নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কার্গিল যুদ্ধ বা কার্গিল সংঘর্ষ এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৭


কার্গিল যুদ্ধ বা কার্গিল সংঘর্ষ ১৯৯৯ সালের মে-জুলাই মাসে কাশ্মীরের কার্গিল জেলায় ভারত এবং পাকিস্তান রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘটিত একটি সশস্ত্র সংঘর্ষ। পাকিস্তানি ফৌজ ও কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে ডি ফ্যাক্টো সীমান্তরেখা হিসেবে পরিচিত নিয়ন্ত্রণ রেখা বা লাইন অফ কন্ট্রোল পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়লে এই যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। যুদ্ধ চলাকালীন এবং যুদ্ধের অব্যবহিত পরে পাকিস্তান এই যুদ্ধের দায় সম্পূর্ণত কাশ্মীরি স্বাধীনতাপন্থী জঙ্গিদের উপর চাপিয়ে দেন। তবে যুদ্ধের পর ফেলে যাওয়া তথ্যপ্রমাণ ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং সেনাপ্রধানের পরবর্তীকালের বিবৃতি থেকে স্পষ্টতই জানা যায় যে পাকিস্তানের আধাসামরিক বাহিনীও এই যুদ্ধের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল।আর সেই বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জেনারেল আশরাফ রাশিদ। ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানি ফৌজকে আক্রমণ করে। পরে সেনাবাহিনীকে সহায়তা দান করে ভারতীয় বিমানবাহিনীও। অবশেষে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সমর্থনের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর পাকিস্তানকে ফৌজ প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়েছিল।

কার্গিল যুদ্ধ সুউচ্চ পার্বত্য এলাকায় যুদ্ধের সাম্প্রতিকতম উদাহরণ। উচ্চতার কারণে দুই দেশকেই রসদ সরবরাহ এবং সেনাবাহিনীর অভিযান চালাতে ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাছাড়াও কার্গিল যুদ্ধ হল পারমাণবিক শক্তিধর দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘটিত দ্বিতীয় তথা সাম্প্রতিকতম প্রত্যক্ষ যুদ্ধ। সেই ধরনের প্রথম যুদ্ধটি ছিল ১৯৬৯ সালের সিনো সোভিয়েত সীমান্ত সংঘর্ষ। উল্লেখ্য আছে ১৯৯৮ সালের মে মাসে ভারত এবং পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রই পারমাণবিক অস্ত্রপরীক্ষণ চালায়। যদিও ভারতের প্রথম পারমাণবিক অস্ত্রপরীক্ষাটি ঘটানো হয় ১৯৭৪ সালে। সেই যুদ্ধের ফলে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কে টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয় এবং তার ফলস্রুতিতে ভারতে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়বরাদ্দ বাড়ানো হয়। পাকিস্তানে সেই যুদ্ধের ফলে সরকার ব্যবস্থা এবং অর্থনীতিতে অস্থিরতার সৃষ্টি হয় এবং ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সেনাপ্রধান পারভেজ মুশাররফ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেন।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পূর্বে কার্গিল ছিল লাদাখের বালটিস্তান জেলার অংশ। এই অঞ্চলটিতে জনসংখ্যার ঘনত্ব খুব বেশি না হলেও বিভিন্ন ভাষাগত, জাতিগত এবং ধর্মীয় সম্প্রদায় বিশ্বের কয়েকটি উচ্চতম পর্বত কর্তৃক বিভাজিত এই অঞ্চলের বিচ্ছিন্ন উপত্যকাগুলিতে বসবাস করত। প্রথম কাশ্মীর যুদ্ধের (১৯৪৭সাল থেকে৪৮ সাল) ফলস্রুতিতে সৃষ্ট নিয়ন্ত্রণ রেখা বা লাইন অফ কন্ট্রোল (এলওসি) বালটিস্তান জেলাটিকে দ্বিধাবিভক্ত করে। কার্গিল জেলা ও কার্গিল শহরটি ভারতীয় রাজ্য জম্মু এবং কাশ্মীরের লাদাখ বিভাগের মধ্যে।১৯৭১ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর দুই দেশের মধ্যে সাক্ষরিত শিমলা চুক্তি অনুযায়ী এই সীমান্তকে সম্মান জানিয়ে কোনো রকম সশস্ত্র সংঘাতে না যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়।

শ্রীনগর শহর থেকে ২০৫ কিলোমিটার বা ১২০ মাইল দূরে নিয়ন্ত্রণ রেখার উত্তরাংশের সম্মুখভাগে কার্গিল শহরটি অবস্থিত। হিমালয়ের অন্যান্য অঞ্চলের মতোই কার্গিলের জলবায়ুও নাতিশীতোষ্ণ ধরনের। এখানে গ্রীষ্মকাল শীতল এবং গ্রীষ্মের রাতগুলি হিমশীতল। শীতকাল দীর্ঘ এবং অতিশীতল। শীতের তাপমাত্রা মাঝেমধ্যেই -৪৮° সেন্টিগ্রেট বা -৫৪° ফারেনহাইট-এ নেমে যায়।

