নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

হিন্দু বনাম মুসলিম স্বাতন্ত্র বিলুপ্ত করা আত্মহত্যার নামান্তর একথা বলেছেন কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

২০ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১:৫০


আমাদের দেশে ভারতবাসীদের মধ্যে রাষ্ট্রীয় ঐক্যলাভের চেষ্টা যখনি প্রবল হইল তখনি আমরা ইচ্ছা করিলাম বটে মুসলমানদিগকেও আমাদের সংগে এক করিয়া লই কিন্তু তাহাতে কৃতকার্য হইতে পারিলাম না। এক করিয়া লইতে পারিলে আমাদের সুবিধা হইতে পারিত বটে কিন্তু সুবিধা হইলেই যে এক করা যায় তাহা নহে। হিন্দু মুসলমানের মধ্যে যে একটি সত্য পার্থক্য আছে তাহা ফাঁকি দিয়া উড়াইয়া দিবার জো নাই। প্রয়োজন সাধনের আগ্রহবশত সেই পার্থক্যকে যদি আমরা না মানি তবে সেও আমাদের প্রয়োজনকে মানিবে না।হিন্দু মুসলমানের মধ্যে সকল দিক দিয়া একটা সত্যকার ঐক্য জন্মে নাই বলিয়াই রাষ্ট্রনৈতিক ক্ষেত্রে তাহাদিগকে এক করিয়া তুলিবার চেষ্টায় সন্দেহ আর অবিশ্বাসের সূত্রপাত হইল। এই সন্দেহকে অমুলক বলিয়া উড়াইয়া দিলে চলিবে না।

আমরা মুসলমানকে যখন আহ্বান করিয়াছি তখন তাহাকে কাজ উদ্ধারের সহায় বলিয়া ডাকিয়াছি আপন বলিয়া ডাকি নাই। যদি কখনো দেখি তাহাকে কাজের জন্য আর দরকার নাই তবে তাহাকে অনাবশ্যক বলিয়া পিছনে ঠেলিতে আমাদের বাধিবে না। তাহাকে যথার্থ আমাদের সংগী বলিয়া অনুভব করি নাই আনুষংগিক বলিয়া মানিয়া লইয়াছি।যেখানে দুই পক্ষের মধ্যে অসামঞ্জস্য আছে সেখানে যদি তাহারা শরিক হয় তবে কেবল এতদিন পর্যন্ত তাহাদের বন্ধন থাকে যতদিন বাহিরের কোন বাধা অতিক্রমের জন্য তাহাদের একত্র থাকা আবশ্যক হয়, সে আবশ্যকটা অতীত হইলেই ভাগ বাঁটোয়ারার বেলায় উভয়পক্ষে ফাঁকি চলিতে থাকে।মুসলমান এই সন্দেহটি মনে করিয়াই আমাদের ডাকে সাড়া দেয় নাই। আমরা দুই পক্ষ একত্র থাকিলে মোটের উপর লাভের অংক বেশী হইবে বটে কিন্তু লাভের অংশ তাহার পক্ষে বেশী হইবে কিনা মুসলমানের সেটাই বিবেচ্য। অতএব মুসলমানের একথা বলা অসংগত নহে যে আমি যদি পৃথক থাকিয়াই বড় হইতে পারি তবেই তাহাতে আমার লাভ।

