নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে অন্যতম কুখ্যাত গণহত্যা

১৭ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:৩২


১৯১৯ সালের ১৩ই এপ্রিল তারিখে অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের অমৃতসর শহরে ইংরেজ সেনানায়ক ব্রিগেডিয়ার রেগিনাল্ড ডায়ারের নির্দেশে সেই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল। সেই শহরের জালিয়ানওয়ালাবাগ নামক একটি বদ্ধ উদ্যানে সমবেত নিরস্ত্র জনগণের উপর গুলিবর্ষণ করা হয়েছিল। সেই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইংরেজ সরকারের দেয়া নাইটহুড উপাধি ত্যাগ করেন।
১৭৫৭ সালে ভারতবর্ষ চিরকালের জন্য ইংরেজ শাসনের অধীনে আসে। শাসনের এক পর্যায়ে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকেই ভারতের উদীয়মান ধনী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে স্বায়ত্তশাসন এবং স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠে। আর সেই আকাঙ্ক্ষার সংহত রূপ প্রকাশ পায় ১৮৮৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। প্রথম দিকে সেই রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য ছিল ইংরেজ শাসনাধীনে থেকেই ন্যায়বিচার এবং স্বায়ত্তশাসন লাভ। কিন্তু ইংরেজ সরাকারের পক্ষ থেকে সেই দাবী মেনে নেয়া হয়নি। ইংরেজদের যুক্তি ছিল ভারতবর্ষ অনুন্নত বিধায় স্বায়ত্তশাসনের উপযুক্ত নয়। কিন্তু ভারতে এ ধরণের চিন্তাধারার প্রসার ঘটতে থাকে। ধীরে ধীরে এদেশের অনেক স্থানেই রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয় ।এক সময় টেলিগ্রাফ তারও বসানো হয়। কিছু কিছু কল কারখানাও স্থাপিত হয় মূলত কাপড়ের কারখানা প্রাধান্য বিস্তার করেছিল। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ঘটনার প্রভাবও এখানে পরিলক্ষিত হয়। ১৯০৫ সালে রাশিয়ার মতো বৃহৎ শক্তি ক্ষুদ্র এশীয় শক্তি জাপানের কাছে রুশ জাপান যুদ্ধে পরাজিত হয়। একই সময়ে রাশিয়ায় স্বৈরাচারী জারের শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন দানা বেঁধে উঠে। ধনতান্ত্রিক দেশগুলোতে অর্থনৈতিক সংকট শুরু হওয়ায় এশিয়া এবং আফ্রিকার অনুন্নত দেশগুলো দখল করে নিজেদের মধ্যে বন্টন করে নেয়ার জন্য উন্নত দেশগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এরই ফল ছিল ১৯১৪ সালে শুরু হওয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। সেই যুদ্ধে জার্মানি ইংল্যান্ড তথা মিত্রবাহিনীর হাতে পরাস্ত হয়। যুদ্ধে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীও অংশ নিয়েছিলো। ইংরেজ সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যুদ্ধে অংশ নিলে পরাধীন দেশগুলোকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা হবে। সেই কথায় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রদূত মহাত্মা গান্ধী সহ অনেকেই যুদ্ধে যোগ দেন এবং যুদ্ধে ভারতবাসীকে উৎসাহিত করেন।

১৯১৯ সালে যুদ্ধ শেষ হয়। কিন্তু ইংরেজ সরকারের নীতিতে কোন রকম পরিবর্তন দেখা যায়নি। যেসব সৈন্য যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল এসময় তাকে বেকার করে নিজ নিজ গ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অর্থনৈতিক মন্দা এবং দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারিতে এক কোটির বেশি মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হয়। ভারতবাসীর মনে সন্দেহ ঘনীভূত হতে থাকে। আর সেই সন্দেহ থেকেই ক্ষোভ এবং ইংরেজ বিরোধী মনোভাবের সূচনা ঘটে। সেসময় ইংরেজ সরকার একদিকে যেমন মন্টেগু-চেমসফোর্ড শাসন সংস্কার আইন করে তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করে একই সাথে আবার রাওলাট আইন করে ইংরেজ সরকার বিরোধী সকল বিক্ষোভ কঠোর হাতে দমনের জন্য নির্যাতনমূলক আইন জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়। সেই আইনের অধীনে বিনা কারণে গ্রেপ্তার, অন্তরীন এবং সংক্ষিপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণহীন বিচার ও বন্দীত্বের বেপরোয়া পদক্ষেপ গৃহীত হয়। মহাত্মা গান্ধী তখন অহিংস এবং সত্যাগ্রহ তথা রক্তপতহীন আন্দোলনের মাধ্যমে এর প্রতিবাদের আয়োজন করেন। এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে পাঞ্জাব যাওয়ার পথে গান্ধীজিকে গ্রেফতার করা হয়। তার প্রতিবাদে আহমেদাবাদের শিল্প শ্রমিক এবং পাঞ্জাবের সাধারণ জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। সরকার গান্ধীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। তার পরও বিক্ষোভ কমেনি। ধর্মঘটে এবং বিক্ষোভের লক্ষ্য হয়ে দাড়ায় সরকারী দপ্তর এবং যানবাহন। সাদা চামড়ার ইউরোপীয় কর্মকর্তা এবং অধিবাসীদের উপরও ভারতীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তাদের উপরও আক্রমণ করা হয়। এপ্রিলের ১৩ তারিখ দুজন রাজনৈতিক নেতাকে অমৃতসর থেকে গ্রেফতার করা হয়। এর পটভূমিতেই হত্যাকাণ্ডের আবহ তৈরি হয়েছিল।

সেই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ১৯১৯সালের ১৪ই এপ্রিল তারিখের ডায়ারের নিজের ডেসপ্যাচ অনুসারে ১৩ই এপ্রিল ১০০ জন গুর্খা সৈন্য আর ২টি সাজোয়া গাড়ি নিয়ে ডায়ারের নির্দেশে জালিয়ানওয়ালাবাগে ২০০০ এর মত বিদ্রোহীকে হতাহত করা হয়েছিল। আর তাতে খরচ হয়েছিল ১৬৫০ রাউণ্ড গুলি। বাগের মাঝখানে কুয়োতে পাথর ফেলে কিছু মানুষকে জীবন্ত প্রোথিত করা হয়।জালিয়ানওয়ালাবাগের ভয়ানক এবং মর্মান্তিক সেই হত্যাকান্ডের ঘটনায় ব্রিটিশ শাসনের প্রকৃত নগ্ন রূপের প্রকাশ হয়ে পরে ।সরকার জেনারেল ডায়ারের কাজকে সমার্থন করে ।কিন্তু সেই হত্যাকান্ডের ঘটনায় গোটা বিশ্ব শিহরিত হয় । দেশে ওবিদেশে সর্বত্র সরকারের নগ্ন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের ঘটনার প্রতিবাদে দেশের সর্বত্র ঘৃণা এবং ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধযায় বলেছেন যে, সেই হত্যাকান্ডের ঘটনা ভারতে যে মহাযুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে দেয় তা উত্তর, দক্ষিণ,পূর্ব এবং পশ্চিমে ছড়িয়ে পড়ে সবার হৃদয়কে আন্দোলিত করে। জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘৃণ্য ও বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া নাইট ত্যাগ করেন।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:৩৯

মামুন ইসলাম বলেছেন: জানা হলো ইতাহাসটি আগে জানা ছিল না ।

১৮ ই জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৪

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন ভাই ।

২| ১৭ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:৩৫

blogermassud বলেছেন: সুন্দর ইতিহাস ।

১৮ ই জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৫

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.