিয়া বললো, “ভাই এই বগিতে আসেন। এইখানে ভীড় কম।”
সব বগিতে দেখি মানুষ হুড়াহুড়ি করছে। এই বগিতে কেউ উঠছে না। আমরা যখন উঠতে গেলাম, তখন দরজায় একজন আটকালো।
“ভাই এখানে উঠা যাবে না। এটা ভি আই পি বগি। বগিতে ভি আই পি যাচ্ছেন।”
আমরা তাকে ঠেলা দিয়ে উঠে পড়লাম। শালার ভি আই পি! আমাদের পেছনে পেছনে আরো অনেক মানুষ উঠে গেলো এই বগিতে। পরে দেখলাম উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাবী যাচ্ছে এই বগিতে। উনিই আমাদের সম্মানিত ভি আই পি। আমাদের কারণে ভি আই পি কেভিনটাও সাধারণ হইয়া গেলো। এখানেও নিশ্বাস ফেলবার জো নাই। এর মধ্যে ট্রেন ছাড়লো।
এই ট্রেন দেখলে এদের জীবন ব্যবস্থা বুঝা যায়। রাস্তার অবস্থা এতো বাজে হইছে যে, এরা কেউই আর রাস্তা দিয়া চলাফেরা করে না। সবাই ঘন্টা ধরে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করে। কিংবা এরকমও হতে পারে। অনেকদিন থেকে ট্রেনে চড়তে চড়তে অভ্যস্ত মানুষগুলা রাস্তাকে আর তেমন গুরুত্ব দেয় না। এখন তো রাস্তা খারাপ, আরো না দেওয়ার কথা।
ট্রেনের ভিতর সবাই একই রকম মানুষ। শার্ট-লুঙ্গি পরা। কয়েকজন আছে প্যান্ট পরা। মহিলাগুলা বোরকা পরা। এরা নিজেরা নিজেদের সাথে পরিচিত। ট্রেন চলছে। একজন আরেকজনের সাথে গল্প গুজব শুরু করে দিছে। এর মধ্যে আমরা চারজনই একটু ব্যাতিক্রম। টি শার্ট, হাফ প্যান্ট। সাথে একটা করে বড় ব্যাগ, লাইফ জ্যাকেট, তাবু।
একজন আসি জিজ্ঞেস করলো, “কই যাইবাইন ভাইয়েরা?”
বললাম, “ দুর্গাপুর যাবো।”
“ও। দুর্গাফুর যাইবাইন?”
“হা।”
“দুর্গাফুর তো মেলা দূর। ওইদিকে আমরা কোনোদিন গেছি না।”
“আচ্ছা।”
“এতো দূরে কেন যাইবাইন? এনজিও কামে যাইবাইন নাকি?”
“আরে না। আমরা আসছি ঘুরতে। চিনামাটির পাহাড় দেখতে যাবো।”
চিনামাটির পাহাড় কি--বেচারা হয়তো বুঝলো না।
বললো, “এখান থেকে প্রথমে যাবেন জাইরা। জাইরা নাইমা তারপর দুর্গাফুর যাইবেন। আমরার বাড়ি আবার জাইরা।”
আমি বললাম, “আচ্ছা।”
এর মধ্যে আরেকজন এসে আলাপে যোগ দিলো। এই লোকটা দুর্গাপুরের। সে আবার বেশ জানে।
বললো, “দুর্গাপুরে কোথায় যাবেন?”
“নির্দিষ্ট কোন জায়গা নাই। ঘুরবো। যেখানে যেখানে ঘুরা যায়।”
“দুর্গাপুরে তো ঘুরার অনেক জায়গা আছে। সোমেশ্বরী নদী, চিনামাটির পাহাড়, খ্রিস্টানদের গীর্জা, বিজিবি ক্যাম্প, সাত শহীদের মাজার, আরো অনেক জায়গা।”
“হুম। নেটে দেখলাম ভাই।”
“হয়। এখন তো সব ইন্টার্নেটে আইয়া পড়ছে। রাতে আপনেরা থাকবেন কই?”
