নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিশু ক্রুসেড নিয়ে জানা না জানা কিছু কথা ।

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ ভোর ৬:৫০



শিশুদের ক্রুসেড বলতে বিশেষ করে ১২১২ সালের ঘটে যাওয়া কয়েকটি বাস্তব এবং সমমিশ্রতি কাল্পনিক ঘটনাকে বোঝান হয়েছে । এই ঘটনাগুলির মধ্যে রয়েছে কিছু ফরাসী অথবা জার্মান বালকের দিব্যদৃষ্টি প্রাপ্তি ও তৎকালীন পবিত্র ভূমি তে বসবাসরত মুসলমানদেরকে শান্তিপূর্ণ ভাবে খ্রীষ্ঠধর্মে দিক্ষা দেওয়া একদল শিশু কিশোরের পদযাত্রা করে ইতালি গমন এবং পরবর্তীতে তাদেরকে বা সেই শিশুকিশোরদের দাস হিসেবে সেই বিক্রির উপরে সংঘর্ষ অন্যতম কারন । ক্রুসেডের মূল অর্থই দাঁড়াচ্ছে ধর্মযুদ্ধ । মূলত পবিত্রভূমি জেরুজালেমের উপর কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা নিয়ে ইউরপের খ্রিষ্টান এবং মুসলমানদের মধ্যে ১১ শতক হতে তের শতক পযন্ত অথবা ১০৯৬ সাল থেকে ১২৯২ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ প্রায় দুইশত বছর যে ভয়াবহ যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে তাকেই ইতিহাসে ক্রুসেড নামে বলা হয়েছে । সে সময় দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সংগঠিত এই যুদ্ধ মধ্যযুগীয় ইউরোপ এবং এশিয়ার ইতিহাসে একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা এই ক্রুসেড । ইউরোপিয় খ্রিষ্টানগণ তাদের ধর্মীয় নেতা পোপের নির্দেশে বুকে ক্রুস চিহ্ন নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল এবং ক্রুসকেই যুদ্ধের পতাকা হিসেবে ব্যবহার করেছিল বলেও এই যুদ্ধ ইতিহাসে ক্রুসেড নামে পরিচিত লাভ করে । তবে মুসলমান গবেষকগণেরা অধিকাংশ ইউরোপীয় ঐতিহাসিক এবং লেখক কতৃক মুসলিম জাতির সাথে খ্রিষ্টানদের প্রতিটি সংঘর্ষকেই ক্রুসেড নামে আখ্যায়িৎ করার সমালোচনা করেছেন ।

এশিয়ার মুসলমান এবং ইউরোপের খ্রিষ্টানদের মধ্যে বিরাজিত সুদীর্ঘকালের ঘৃণা বিদ্বেষ ও দ্বন্দ্ব কলহের বহিপ্রকাশের ঘটে এই ক্রুসেডে অথবা এই ধর্ম যুদ্ধে । সে জন্য এই ক্রুসেডের কারণ ছিল যেমন বহুবিদ তেমন এর ফলাফলও ছিল সুদূরপ্রসারী । চতুর্থ ক্রুসেড ব্যর্থ হওয়ার পরপরই ইউরোপের খ্রিষ্টানগণ ১২১২ খ্রিষ্টাব্দে শিশুদের ক্রুসেডের আয়োজন করেছিলেন । শিশুদের সেই ক্রুসেড ছিল খুবই মর্মস্পর্শী । কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে ক্রুসেড আহব্বানকারিরা নিজেদের হীনস্বার্থে ইউরোপের কয়েক হাজার শিশুকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছিল ।

