নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

১২৫৮ সালে বাগদাদ অবরোধের ফলে ইসলামি স্বর্ণযুগের সমাপ্তি ঘটেছিল !

১০ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:৫৮

ওপরের এই ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে হালাকু খানের বাহিনীর বাগদাদ হামলা করার দৃশ্যপট
১২৫৮ সালের ২৯শে জানুয়ারি থেকে ১০ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থায়ী ছিল বাগদাদ অবরোধ । সেসময় হালাকু খান বাগদাদ অবরোধ করেছিলেন। অবরোধের পর মঙ্গোলদের কাছে বাগদাদ আত্মসমর্পণ করেন।হালাকু খান ইরানে হাসাসিনদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর পর হাসাসিনরা আত্মসমর্পণ করেন। তারপর তিনি বাগদাদের দিকে অগ্রসর হয়ে খলিফা আল-মুসতাসিমকে আত্মসমর্পণ করতে বলেন। খলিফা প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার কারনে হালাকু খান শহর অবরোধ করেন। ১২ দিন পরে শহর আত্মসমর্পণ করে। তারপর মঙ্গোলরা বাগদাদে প্রবেশ নৃশংস ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে। হামলায় বাগদাদের বিখ্যাত বাইতুল হিকমাহ গ্রন্থাগার ধ্বংস হয়ে যায়। খলিফাসহ শহরের অসংখ্য বাসিন্দাকে হত্যা করা হয়। ফলে শহর জনশূণ্য হয়ে পড়ে। সেই অবরোধকে ইসলামি স্বর্ণযুগের সমাপ্তি হিসেবে দেখা হয়।

যুদ্ধের যেভাবে শুরু ও অভিযান এবং বাগদাদ দখল
১২৫৭ সালে মংকে খান মেসোপটেমিয়া ও সিরিয়া এবং ইরানে শক্ত কর্তৃত্ব স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তার ভাই হালাকু খানকে খিলাফতসহ বিভিন্ন মুসলিম রাজ্য জয় করার দায়িত্ব দেন। আত্মসমর্পণ যারা করবে না তাদের ধ্বংস করে দেওয়ার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়।অভিযানের জন্য হালাকু খান একটি বড় আকারের বাহিনী গড়ে তোলেন। বাহিনীর সেনাপতিদের মধ্যে ছিলেন আরগুন আগা, বাইজু ও বুকা তিমুর, গুয়ো কান এবং কিতবুকা, হালাকু খানের ভাই সুনিতাইসহ বিভিন্ন যুদ্ধনেতা তাছাড়াও সিলিসিয়ার আর্মেনীয় এবং এন্টিওকের ফ্রাঙ্করাও সেনাদল নিয়ে যোগ দেন। জর্জিয়াও তাদের সাথে যোগ দেন। ১০০০ চীনা গোলন্দাজ সৈনিক বাহিনীতে যোগ দেন। এর পাশাপাশি তুর্ক এবং পার্সিয়ান যোদ্ধারাও সেই বাহিনীতে যোগ দেন।হালাকু খান ইরানের দিকে অগ্রসর হয়ে লুরদের বিরুদ্ধে অভিযান চালান। তিনি বুখারা এবং খোয়ারিজম শাহ রাজবংশের অবশিষ্টদের উপর হামলা করেন। তাদের পরাজিত করার পর তিনি হাসাসিনদের উপর নজর দেন। তিনি হাসাসিনদের ঘাটি আলামুত দুর্গ দখল করেন। মঙ্গোলরা তৎকালীন হাসাসিন প্রধান ইমাম রুকনউদ্দিন খুরশাহকে হত্যা করেন।

হাসাসিনদের পরাজিত করার পর হালাকু খান আল মুসতাসিমকে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দেন। উজিরে আজম ইবনুল আলকামির পরামর্শে খলিফা প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। ইতিহাসবিদদের মতে তার কারণ ছিল বিশ্বাসঘাতকতা এবং অযোগ্যতা।তিনি খলিফাকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিলেন যে মঙ্গোলরা সমস্যা সৃষ্টি করলে মুসলিম বিশ্ব থেকে সহায়তা আসবে।১১ই জানুয়ারি নাগাদ মঙ্গোলরা শহরের কাছে পৌছে যান। তারা দজলা নদীর উভয় তীরে অবস্থান নেয়। আল মুসতাসিম শেষপর্যন্ত যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেন এবং মঙ্গোলদের বিরুদ্ধে ২০০০০ অশ্বারোহীর একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। এই অশ্বারোহীরা মঙ্গোলদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়।