কিছুকাল পূর্বে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে এই স্বাতন্ত্র্য অনুভূতি তীব্র ছিল না। আমরা এ রকম মিলিয়াছিলাম যে আমাদের মধ্যেকার ভিন্নত্টা চোখে পড়িত না। কিন্তু স্বাতন্ত্র্য অনুভূতির অভাবটা একটা অভাব মাত্র ইহা ভাবাত্মক নহে। অর্থাৎ আমাদের মধ্যে সত্যকার অভেদ ছিল বলিয়াই যে ভেদ সম্বন্ধে আমরা অচেতন ছিলাম তাহা নহে আমাদের মধ্যে প্রাণশক্তির অভাব ঘটিয়াছিল বলিয়াই একটা নিশ্চেতনায় আমাদের অভিভূত করিয়াছিল।একটা দিন আসিল যখন হিন্দু আপন হিন্দুত্ব লইয়া গৌরব করিতে উদ্যত হইল। তখন মুসলমান যদি হিন্দুর গৌরব মানিয়া লইয়া নিজেরা চুপচাপ পড়িয়া থাকিত তবে হিন্দু খুশী হইত সন্দেহ নাই কিন্তু যে কারণে হিন্দুর হিন্দুত্ব উগ্র হইয়া উঠিল সেই কারণেই মুসলমানের মুসলমানী মাথা তুলিয়া উঠিল।

এখন সে মুসলমানরূপেই প্রবল হইতে চায় হিন্দুর সংগে মিশিয়া গিয়া প্রবল হইতে চায় না। এখন জগৎ জুড়িয়া সমস্যা এ নহে যে কী করিয়া ভেদ ঘুচাইয়া এক হইব কিন্তু কি করিয়া ভেদ রক্ষা করিয়া মিলন হইবে। সে কাজটা কঠিন কারণ সেখানে কোন প্রকার ফাঁকি চলে না সেখানে পরস্পরকে পরস্পর জায়গা ছাড়িয়া দিতে হয়। সেটা সহজ নহে কিন্তু যেটা সহজ সেটা সাধ্য নহে পরিণামের দিকে দেখিলে দেখা যায় যেটা কঠিন সেটাই সহজ।আজ আমাদের দেশে মুসলমান স্বতন্ত্র থাকিয়া নিজের উন্নতি সাধনের চেষ্টা করিতেছে। তাহা আমাদের পক্ষে যতই অপ্রিয় এবং তাহাতে আমাদের আপাত যতই অসুবিধা হউক একদিন পরস্পরের যথার্থ মিলন সাধনের পক্ষে ইহাই প্রকৃত উপায়। ধনি না হইলে দান করা কষ্টকর মানুষ যখন আপনাকে বড় করে তখনি আপনাকে ত্যাগ করিতে পারে। যতদিন অভাব ও ক্ষুদ্রতা ততদিনই তাহার ঈর্ষা ও বিরোধ। ততদিন সে আর কাহারো সাথে মেলে তবে দায়ে পড়িয়া মেলে সে মিলন কৃত্রিম মিলন। ছোট বলিয়া আত্মলোপ করাটা অকল্যাণ বড় হইয়া আত্মবিসর্জন করাটাই শ্রেয়।

আধুনিক কালের শিক্ষার প্রতি সময় থাকিতে মনোযোগ না করায় ভারতবর্ষের মুসলমান হিন্দুর চেয়ে অনেক পিছনে পড়িয়াছে। সেখানে তাহাকে সমান করিয়া লইতে হইবে। সে বৈষ্যমটি দূর করিবার জন্য মুসলমান সকল বিষয়েই হিন্দুর চেয়ে বেশী দাবী করিতে আরম্ভ করিয়াছে। তাহাদের এই দাবীতে আমাদের অন্তরিক সম্মতি থাকাই উচিত পদ মান শিক্ষায় তাহারা হিন্দুর সমান হইয়া উঠে ইহা হিন্দুর পক্ষেই মংগলকর।কিন্তু এই যে বাহ্য অবস্থার বৈষম্য ইহার পরে আমি বেশী ঝোঁক দিতে চাই না। ইহা ঘুচিয়া যাওয়া কিছুই শক্ত নহে। যে কথা লইয়া এই প্রবন্ধের আলোচনা করিতেছি তাহা সত্যকার স্বাতন্ত্র্য। যে স্বাতন্ত্র্য বিলুপ্ত করা আত্মহত্যা করারই সমান।