“দেখি কই থাকা যায়? দুর্গাপুরে একটা জুনিয়রের ফ্রেন্ড আছে। তার সাথে যোগাযোগ করে যাচ্ছি। সে যেখানে বলে ওখানে থাকবো।”
“ওয়াই এম সিএতে থাকতে পারেন।”
“আচ্ছা।”
“আপনারা এক কাজ করবেন। কাল সকালে দুইটা মটর সাইকেল নিয়ে নিবেন। মটর সাইকেল দিয়ে ঘুরতে খুব আরাম হবে। তাড়াতাড়ি ঘুরতেও পারবেন।”
এর মধ্যে আমরা জারিয়া স্টেশনে এসে পৌছালাম। স্টেশনে নেমে একজন মাহিন্দ্রা ঠিক করে দিলো। আমরা মাহিন্দ্রায় করে রওয়ানা দিলাম দুর্গাপুরের দিকে। আহা রাস্তা! গাড়ি একবার এদিকে কাঁত হয়। একবার অন্যদিকে কাঁত হয়। একবার ভোঁস করে উপরের দিকে লাফ দেয়। একবার ঢুকে যায় গর্তে। আমি বসছি ড্রাইভারের পাশে। অবস্থা আরো বেগতিক।
এক সময় যুদ্ধতপ্ত রাস্তা শেষ হলো। তারপর মোটামুটি ভালো রাস্তা। এক সময় আমরা সোমেশ্বরী নদীর ব্রীজের নিচে এসে পৌছালাম। ব্রীজের এক পাশে দুর্গাপুর উপজেলা। আরেকদিকে বিরিশিরি ওয়ার্ড। ব্রীজের গোঁড়ায় আমাদের জন্য এতক্ষণ ধরে প্রবীর ওয়েট করছিলো। প্রবীর হলো আমাদের পীরবাবা ইভাইন্যার ফ্রেন্ড। প্রবীর বললো, “বিরিশিরির দিকে চলেন, ভাই।”
আমরা হাঁটতে হাঁটতে বিরিশিরিতে চলে আসলাম। নাফিজ ভাই বললেন, “প্রবীর কোন এক চায়ের দোকানে চল। চা-টা খাই।”
প্রবীর বললো, “এখানে একটা সমস্যা। আপনাদের ওখানকার মতো ছোলা, পিয়াঁজু এইসব পাওয়া যায় না।”
নাফিজ ভাই বললেন, “তাই নাকি?”
“হা ভাই। এইখানে ওসব নাই। শুধু পুরি আছে।”
আমরা এক দোকানে ঢুকে দেখলাম শুধু ডালপুরি আছে।
দোকানদারকে বললাম, “ভাই সবার জন্য ডাইলপুরি দেন।”
দোকানদার জিজ্ঞেস করলো, “আলুফুরি খাইবেন?”
“এগুলো আলুপুরি নাকি ডাইলপুরি?”