২৯শে জানুয়ারি মঙ্গোলরা বাগদাদ অবরোধ করেন। তারা শহরের চারদিকে পরিখা খনন করেন। শহরের দেওয়াল ভাঙার জন্য অবরোধ ইঞ্জিন এবং কেটাপুল্ট ব্যবহার করা হয়েছিল। ৫ই ফেব্রুয়ারি নাগাদ তারা প্রতিরক্ষার উল্লেখযোগ্য অংশ ভেদ করতে সক্ষম হন। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় আল মুসতাসিম হালাকু খানের সাথে আলোচনা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু হালাকু খান রাজি হননি। বাগদাদের প্রায় ৩০০০ গণ্যমান্য ব্যক্তি হালাকু খানের সাথে আলোচনার চেষ্টা করলে তাদেরকে হত্যা করা হয়। পাঁচদিন পর ১০ ফেব্রুয়ারি শহর আত্মসমর্পণ করে। ১৩ই ফেব্রুয়ারি মঙ্গোলরা শহরে প্রবেশ করে হত্যা এবং ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেন।

হালাকু খানের হাতে খলিফা আল মুসতাসিমের বন্দীত্ব। ১৫শ শতাব্দীর লা লিভ্রে দেস মারভেলিস বইয়ের চিত্র।
বিভিন্ন ঐতিহাসিক সূত্রে মঙ্গোলদের নিষ্ঠুরতার বর্ণনা রয়েছে। বাগদাদের বাইতুল হিকমাহ গ্রন্থাগার সেসময় ধ্বংস করা হয়। ফলে চিকিৎসা এবং জ্যোতির্বিদ্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর রচিত অসংখ্য মূল্যবান বই হারিয়ে যায়। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের ভাষ্য অনুযায়ী দজলা নদীতে অসংখ্য বই ফেলে দেওয়ার ফলে নদীর পানি বইয়ের কালির কারণে কালো হয়ে গিয়েছিল। পালিয়ে যেতে চেষ্টা করা নাগরিকদেরকে মঙ্গোলরা গণহারে হত্যা করেন। সেসময় নারী এবং শিশুদেরকেও হত্যা করা হয়। সেই হত্যাযজ্ঞে প্রায় ৯০০০০ এর মত নাগরিক নিহত হয়েছে বলে অভিমত রয়েছে। অন্যান্য সূত্রে ভিন্ন সংখ্যা পাওয়া যায়। ১৪শ শতাব্দীর ইতিহাসবিদ ওয়াসসাফের মতে মৃতের সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক ছিল। দ্য নিউ ইয়র্কারের ইয়ান ফ্রেজিয়ারের মতে মৃতের সংখ্যা প্রায় ২০০০০০ থেকে ১০০০০০০ ছিল। মঙ্গোলরা মসজিদ, প্রাসাদ, গ্রন্থাগার, হাসপাতালে লুটপাট চালায়। ফলে কয়েক প্রজন্ম ধরে গড়ে উঠা সব ইমারত ধ্বংস হয়ে যায়।খলিফা আল মুসতাসিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে শহরের বাসিন্দাদেরকে হত্যার দৃশ্য দেখতে বাধ্য করা হয়। মঙ্গোলরা রাজকোষেও লুটপাট চালায়। অধিকাংশ সূত্র অনুযায়ী হত্যার জন্য তারা খলিফাকে কাপড়ে মুড়ে তার উপর ঘোড়া চালিয়ে দেয়। তবে পর্যটক মার্কো পোলোর বর্ণনা অনুযায়ী খলিফাকে অভুক্ত রেখে মেরে ফেলা হয়েছিল।

তথ্যসূত্রঃ
http://metis-history.info/euro54.shtml
https://books.google.com.bd/books?id=DRByAAAAMAAJ&pg=PA292&redir_esc=y
http://www.thedailybeast.com/in-threatening-baghdad-militants-seek-to-undo-800-years-of-history
http://www.newyorker.com/magazine/2005/04/25/invaders-3

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৩০

জেনারেশন সুপারস্টার বলেছেন: হালাকু খান আর চেঙ্গিস খান।

১০ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৪

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ঠিক !

২| ১০ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১:১৫

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ক্ষমতার পালা বদল কতবার কতভাবে যে হয়েছে হচ্ছে হবে- শেষ নাই.............

বলিদানে রয়ে যায় আমজনতা আদি থেকে অন্তে!!!!!!!!!!!!!