আমার নিশ্চয় বিশ্বাস নিজেদের স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রভৃতি উদ্যেগ লইয়া মুসলমানেরা যে উৎসাহিত হইয়া উঠিয়াছে তাহার মধ্যে প্রতিযোগিতার ভাব যদি কিছু থাকে তবে সেটা স্থায়ী ও সত্য পদার্থ নহে। ইহার মধ্যে সত্য পদার্থ নিজেদের সাতন্ত্র্য উপলব্ধি। মুসলমান নিজের প্রকৃতিতেই মহৎ হইয়া উঠিবে এই ইচ্ছাই মুসলমানের সত্য ইচ্ছা।এইরূপ বিচিত্র স্বাতন্ত্র্যকে প্রবল হইয়া উঠিতে দেখিলে আমাদের মনে প্রথমে একটা ভয় হয়। মনে হয় স্বাতন্ত্র্যের যে অংশে আজ বিরুদ্ধতা দেখিতেছি সেইগুলিই প্রশ্রয় পাইয়া বাড়িয়া যাইবে এবং তাহা হইলে মানুষের মধ্যে পরস্পরের প্রতিকূলতা ভয়ংকর উগ্র হইয়া উঠিবে।একদা সেই আশংকার কাল ছিল। তখন এক এক জাতি আপনার মধ্যেই আবদ্ধ থাকিয়া আপনার বিশেষত্বকে অপরিমিতরূপে বাড়াইয়া চলিত। সমস্ত মানুষের পক্ষে সে একটা ব্যাধি ও অকল্যাণের রূপ ধারণ করিত। এখন সেরূপ ঘটা সম্পূর্ণ সম্ভবপর নহে। এখন আমরা প্রত্যেক মানুষই সকল মানুষের মাঝখানে আসিয়া পড়িয়াছি। এখন এত বড় কোন কেহই খুঁজিয়া বাহির করিতে পারিবে না যেখানে অসংগতরূপে অবাধে একঝোকা রকম বাড় বাড়িয়া একটা অদ্ভুত সৃষ্টি ঘটিতে পারে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্নেহধন্য বাঙ্গালী মুসলমানদের একজন ড. মুহম্মদ কুদরত-ই-খোদা ১৯৩৬ সালে কবিকে জিজ্ঞাসা করেছিলেনঃ ‘আপনি কেন হিন্দু-মুসলিম বন্ধুত্বের উপর আরো লিখেননি যেটি দেশের স্বাধীনতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল?’ জবাবে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন হিন্দু মুসলিম বন্ধুত্ব অসম্ভব। হিন্দু সমাজকে আমি যতটা জানি তুমি ততোটা জানোনা। উদ্বিগ্ন কুদরত-ই-খোদা জিজ্ঞাসা করেনঃ ‘তাহলে সমাধান কি? রবীন্দ্রনাথ বলেনঃ স্বাধীনতা তখনই আসবে যখন পুরো দেশ হয় হিন্দু না হয় মুসলমান হবে।

উৎসঃ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রবন্ধ বাংলা ১৩১৮ উদ্ধৃত পাকিস্তান আন্দোলন এব মুসলিম সাহিত্য সম্পাদনা সরদার ফজলুল করিম, বাংলা একাডেমী মার্চ, ১৯৬৮, পৃ: ৯০-৯৩
মুহাম্মদ কুদরত-ই-খোদা, কবি স্মৃতি, ইকবাল ভুইয়া, পূর্বোল্লিখিত পৃ-৩৬১।


মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৫:১৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


ধর্মই মানুষকে শ্রেস্ঠ হওয়ার সুযোগ দিয়েছে।

২২ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:০০

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: আপনি যা বলেন বা মনে করেন ।

২| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৭:০৫

নাইম রাজ বলেছেন: চাঁদগাজী ভাই বলেছেন ধর্মই মানুষকে শ্রেস্ঠ হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন।

২২ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:০০

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: উনার কথা বাদ দিয়ে আপনি কিছু বলুন ।

৩| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১০:০১

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: ভালো লেখেছেন।

২২ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:০১

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:৫৪

লেখা পাগলা বলেছেন: আপনার কল্যান কামনা করছি।

২২ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:০১

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.