“এগুলো তো আলুফুরিই।”
“যেটাই হোক। দেন।”
দোকানদার পেঁয়াজ কেটে দিয়ে আলুপুরি দিলো। ছোট ছোট আলুপুরি। খেতে গিয়ে বুঝলাম--এগুলো ডালপুরিই। বুঝলাম, ডালপুরিকে এরা আলুপুরি বলে। তবে অসম্ভব মজার এই ডালপুরিগুলা। আমাদের ওদিকে ডালপুরি হয়, একটু পাতলা পাতলা আর বড়। এখানে দেখলাম ছোট ছোট। কিন্তু মজা। অনেকটা কিমাকে ছোট করে বানালে যেই রকম হবে ওই রকম। আমরা একজন পাঁচ-ছয়টা করে পুরি পেটের ভিতরে চালান করে দিলাম। এর মধ্যে চা এলো। দেশি গরুর দুধের চা। চিনি একটু বেশি দিছে। কিন্তু সর ভাসছে। খেতে ভালাও লাগলো খুব।
এর মধ্যে প্রবীর মানুষজনের সাথে কথা বলে ঠিক করলো, আমাদের ওয়াই এম সিএ কিংবা ওয়াই ডব্লিউ সিএতে থাকলেই বেশি ভালো হবে। আমরা যে দোকানে বসে চা-নাস্তা খেলাম তার পাশেও একটা হোটেল আছে। স্বর্ণা গেষ্ট হাউজ। এখানেও থাকা যায়। তবে সুন্দর নাকি মিশনারীদের গেস্ট হাউজগুলা। আমরা হাঁটতে হাঁটতে ওয়াই এম সিএ আর ওয়াই ডব্লিউ সিএ এর দিকে গেলাম। শাহিন আর প্রবীর ওয়াই ডব্লিউ সিএতে গিয়ে ফেরত এলো। এখানে ইন্সট্যান্ট কোন গেস্ট এলাউ করা হয় না। আগে থেকে যোগাযোগ করে আসতে হয়। তারপর গেলাম ওয়াই এম সিএতে। এদের এখানে রুম খালি থাকলে যেকোন সময় রুম পাওয়া যায়। কিন্তু রুমের ভাড়া চাচ্ছে বেশি। এরা প্রতি রুম ছয়শ টাকা করে চাচ্ছে। অথচ নেটে দেওয়া আছে আড়াইশো থেকে তিনশ টাকা। কমাতে বললাম আর বললো, সম্ভব না। এটাই ফিক্সড।
তারপর নাফিজ ভাই প্রবীর আর শাহিনকে স্বর্ণা গেস্ট হাউজে পাঠালো ভাড়া দেখে আসার জন্য। ওরা স্বর্ণায় দেখে এসে জানালো, ওখানে চারজনের ভাড়া চারশ টাকা। পরে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, দুইশ টাকায় কি এসে যায়। এখানেই থেকে যাই। পরে ওয়াই এম সিএর ম্যানেজারকে বললাম, রুম খুলে দেন।
ম্যানেজার বললো, “রুম কোনটা কোনটা নিবেন?”
“রুম তো নিবো একটাই। দুতলার রুমটা দেন।”
“এই রকম তো হবে না।” এক রুমে দুইজনের বেশি থাকা যায় না।”
“ওই গুলা তো ডাবল রুম। এক খাটে দুইজন করে থাকবো।”
“আমাদের এখানে নিয়ম নাই। ডাবল হোক আর সিঙ্গেল হোক। এক রুমে দুইজনের বেশি থাকা যায় না।”
“বালের নিয়ম। এই রকম আউল ফাউল নিয়ম বানায় রাখছেন ক্যান মিয়া?”
ম্যানেজার বেচারা হতভম্ব হইয়া আমাদের দিকে তাকায় থাকলো। আমরা ব্যাগট্যাগ নিয়ে হাঁটা ধরলাম স্বর্ণা গেস্ট হাউজের দিকে। পথ আরেক হোটেলওয়ালা আমাদের ডাকলো। রুম দেখালো। রুমের ভাড়া জিজ্ঞেস করলে বললো--এক হাজার টাকা। শালা বাইনচোদ! কক্সবাজার গিয়া এক হাজার টাকার রুমে থাকি না।