তথ্যবহুল পোষ্টে +

১১ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:০৫

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: বরাবরের মত সেই অনুপেরনাদায়ক মন্তব্য ।ভাই সব সময় আপনার মন্তব্যে আমি আলেদা একটা অনুপেরনা পাই । অনুপেরনাদায়ক মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা ।

৩| ১০ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:২৯

টারজান০০০০৭ বলেছেন: জাতিগতবভাবে মুসলমানদের যখন ঈমান-আমলের অবনতি হয় , আল্লাহ তায়ালা তখন তাদের বিরুদ্ধে কুত্তা লেলাইয়া দেন ! হালাকু খাঁ সেই কুত্তাদের মধ্যে একজন।আজ যেসব কুত্তা মুসলমানদের বিরুদ্ধে হত্যাযজ্ঞে নামিয়াছে তাহারাও একই কারণে নামিয়াছে।ঈমান আমল ঠিক হইলে এইসব কুত্তাদের আল্লাহ তায়ালাই ভাগাড়ে পাঠাইবেন।

১১ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:০৭

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: কথা খারাপ বলেন নাই ।এই অপ্রিয় সত্যটুকো কারো মনে মানতে চায় না।

৪| ১০ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:৩১

রুহুল আমিন খান বলেছেন: মোঙ্গলদের ট্র্যাডিশন হচ্ছে কোন রাজা কে রক্তপাত করে হত্যা করবে না এতে কারন রাজার রক্ত মাটিতে পড়লে তাদের দেবতাদের অভিশাপ লাগবে এই টাইপ বিশ্বাস আছে। তারা দুই ভাবে পরাজিত রাজা বা নেতা হত্যা করতে
১। শক্ত কাঠের গুড়ির উপর পেছিয়ে মেরদন্ড ভেঙ্গে হত্যা(সম্মানজনক)
২। কার্পেট এ মুড়িয়ে একপাল ছুটন্ত ঘোড়াদের পায়ে পিষ্ঠ করে হত্যা করা

১১ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:০৮

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ তথ্যমূলক মন্তব্যের জন্য।

৫| ১০ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৯

রুহুল আমিন খান বলেছেন: ঐ সময় আয়্যুবিদরা দূর্বল ছিলো মামলুকরা মেডেটেরিয়ান সী তে ক্রুসেডারদের ঠেকাইতে ব্যাস্ত ছিলো। খলিফা আল মুস্তাসিম কোন মুখে আশা করতো যে অন্য মুসলিম শক্তি গুলো তার সাহায্যে এগিয়ে আসবে, এই আব্বাসীরা তখনকার সময়ে অন্যান্য মুসলিম রাজ্য গুলোর মধ্যে কলকাঠি নাড়তো ভেজাল লাগাইতো, আল মুসতাসিমের দাদা আল নাসির শ্রেফ সালাউদ্দিনের প্রতি ঈর্ষাকাতর হয়ে এমন কাঠি করে করেছিলো যে দ্বিতীয় ক্রুসেডে মুসলিম জাহাণের অন্যান্য অংশ গুলো থেকে কোন সোলজার আয়্যুবিদদের পক্ষে আসে নাই সালাউদ্দিনকে একাই ফাইট দেওয়া লাগসে। কোন কোন ঐতিহাসিক এর মতে আল মুস্তাসিমের বাপ আল মুন্তাসিরই চেঙ্গিস কে প্ররোচিত খোয়ারিজম সালতানাতের উপর আক্রমন করতে কারন আবাসীদের সাথে খোয়ারিজমদের সম্পর্ক ভালো ছিলো না এবং খোয়ারিজমদের উপর যখন মোঙ্গল আক্রমন চলে তখন এই আব্বাসীরা গুটিবাজি করে অন্যান্য মুসলিম সালতানাত থেকে সাহায্য যাতে না আসে। যার আল্টিমেট কাফ্ফারা চেঙ্গিসে নাতি হালাকুর হাতে প্রান দিয়ে চোকানো লেগেছে আব্বাসীদের শেষ খলিফা আল মুস্তাসীম কে

১১ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:০৮

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ তথ্যমূলক মন্তব্যের জন্য।

৬| ১০ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


রাজতন্ত্রে এটাই ঘটে এসেছে।

আপনি খেলাফতে ফেরত যেতে চান?

১১ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:১১

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: যদি যাওয়ার মত পথ তৈরি করেন,তাহলেত ফিরে যেতই হবে,শত হলেও প্রিয় ব্লগার জনাব চাঁদগাজী ভাইয়ের
কথা ফেলি কি করে ? ;)

৭| ১০ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:০২

ব্লগ মাস্টার বলেছেন: অনেক সুন্দর ইতিহাস জানা হল ।

১১ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:১২

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.