শ্রীনগর থেকে লেহগামী ১ নং জাতীয় সড়ক কার্গিলের উপর দিয়ে গিয়েছে। যে অঞ্চলে এই অনুপ্রবেশ এবং সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে তা ছিল উক্ত জাতীয় সড়কের ঊর্ধ্বে স্থিত একটি ১৬০ কিলোমিটার প্রসারিত শৈলশ্রেণী। জাতীয় সড়কের উপর শৈলশ্রেণীতে অবস্থিত সামরিক আউটপোস্টগুলি প্রায় ৫,০০০ মিটার বা ১৬,০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ছিল; কোনো কোনোটি আবার ৫,৪৮৫ মিটার (১৮,০০০ ফুট) উচ্চতাতেও অবস্থান করছিল। জেলা সদর কার্গিল ছাড়া ফ্রন্ট লাইনের নিকটস্থ জনবহুল অঞ্চলগুলি ছিল কার্গিলের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত মুশকো উপত্যকা ও দ্রাস শহর এবং কার্গিলের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত বাটালিক সেক্টর এবং অন্যান্য অঞ্চল।

কার্গিলকে টার্গেট করার অন্যতম কারণ এই যে কার্গিল সংলগ্ন অঞ্চলটি মুক্ত সামরিক অবস্থানের জমিদখলমূলক যুদ্ধের জন্য আদর্শ অঞ্চল ছিল।শৃঙ্গগুলির উপর সুপরিকল্পিতভাবে সুরক্ষিত পোস্টগুলির কৌশলগত গুরুত্বের কারণে প্রতিরক্ষাকারীর একটি দূর্গের সুযোগসুবিধা ভোগ করা সম্ভবপর ছিল সেখানে। পার্বত্য যুদ্ধে উচ্চভূমি থেকে প্রতিরক্ষাকারীর প্রতি শানিত যে কোনো আক্রমণ চালাতে গেলে আক্রমণকারীর উচ্চতার অনুপাত প্রতিরক্ষাকারীর অনেক বেশি হওয়া প্রয়োজন।তার উপর অতিরিক্ত উচ্চতা এবং হিমশীতল তাপমাত্রা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে।পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের স্কারডু শহর থেকে কার্গিলের দূরত্ব মাত্র ১৭৩ কিলোমিটার (১০৮ মাইল)। এইখান থেকে পাকিস্তানি যোদ্ধাদের যুদ্ধের রসদ এবং অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করা খুবই সহজ ছিল।

যুদ্ধের নামঃ
এই যুদ্ধটি একাধিক নামে পরিচিত, কার্গিলে মূল যুদ্ধটি চলাকালীন ভারত সরকার অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে যুদ্ধ war শব্দটি ব্যবহার থেকে বিরত থাকেন। বরং এটিকে বলা হতে থাকে যুদ্ধ-সমতুল পরিস্থিতি war-like situation। যদিও দুই রাষ্ট্রই ইঙ্গিত করেছিল যে তারা যুদ্ধ পরিস্থিতির state of war মধ্য দিয়ে চলেছে। এই কারণেই কার্গিল সংঘর্ষ, কার্গিল ঘটনা বা সামরিক অভিযানের সরকারি নাম অপারেশন বিজয় বহুলভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। যদিও সরকারিভাবে কোনোরূপ যুদ্ধের ঘোষণা করা না হলেও যুদ্ধ সমাপ্তির পর অবশ্য ভারত সরকার অধিক থেকে অধিকতর ক্ষেত্রে এই সংঘাতকে কার্গিল যুদ্ধ Kargil War নামে অভিহিত করতে থাকেন। অন্যান্য কম জনপ্রিয় নামগুলির মধ্যে তৃতীয় কাশ্মীর যুদ্ধ Third Kashmir War এবং পাকিস্তান প্রদত্ত অনুপ্রবেশের সাংকেতিক নাম অপারেশন বদর Operation Badr উল্লেখযোগ্য।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৫২

প্রামানিক বলেছেন: কার্গিল যুদ্ধ সম্পর্কে জানা হলো। ধন্যবাদ

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৬

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই।

২| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৩১

নিউ সিস্টেম বলেছেন: হুম ধন্যবাদ জানানোর জন্য।

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৪

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ নিউ সিষ্টেম ভাই ।

৩| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৯

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন:
পোস্টগুলো সম্পদ।

কার্গিল যুদ্ধ কি আদৌ সমাপ্ত হয়েছে?

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৭

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ দিশেহারা রাজপুত্র ভাই । কার্গিল যুদ্ধ কি আদৌ সমাপ্ত হয়েছে? সব ব্যাথাইতো বুঝেন ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.