শেষপর্যন্ত স্বর্ণাতেই উঠলাম আমরা। স্বর্ণায় টাকা কম হলে কি হবে। ম্যানেজার আবার ঘাউরা। হালা বলে দিছে রাত এগারোটার মধ্যে হোটেলে ঢুকতে হবে। হালারে বুঝায়া বললাম, “আজকে তো পুর্ণিমা। আমরা ব্রীজের উপর গিয়ে কিছুক্ষণ বসবো। কাছেই তো।”
ঘাউরা হালার এক কথা। “এগারটার এক মিনিট পরেও বাইরে থাকা যাবে না।” এর মধ্যে হালারা আবার আমাদের ছবি তুলবে। সবাইকে সিগনেচার করতে হবে। ঠিকানা লিখতে হবে। এদিকে টাইম চলে যায়। তাড়াতাড়ি সিগনেচার টিগনেচার করে বের হলাম সোমেশ্বরী ব্রিজের দিকে যাওয়ার জন্য। পরে একটা টমটম নিয়ে ব্রীজের দিকে চললাম সবাই।
আহা বাতাস! প্রায় সব ব্রীজেই এই রকম বাতাশ পাওয়া যায়। তার উপর আশ্বিনী পুর্ণিমার রাত আজকে। হিন্দুরা করে লক্ষ্ণী পূজা, বৌদ্ধরা করে প্রবারণা পুর্ণিমা। অন্য সব পুর্ণিমার থেকে এই পুর্ণিমাটা আমার কাছে খুব প্রিয়। রাতে বৌদ্ধরা ফানুস উড়ায়। এই ফানুস উড়ানি জিনিসটা আমার খুব পছন্দের। গত বছর এই সময় আমি আজওয়াদ, সৌরভদা, তুষার এই কয়জন ছিলাম ডিসি হিলে। অনেক রাত পর্যন্ত হিলের গ্যালারিতে বসে বসে ফানুস উড়ানি দেখলাম। ছোটবেলা থেকেই ফানুসগুলো আমার পছন্দের জিনিস। আমাদের পাশেই রাখাইন পাড়া। আমরা বলি মগপাড়া। মগ পাড়ার প্যাগোডা থেকে মাঝে মাঝেই ফানুস উড়ানো হয়। আশ্বিন মাসে তুলনামুলক বেশি। আর প্রবারণা পুর্ণিমা টুর্ণিমা এইসব তখন চিনতাম না। তবে একদিন সারারাত ওরা ফানুস উড়ায়, এইটা জানতাম।
ফানুসগুলা উড়তে উড়তে আমাদের পাড়ার দিকে চলে আসতো। তেল ফুরাই গেলে এখানে ওখানে পড়তো। বেশির ভাগ বিলে। আর পোলাপাইন ফানুসের পেছনে কি পরিমান দৌড়াদৌড়ি করতো! ফানুসে আহামরি কিছু যে ছিলো তা না। জ্বলে যাওয়ার পর তো আরো কিছুই থাকতো না। কিছু গোনা, আগুন ধরাবার একটা বতি আর কাগজের একটা ডুল। তাও ছিড়ে যেতো। এটার দখল নিয়েই মারামারি। একটা ফানুস এসে পড়তো আমাদের বিলে আর শুরু হতো পোলাপাইনদের দৌড়াদৌড়ি। শুনলাম বৌদ্ধ ধর্মের নেতারা এই বছর ফানুস উড়ানো বন্ধ রাখছেন। মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন হচ্ছে। এই কারণে উনারা এইখানে ফানুস উড়াবেন না। ব্যাপারটা আমার কাছে হাস্যকর মনে হইছে।
ফানুসের মতো বিশাল একটা চাঁদ ঝুলে আছে সোমেশ্বরী নদীর উপর। আমরা ব্রীজ পার হইয়া অপর পাশ দিয়া বালুচরে নামলাম। বর্ষা শেষ হয়ে আসায় নদীও শুঁকায় গেছে প্রায়। দুই পাশে বিস্তির্ণ সিলিকন বালির চর। উপরে বিশালাকার আশ্বিনী পুর্ণিমার চাঁদ। সেই চাঁদ জ্বল জ্বল করছে সোমেশ্বরীর অগভীর জলে। তার পাশে বালুচরে পা টেনে টেনে হাঁটছি আমরা পাঁচজন যুবক। পাশ দিয়া একটা কালো কুত্তা হাঁটছে আমাদের পাশে পাশে। কিছুদুরে আরেকটা কুত্তা আসমানে দিকে পা ছড়িয়ে দিয়ে শুয়ে আছে। পুর্ণিমায় কি এদেরও মাথা পাগল হয়ে গেছে নাকি?