অনেক ক্ষেত্রে উল্লেখ্য আছে যে অষ্ট্রিয়াহাঙ্গেরি সাইপ্রাসসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের কয়েক হাজার শিশুকে ক্রুসেডারগণ একত্রে জাহাজযোগে ধর্মযুদ্ধে প্রেরণ করা হয়েছিল । কিন্তু ক্ষুধা ও তৃঞ্চা এবং ক্লান্তিতে অধিকাংশ শিশুরাই সেখানে মারা যান । পরে অবশিষ্টদের একাংশ মারাক্তক অসুস্থ হয়ে পড়েন । আর একাংশকে ইতালির বনিকগণ আরবীয় বনিকদের নিকট ক্রিতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেন । এভাবেই একটি বিরাট সংখক শিশুর অনাগত এক উজ্জল ভবিষ্যৎ স্বার্থপরতার চোরাবালিতে হারীয়ে যায় । তবে বলতে গেলে ইতিহাসের পাতায় এর সম্পর্কে কমই লেখা আছে । কারণ হিসেবে যতদূর ধরা চলে অনেক পশ্চিমা ইতিহাসবিদ ওই ঘটনাকে স্বীকার করতে চায় না । তাদের মতামত অনুসারে ও রকম কোনো ঘটনা কখনো ঘটেইনি । কারো কারো মতে শিভালরি ক্রুসেডের বর্ণময় যুগ গ্রামীণ লোকগাথা হিসেবেই প্রচলিত । যখন ক্রুসেডারদের একের পর এক পরাজয়ের খবরে হতাশ তখন সাধারণ মানুষের মনে ধর্মীয় উদ্দীপনা আর আশার সঞ্চারের জন্য এই গল্পগাথাগুলো সম্পদনা হয়েছিল । ইতিহাসের পাতা থেকে যতদূর জানা যায় ক্রুসেডে ভেনিসীয় বনিকদের চরম বিশ্বাসঘাতকতা আর ক্রুসেডারদের ব্যর্থতার পর ইউরোপজুড়ে যখন সামাজিক অস্থিরতা আর হতাশা বিরাজ করছিল তখনই ইউরোপের কিছু ধর্মান্ধ মানুষ শিশু ক্রুসেডের পরিকল্পনা করেন । আর ১২১২ সালের দিকে তারা ইউরোপের বিভিন স্থান থেকে সেই দরিদ্র এতিম শিশুদের সংগ্রহ করেন এবং তাদের মানব ঢাল হিসেবে যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ক্রুসেডে প্রেরণ করেন ।

এবং আরো যতদূর ধারনা করা যায় সম্ভবত যুদ্ধে চাইল্ড সোলজার ব্যবহারের ইতিহাস শুরু হয় এখান থেকেই । সেই সময়ের একের পর এক ক্রুসেডের ব্যর্থতা আর সম্পদহানি এবং বীরযোদ্ধাদের হারিয়ে ইউরোপে চরম সামাজিক জীবনে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থার বিরাজ তৈরি করছিল । আর এসব ব্যর্থতার জন্য মানুষ গির্জা ও নাইটদের দায়ী করে আঙ্গুল তোলার সাহসও পেয়েছিল । সে অবস্থায় পোপতন্ত্রের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাওয়ার ভয়ে দিশাহারা পোপ তৃতীয় ইননোসেন্ট ইউরোপের দিকে যাজক আর প্রিস্টদের পাঠালেন পঞ্চম ক্রুসেডের জন্য লোকবল সংগ্রহের জন্য । জেরুজালেম নগরীকে বন্দি রানী আখ্যা দিয়ে একে উদ্ধারের আহ্ববান জানান পোপ । যিশুর বাণীর দোহাই দিয়ে পোপ পুনরায় জেরুজালেম যাত্রার জন্য সাধারণ মানুষের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করেন । তবে টানা ব্যর্থতার পর ইউরোপের মানুষ যখন পোপের ধর্ম যুদ্ধের আহ্ববান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিছেন তখন সম্ভবত ফ্রান্স আর জার্মানির কিছু ধর্মান্ধ মানুষ ছয় থেকে তেরো বছরের বালকদের সংগ্রহ করে তাদের পবিত্র ভূমি স্বপ্ন দেখিয়ে ক্রুসেডের জন্য পাঠান ।

ঘটনার শুরু হয় ফান্সের অর্লিয়েন্স প্রদেশে । ২৫ সেপ্টেম্বর সেন্ট মার্ক্স ডের দিনে এক রাখাল বালক দাবি করেন প্রভুযিশু স্বপ্নে তাকে দেখা দিয়েছেন এবং তাকে একজন নবী হিসেবে নির্বাচিত করে আর একটি ক্রুসেডের নেতৃত্ব দেয়ার দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। তার নেতৃত্বে শিশুদের এক বাহিনী জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করবে এবং তাদের পূর্বসূরিদের ব্যর্থতা ঘোচাবে এবং পবিত্র ভূমি উদ্ধার করবে । এবং পরে সে ফ্রান্সের রাজা হবে । যা ছিল একেবারেই নিছক একটি শিশুতোষ কল্পনা । আর সে সূত্র ধরে কিছু খারাপ চিন্তা ধারার মানুষ সে সুযোগকে কাজে লাগান । শিশু স্টিফেনকে নির্বাচিত একজন আখ্যা দিয়ে চারদিকে ধর্মীয় উন্মাদনা প্রচার করতে লাগলেন । এরপর জার্মানির এক প্রত্যন্ত গ্রামে কোলোজের এক বালক নিকোলাস একই দাবি করেন এবং সহসাই কিছুদিনের মধ্যে জার্মানি আর ফ্রান্স থেকে ষাট হাজারের বেশি হতদরিদ্র বালক বালিকা ধর্মগুরুদের উন্মাদনায় প্ররোচিত হয়ে জার্মানির কোলঞ্জ গ্রামে মিলিত হয় এবং বারো বছরের বালক নিকোলাসের নেতৃত্বে পবিত্র ভূমি জেরুজালেম উদ্ধারের স্বর্গীয় স্বপ্নেবিভোর হয়ে জেরুজালেম যাত্রার জন্য তৈরি হতে থাকেন । চারদিক থেকে দলে দলে লোকজন ভাগ্য বদলানোর লোভে বা স্বর্গ লাভের আশায় সেই বাহিনীতে যোগ শুরু করে । পোপ সরাসরি এদের উদ্দেশে আশীর্বাদ না করলেও একদল প্রিস্ট আর কিছু সুযোগসন্ধানী লোক এদের ধর্মীয় উন্মাদনাকে উসকে দিয়ে পুরোপুরি পাগলামিতে রূপ দেয়ার কাজ সম্পন্ন করেন । আর তখনই শুরু হয় ইউরোপের ইতিহাসের আরো এক কালো অধ্যায়