আমি কয়েকবার চাঁদের ছবি তোলার চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিলাম। চাঁদের সৌন্দর্য মোবাইলে ধরতে পারার বিষয় না। উলটা দিকে ফিরে ব্রীজের কয়টা ছবি তোললাম। তারপর আমরা আরো কিছুদুর হাঁটলাম বালুর উপর।
এই সোমেশ্বরী নদীটার নাম হয়েছে বিখ্যাত এক অভিযাত্রীর নামে। তার নাম সোমেশ্বর পাঠক। কেউ কেউ বলেন সোমনাথ পাঠক। এই সোমনাথ পাঠক কিংবা সোমেশ্বর পাঠক ১২৮০ সালের দিকে তার সঙ্গীসাথী নিয়া কামরুপ যাওয়ার পথে দুর্গাপুরের কোন এক জায়গায় একটা অশোক বৃক্ষের নিচে যাত্রাবরতি দেন। তখন এই ‘পাহাড় মুল্লুক’টা শাষন করতো বৈশ্য গারো নামে এক অত্যচারী রাজা। এইখানে তখন ছিলো গারো রাজত্ব। পরে সোমশ্বর পাঠক গারো রাজার সাথে যুদ্ধ করে এই অঞ্চল জয় করে নেন। নাম দেন সুসঙ্গ রাজ্য। অর্থাৎ ভালো সঙ্গের রাজ্য। পরবর্তীতে সোমেশ্বর পাঠক এখানে জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন। তার নামে ভারত থেক চলে আসা এই পাহাড়ি নদীর নাম হয় সোমেশ্বরী নদী। এরপর থেকে তার উত্তর পুরুষরা এখানে রাজত্ব করতে থাকেন। সোমেশ্বর পাঠকের সুসঙ্গ রাজ্য জয়ের প্রায় তিনশ বছর পর তার এক উত্তরাধিকারী রঘুনাথ সিংহ সম্রাট আকবরের সাথে একটা চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী আকবরের সেনাপতি মানসিংহের সাথে রঘুনাথ সিংহ যুদ্ধ করেন বিক্রমপুরের জমিদার কেদার রায়দের বিরুদ্ধে। যুদ্ধে তিনি জয়ী হয়ে বিক্রমপুর থেকে একটা দুর্গা মুর্তি নিয়ে এসে স্থাপন করেন এইখানে। তখন থেকেই জায়গাটার নাম হয় দুর্গাপুর। অনেক বছর ধরে দুর্গাপুর ছিলো সুসঙ্গ বা সুসং রাজ্যের রাজধানী। ৪৭ এ দেশ ভাগের আগ পর্যন্ত রাজারা ছিলো। ১৯৫৪ সালে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ করা হলে সুসং রাজ্যের রাজারা ভারতে চলে যান। আমি মনে মনে ভাবছি এইসব রাজাদের কথা।
এই সময় নাফিজ ভাই বললেন, “চল চল। দেরি হয়ে যাচ্ছে। এগারোটা বেজে গেলে আবার ঢুকতে দিবে না।”
আমরা তাড়াতাড়ি বালুচর থেকে সিড়ি বেয়ে ব্রীজে উঠলাম। তারপর উলটা দিকে গিয়ে প্রবীরকে বাসায় নামিয়ে দিতে গেলাম। প্রবীরদের বাড়িতে গিয়া দেখি হুলস্থুল কান্ড। ওদের বাড়িতে কীর্তনের প্রস্তুতি চলছে। বাদ্যবাজকরা টুংটাং শুরু করে দিছে। এক পাশে চুলায় খিচুড়ি উঠে গেছে। ল্যাপ্টা খিচুড়ি। কীর্তন শুনতে পারবো না ভেবে আমার একটু খারাপ লাগছিলো। কারণ কীর্তন আমার খুব পছন্দের জিনিস। বাংলা গানের আদি উৎস হলো এই কীর্তন পদাবলী।পণ্ডিতরা ধারণা করেন জয়দেবের গীতগোবিন্দম হচ্ছে কীর্তনের আদি উৎস। তারপর ধীরে পদকর্তাদের সহায়তায় নতুন নতুন ধারা সৃষ্টি হইছে। সৃষ্টি হইছে নতুন নতুন ঘরানা। এইসব সুর, তাল, লয়ের কাছ থেকে আজকের আধুনিক বাংলা গান। কীর্তন বাদ দিয়া আমাদের গানের জগৎটাকে ধরাই যাবে না। তবুও এইসব কীর্তন শোনার উপায় নাই। স্বর্ণা হোটেলের মালিক শালার পোত এগারোটা বেজে আর ঢুকতে দিবে না।আমরা আবার তাড়াতাড়ি অটো নিয়া হোটেলের দিকে রওয়ানা দিলাম। আমরা যখন হোটেলে পৌছলাম দশটা পঁয়তাল্লিশ। এগারোটা বাজতে পনেরো মিনিট দেরি আছে। রুমে ঢুকে এক একজন এক একদিকে পড়ে কাঁত হয়ে গেলো। আমি গোসল টোসল শেষ করে ওয়াশরুম থেকে বের হয় দেখি জোবায়ের তখনো ঘুমায় নাই। বললাম, “ঘুমাস নাই কেনো? কাল কিন্তু ভোরে উঠতে হবে।”
জোবায়ের বললো, “ঘুম আসছে না ভাই। গত তিনরাত ধরে ঘুমাতে পারছি না।”
পরে দুইজন মিলে আজকের দিনের ছবিগুলো দেখতে লেগে গেলাম। শালার কি এক দৌড়ানি! সকাল সাতটা বিশে চট্টগ্রাম থেকে রওয়ানা দিয়ে এখন দুর্গাপুরের বিরিশিরিতে। এদিকে নাফিজ ভাই উনার মহান নাক সঙ্গীত শুরু করে দিছেন। একটু পরে দেখি শাহিনও পাল্লা দেওয়া শুরু করলো নাফিজ ভাইয়ের সাথে।
১৭ নভেম্বর, '১৭। আশ্বিনের রাত।
হিলভিউ, চট্টগ্রাম।
(চলবে…)
প্রথম পর্বঃ Click This Link
দ্বিতীয় পর্বঃ Click This Link
তৃতীয় পর্বঃ Click This Link
১৮ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:১৬
অনন্ত আরফাত বলেছেন: হা। তেমন কোনো ছবিই নাই ভাই
২| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৩৭
গোধুলী বেলা বলেছেন: বিশুদ্ধ বাতাসের জন্য হিলভিউ এক অনন্য স্থান।
১৮ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:১৬
অনন্ত আরফাত বলেছেন: আপনিও কি হিলভিউর নাকি?
৩| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫৮
মা.হাসান বলেছেন: আপনার লেখাটি বড় জমজমাট। ব্যাট ওয়াইএমসিএ দের ডাট বেশি। মূল ব্যবসা তো হোটেল না, লাভ লোকসান দেখতে হয় না, না হলে ঠিকই রুম দিয়ে দিতো।
যে হোটেল আলা দুর্গাপুরে এক হাজার টাকা হোটেল ভাড়া চায় তার জন্য গালি ঠিকই আছে।
পূর্নিমা রাতে কুকুরের ঠ্যাং আকাশের দিকে তুলে শুয়ে থাকার দৃশ্য কল্পনা করতেও মজা লাগছে। ক্যামেরায় সৌন্দর্য ধরে রাখা যায় না সত্য, তবে কিছু স্মৃতি তো রয়ে যায়।অনুরোধ থাকলো, ভবিষ্যত ভ্রমনের ক্ষেত্রে ব্লগে দেয়ার জন্যে হলেও কিছু ছবি তুলে রাখবেন। কাতুকুতু বাবার পরে পীর বাবার সাথে পরিচয় করালেন, আলাপ করান নি কিন্তু এখনো। সুযোগ পেলে এক রাতের ঘুম মাটি করে হলেও কির্তন আর খিচুড়ির কাছে রয়ে যেতাম।
১৮ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:১৮
অনন্ত আরফাত বলেছেন: নিয়মিত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ছেন দেখে এত ভালো লাগছে ভাই! ভালোবাসা জানবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৪
রাজীব নুর বলেছেন: ছবি গুলো পরিস্কার না।