ছবিতথ্য ইন্টারনেট

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৭:১৮

কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: আর ১২১২ সালের দিকে তারা ইউরোপের বিভিন স্থান থেকে সেই দরিদ্র এতিম শিশুদের সংগ্রহ করেন এবং তাদের মানব ঢাল হিসেবে যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ক্রুসেডে প্রেরণ করেন ।

কতটা নিষ্ঠুর এবং মর্মস্পর্শী!!!
তথ্যটি অজানা ছিলো,
অনেক অনেক ধন্যবাদ
চলুক(প্রিয়তে)।

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৭:২৭

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই প্রিয়তে রেখে সম্মানিত করায় কৃতজ্ঞ জানাচ্ছি ।

২| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৬

মামুন ইসলাম বলেছেন: ক্রুসেড সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৭:৪৯

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই ।

৩| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৮

মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: এই প্রথম শুনলাম!

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৭:৫০

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই আমিও এই প্রথম লেখলাম

৪| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৩

নজরুল ইসলাম টিপু বলেছেন: সেই সময়ের একের পর এক ক্রুসেডের ব্যর্থতা আর সম্পদহানি এবং বীরযোদ্ধাদের হারিয়ে ইউরোপে চরম সামাজিক জীবনে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থার বিরাজ তৈরি করছিল । আর এসব ব্যর্থতার জন্য মানুষ গির্জা ও নাইটদের দায়ী করে আঙ্গুল তোলার সাহসও পেয়েছিল । সে অবস্থায় পোপতন্ত্রের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাওয়ার ভয়ে দিশাহারা পোপ তৃতীয় ইননোসেন্ট ইউরোপের দিকে যাজক আর প্রিস্টদের পাঠালেন পঞ্চম ক্রুসেডের জন্য লোকবল সংগ্রহের জন্য । জেরুজালেম নগরীকে বন্দি রানী আখ্যা দিয়ে একে উদ্ধারের আহ্ববান জানান পোপ । যিশুর বাণীর দোহাই দিয়ে পোপ পুনরায় জেরুজালেম যাত্রার জন্য সাধারণ মানুষের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করেন..................

সুন্দর বিষয় তুলে এনেছেন, ঐতিহাসিক বিষয় পড়তে ভাল লাগে..........আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩১

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: আপনাকেও পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ টিপু ভাই । আপনি আমার একজন প্রিয় লেখক আমি আপনার অনেকগুলো লেখা
পড়েছি । এবং আপনার লেখাগুলো আমার কাছেও অনেক ভালো লাগে ।

৫| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:৩০

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: অনেক কিছু জানতে পারলাম।ধন্যবাদ।

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৭:৫১

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই । ভালো থাকবেন ।

৬| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:৪৫

অগ্নি সারথি বলেছেন: ক্রুসেড জানতাম কিন্তু শিশু ক্রুসেড সম্পর্কে চরম অজানা তথ্য জানালেন ভাই। ভাললাগা।

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৭:৫২

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: পড়ে জানার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই।

৭| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৪

রুদ্র জাহেদ বলেছেন: দুর্লভ তথ্য জানতে পারলাম।ধন্যবাদ

৮| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২০

রুদ্র জাহেদ বলেছেন: দুর্লভ তথ্য জানতে পারলাম।ধন্যবাদ

৯| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:০৮

রুদ্র জাহেদ বলেছেন: দুর্লভ তথ্য জানতে পারলাম।ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.